কৃষ্ণনগর
কৃষ্ণনগর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদিয়া জেলার সদর শহর ও পৌরসভা এলাকা। কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণীর মাটির পুতুল ও মূর্তি পশ্চিমবঙ্গের শ্রেষ্ঠ কুটির শিল্পগুলির অন্যতম। এটি বর্তমানে নদিয়া জেলার প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র ও প্রাচীন বাংলার অন্যতম শিক্ষা ও সংস্কৃতির শহর বলে পরিচিত। কৃষ্ণনগরের বারদোলের মেলা বাংলার অতি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী মেলা। নদিয়ারাজ কৃষ্ণচন্দ্র এই মেলার প্রবর্তক হিসাবে জানা যায়।[১]
কৃষ্ণনগর রেউই | |
---|---|
শহর | |
পশ্চিমবঙ্গ, ভারতে অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৩°২৪′ উত্তর ৮৮°৩০′ পূর্ব / ২৩.৪° উত্তর ৮৮.৫° পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
জেলা | নদিয়া |
প্রতিষ্ঠাতা | ১৭০০ |
নামকরণের কারণ | কৃষ্ণচন্দ্র রায় |
সরকার | |
• ধরন | মিউনিসিপ্যালিটি |
• শাসক | কৃষ্ণনগর মিউনিসিপ্যালিটি |
• সংসদ সদস্য | মহুয়া মৈত্র |
উচ্চতা | ১৪ মিটার (৪৬ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০০১) | |
• মোট | ১,৩৯,০৭০ |
ভাষাবাংলা | |
• অফিসিয়াল | বাংলা, ইংরেজি |
সময় অঞ্চল | আইএসটি (ইউটিসি+৫:৩০) |
ইতিহাস ও সংস্কৃতি
সম্পাদনাসংস্কৃতি ও বিদ্যোৎসাহী রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নামানুসারে এই স্থান কৃষ্ণনগর নামে খ্যাত। অতীতে এই জায়গার নাম ছিল রেউই। নদিয়া রাজপরিবারের শ্রেষ্ঠ পুরুষ রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজধানী ছিল কৃষ্ণনগর। তিনি বিদ্বানসংস্কৃত ও ফার্সিভাষায় শিক্ষিত, সংগীতরসিক ছিলেন। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ছিলেন শাক্তপদাবলিকার রামপ্রসাদ সেন, অন্নদামঙ্গল কাব্য প্রণেতা ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর, হাস্যরসিক গোপাল ভাঁড় প্রমুখ বাংলার প্রবাদপ্রতিম গুণী ব্যক্তিদের পৃষ্ঠপোষক। তাঁর চেষ্টায় এই স্থানে গুণী ব্যক্তিদের সমাবেশ হয় এবং কৃষ্ণনগর বাংলার সংস্কৃতিচর্চার পীঠস্থান হয়ে ওঠে। ১৮৫৬ সালে সারস্বত চর্চ্চার কেন্দ্র রূপে গড়ে কৃষ্ণনগর সাধারণ গ্রন্থাগার। কৃষ্ণনগরের জগদ্বিখ্যাত মৃৎশিল্পের সূত্রপাত ও জগদ্ধাত্রী পূজার প্রচলন তার সময়ে তারই উদ্যোগে ঘটেছিল। কৃষ্ণনগর পৌরসভা ১৮৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব
সম্পাদনা- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় - কবি ও নাট্যকার
- ভারতচন্দ্র রায় - কবি
- চঞ্চল কুমার মজুমদার - বিখ্যাত বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানী, মজুমদার-ঘোষ মডেলের উদ্ভাবক।
- বাঘা যতীন - স্বাধীনতা সংগ্রামী ও শহীদ
- বিজয়লাল চট্টোপাধ্যায় - জাতীয়তাবাদী কবি
- মনমোহন ঘোষ - জাতীয়তাবাদী ব্যক্তিত্ব
- লালমোহন ঘোষ - জাতীয়তাবাদী ব্যক্তিত্ব
- হেমন্তকুমার সরকার - স্বাধীনতা সংগ্রামী
- রামতনু লাহিড়ী - মনীষী, শিক্ষাবিদ
- প্রমোদরঞ্জন সেনগুপ্ত - স্বাধীনতা সংগ্রামী ও চিন্তাবিদ
- নারায়ণ সান্যাল- সাহিত্যিক
- হেমচন্দ্র বাগচী - কবি
- দামোদর মুখোপাধ্যায় - সাহিত্যিক
- চার্লস জিমেলিন - ক্রীড়াবিদ
- দিলীপ বাগচী - রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব
- সুধীর চক্রবর্তী - গবেষক, লেখক
- দীপক চৌধুরী - কবি ও সাহিত্যিক
- সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়- অভিনেতা
- গোপাল ভাঁড়-রম্য গল্পকার
ভৌগোলিক উপাত্ত
সম্পাদনাশহরটির অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ হল ২৩°২৪′ উত্তর ৮৮°৩০′ পূর্ব / ২৩.৪° উত্তর ৮৮.৫° পূর্ব।[২] সমুদ্র সমতল হতে এর গড় উচ্চতা হল ১৪ মিটার (৪৫ ফুট)।
জনসংখ্যার উপাত্ত
সম্পাদনাভারতের ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে কৃষ্ণনগর শহরের জনসংখ্যা হল ১৩৯,০৭০ জন।[৩] এর মধ্যে পুরুষ ৫১% এবং নারী ৪৯%।
এখানে সাক্ষরতার হার ৭৯%। পুরুষদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৮৩% এবং নারীদের মধ্যে এই হার ৭৫%। সারা ভারতের সাক্ষরতার হার ৫৯.৫%, তার চাইতে কৃষ্ণনগর এর সাক্ষরতার হার বেশি।
এই শহরের জনসংখ্যার ৯% হল ৬ বছর বা তার কম বয়সী।
ধর্মবিশ্বাস
সম্পাদনাক্রীড়া
সম্পাদনাদ্বিজেন্দ্রলাল রায় মেমোরিয়াল স্টেডিয়াম বা ডিস্ট্রিক্ট স্টেডিয়াম হচ্ছে শহরের প্রধান ক্রীড়াঙ্গন। এখানে ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল-এর প্রথম ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়।
যোগাযোগ ব্যবস্থা
সম্পাদনাউত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম প্রধান সংযোগস্থাপনকারী রাস্তা জাতীয় সড়ক ১২ (ভারত) বা পূর্বতন ৩৪ নং জাতীয় সড়ক কৃষ্ণনগর শহরের ওপর দিয়ে গেছে। সড়কপথে কৃষ্ণনগর পশ্চিমনবঙ্গের অন্যান্য শহরের সাথে যুক্ত। কৃষ্ণনগর সিটি জংশন রেলওয়ে স্টেশনটি পূর্ব রেলওয়ে অঞ্চলের শিয়ালদহ রেল বিভাগের অন্তর্গত একটি রেলওয়ে স্টেশন।[৫]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "শুরু হল কৃষ্ণনগরের ঐতিহ্যবাহী বারোদোলের মেলা– News18 Bangla"। News18 Bengali। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১০।
- ↑ "Krishnanagar"। Falling Rain Genomics, Inc। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ৭, ২০০৬।
- ↑ "ভারতের ২০০১ সালের আদম শুমারি"। Archived from the original on ১৬ জুন ২০০৪। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ৭, ২০০৬।
- ↑ "Krishnanagar Religion 2011"। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মার্চ ২০১৭।
- ↑ roy, Joydeep। "53 COVID-19 Special Departures from Krishnanagar City ER/Eastern Zone - Railway Enquiry"। indiarailinfo.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১০।