জঙ্গলমহল
জঙ্গল মহল[১] হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ঝাড়গ্রাম ও ছোটনাগপুর মালভূমির বন ও পর্বতময় অংশটির নাম। অষ্টাদশ শতাব্দীতে এই অঞ্চল ব্রিটিশ শাসনাধীনে আসার পর এই নাম চালু হয়।[২] সেযুগে জঙ্গল তরাই নামে পরিচিত অঞ্চলে এই জেলা অবস্থিত ছিল।[৩]
জঙ্গলমহল | |||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
ব্রিটিশ ভারত জেলা | |||||||||||||||||
১৮০৫–১৮৩৩ | |||||||||||||||||
পতাকা | |||||||||||||||||
ইতিহাস | |||||||||||||||||
• জেলা গঠন | ১৮০৫ | ||||||||||||||||
• জেলা অবলুপ্তি | ১৮৩৩ | ||||||||||||||||
| |||||||||||||||||
এই নিবন্ধটি একটি প্রকাশন থেকে অন্তর্ভুক্ত পাঠ্য যা বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনে: চিসাম, হিউ, সম্পাদক (১৯১১)। ব্রিটিশ বিশ্বকোষ (১১তম সংস্করণ)। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। |
ইতিহাস
সম্পাদনা১৮০৫ সালে অষ্টাদশ রেগুলেশন পাস হওয়ার পর বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া ও মেদিনীপুর জেলার মেজিস্ট্রেটের এখতিয়ারভুক্ত এলাকা বিচ্ছিন্ন করে জঙ্গলমহল জেলা গঠিত হয়। এই জেলা একটি পৃথক ম্যাজিস্ট্রেটের এখতিয়ারে আসে। ২৩টি পরগনা ও মহল নিয়ে এই জেলা গঠিত হয়েছিল। ১৮৩৩ সালের ত্রয়োদশ রেগুলেশন পাস হওয়ার পর জঙ্গলমহল জেলা ভেঙে যায়। সেনপাহাড়ি, শেরগড় ও বিষ্ণুপুর এস্টেট বর্ধমান জেলার অধিভুক্ত হয়। অবশিষ্ট অঞ্চল নিয়ে মানভূম জেলা গঠিত হয়।[২]
পরবর্তীকালে অবশ্য বর্ধমান জেলা ভেঙে বীরভূম, বর্ধমান, বাঁকুড়া ও মেদিনীপুর জেলা গঠিত হয়। ১৯১১ সালে বাংলা ও বিহার ভেঙে দুটি পৃথক প্রদেশ গঠন করা হলে বীরভূম, বর্ধমান, বাঁকুড়া ও মেদিনীপুর জেলা বাংলার অন্তর্ভুক্ত হয় এবং মানভূম জেলা বিহারের অন্তর্ভুক্ত হয়। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর মানভূম জেলার পুরুলিয়া মহকুমাটি নবগঠিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং পুরুলিয়া জেলা গঠিত হয়। বর্তমানে মানভূম জেলাটি দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পূর্ব মানভূম ও পশ্চিম মানভূম জেলা গঠিত হয়। এই দুই জেলা এখন ঝাড়খণ্ড রাজ্যের অন্তর্গত। মেদিনীপুর জেলা বিভাজিত হয়ে পূর্ব মেদিনীপুর ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা গঠিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম জেলার অন্তর্গত অঞ্চলটিকে কথ্যভাষায় এখনও “জঙ্গলমহল” বলে উল্লেখ করা হয়।
লালগড় আন্দোলনের সময় থেকে এই অঞ্চলটি জঙ্গলমহল এলাকা হিসেবে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেতে শুরু করে এরপর ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই চার জেলার মোট ২৩ টি ব্লককে একটি নোটিফিকেশনের মাধ্যমে জঙ্গলমহল এলাকা হিসেবে অভিহিত করে । এই ২৩ টি ব্লক হল -পুরুলিয়া জেলার:- বান্দোয়ান, ঝালদা ১, ঝালদা ২, বরাবাজার, বলরামপুর, মানবাজার ২, বাগমুন্ডি ও আড়সা, বাঁকুড়া জেলার:- রানিবাঁধ, সিমলাপাল, রায়পুর ও সারেঙ্গা ,ঝাড়গ্রাম জেলার:- বিনপুর ১, বিনপুর ২, জামবনি, ঝাড়গ্রাম, সাঁকরাইল, নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুর ১, গোপীবল্লভপুর ২ এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গরবেতা ২, শালবনী ও মেদিনীপুর সদর।
পৃথক রাজ্যের প্রস্তাব
সম্পাদনা২০২১ সালে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সাংসদ সৌমিত্র খাঁ পশ্চিমবঙ্গ থেকে পৃথক জঙ্গলমহল রাজ্যের প্রস্তাব করেছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন যে জঙ্গলমহল এলাকাটি অনুন্নত এবং স্থানীয়দের কর্মসংস্থান ও উন্নয়নের দাবি তবেই পূরণ হবে যদি জঙ্গলমহল একটি পৃথক রাজ্যে পরিণত হয়। প্রস্তাবিত জঙ্গলমহল রাজ্যটি পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, পশ্চিম বর্ধমান কিছু অংশ সহ অন্যান্য এলাকা নিয়ে গঠিত।[৪] তখন বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের ৪০ জন বিধায়কের মধ্যে ১৫ জন বিজেপির সদস্য।[৫]
তবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপি এই পৃথক রাজ্যের প্রস্তাব থেকে দূরে ছিল।[৬] এক তৃণমূল কংগ্রেস নেতা পৃথক রাজ্যের দাবির জন্য সৌমিত্র খাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দায়ের করেছিলেন।[৭]
কুড়মি আন্দোলন
সম্পাদনাএপ্রিল ২০২৩ থেকে জঙ্গলমহলের কুড়মি সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতিভুক্ত করার দাবিতে এক আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে। সেই উপলক্ষে ৫ এপ্রিল থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত কুড়মিরা পুরুলিয়া জেলায় এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় রেল অবরোধ করেছিল[৮] [৯]
পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে কুড়মিরা দেওয়ালে কোনোরকম রাজনৈতিক প্রচার নিষেধ করেছে।[১০]আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Forest Tenures in the Jungle Mahals of South West Bengal[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ O’Malley, L.S.S., ICS, Bankura, Bengal District Gazetteers, pp. 21-41, 1995 reprint, Government of West Bengal
- ↑ Browne, James (1788). India tracts: containing a description of the Jungle Terry districts, their revenues, trade, and government: with a plan for the improvement of them. Also an history of the origin and progress of the Sicks
- ↑ "Bengal BJP MP seeks separate Junglemahal state, party distances itself from demand"। NewIndianExpress। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুন ২০২১।
- ↑ "Why BJP MPs want a separate state in north Bengal"। India Today। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুন ২০২১।
- ↑ "BJP MP seeks separate Junglemahal state, party distances itself from demand"। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুন ২০২১।
- ↑ "Trinamool Leader Lodges Complaint Against BJP MPs For Demanding Separate Statehood"। NDTV। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুন ২০২১।
- ↑ সংবাদদাতা, নিজস্ব। "উঠল কুড়মিদের অবরোধ, সেপ্টেম্বর থেকে ফের বিক্ষোভের হুঁশিয়ারি"। www.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-১১।
- ↑ সংবাদদাতা, নিজস্ব। "মঙ্গলবার দুপুর ২টো পর্যন্ত জাতীয় সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করল কুড়মি সমাজ"। www.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-১১।
- ↑ "কুড়মি গ্রামে শুধু 'জয় গরাম'"। www.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-১১।