গোবিন্দ অধিকারী
গোবিন্দ অধিকারী (১৮০০ - ১৮৭২) উনিশ শতকের একজন যাত্রার অভিনেতা এবং গীতিকার। তিনি কৃষ্ণ যাত্রায় দুতী সাজতেন এবং কীর্তনের দোহারও গাইতেন। তিনি কয়েকটি যাত্রাপালা রচনা করেন। যাত্রাদলের জন্য তার রচিত বহু পদাবলী ও সংগীত বাংলা ভাষার শ্রীবৃদ্ধি সাধনে সহায়ক হয়েছে। তার রচিত উল্লেখযোগ্য যাত্রাপালা হচ্ছে শুকসারীর পালা ও চূড়া-নূপুরের দ্বন্দ্ব।[১]
গোবিন্দ অধিকারী | |
---|---|
জন্ম | ১৮০০ |
মৃত্যু | ১৮৭২ |
আন্দোলন | বাঙালি যাত্রাভিনেতা |
জন্ম ও শৈশব
সম্পাদনাবাংলা ১২০৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন।[২] হুগলি জেলার জাঙ্গিপাড়া গ্রামে বৈরাগীকুলে জন্ম। স্বগ্রামে বাল্যশিক্ষা শেষ করে তিনি হাওড়া জেলার ধুরখালি গ্রামের গোলোকদাস অধিকারীর নিকট কীর্তন শিক্ষা করেন। জাতিতে বৈষ্ণব শ্রেণিভুক্ত ব্রাহ্মণ ছিলেন।[১]
কর্মজীবন
সম্পাদনাতিনি জগদীশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের যাত্রাদলে 'ছোকরা' হিসেবে প্রথম খ্যাতি অর্জন করেন। প্রথমে নিজেই কীর্তনিয়া দল ও পরে 'কালীয় দমন' যাত্রাদল গঠন করে অভিনয় আরম্ভ করেন। 'রাধাকৃষ্ণের লীলা' অভিনয়ে তিনি স্বয়ং দূতীর ভূমিকায় খ্যাতিমান হন ও প্রতিষ্ঠা অর্জন করেন। তারপর তিনি জাঙ্গিপাড়া-কৃষ্ণনগর ছেড়ে কলকাতার নিকটস্থ সালিখায় আসেন। যাত্রাদলের জন্য তার রচিত বহু পদাবলী ও সংগীত বাংলা ভাষার শ্রীবৃদ্ধি সাধনে সহায়ক হয়েছে। তার রচিত উল্লেখযোগ্য যাত্রাপালা হচ্ছে শুকসারীর পালা ও চূড়া-নূপুরের দ্বন্দ্ব।[১] কৃষ্ণ যাত্রায় তার দুতীগিরি দেখবার জন্য লোকে দশ ক্রোশ রাস্তা হেঁটে যাত্রা দেখতে যেত। “চুক্তির টাকা” ব্যতীত তিনি আসরে অনেক টাকা পুরস্কার হিসাবে উপহার পেতেন। তার গানে মুগ্ধ হয়ে অনেকে গায়ের উত্তরীয় পর্যন্ত খুলে তাকে পারিতোষিক দিতেন।[২] যাত্রা, কীর্তন ও কথকতায় অর্জিত অর্থ দিয়ে তিনি জমিদারি ক্রয়ে সক্ষম হন।[১]
গোবিন্দ অধিকারীর রচিত একটি বিখ্যাত গান হচ্ছেঃ চম্পক বরণী বলি, দিলি যে চমক কলি/ এ ফুলে এ কল আছে কে জানে।/ এতো ফুল নয় ভাই ত্রিশুল অসি, মরমে রহিল পশি/ রাই-রূপসীর রূপ অসি হানেপ্রাণে।। এছাড়াও তার লেখা "শুক-শারী সংবাদ" গানটি বড়ই চমৎকার। এ গানটির প্রথম তিনটি চরণ হচ্ছেঃ বৃন্দাবন বিলাসিনী রাই আমাদের।/ রাই আমাদের রাই আমাদের/ আমরা রাইয়ের রাই আমাদের।।[২]
মৃত্যু
সম্পাদনাগোবিন্দ অধিকারী ১২৭৭ বঙ্গাব্দে লোকান্তরিত হন।[২]