রাওয়ালপিন্ডি
রাওয়ালপিন্ডি (উর্দু: راولپنڈی) হচ্ছে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের নিকটবর্তী মালভূমির উপরস্থ শহর। এটি পাঞ্জাব প্রদেশের অন্তর্গত। জনসংখ্যার বিচারে এটি পাকিস্তানের ৪র্থ বৃহত্তম শহর। এর প্রথমদিকের শহরগুলো হচ্ছে করাচি, লাহোর এবং ফয়সালাবাদ। স্থানীয়ভাবে রাওয়ালপিন্ডি শুধু পিন্ডি নামে পরিচিত। এই অঞ্চলেই গড়ে ওঠে সোয়ানিয়ান সংস্কৃতির অধিবাসীদের বাস। এর জনসংখ্যা ১ লক্ষ ৮০ হাজার থেকে বেড়ে প্রায় ২১ লক্ষে পৌঁছায়।
রাওয়ালপিন্ডি راولپنڈی পিন্ডি پِنڈی | |
---|---|
মেট্রোপলিস | |
Location in Pakistan | |
স্থানাঙ্ক: ৩৩°৩৬′ উত্তর ৭৩°০২′ পূর্ব / ৩৩.৬০০° উত্তর ৭৩.০৩৩° পূর্ব | |
দেশ | পাকিস্তান |
অঞ্চল | পাঞ্জাব |
বিভাগ | রাওয়ালপিন্ডি বিভাগ |
স্বশাসিত শহর | ৮ |
ইউনিয়ন কাউন্সিল | ৪৮ |
সরকার | |
• ধরন | মিউনিসিপাল কর্পোরেশন |
• রাওয়ালপিন্ডি মেয়র | সর্দার নাসিম |
• রাওয়ালপিন্ডি ডেপুটি মেয়র | চৌধুরী তারিক মাহমুদ |
আয়তন | |
• মোট | ১৫৪ বর্গকিমি (৫৯ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ৫০৮ মিটার (১,৬৬৭ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০১৭) | |
• মোট | ২০,৯৮,২৩১[১] |
সময় অঞ্চল | পিকেটি (ইউটিসি+৫) |
• গ্রীষ্মকালীন (দিসস) | পিকেটি (ইউটিসি+৬) |
এলাকা কোড | ০৫১ |
ওয়েবসাইট | www |
প্রশাসনিক গুরুত্ব
সম্পাদনারাওয়ালপিন্ডি হচ্ছে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর কেন্দ্রীয় সদর দপ্তর। ১৯৬০-এর দশকে যখন রাজধানী হিসেবে ইসলামাবাদের গোড়াপত্তনের কাজ চলছিলো, তখন রাওয়ালপিন্ডি ছিলো পাকিস্তানের রাজধানী। বিভিন্ন প্রকার কল-কারখানার কেন্দ্রীয় সদরদপ্তর এখানে অবস্থিত। রাওয়ালপিন্ডিতে অবস্থিত প্রাক্তন চাকলালা বিমান বন্দর, পরবর্তীকালে যার নাম হয়েছিলো ইসলামাবাদ বিমান বন্দর; বর্তমানে "বেনজির ভুট্টো আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর" নামে পরিচিত। পাঞ্জাব প্রদেশের লাহোর থেকে ২৭৫ কিলোমিটার (১৭১ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে রাওয়ালপিন্ডির অবস্থান। প্রশাসনিক ও রাজনৈতিকভাবে এটি রাওয়ালপিন্ডি জেলার অন্তর্গত। এই শহরের মোট আয়তন ১৫৪ বর্গ কিলোমিটার (৫৯ বর্গ মাইল)। শহরটি কৌশলগতভাবে পাঞ্জাব ও আজাদ কাশ্মীরের মধ্যভাগে নির্মিত।
ভূগোল
সম্পাদনাকোপেন জলবায়ু শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী রাওয়ালপিন্ডিতে আর্দ্র প্রায় ক্রান্তীয় জলবায়ু বিরাজমান।[২] ফলে এখানে গ্রীষ্মকালে গরম ও ভেজা এবং শীতকালে শীতল এবং শুষ্ক আবহাওয়া থাকে। রাওয়ালপিন্ডি এবং এর ভগিনি শহর ইসলামাবাদ বছরে গড়ে ৯১১ টি বজ্রপাতের অভিজ্ঞতা অর্জন করে, যা দেশের কোনও সমতল উন্নয়নের শহরের সর্বোচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি। পাকিস্তানের আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রতিবেদন মোতাবেক রাওয়ালপিণ্ডিতে ঘন ঘন ঝড় আঘাত হানে, যার গতিবেগ প্রায় ঘণ্টায় ১৭৬ কিলোমিটার বা ১০৯ মাইল। এই ধরনের বজ্র/ বাতাসের ঝড়ের ফলে অবকাঠামোগত কিছু ক্ষতি হয়।[৩] হিমালয়ের পাদদেশ শহরটির সান্নিধ্যের কারণে আবহাওয়া অত্যন্ত পরিবর্তনশীল থাকে।
রাওয়ালপিণ্ডির গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১২০০ মিমি (৪৭ ইঞ্চি), যার বেশিরভাগ গ্রীষ্মের বর্ষা মৌসুমে হয়ে থাকে। তবে ওয়েস্টারলি ঝামেলা শীতে বেশ উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত নিয়ে আসে। গ্রীষ্মকালের রেকর্ডকৃত সর্বাধিক তাপমাত্রা ৪৮.৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (১১৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট) এ পৌঁছেছে, যা ১৯৫৪ সালের জুনে রেকর্ড করা হয়েছিল এবং এটি কয়েকবার ন্যূনতম −৩.৯ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (২৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) এ নেমেছে, যদিও এর মধ্যে সর্বশেষটি ছিল জানুয়ারী ১৯৬৭ সালে রেকর্ডকৃত।
রাওয়ালপিণ্ডি-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) | ১৭.০ (৬২.৬) |
১৯.৫ (৬৭.১) |
২৪.২ (৭৫.৬) |
২৯.৯ (৮৫.৮) |
৩৫.৪ (৯৫.৭) |
৩৯.৫ (১০৩.১) |
৩৫.৮ (৯৬.৪) |
৩৩.৭ (৯২.৭) |
৩৩.৬ (৯২.৫) |
৩০.৯ (৮৭.৬) |
২৫.০ (৭৭.০) |
১৯.৩ (৬৬.৭) |
২৮.৭ (৮৩.৬) |
দৈনিক গড় °সে (°ফা) | ৯.৮ (৪৯.৬) |
১২.৫ (৫৪.৫) |
১৭.৩ (৬৩.১) |
২২.৬ (৭২.৭) |
২৭.৬ (৮১.৭) |
৩২.০ (৮৯.৬) |
৩০.৩ (৮৬.৫) |
২৮.৬ (৮৩.৫) |
২৭.৬ (৮১.৭) |
২২.৭ (৭২.৯) |
১৬.২ (৬১.২) |
১১.৩ (৫২.৩) |
২১.৫ (৭০.৮) |
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) | ২.৭ (৩৬.৯) |
৫.৫ (৪১.৯) |
১০.৪ (৫০.৭) |
১৫.৩ (৫৯.৫) |
১৯.৯ (৬৭.৮) |
২৪.৫ (৭৬.১) |
২৪.৮ (৭৬.৬) |
২৩.৬ (৭৪.৫) |
২১.৬ (৭০.৯) |
১৪.৫ (৫৮.১) |
৭.৫ (৪৫.৫) |
৩.৩ (৩৭.৯) |
১৪.৫ (৫৮.০) |
অধঃক্ষেপণের গড় মিমি (ইঞ্চি) | ৫৮ (২.৩) |
৫৬ (২.২) |
৬৮ (২.৭) |
৪৪ (১.৭) |
৩৮ (১.৫) |
৩৭ (১.৫) |
২৩৭ (৯.৩) |
২৩৬ (৯.৩) |
৯২ (৩.৬) |
২৩ (০.৯) |
১৬ (০.৬) |
৩৬ (১.৪) |
৯৪১ (৩৭) |
উৎস: Climate-Data.org, altitude: 497m[২] |
জনসংখ্যা
সম্পাদনা২০১৭ সালে আদমশুমারী অনুযায়ী রাওয়ালপিন্ডির জনসংখ্যা ২০৯৮২৩১ জন, যার মধ্যে ৮৪% পাঞ্জাবি, ৯% পশতুন, এবং ৭% অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর লোক।
রাওয়ালপিন্ডির জনসংখ্যার ৯৬.৮% মুসলিম, ২.৪৭% খ্রিস্টান, ০.৭৩% অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। শহরের কোহাতী বাজার শিয়া সম্প্রদায়ের আশুরার বিশাল শোভাযাত্রার হয়। রাওয়ালপিন্ডির পুরাতন শহরের ওয়ারিস শাহ মহল্লা এবং পীর হাররা মহল্লার আশেপাশের অঞ্চল মুসলিম বসতির মূল কেন্দ্র।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত বিভাগের পূর্বে রাওয়ালপিন্ডি হিন্দু ও শিখ সংখ্যাগরিষ্ঠ শহর ছিল, মুসলমানরা জনসংখ্যার ছিল ৪৩.৭৯%। রাওয়ালপিন্ডির বাবা দয়াল সিং গুরুদ্বার থেকেই শিখ ধর্মের সংস্কারবাদী আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল।[৪] শহরে শিখ জনসংখ্যা অল্প ছিল, তবে খাইবার পাখতুনখোয়াতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হলে সেখান থেকে পালিয়ে আসা শিখদের আগমনে তারা শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল।[৫]
শহরটিতে এখনও কয়েক শতাধিক হিন্দু পরিবার রয়েছে।[৬] পার্টিশনের পরে নগরীর বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুরা ভারতে চলে যাওয়ার সত্ত্বেও, পুরানো শহরের বেশিরভাগ হিন্দু মন্দির এখনও দাঁড়িয়ে আছে, যদিও অচলাবস্থায় এবং প্রায়শই পরিত্যক্ত হয়।[৬] পুরনো শহরের আশেপাশের বেশিরভাগ অঞ্চলে হিন্দু এবং শিখের নাম, যেমন কৃষ্ণপুরা, আর্য মহল্লা, আকালগড়, মোহনপুরা, আমারপুরা, কর্তারপুরা, বাঘ সরদারান, অঙ্গাতপুরা রয়েছে।
অর্থনীতি
সম্পাদনাবিভিন্ন রকম বিপণী বিতান, পার্ক এবং জনঅধ্যুষিত হওয়ায় শহরটি পাকিস্তানি এবং বিদেশি মানুষের কাছে যথেষ্ট আকর্ষণীয়। শহরটি হায়দারাবাদ এবং মুলতানের তুলনায় ছোট কিন্তু ১৯৬০-এর দশকে ইসলামাবাদ শহরের গোড়াপত্তনের সময়এই শহরটি অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয় । পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে সফরের আগে অনেক পর্যটক রাওয়ালপিন্ডিতে তাঁদের যাত্রা বিরতি করেন।
জীবন যাত্রা
সম্পাদনাবিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-র প্রতিবেদন অনুযায়ী এই শহর বিশ্বের ১৪তম সবচেয়ে বায়ু দূষিত শহর হিসেবে গণ্য হয়েছে। [৭]
ধর্মীয় স্থান
সম্পাদনাএই শহরে একটি সুপ্রাচীন কৃষ্ণ মন্দির রয়েছে। এছাড়াও মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল হওয়ায় অনেক মসজিদ রয়েছে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "PROVISIONAL SUMMARY RESULTS OF 6TH POPULATION AND HOUSING CENSUS-2017"। pbs.gov.pk। ১০ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ ক খ "Climate: Rawalpindi - Climate graph, Temperature graph, Climate table"। Climate-Data.org। সংগ্রহের তারিখ ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
- ↑ "Weather History for Islamabad, Pakistan | Weather Underground"। Wunderground.com। ২০০৬-১০-১৩। সংগ্রহের তারিখ ২২ নভেম্বর ২০১৩।
- ↑ Rida, Arif; Farooqi, Maria (২০১৫)। "The Lost Art of Rawalpindi"। THAAP। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১৭।
- ↑ "For the Sikhs in KP, Rawalpindi is their new home"। Dawn। ৩ আগস্ট ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১৭।
- ↑ ক খ "The temples of Rawalpindi: Old wisdom in a new world"। Dawn। ১৬ অক্টোবর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১৭।
- ↑ "বিশ্বের সবচেয়ে দূষণের শিকার"। ৪ মে ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ মে ২০১৮।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- CDG Rawalpindi, Official Website
- Regional Directorate Rawalpindi
- Welcome to the Rawalpindi website
- Rawalpindi (Pakistan) -- Britannica Online Encyclopedia
পাকিস্তান বিষয়ক এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |