গোশালা
গোশালা বা গৌশালা ( হিন্দি : गौशाला , রোমানাইজড : gauśālā ) হল গবাদি প্রাণীর সেবা ও রক্ষার্থে তথা গো-পালনের আবাসস্থল। ভারতে বিপথগামী গবাদি প্রাণীর প্রতিরক্ষামূলক আশ্রয়স্থল। সরকারী অনুদান এবং অনুদান ভারতে গো-আশ্রয় কেন্দ্রগুলির আয়ের প্রাথমিক উত্স। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ভারতীয় জনতা পার্টি সরকারে ক্ষমতায় আসার পর ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দুই বছরে গোশালার জন্য ₹ ৫.৮ বিলিয়ন টাকা (৬৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) খরচ করেছে।
বর্ণনা
সম্পাদনাসংস্কৃত শব্দ 'গোশালা' ("গো" অর্থে গরু বা গবাদি পশু এবং "শালা" মানে আশ্রয় স্থল : গো + শালা = গরুর আশ্রয়), অর্থ গরু, বাছুর এবং গবাদি পশুর আবাসস্থল।
ইতিহাস
সম্পাদনাভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে গোশালা ধারণার প্রবর্তিত হয়। ভারতীয় কৃষি এবং গ্রামবাসীদের দৈনন্দিন জীবনে তাদের ভূমিকা অপরিহার্য। শত শত বছর ধরে ভারতীয়েরা বিশেষকরে হিন্দুধর্মালম্বী মানুষেরা গাভীকে গোমাতাজ্ঞানে শ্রদ্ধা এবং সম্মানের সাথে আচরণ করে। যুগ যুগ ধরে, তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে খাদ্য ও শ্রমের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। তাদের সেবা ও রক্ষা করা পুণ্য কাজ হিসাবেই বিবেচিত হয়। ভারতীয়েরা বিশ্বাস করে যে এদের রক্ষা করা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর একটি উপায়। ভারতে গোশালার ধারণাটি হরিয়ানার রেওয়ারি অঞ্চলের রাজা রাও যুধিষ্ঠর সিং যাদব প্রবর্তন করেন। তিনি ছিলেন কিংবদন্তি রাও তূলা রামের পুত্র, যিনি ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে উল্লেখযোগ্যভাবে অংশগ্রহণ করেন। হরিয়ানা রাজ্যের রেওয়াড়ির রামপুরাতে ভারতের প্রথম গোয়ালঘর স্থাপন করেন ।[১][২][৩][৪][৫][৬] রাজা রাও যুধিষ্ঠির সিং ছিলেন কিংবদন্তি রাও তূলা রামের পুত্র ও আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর শিষ্য, যিনি ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে উল্লেখযোগ্যভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি মহর্ষির অনুপ্রেরণায় রেওয়াড়িতে শুধু ভারত নয় বিশ্বের প্রথম গো-আশ্রয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। [৭] স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীও ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে গোকরুণানিধি নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন যেখানে গো-পালনের উপকারিতা ব্যাখ্যা করেছেন।
১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাবে প্রথম গৌরক্ষিণী সভা ( গোরক্ষা সমিতি ) প্রতিষ্ঠিত হয়। [৮] তাদের শুরু করা গোরক্ষা আন্দোলনটি দ্রুত সমগ্র উত্তর ভারত এবং বেঙ্গল , বোম্বে , মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় প্রদেশে ছড়িয়ে পড়ে। সংগঠনটি বিচরণকারী গবাদি পশুদের উদ্ধার করে এবং সেগুলোকে গোশালা নামক স্থানে পালনের জন্য পুনরায় দাবি করে। উত্তর ভারতের দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলি অধিবাসীদের কাছ থেকে চালসহ খাদ্যশস্য সংগ্রহ ও পরে বিক্রি করে গোশালাগুলির অর্থায়নের ব্যবস্থা করতে থাকে। তারা গরু কোরবানি নিষিদ্ধ করার দাবিতে নানা জায়গা হতে ৩৫০,০০০ জনের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে। [৯] ১৮৮০ থেকে ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কয়েক শত গোশালা খোলা হয়। [১০] ভারতের দক্ষিণ রাজস্থানের সাঁচোর জেলার ছোট শহর পথমেড়ায় শ্রী গোধাম মহাতীর্থ পথমেদা হল ভারতের বৃহত্তম গোশালা। এখানে ৮৫ হাজারের বেশি গরু আশ্রয় পেয়েছে। [১১]
সরকারী অনুদান
সম্পাদনা২০১৪ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ভারতীয় জনতা পার্টি সরকারে ক্ষমতায় আসার পর ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দুই বছরে গোশালার জন্য ₹ ৫.৮ বিলিয়ন টাকা (৬৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) খরচ করেছে। [১২]
অনুৎপাদনশীল গরুগুলিকে কসাইখানা পাঠানো রোধ করার জন্য, অথর্ব বা অতিবৃদ্ধ গোরুদের জন্য সরকার ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে জাতীয় কর্মসূচি 'রাষ্ট্রীয় গোকুল মিশন'-এর সূত্রপাত করে। এই সমস্ত পশুদের শারীরিক বর্জ্য থেকে আয় তাদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অর্থ প্রদানের উদ্দেশ্যে করা হয়। ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার গোশালাগুলির উপর একটি জাতীয় সম্মেলনের সূচনা করে। ভারতের নীতি আয়োগ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে গোমূত্র এবং গোবরের বাণিজ্যিক ব্যবহার ও তার বিকাশের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখে গোশালা অর্থনীতির জন্য রোডম্যাপ তথা নীতিমালা বা নির্দেশিকা তৈরির কাজ করছে।[১৩] ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে ২১ জুলাই প্রকাশিত এক তথ্য অনুসারে ভারতে গোশালার সংখ্যা ৭৬৭৬। ভারতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গোশালা রয়েছে রাজস্থানে। সংখ্যার বিচারে পরবর্তী রাজ্য তিনটি হল যথাক্রমে গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ ও হরিয়ানা। পূর্ব ভারতের গোশালার সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে কম।[১৪] পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় গোশালা নদিয়া জেলায় ইসকনের মায়াপুর চন্দ্রোদয় মন্দিরের বিস্তৃত প্রাঙ্গণে অবস্থিত।
আয়ের অন্যান্য উৎস
সম্পাদনামূলত, অনুদানই গোশালার আয়ের একমাত্র উৎস। কিছু গোশালা অতিরিক্ত আয়ের জন্য যোগব্যায়াম এবং সঙ্গীত পাঠ প্রদান করে। [১৫]
এছাড়াও দেখুন
সম্পাদনা- গোরক্ষা আন্দোলন, ভারত
- ভারতে গরু জবাই
- ধর্মে গবাদি পশু
- হিন্দুধর্ম
- গোয়াল ঘর
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Rastogi, Nawal Kishore (২০০২-০৪-২৭)। "In stoic silence, historical tanks of Rewari await tourists"। Tribune India। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৬।
- ↑ Satish Chandra Mittal (১৯৮৬)। Haryana, a Historical Perspective। Atlantic Publishers & Distri। পৃষ্ঠা 4–। GGKEY:WZ4ZX97B5N2।
- ↑ https://www.google.co.in/books/edition/Who_s_who/TOFFAQAAIAAJ?hl=en&gbpv=1&bsq=rewari+first+gaushala&dq=rewari+first+gaushala&printsec=frontcover
- ↑ https://www.google.co.in/books/edition/Hindu_Mahasabha_in_Colonial_North_India/iUFalxUFFWkC?hl=en&gbpv=1&dq=dayanand+gaushala+first&pg=PA128&printsec=frontcover
- ↑ Rastogi, Nawal Kishore (২০১৩-০৪-০৫)। "Interesting relationship between Swami Dayanand Saraswati and India's first Gaushala"। Dainik Bhaskar। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৬।
- ↑ https://www.amarujala.com/haryana/rewari/the-foundation-of-the-first-gaushala-was-laidon-the-shore-of-nand-sarovar-rewari-news-rtk542918986
- ↑ "Arya Samaj spread after Dayananda's Rewari visit"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-২৩।
- ↑ The Making of an Indian Metropolis, Colonial governance and public culture in Bombay, 1890/1920, Prashant Kidambi, p. 176, আইএসবিএন ৯৭৮-০-৭৫৪৬-৫৬১২-৮.
- ↑ Vishnu's crowded temple, India since the great rebellion, pp. 67-69, Maria Misra, 2008, Yale University Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০-৩০০-১৩৭২১-৭.
- ↑ "Report of the National Commission on Cattle - Chapter I (10. Beginning of mass protests against cow-killings)"। Dahd.nic.in। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০১৩। এই উৎস থেকে এই নিবন্ধে লেখা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা পাবলিক ডোমেইনে রয়েছে।
- ↑ Gupta, Abhinav (২০১৬-০৪-১৩)। "Shri Pathmeda Godham Mahatirth: World's largest cowshed"। www.indiatvnews.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-০৮।
- ↑ "Cow urine can sell for more than milk in India"। Bloomberg.com। ২০১৬-০৭-১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৯-১৮।
- ↑ Sharma, Yogima Seth। "Niti Aayog working on road map to develop Gaushala economy"। The Economic Times। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-০৮।
- ↑ "State-wise list of Goshala in the county as a answered in Rajya Shabha" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১১-১৬।
- ↑ "Shri Shaktidarshan Yogashram"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-০১।