খাদিম হোসাইন রিজভী
খাদিম হোসাইন রিজভী (উর্দু: خادم حسين رضوى জন্ম: ২২ মে ১৯৬৬-১৯ নভেম্বর ২০২০) ছিলেন পাকিস্তানি ডানপন্থী রাজনীতিবিদ এবং পাকিস্তানের ইসলামপন্থী তেহেরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান নামক রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতাকালীন সভাপতি।[১] এই দলটির মূলত ২০১৫ সালে পাকিস্তানে ব্লাসফেমি আইন পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়।[২]
খাদিম হোসাইন রিজভী | |
---|---|
তেহেরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তানের ১ম আমির | |
অফিসে ১ আগস্ট ২০১৫ – ১৯ নভেম্বর ২০২০ | |
পূর্বসূরী | পদ সংস্থাপিত |
উত্তরসূরী | সাদ হোসাইন রিজভী |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | |
মৃত্যু | ১৯ নভেম্বর ২০২০ | (বয়স ৫৪)
ধর্ম | ইসলাম |
জাতীয়তা | পাকিস্তানি |
আখ্যা | সুন্নি |
আন্দোলন | বেরলভী |
রাজনৈতিক দল | তেহেরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান |
কাজ | ধর্মপ্রচারক, নেতা |
এর প্রতিষ্ঠাতা | তেহেরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান |
প্রাথমিক জীবন
সম্পাদনাখাদিম রিজভী ১৯৬৬ সালে পাঞ্জাবের আট্টক জেলার পিন্ডিঘেব এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শুক্রবারে জুম্মার নামাজের খুতবা পাঠ করতেন।[১] ২০০৬ সালে রাওয়ালপিণ্ডি থেকে লাহোর যাওয়ার সময় গুজরানওয়ালার কাছাকাছি তার গাড়ি চালক ঘুমিয়ে পড়ায় একটি দুর্ঘটনা ঘটে, সেসময় থেকে তিনি হুইলচেয়ারে বন্দী।[৩]
২০১৫ সালে তেহেরিক ই লাব্বাইক পাকিস্তান (টিএলপি) নামে তিনি একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন।[৪] পাঞ্জাবের প্রাক্তন গভর্নর সালমান তাসিরকে হত্যাকারী মুমতাজ কাদরীকে আদালতের রায়ে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলানোর পর তার প্রতিবাদে টিএলপি প্রকাশ্যে আসে। ব্ল্যাসফেমী আইনের বিরোধিতা করাই ছিল সালমানকে হত্যার কারণ।[৫] পাঞ্জাবের রাজ্যপালকে হত্যার সময় রিজভী পাঞ্জাব সরকারের ওয়াকফ হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। যেহেতু তাসিরের ধর্ম অবমাননা আইনকে রিজভী "কালো আইন" বলেছিলেন; এই যুক্তির উপর ভিত্তি করে তিনি তাসিরের এই হত্যাকে সমর্থন করেন। তাকে এভাবে বিদ্বেষ না ছড়ানোর জন্য সতর্ক করা হয়েছিল, কিন্তু তা না মানায় রিজভীকে তার চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।[১]
কর্ম থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর রিজভী তার দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করার জন্য প্রচুর সময় ও পুর্ণ স্বাধীনতা পান। তিনি পুরো দেশজুড়ে ঘুরতে থাকেন এবং পাকিস্তানের মানুষ থেকে পেনাল কোডের ধর্ম অবমাননা প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করা সেকশন ২৯৫-সি আইনের সমর্থন আদায় করতে শুরু করেন। একইসাথে তিনি, মুমতাজ কাদরীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য উচ্চকিত হয়ে উঠতে শুরু করেন।[১]
বিতর্ক
সম্পাদনাফয়েজবাদ আন্দোলন
সম্পাদনা২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর, রিজভী লাহোর থেকে ইসলামাবাদ পর্যন্ত পাকিস্তানের আইনমন্ত্রীর পদত্যাগের জন্য একটি লং মার্চ পরিচালনা করেন। তার দাবী ছিল, ২০১৭ সালের নির্বাচনী আইনে মুহম্মদ সংক্রান্ত একটি ভাষাগত শব্দ পরিবর্তনে আইনমন্ত্রী জড়িত ছিলেন।[৬][৭][৮] তখন একটি অসহনীয় পরিস্থিতি তৈরীর জন্য রিজভী সর্বত্র সমালোচিত হন।[৯][১০] ধর্মীয় নেতাদের কাছ থেকে নিষ্ঠুর, নিবর্তনমূলক শব্দ প্রয়োগ শুনে সাধারণ জনগণ বিষ্মিত হয়ে গিয়েছিল।[১] সরকার বলপূর্বক সমস্ত টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ করে দেয়, গুজব ছড়ানোকে ঠেকাতে বন্ধ করে দেয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এই পরিস্থিতি লাহোর, পাঞ্জাব, ইসলামাবাদের রাওয়ালপিণ্ডি শহরে জনমনে আতঙ্ক এবং ভীতির সঞ্চার করে। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর প্রধান এসে দুপক্ষকেই সমঝোতার মাধ্যমে পরিস্থিতির সমাধান করতে আহ্বান করে।[১]
২০১৮ খ্রিষ্ঠাব্দে আসিয়া বিবি বিদ্রোহ
সম্পাদনা২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর, আট বছর কারারুদ্ধ থাকার পর পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের রায়ে পাকিস্তানি খ্রিষ্ঠান নারী আসিয়া বিবি ধর্ম অবমাননার মামলায় নিরপরাধ গণ্য হন এবং বেকসুর খালাস পান।[১১] বিচারক আসিফ সাইদ খোসা বলেন, যে দুইজন নারী আসিয়া বিবির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিল “তারা তার সত্যতার পক্ষে কোনো বৈধ যুক্তি" দিতে পারেনি বরং এই অভিযোগটি এক ধরনের দূরভিসন্ধিমূলক অভিযোগ ছিল।[১২] আদালত তার রায়ে বলে, "অভিযোগকারীদের ঘরোয়া ঝগড়া এবং অসংলগ্ন কথাবার্তা এই পুরো ঘটনাকে পরিস্কারভাবে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে। পুরো ঘটনা জুড়েই অস্পষ্টতার ছাপ ছিল।”[১৩]
রিজভীর নেতৃত্বাধীন টিএলপি করাচি, লাহোর, পেশোয়ার এবং মুলতানে তীব্র বিক্ষোভ শুরু করে। পুলিশের সাথে তাদের ধাওয়া পালটা ধাওয়া চলেছিল বলে গণমাধ্যমে উঠে এসেছিল। টিএলপির এক নেতা মুহম্মদ আফজাল কাদরী বলেন, সুপ্রিম কোর্টের তিনজন বিচারককেই হত্যা করা উচিত। রাজধানী ইসলামাবাদের সুপ্রীম কোর্ট পাড়ায় কড়া নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল।[১৪] জনগণের সম্মুখে রিজভী বলেন, এই পাঁচ সন্তানের জননীকে পাকিস্তানের ধর্ম অবমাননামূলক আইন অনুযায়ী হত্যা করতে হবে। তিনি বলেন, "যতক্ষণ না সরকার আমাদের দাবী মেনে নিচ্ছে, আমাদের নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলন চলতেই থাকবে।"[১৫]
দুর্নীতি
সম্পাদনাখাদিম রিজভীকে অর্থনীতি প্রসঙ্গে চরম দুর্নীতিবাজ বলে সেখানে উল্লেখ করে পাকিস্তানের ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স একটি বিস্তৃত প্রতিবেদন উচ্চ আদালতে দায়ের করে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রিজভী তার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।[৫]
মৃত্যু
সম্পাদনাখাদিম হোসাইন রিজভী ১৯ নভেম্বর ২০২০ রাত ৮.৪৮টার সময় পাকিস্তানের লাহোরের শেখ জায়েদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ Ali, Kalbe (২০১৭-১২-০৩)। "Who is Khadim Hussain Rizvi?"। DAWN.COM (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-০১।
- ↑ Barker, Memphis; Iqbal, Aamir (২০১৮-১১-০১)। "Asia Bibi: anti-blasphemy protests spread across Pakistan"। the Guardian (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-০১।
- ↑ "Who is Khadim Hussain Rizvi?"। ৩ ডিসেম্বর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭ – www.dawn.com-এর মাধ্যমে।
- ↑ "The Mullah of NA-120"। Nation.com.pk। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭।
- ↑ ক খ "Who is Khadim Hussain Rizvi? - Global Village Space"। Global Village Space (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-১১-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-০১।
- ↑ "Tehreek Labik to hold Islamabad long march"। Nation.com.pk। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭।
- ↑ Hussain, Shaiq; Constable, Pamela (১১ নভেম্বর ২০১৭)। "Large religious protests halt traffic in Islamabad and Rawalpindi"। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭ – www.WashingtonPost.com-এর মাধ্যমে।
- ↑ "Tehreek Labaik Ya Rasool Allah (SAW) protest continue - Times of Islamabad"। TimesOfIslamabad.com। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭।
- ↑ Shahrukh, Malik (২০১৭-১১-২৫)। "Discordant Saga of Blasphemy"। https://www.nation.com.pk।
|ওয়েবসাইট=
এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য) - ↑ Ali, Kalbe (২০১৭-১২-০৩)। "Who is Khadim Hussain Rizvi?"। dawn.com।
- ↑ Correspondent, Sana Jamal, (২০১৮-১১-০১)। "All you need to know about the Aasia Bibi case"। GulfNews। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-০১।
- ↑ Barker, Memphis (৩১ অক্টোবর ২০১৮)। "Asia Bibi: Pakistan court overturns blasphemy death sentence: Christian woman to be freed after being sentenced in 2010, accused of insulting prophet Muhammad" (English ভাষায়)। The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ৩১ অক্টোবর ২০১৮।
Justice Asif Khosa, in a verdict widely praised for its courage and rigour, noted that the two sisters who accused Bibi “had no regard for the truth” and that the claim she smeared the prophet in public was “concoction incarnate”.
- ↑ Asif Aqeel (৩১ অক্টোবর ২০১৮)। "Pakistan Frees Asia Bibi from Blasphemy Death Sentence" (English ভাষায়)। Christianity Today। সংগ্রহের তারিখ ৩১ অক্টোবর ২০১৮।
In their final judgment, reviewed by CT, reversing Bibi’s convictions by two lower courts and removing her death sentence, the panel of three judges ruled that Bibi was "wrongly" accused by two sisters with the help of a local cleric, based on "material contradictions and inconsistent statements of the witnesses" that "cast a shadow of doubt on the prosecution’s version of facts." "Furthermore, the alleged extra-judicial confession was not voluntary but rather resulted out of coercion and undue pressure as the appellant was forcibly brought before the complainant in presence of a gathering, who were threatening to kill her; as such, it cannot be made the basis of a conviction,” they wrote. “Therefore, the appellant being innocent deserves acquittal," the judges concluded. One even accused Bibi’s accusers of violating a covenant made by Muhammad with Christians in the seventh century but still valid today. "Blasphemy is a serious offense," wrote justice Asif Saeed Khosa, "but the insult of the appellant’s religion and religious sensibilities by the complainant party and then mixing truth with falsehood in the name of the Holy Prophet Muhammad (Peace Be Upon Him) was also not short of being blasphemous.
- ↑ "Imran Khan condemns blasphemy hardliners"। BBC News (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-১০-৩১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-০১।
- ↑ Barker, Memphis; Iqbal, Aamir (২০১৮-১১-০১)। "Asia Bibi: anti-blasphemy protests spread across Pakistan"। the Guardian (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-০১।