চট্টগ্রামে শিক্ষার ইতিহাস
বৃহত্তর চট্টগ্রাম বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। শহরটির শিক্ষার ইতিহাস সুপ্রাচীন।
ষষ্ঠ শতকে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের পতন শুরু হলে অষ্টম (মতান্তরে দশম) শতাব্দীতে চট্টগ্রামে পণ্ডিতবিহার প্রতিষ্ঠিত হয়। যেখানে লুইপা, সবরিপা, লাড়পা, অবধুতপা প্রমুখ বৌদ্ধ পণ্ডিত গবেষণা করতেন।
১৮৩৮ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের রাজকীয় ভাষা ছিল ফারসি। আরবি পাঠ শেষে মুসলমানরা এবং বিত্তশালী হিন্দুরা ফারসি ভাষা শিখতো। তবে মুসলমানদের মধ্যে বাংলার প্রসার কম ছিল। ধর্মীয় শিক্ষা মুসলমানের মধ্যে সাধারণ ছিল। মুসলমান ছাত্ররা শিক্ষক মাওলানা বা মুয়াজ্জিনের নিকট আরবি ভাষা শিখতো। মুয়াজ্জিনরা মিয়াজী, মিজ্জি নামে পরিচিত ছিল। তাদের শিক্ষালয়কে মিজ্জির দরস বলা হতো। মুঘল আমলে মুসলমান শিক্ষকদের নিষ্কর জমি বরাদ্দ দেয়া হতো। মুসলমান মেয়েরা পাঠশালায় যেতো না এবং প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহন করে শিক্ষার ইতি ঘটতো। উচ্চ বর্ণের হিন্দুরা শিক্ষা গ্রহণ করতো। তবে নিম্নবর্ণের হিন্দুরা শিক্ষা গ্রহন করতো না।
ইতিহাস
সম্পাদনাপূর্ববাংলার অন্যান্য স্থানের মতো খ্রিষ্টীয় উনিশ শতকের আগ পর্যন্ত চট্টগ্রামের শিক্ষাব্যবস্থার কোন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ ছিল না। তবে খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে পণ্ডিত বিহার নামে একটি বৌদ্ধ শিক্ষালয়ের অস্তিত্বের ব্যাপারে অধিকাংশ ইতিহাসবিদই একমত পোষণ করেন। এই বিহারটিকে অনেকে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমমর্যাদাসম্পন্ন হিসেবে গণ্য করে থাকেন। প্রজ্ঞাভদ্র নামের এই বিহারের একজন অধ্যক্ষ সংস্কৃত ও পালি ভাষায় ছয়টি পুস্তক রচনা করেন। বিখ্যাত পণ্ডিত লইপাদ, শবরিপাদ, ধর্মশ্রী, মৈন, বুদ্ধজ্ঞানপাদ প্রমুখ এই বিহারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
এই বিহারের অবলুপ্তির পর পরবর্তী প্রায় ১ হাজার বছর পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার তেমন কোন নজির পাওয়া যায় না। মোগল ও তৎপরবর্তী আমলে স্থানীয় শিক্ষা ছিল ধর্ম ভিত্তিক। মুসলমানদের জন্য মক্তব-মাদ্রাসা, হিন্দুদের পাঠশালা-টোল-চতুষ্পাঠী আর বৌদ্ধদের কেয়াং। মোগল আমলে রাজকীয় কাজের ভাষা ছিল ফার্সি ভাষা। সেকারণে চট্টগ্রামেও ফার্সি ও সংস্কৃত ভাষার ব্যাপক প্রচলন হয়।
ব্রিটিশ আমল
সম্পাদনা১৭৬০ সালে ইংরেজরা চট্টগ্রাম দখল করে। নিজেরা শিক্ষা বিস্তারের চেষ্টা না করলেও এ ব্যাপারে তারা মিশনারিদের সহায়তা গ্রহণ করে। ১৮১৮ সালের মধ্যে মিশনারিরা এলাহাবাদ থেকে আকিয়াব পর্যন্ত ১৮০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এদের মধ্যে ১১১টি শ্রীরামপুর মিশনের আওতায় ছিল।[১] এগুলোর মধ্যে কোন না কোনটির চট্টগ্রামে অবস্থিত হওয়া অসম্ভব নয়।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শিক্ষা বিস্তারে আগ্রহী ছিল না। ১৭৮১ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস-এর মদদে কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা ছাড়া আর কোন নজির মেলে না। ১৮১৩ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভারতে শিক্ষা প্রসারের একটি বিল পাশ হয় আর ১৮৩৭ সালের ৭ মার্চ বড়লাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিং তার পরিষদের আইন সচিব টমাস বেবিংটন মেকলের সুপারিশ অনুসারে ইংরেজি শিক্ষা প্রবর্তনের উদ্যোগ নেন। তদানুযায়ী ১৮৩৬ সালে তখনকার ৫টি বিভাগে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওযা হয়। চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠত হয় চট্টগ্রাম জিলা স্কুল। এর ৫ বছর পর মিশনারীরা ১৮৪১ সালে সেন্ট প্লাসিডস স্কুল প্রতিষ্ঠা করে। ১৮৪৪ সালে বড়লাট লর্ড হার্ডিঞ্জ ইংরেজি জানাকে রাজকার্যে যোগদানের শর্ত করল অর্যার্য স্থানের ন্যায় চট্টগ্রামেও ইংরেজি শিক্ষার মধ্য ও উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পায়। এর মধ্যে মিউনিপ্যাল হাই স্কুল (প্রতিষ্ঠা ১৮৮০), চিটাগাং ইংলিশ স্কুল বা চট্টগ্রাম হাই স্কুল (১৮৮৫) ও হাজারী স্কুল (১৮৮৫) অন্যতম।
১৮৯১ সালে হান্টার কমিশনের পর থেকে বিদ্যালয়ে সরকারী সাহায্য শর্তারোপিত হয়ে যায়। ফলে তেমন করে আর নতুন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পায় নি। বিশ শতকের শুরু থেকে স্বদেশি আন্দোরন জোরদার হতে থাকে। বিভিন্ন স্থানে নতুন নতুন বিদ্যালয় স্থপিত হয়। এ সময়ের স্কুল গুলোর মধ্যে রয়েছে এনায়েত বাজারের ণ্যাশনাল হাই স্কুল, দেওয়ান বাজারে ইমাতারা হাই স্কুল, সদরঘাটে গ্রাজুয়েট হাই স্কুল এবং ফিরিঙ্গিবাজারে জে এম সেন হাই স্কুল। এর মধ্যে কেবল জে এম সেন হাই স্কুলটি টিকে রয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা
সম্পাদনা১৯২৫ সালে চট্টগ্রাম পৌরসভার চেয়ারম্যান নূর আহমদ বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা চালু করেন।
কলেজ
সম্পাদনা১৮৬৯ সালে চট্টগ্রাম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে কলেজ ছিল মাত্র ৩টি। এর মধ্যে একটি ছিল ইন্টারমিডিয়েট কলেজ। পরে দ্রুত কিছু কলেজ স্থাপিত হয়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
সম্পাদনাপ্রতিষ্ঠাকালের ভিত্তিতে প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা
সম্পাদনাবিদ্যালয়
সম্পাদনাচট্টগ্রাম শহরের বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল, চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ডঃ খাস্তগীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল, গভ. মুসলিম হাই স্কুল, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
মহাবিদ্যালয়
সম্পাদনাচট্টগ্রামের নামকরা কলেজের মধ্যে রয়েছে, চট্টগ্রাম কলেজ, মহসীন কলেজ, ইস্পাহানী কলেজ,চট্টগ্রাম পাবলিক কলেজ,চট্টগ্রাম সরকারি বাণিজ্য কলেজ ইত্যাদি।
বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদনাচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামে উচ্চতর শিক্ষার প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়। চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এখানকার প্রধান কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
এছাড়া এখানে বেশ কয়েকটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ভারতের শিক্ষার ইতিহাস, ড. হরিসাধন গোস্বামী
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |