জর্জ ফ্রান্সিস
জর্জ নাথানিয়েল ফ্রান্সিস (ইংরেজি: George Francis; জন্ম: ১১ ডিসেম্বর, ১৮৯৭ - মৃত্যু: ১২ জানুয়ারি, ১৯৪২) বার্বাডোসের সেন্ট জেমসের ট্রেন্ট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯২৮ থেকে ১৯৩৩ সময়কালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।
ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | জর্জ নাথানিয়েল ফ্রান্সিস | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | সেন্ট জেমস, বার্বাডোস | ১১ ডিসেম্বর ১৮৯৭|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ১২ জানুয়ারি ১৯৪২ সেন্ট মাইকেল, বার্বাডোস | (বয়স ৪৪)|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | ডানহাতি ফাস্ট | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভূমিকা | বোলার | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল |
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ৫) | ২৩ জুন ১৯২৮ বনাম ইংল্যান্ড | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ২৪ জুন ১৯৩৩ বনাম ইংল্যান্ড | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ঘরোয়া দলের তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বছর | দল | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯২৪–১৯৩০ | বার্বাডোস | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৩০ নভেম্বর ২০১৮ |
ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে বার্বাডোসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ফাস্ট বোলার হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে ডানহাতে ব্যাটিং করতেন জর্জ ফ্রান্সিস।
১৯২৮ সালে ইংল্যান্ডে প্রথমবারের ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের উদ্বোধনী টেস্টে অংশগ্রহণের বিরল সুযোগ পেয়েছেন তিনি। ২৩ জুন, ১৯২৮ তারিখে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক ঘটে জর্জ ফ্রান্সিসের।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
সম্পাদনাক্যারিবীয় অঞ্চলের আন্তঃঔপনিবেশিক ক্রিকেটে সীমিত পর্যায়ের খেলা অনুষ্ঠিত হতো। ১৯২৩ সালে ইংল্যান্ড গমনকালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে জর্জ ফ্রান্সিসকে মনোনীত করা হলেও তখনো তিনি কোনপ্রকার প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশগ্রহণ করেননি। ১৯৪৩ সালে উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমেনাকে তার স্মরণীকায় উল্লেখ করা হয় যে, তিনি মাঠ কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন ও ঐ সফরে অধিনায়ক হ্যারল্ড অস্টিনের ঐকান্তিক আগ্রহের কারণেই মূলতঃ তাকে দলে ঠাঁই দেয়া হয়েছিল।[১] ত্রিনিদাদের লেখক সি. এল. আর. জেমস ‘বিয়ন্ড এ বাউন্ডারী’ শীর্ষক গ্রন্থে ত্রিনিদাদীয় বংশোদ্ভূত ও বার্বাডোসের খেলোয়াড় হারম্যান গ্রিফিথের দল থেকে বাদ পড়া ও অস্টিনের ন্যায় দলে অজানা বোলারের অন্তর্ভূক্তির বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন। জেমস আরও উল্লেখ করেছেন যে, আমাদের কাছে মনে হয়েছে আরও একবার শ্রেণীবৈষম্যের শিকারে পরিণত হতে চলেছে। কিন্তু, অজানা এই বোলার খুব শীঘ্রই নিজেকে তুলে ধরেছেন ও অমরত্বের দোরগোড়ায় নিয়ে গেছেন।[২]
এ সফরটিতে প্রথম-শ্রেণীর খেলা ও অন্যান্য খেলার সংমিশ্রণ ছিল। সাসেক্সের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশগ্রহণ ঘটে জর্জ ফ্রান্সিসের। দূর্দান্ত খেলেন তিনি। সাসেক্সের প্রথম ইনিংসে ৪/৫০ লাভ করেন। কাউন্টি দলটির জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল মাত্র ৯৯। এ অবস্থায় তিনি ৬/৩৩ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশকে ২৬ রানের নাটকীয় জয় এনে দেন।[৩] টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, ফ্রান্সিস অত্যন্ত ক্ষীপ্রময় বোলিং করেছেন।[৪]
তিনি তার পরবর্তী খেলায় হ্যাম্পশায়ারের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৫/২৭ লাভের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ২/৫৮ পান।[৫] নিজস্ব তৃতীয় খেলায় লর্ডসে মিডলসেক্সের মুখোমুখি হন। ঐ খেলায় ৩/৮৬ ও ৬/৩৪ লাভ করেন।[৬] টাইমসে উল্লেখ করা হয়, অধিকাংশ ব্যাটসম্যানের বিপক্ষেই তিনি অত্যন্ত দ্রুতগতিসম্পন্ন বোলিং করেছেন।[৭]
তবে, এ ধরনের পেস বোলিং করা সত্ত্বেও তেমন উইকেট পাননি। কিন্তু, আগস্টের শুরুতে সারের বিপক্ষে সুন্দর খেলা উপহার দেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ৫/৩১ এর পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৫/৪৫ লাভ করেন। ফলশ্রুতিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ১০ উইকেটে জয় পায়। এছাড়াও, প্রথম ইনিংসে স্নাফি ব্রাউনের বলে তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন তিনি।[৮] খেলাটি সম্পর্কে টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, ফ্রান্সিসের বোলিং বেশ নিয়ন্ত্রিত ছিল। এরফলে ব্যাটসম্যানেরা তার বিপক্ষে খেলতে পারছিলেন না।[৯] অপ্রত্যাশিতভাবে জর্জ ফ্রান্সিস খেলায় ব্যাট হাতে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। শেষ উইকেট জুটিতে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান জর্জ চ্যালেনরের সাথে ১৩৬ রানের জুটি গড়ে ৪১ রানে আউট হন; অন্য প্রান্তে জর্জ চ্যালেনর ১৫৫ রানে অপরাজিত থাকেন যা দলের ৩০৬ রানের অর্ধেকেরও বেশি ছিল।[৮]
পুরো আগস্ট মাস জুড়ে জর্জ ফ্রান্সিস উইকেট পেতে থাকেন। তবে, এক খেলায় তাকে দূর্দমনীয় মনে করা হয়েছিল। এ সফরটির শেষদিকে তিনি অতি উচ্চামার্গের খেলা উপহার দেন। স্কারবোরা উৎসবে সফরের শেষ খেলায় প্রতিপক্ষ এইচ. ডি. জি. লেভেসন-গাওয়ার একাদশের জয়ের জন্য মাত্র ২৮ রানের দরকার ছিল। তৃতীয় দিন সকালে ফ্রান্সিস ও জর্জ জন এক ঘণ্টা বিশ মিনিট বোলিং করে ১৯ রান দিয়ে ছয় উইকেট ভাগাভাগি করে নেন। তবে, সপ্তম উইকেটে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান উঠে যায়।[১০] টাইমসের প্রতিবেদনে লেখা হয় যে, ফ্রান্সিস ও জনের বোলিংকে অস্ট্রেলীয় বোলার - গ্রিগরি ও ম্যাকডোনাল্ডের ১৯২১ সালের ইংল্যান্ড সফরকালীন খেলার সাথে তুলনা করা যেতে পারে।[১১]
১৯২৩ সালের সফরকে ঘিরে উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমেনাকের ১৯২৪ সালের সংস্করণে উল্লেখ করা হয় যে, কিছুটা পুরনো ধাঁচের অত্যন্ত সেরা ফাস্ট বোলার তিনি।[১২] অফ তত্ত্বের দিকে ধাবিত না হয়ে উইকেট বরাবর বোলিং করেছেন ও খেলার পর খেলায় ফলাফলের মাধ্যমে তিনি নিজেকে মেলে ধরেছেন। অস্বাভাবিক গতিময়তার পাশাপাশি চমৎকার পেসও সর্বদাই বজায় রেখেছেন জর্জ ফ্রান্সিস।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
সম্পাদনাআন্তঃঔপনিবেশিক প্রতিযোগিতায় খুব কমই প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলায় অংশ নিয়েছেন জর্জ ফ্রান্সিস। তবে, ১৯২৩ ও ১৯২৮ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই বড় ধরনের খেলায় সম্পৃক্ততা ঘটাতে পেরেছেন। এছাড়াও, ১৯২৫-২৬ মৌসুমে এমসিসি দলের বিপক্ষে বার্বাডোসের সদস্যরূপে দুইটি ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রতিনিধিত্বকারী দলের সদস্যরূপে তিনটি খেলা ছিল তার। বার্বাডোসের পক্ষে প্রথম খেলাটিতে নাটকীয় সফলতার সাথে তিনি ও তার ফাস্ট বোলিং সহযোদ্ধা হারম্যান গ্রিফিথের নাম জড়িয়ে আছে। তারা উভয়েই এমসিসি দলের বিপক্ষে নয়টি করে উইকেট পেয়ে ইনিংস ব্যবধানে জয় এনে দেন। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ৬/২১ পান। ঐ সময়ে এটিই তার সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ছিল।[১৩] এর পরপরই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের পক্ষে খেলতে নামেন। দ্বি-শতকধারী ওয়ালি হ্যামন্ডের একমাত্র উইকেট লাভ করতে পেরেছিলেন তিনি। দুইবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ ধরাশায়ী হলেও বৃষ্টির কারণে বিরাট পরাজয়বরণ থেকে রক্ষা পায়।[১৪] এমসিসি ও বার্বাডোসের মধ্যে পরবর্তী খেলাটিতে ভাগ্যের অদল-বদল ঘটে। এবার এমসিসি দল ড্র করতে সমর্থ হয়। খেলায় জর্জ ফ্রান্সিস প্রথম ইনিংসে ৭/৫০ পান। এ বোলিং পরিসংখ্যানটিই তার খেলোয়াড়ী জীবনের সেরা ছিল।[১৫]
এরপর ফ্রান্সিস আরও দুইটি প্রতিনিধিত্বমূলক খেলায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে অংশ নেন। একবার ত্রিনিদাদ ও আরেকবার ব্রিটিশ গায়ানার পক্ষে খেলে মিশ্র সফলতা পান। তিন খেলার ঐ সিরিজে ৩৭.২৫ গড়ে মাত্র আট উইকেট পেয়েছিলেন। ঐ মৌসুমের প্রথম-শ্রেণীর অন্য খেলাগুলোয় ৮.১১ গড়ে ১৮ উইকেট দখল করেন। তন্মধ্যে, বার্বাডোস ও এমসিসির দুইটি খেলা ছিল।[১৬]
ইংল্যান্ড গমন, ১৯২৮
সম্পাদনা১৯২৬ সালে ইম্পেরিয়াল ক্রিকেট কনফারেন্স সিদ্ধান্ত নেয় যে, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রতিনিধিত্বমূলক খেলায় অংশগ্রহণকারী তিনটি নতুন দল - ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ডের খেলাগুলো পরবর্তী সময় থেকে টেস্ট খেলারূপে গণ্য করা হবে। এরফলে এ প্রক্রিয়ায় প্রথম ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ১৯২৮ সালে ইংল্যান্ড গমন করে।
১৯২৩ সালে ইংল্যান্ড গমনকারী ফ্রান্সিস, বার্বাডিয়ান সঙ্গী গ্রিফিথ ও লিয়ারি কনস্ট্যানটাইন - এ তিনজন ফাস্ট বোলার ঐ দলে ছিলেন। তবে, সামগ্রিকভাবে এ সফরটি বেশ ব্যর্থতায় ভাস্বর ছিল। দলের পূর্বেকার সফরের তুলনায় এ দলটি সফর অত্যন্ত নিম্নমানের ছিল। প্রত্যেকই ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার টেস্ট খেলা গুরুতর ভুল ছিল বলে উইজডেনে উল্লেখ করা হয়।[১৭] যদিও ফ্রান্সিস দ্রুতগতিসম্পন্ন বোলার ছিলেন, তবুও ১৯২৩ সালের ন্যায় তার পেস কিংবা নিখুঁততা লক্ষ্য করা যায়নি।[১৭] দলটি অতিমাত্রায় তাদের ফাস্ট বোলার, স্লিপ ফিল্ডার ও উইকেট-রক্ষকের উপর নির্ভরশীল ছিল।
তিনজন ফাস্ট বোলারদের মধ্যে কেবলমাত্র গ্রিফিথই যৎকিঞ্চিৎ প্রভাববিস্তার করতে পেরেছিলেন। তিনটি টেস্টে অংশ নিয়ে ১১ উইকেট পান। অন্যদিকে কনস্ট্যানটাইন টেস্ট খেলায় ব্যাট কিংবা বল হাতে ব্যর্থ হন। তবে, সকল প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ১৩৮১ রান ও ১০৭ উইকেট লাভ করেছিলেন তিনি। কিন্তু, ফ্রান্সিস টেস্ট কিংবা অন্য খেলাগুলোর কোনটিতেই তেমন ভূমিকা রাখতে পারেননি। গড়ে ৪২ রান খরচায় ছয়টি টেস্ট উইকেট পান। ওভারপ্রতি সাড়ে তিন রান দেন। প্রথম-শ্রেণীর খেলায় ৩১.৯৬ গড়ে মাত্র ৫৬ উইকেট দখল করেছিলেন।[১৮]
লর্ডসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইতিহাসের প্রথম টেস্টে প্রথম বল করার গৌরব অর্জন করেন জর্জ ফ্রান্সিস। ওভালের খেলায় ১১২ রান দিয়ে চার উইকেট পান। কিন্তু, স্বাগতিক ইংল্যান্ড দলকে তিন টেস্টের ঐ সিরিজে একবারের বেশি ব্যাটিংয়ে নামতে হয়নি। কেবলমাত্র দ্বিতীয় খেলায় ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বোলিং আক্রমণ মোকাবেলা করে ইংল্যান্ড দল তাদের সর্বনিম্ন রান তুলে ৩৫১। প্রথম-শ্রেণীর কাউন্টি দলগুলোর বিপক্ষে খেলে কোন ইনিংসেই পাঁচ উইকেট লাভের কৃতিত্ব প্রদর্শন করতে পারেননি জর্জ ফ্রান্সিস।
অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শৌখিন খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া হার্লেকুইন্স দলের বিপক্ষে মৌসুমের শেষ প্রথম-শ্রেণীর উৎসব ক্রিকেট খেলায় ব্যাট হাতে জর্জ ফ্রান্সিস তার সেরা খেলা উপহার দেন। খেলায় তিনি প্রথম ইনিংসে ৬১ রান তুলেন। শেষ উইকেট জুটিতে জো স্মলকে সাথে নিয়ে ৫০ মিনিটে ১০৭ রান তুলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে শেষ উইকেট জুটিতে গ্রিফিথের সাথে ৭৩ রান যুক্ত করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ৩২ রানে অপরাজিত ছিলেন।[১৯] প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ৬১ রানই তার সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ এবং খেলোয়াড়ী জীবনে একমাত্র পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস ছিল।
ইংল্যান্ডের আগমন, ১৯২৯-৩০
সম্পাদনা১৯২৯-৩০ মৌসুমে মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব চার টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজ খেলতে আসে ও টেস্ট থেকে মর্যাদা কেড়ে নেয়ার মতো মন্তব্যের সমুচিত জবাব দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। এরপর ১৯৩০-৩১ মৌসুমে দলটি অস্ট্রেলিয়া গমন করে ও প্রথমবারের মতো উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেয়। উভয় সিরিজেই জর্জ ফ্রান্সিসের অংশগ্রহণ ছিল। তন্মধ্যে, ১৯২৯-৩০ মৌসুমে সফররত ইংরেজ দলটিতে আংশিক টেস্ট খেলোয়াড় ছিল। একই সময়ে দলটি নতুন টেস্টভূক্ত দেশ নিউজিল্যান্ড গমন করে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট দলটিতে পৃথক ক্রিকেট কর্তৃপক্ষ খেলোয়াড় নির্বাচন করে। ফলে, ফ্রান্সিস কেবলমাত্র একটি টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পান। ব্রিটিশ গায়ানার জর্জ টাউনে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল প্রথম টেস্ট জয়ে সমর্থ হয়। জর্জ হ্যাডলি উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন ও প্রথম ইনিংসে ক্লিফোর্ড রোচ দ্বি-শতক হাঁকান। উইজডেনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, খেলায় জর্জ ফ্রান্সিস ছয় উইকেট পেয়েছিলেন। তাকে যোগ্য সহযোগিতা করে কনস্ট্যান্টাইনের নয় উইকেট লাভ। ফলশ্রুতিতে, ইংল্যান্ড দল দুইবার বোল্ড আউট হয়।[২০][২১] প্রথম ইনিংসে তিনি ৪/৪০ লাভ করেন। এটি তার টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনের সেরা সাফল্য ছিল।
অস্ট্রেলিয়া গমন, ১৯৩০-৩১
সম্পাদনাপরবর্তী শীত মৌসুমে ফ্রান্সিস, গ্রিফিথ ও কনস্ট্যান্টাইন - এ তিনজন ফাস্ট বোলারকে নিয়ে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়া গমন করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। ১৯২৮ সালে বিদেশ সফরে ইংল্যান্ড গমন করে যে ধরনের সফলতা পেয়েছিল সে তুলনায় অস্ট্রেলিয়ায় তারা কম সফল হয়। পাঁচ টেস্টের গড়া সিরিজের প্রথম চার টেস্টের তিনটিতেই দলটি স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার কাছে ইনিংস ব্যবধানে পরাজিত হয়। তবে, সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে তিনজন ফাস্ট বোলারই দলের স্বল্প ব্যবধানের বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে তিনি ৪/৪৮ পেয়েছিলেন।[২২] সমগ্র সিরিজে ৩১.৮১ গড়ে ১১ উইকেট দখল করেন তিনি।[২৩]
ইংল্যান্ড গমন, ১৯৩৩
সম্পাদনা১৯৩৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল পুনরায় ইংল্যান্ড গমন করে। এরপূর্বে দল গঠনের জন্য বছরের শুরুতে দুইটি টেস্ট প্রস্তুতিমূলক খেলার আয়োজন করা হয়েছিল। তন্মধ্যে, জর্জ ফ্রান্সিস দ্বিতীয় খেলাটিতে অংশগ্রহণ করেন। প্রথম ইনিংসে ৫/৩৮ ও দ্বিতীয়টিতে ১/১৭ পান।[২৪] তবে, এ পরিসংখ্যানটি যথেষ্ট ছিল না। তাসত্ত্বেও, তাকে দলে রাখা হয়। ইংল্যান্ডে কৃষ্ণাঙ্গ ক্রিকেটের পথিকৃৎ চার্লস লিউয়েলিনের পর ১৯৩৩ ও ১৯৩৪ - এ দুই মৌসুমে পেশাদারী পর্যায়ের বোল্টন ক্রিকেট লীগে র্যাডক্লিফের পক্ষে যোগ দেন।[২৫]
সফর আয়োজকেরা আশাবাদী ছিলেন যে, ল্যাঙ্কাশায়ার লীগে অংশগ্রহণকারী লিয়ারি কনস্ট্যান্টাইনকে নেলসন কর্তৃপক্ষ বড় ধরনের খেলায় ছাড় দিবেন। কিন্তু, এর ব্যতয় ঘটলে লর্ডসের প্রথম টেস্ট খেলার জন্য র্যাডক্লিফ থেকে আনা হয় ও তিনি ম্যানি মার্টিনডেলের সাথে বোলিং উদ্বোধনে নামেন।[২৬] খেলায় তিনি কোন উইকেট লাভে সক্ষমতা দেখাননি। উইজডেনের মতে, তিনি পেসে কিছু হারিয়ে ফেলেছেন ও পিচে অসারতায় ভুগছিলেন।[২৭]
অবসর
সম্পাদনাএরপর আর তাকে টেস্ট খেলায় ডাকা হয়নি। এর মাধ্যমেই প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে সর্বশেষ খেলায় অংশ নিয়েছিলেন জর্জ ফ্রান্সিস। পেস বোলিংয়ের কারণে তিনি অসম্ভব জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। ১৯২৩ সালে টেস্ট বহির্ভূত ইংল্যান্ড সফরে প্রভূতঃ সফলতা পেয়েছিলেন। সম্ভবতঃ টেস্ট মর্যাদা লাভের পূর্বেই তিনি তার স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করেছেন।
১২ জানুয়ারি, ১৯৪২ তারিখে বার্বাডোসের সেন্ট মাইকেলে ৪৫ বছর বয়সে দেহাবসান ঘটে জর্জ ফ্রান্সিসের।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Wisden: Obituaries in 1942"। www.espncricinfo.com। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০১১।
- ↑ C. L. R. James। Beyond a Boundary (2005 সংস্করণ)। Yellow Jersey Press, London। পৃষ্ঠা 127। আইএসবিএন 0-224-07427-X।
- ↑ "Scorecard: Sussex v West Indians"। www.cricketarchive.com। ২৩ মে ১৯২৩। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০১১।
- ↑ "West Indies win at Brighton", The Times, London (43350), পৃষ্ঠা 6, ২৫ মে ১৯২৩
- ↑ "Scorecard: Hampshire v West Indians"। www.cricketarchive.com। ৩০ মে ১৯২৩। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০১১।
- ↑ "Scorecard: Middlesex v West Indians"। www.cricketarchive.com। ২ জুন ১৯২৩। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০১১।
- ↑ "Low Scoring at Lord's", The Times, London (43360), পৃষ্ঠা 7, ৬ জুন ১৯২৩
- ↑ ক খ "Scorecard: Surrey v West Indians"। www.cricketarchive.com। ১ আগস্ট ১৯২৩। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০১১।
- ↑ "West Indies do well at The Oval", The Times, London (43409), পৃষ্ঠা 5, ২ আগস্ট ১৯২৩
- ↑ "Scorecard: HDG Leveson Gower's XI v West Indians"। www.cricketarchive.com। ৩ সেপ্টেম্বর ১৯২৩। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০১১।
- ↑ "A Great Finish at Scarborough", The Times, London (43439), পৃষ্ঠা 5, ৬ সেপ্টেম্বর ১৯২৩
- ↑ "West Indies Tour"। Wisden Cricketers' Almanack (1924 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 423।
- ↑ "Scorecard: Barbados v MCC"। www.cricketarchive.com। ৪ জানুয়ারি ১৯২৬। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০১১।
- ↑ "Scorecard: West Indies v MCC"। www.cricketarchive.com। ৮ জানুয়ারি ১৯২৬। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০১১।
- ↑ "Scorecard: Barbados v MCC"। www.cricketarchive.com। ১৪ জানুয়ারি ১৯২৬। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০১১।
- ↑ "M. C. C. Team in West Indies"। Wisden Cricketers' Almanack (1927 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 657।
- ↑ ক খ "West Indies Tour"। Wisden Cricketers' Almanack (1929 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 1–3।
- ↑ "West Indies in England"। Wisden Cricketers' Almanack (1929 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 49–50।
- ↑ "Scorecard: Harlequins v West Indians"। www.cricketarchive.com। ২৯ আগস্ট ১৯২৮। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ডিসেম্বর ২০১১।
- ↑ "Scorecard: West Indies v England"। www.cricketarchive.com। ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩০। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০১১।
- ↑ "M.C.C. Team in the West Indies"। Wisden Cricketers' Almanack (1931 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 683।
- ↑ "Scorecard: Australia v West Indies"। www.cricketarchive.com। ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৩১। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১২।
- ↑ "West Indies in Australia"। Wisden Cricketers' Almanack (1932 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 684।
- ↑ "Scorecard: G.C.Grant's XI v C.A.Merry's XI"। www.cricketarchive.com। ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৩। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১২।
- ↑ "Radcliffe Cricket Club History"। Radcliffe Cricket Club। ২৭ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১২।
- ↑ "Scorecard: England v West Indies"। www.cricketarchive.com। ২৪ জুন ১৯৩৩। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১২।
- ↑ "West Indies in England"। Wisden Cricketers' Almanack (1934 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 4।
আরও দেখুন
সম্পাদনাবহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- ইএসপিএনক্রিকইনফোতে জর্জ ফ্রান্সিস (ইংরেজি)
- ক্রিকেটআর্কাইভে জর্জ ফ্রান্সিস (সদস্যতা প্রয়োজনীয়) (ইংরেজি)
- "The 1928 series"। BBC News। ১২ জুন ২০০০। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০০৮।
- Scorecard for Windies first Test from Cricinfo