ছারছিনা দরবার শরীফ
এই নিবন্ধটিকে উইকিপিডিয়ার জন্য মানসম্পন্ন অবস্থায় আনতে এর বিষয়বস্তু পুনর্বিন্যস্ত করা প্রয়োজন। (মার্চ ২০২৩) |
ছারছীনা দরবার শরীফ বা ছারছীনা দারুচ্ছুন্নাত বাংলাদেশের একটি আধ্যাত্মিক শিক্ষাকেন্দ্র, অন্যতম দরবার শরীফ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।[১][২] এটি পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার স্বরূপকাঠী শহরের উত্তর পাশে ছারছীনা নামক গ্রামে অবস্থিত।[৩] ১৮৯০ সালে একই গ্রামের আধ্যাত্মিক নেতা ও পীর মাওলানা শাহ মোহাম্মদ নেছারউদ্দীন আহমদ এটি প্রতিষ্ঠা করেন।[৪] দরবারটি ইসলাম প্রচার ও প্রসারের জন্য বাংলাদেশ সহ ইসলামি বিশ্বে সুপরিচিতি অর্জন করেছে।[৫] প্রতি বছর দরবারের মাহফিলে কয়েক লক্ষ ভক্তের উপস্থিতি হয়।[৬] দরবার শরীফের বর্তমান পীর মাওলানা শাহ মোহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ যদিও তিনি ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই ইন্তেকাল করেছেন।[৭]
ছারছীনা দরবার শরীফ, পিরোজপুর | |
---|---|
ধর্ম | |
অন্তর্ভুক্তি | ইসলাম |
জেলা | পিরোজপুর জেলা |
অবস্থান | |
অবস্থান | ছারছীনা, স্বরূপকাঠী, নেছারাবাদ উপজেলা |
দেশ | বাংলাদেশ |
স্থাপত্য | |
ধরন | সুফি দরগাহ |
স্থাপত্য শৈলী | আধুনিক |
প্রতিষ্ঠার তারিখ | ১৮৯০ সাল |
মিনারের উচ্চতা | ৩০০ ফিট |
ওয়েবসাইট | |
www |
ইতিহাস
সম্পাদনানেছারউদ্দীন আহমদ তার দাদা মুন্সি জহির উদ্দিন ও পিতা সুফি সদরুদ্দিনের চিন্তাধারা প্রভাবিত ছিলো। এরা উভয়ই সুফি গোত্রীয় ব্যক্তি ছিলেন। সুফি সদরুদ্দিনের সময় নিজ বাড়িতে মুসাফিরখানা তৈরি হয়েছিলো, এখানে ইসলামি নানা বিষয়ে আলোচনা হতো। নেছারউদ্দীন আহমদ হুগলী মোহসিনীয়া মাদ্রাসায় পড়ার সময় ১৮৯৫ সালে ফুরফুরা শরীফের পীর আবুবকর সিদ্দিকীর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেন।[৮] বাইয়াত গ্রহণের পরে তিনি ইসলাম প্রচারের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন।
১৯০৫ সালে নেছারুদ্দিন নিজ বাড়িতে মুসাফিরখানা হিসাবে একটি গোলপাতার দোচালা ঘর নির্মাণ করেন। এই ঘরকেই তিনি ইসলাম প্রচারের কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করতেন। তিনি বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ইসলাম প্রচার করতেন ও সামাজিক কুসংস্কার দূরীকরণের চেষ্টা করতেন। তিনি জনসাধারণকে সচেতন করতেন ও নৈতিক উপদেশ দিতেন, এছাড়াও তিনি এই খানকায় তরিকার ছবক, তালিম-তরবিয়াত, ঈমান-আকিদাসহ ইসলামের মৌলিক রীতিনীতি বিষয়াদি শিক্ষা দিতেন। এভাবেই এই প্রতিষ্ঠানটি একসময় ছারছিনা মাদ্রাসা নামে পরিচিতি লাভ করে।
মূল ব্যক্তিত্ব
সম্পাদনাদরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা নেছারউদ্দীন আহমদ ১৯৫২ সালে মৃত্যুবরণ করার পর, দরবার শরীফের পীর হোন তার ছেলে আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ। আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহের সময়ে দরবারের বহু উন্নয়নমূলক কাজ হয়, তিনি সারা দেশব্যাপী জনহিতকর কাজের মাধ্যমে পরিচিত হয়ে উঠেন। তিনি শিক্ষা ও সামাজিক সচেতনতা নিয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ করেন। তার এই কাজের জন্য ১৯৮০ সালে জাতীয় স্বাধীনতা পুরস্কার পান। দরবারের পীরসমূহ:
- নেছারউদ্দীন আহমদ (১৮৯০–১৯৫২)
- আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ (১৯৫২–১৯৯০)
- শাহ মোহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ (১৯৯০–২০২৪)
- শাহ আবু নছর নেছারুদ্দীন আহমাদ হুসাইন (২০২৪–বর্তমান)
অবদান
সম্পাদনাএই দরবারের প্রধান পীর নেছারুদ্দিন সারাজীবন ইসলামের খেদমত করে প্রায় অগণিত মুরিদ করেছিলেন, ১৯৫০ সালে এদের মধ্যে বাছাইকৃত ১৪০১ জন মুরিদকে সাথে নিয়ে হজ্ব যাত্রায় রওনা দেন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
সম্পাদনা১৯১২ সালে আল্লামা নেছারুদ্দিন (রহঃ) কেরাতিয়া নামে একটি মক্তব প্রতিষ্ঠা করে, পরবর্তীতে ১৯৩১ সালে এটি ছারছিনা দারুসুন্নাত আলিয়া মাদ্রাসায় পরিণত হয়। প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা নেছার উদ্দীন রহ.মাদ্রাসার জন্য মঈনুদ্দীন চিশতি হল হল, আলফেসানী হল ও নেছার হল প্রতিষ্ঠা করেন। দ্বিতীয় পীর আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ প্রায় ৩ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলনে, তিনি ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ও ইবতেদায়ী মাদরাসার জন্য সংগ্রাম করেছেন। বর্তমান পীর মাওলানা শাহ মোহাম্মদ মোহেবুল্লাহ দারুল উলুম নেছারিয়া কদীম নেসাবি মাদ্রাসা নামে একটি দ্বীনীয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন।[৯]
প্রকাশনা
সম্পাদনানেছারুদ্দিন ইসলামি শিক্ষা সবার নিকটে পৌঁছে দিতে ১৯৪৯ সালেপাক্ষিক তাবলীগ নামে একটি পত্রিকা বের করতেন। তার পরবর্তী পীরগনও দরবার শরীফের নামে এই পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে।
সামাজিক উন্নয়ন
সম্পাদনা১৯৪১ সালে শাহ সূফি নেছারুদ্দীন আহমদ রহঃ বাঙালি হজ্ব যাত্রীদের জন্য জন্য একটি রিলিফ ফান্ড গঠন করেন, এই ফান্ড থেকে নেছারিয়া মুসাফিরখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর একই পীর ১৯৪৩ সালে জমাইয়েতে হিযবুল্লাহ নামে একটি ইসলামি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও ১৯৪৫ সালে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করার জন্য কেবলা সুন্নাহ বোর্ড গঠন, ও শিক্ষার্থীদের আত্মকর্মসংস্থান ব্যবস্থার জন্য তাত শিল্প গড়ে তুলেছিলেন।
বর্তমান পীর মাওলানা শাহ মোহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ একটি সরকারি মিনি হাসপাতাল, পূবালী ব্যাংক, অডিটোরিয়াম, ডাকবাংলো ও মাহফিলের জন্য বিশাল মাঠ, অজু-গোসলের জন্য কৃত্রিম জলাধার-ফোয়ারা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠা করেন।[৯]
মাহফিল
সম্পাদনাপ্রতিবছর বাংলাবর্ষ ১৪, ১৫ ও ১৬ অগ্রহায়ণ (২৯,৩০ নভেম্বর ও ১ ডিসেম্বর) এবং ২৭, ২৮, ২৯ ফাল্গুন (১২,১৩,১৪ ই মার্চ) মাসে দরবারে মাহফিলের আয়োজন হয়ে থাকে, সাম্প্রতিক ২০২১ সালে ১৩১তম মাহফিল অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিলো।[৬] এই মাহফিলে কয়েক লক্ষ মানুষের সমাগম হয়ে থাকে।[১০][১১] এই মাহফিলে ইসলামি আকিদা, আমল ও সাম্প্রতিক বিষয় সম্পর্কে ওয়াজ করা হয়।[১২] সবসময় এই মাহফিলের সাথে সাথে বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহ এর সম্মেলনের আয়োজন হয়ে থাকে।[১৩][১৪]
আরও দেখুন
সম্পাদনাগ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- উদ্দীন আহমেদ, সিরাজ (২০১৫)। "বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (দ্বিতীয় খণ্ড)"। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা।
- আনওয়ারুল হক, ডঃ এএফএম (২০০৫)। শাহ্ সুফী নেছারুদ্দীন আহমদ (রঃ): একটি জীবন একটি আদর্শ। ছারছিনা, পিরোজপুর: ছারছিনা দারুচ্ছুন্নাত লাইব্রেরী।
- মোঃ ইসমাইল হোসেন, অধ্যক্ষ আলহাজ্জ (২০০৫)। বীর মুজাহিদ পীর শাহ্ আবু জাফর মোঃ ছালেহ রহ: পীর ছাহেব, ছারছীনা শরীফ। ছারছিনা, পিরোজপুর: ছারছিনা দারুচ্ছুন্নাত লাইব্রেরী।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "ছারছিনা মাদ্রাসা ও দরবার শরীফ"। সরকারি বাতায়ন। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মে ২০২২।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "ইসলামী আদর্শ বিস্তারে ছারছীনার মরহুম পীর ছাহেবদ্বয়ের অবদান অবিস্মরণীয়-ছারছীনার পীর ছাহেব"। DailyInqilabOnline। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-২৩।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "ইসলামী আদর্শ বিস্তারে ছারছীনার মরহুম পীর ছাহেবদ্বয়ের অবদান অবিস্মরণীয়-ছারছীনার পীর ছাহেব"। DailyInqilabOnline। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-২৩।
- ↑ "ছারছীনা দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা পীরে কামেল শাহ সূফী নেছারুদ্দীন আহমদ (র:) এর জীবনী | ইসলামী ছাত্রসেনা"। ইসলামী ছাত্রসেনা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-২৩।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "কোরআন ও সুন্নাহর প্রচারে কাজ করছে ছারছীনা দরবার"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-২৩।
- ↑ ক খ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "মানুষকে আল্লাহওয়ালা গড়ে তুলতে দাদা হুজুর ছারছীনা দরবার প্রতিষ্ঠা করেছেন : পীর ছাহেব মোহেববুল্লাহ"। DailyInqilabOnline। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-২৩।
- ↑ "রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করে কোটি মানুষের হৃদয় জয় করেছিলেন এরশাদ: ছারছীনা পীর"। Jugantor (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-২৩।
- ↑ "ছারছিনার পির সাহেব - Barisalpedia"। www.barisalpedia.net.bd। ২০২২-০৫-৩১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-২৩।
- ↑ ক খ Muktibani। "Muktibani - শতাব্দীর ঐতিহ্যধন্য ছারছীনা শরীফ"। Muktibani। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-২৩।
- ↑ "ছারছীনা দরবার শরীফের ১২৫তম তিন দিনব্যাপী মাহফিল শুরু"। banglanews24.com। ২০১৫-০৩-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-২৩।
- ↑ সংবাদদাতা, ছারছীনা। "ছারছীনা দরবার শরীফ বার্ষিক মাহফিল শুরু কাল"। DailyInqilabOnline। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-২৩।
- ↑ সংবাদদাতা, নেছারাবাদ (পিরোজপুর) উপজেলা। "ছারছীনা দরবারের আমল, আকীদা ও সেলসেলার অমিলকারিদের থেকে দূরে থাকতে হবে -ছারছীনা পীর"। DailyInqilabOnline। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-২৩।
- ↑ সংবাদদাতা, ছারছীনা। "ছারছীনা দরবার শরীফ বার্ষিক মাহফিল শুরু কাল"। DailyInqilabOnline। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-২৩।
- ↑ "ছারছিনা দরবারের বার্ষিক মাহফিল রোববার শুরু"। jagonews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-২৩।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট