কৃষ্ণকুমার মিত্র (১৮৫২-১৯৩৬) ছিলেন সাংবাদিক, স্বদেশী আন্দোলনব্রাহ্ম সমাজের একজন নেতা।[] তিনি সঞ্জীবনী নামে একটি জাতীয়তাবাদী বাংলা সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। তিনি বেশ কিছু গ্রন্থও রচনা করেন। তিনি তার জীবদ্দশায় পৌত্তলিকতা, জাতিভেদপ্রথা, নারী অধিকার রক্ষা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।[] নারী অধিকার রক্ষায় তিনি ‘নারী রক্ষা সমিতি’ নামে একটি সংগঠন তৈরি করেন।[]

কৃষ্ণকুমার মিত্র
জন্ম১৮৫২
মৃত্যু১৯৩৬
পেশাব্রাহ্ম সমাজ ও স্বদেশী আন্দোলনের নেতা
দাম্পত্য সঙ্গীলীলাবতী মিত্র
সন্তানকুমুদিনী বসু (কন্যা)
বাসন্তী চক্রবর্তী (কন্যা)

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

কৃষ্ণকুমার ১৮৫২ সালে তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার বাঘিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[] বর্তমানে এটি টাঙ্গাইল জেলার সদর উপজেলার অধীন একটি গ্রাম।[] তার পিতা গুরুপ্রসাদ মিত্র স্থানীয়ভাবে নীলকর আদায়কারীদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলন সংগঠিত করেন। কৃষ্ণকুমার ১৮৬৯ সালে ব্রাহ্মধর্ম সম্পর্কে দীক্ষা লাভ করেন। তিনি ময়মনসিংহের হার্ডিঞ্জ ভার্নাকুলার স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করে ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৮৭০ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।[] পরে তিনি ১৮৭৬ সালে তৎকালীন জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইনস্টিটিউশন (বর্তমান স্কটিশ চার্চ কলেজ) থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়া তিনি আইনবিদ্যায়ও কিছুকাল শিক্ষালাভ করেন।[]

কর্মজীবন

সম্পাদনা

কৃষ্ণকুমার ১৮৭৯ সালে কলকাতার এ.এম বসুর সিটি স্কুল ও কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।[] পরে কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপক ও তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে বেশ কিছুদিন শিক্ষকতা করার পর ১৯০৮ সালে কলেজ থেকে পদত্যাগ করেন। কলেজে থাকাকলীন তিনি স্বদেশী আন্দোলনে যুক্ত থাকায় তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার কলেজটির অনুমোদন বাতিলের হুমকি প্রদান করে যার ফলশ্রুতিতে তিনি পদত্যাগ করেন।[]

রাজনীতি

সম্পাদনা

কৃষ্ণকুমার ১৮৭৬ সালে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের সাথে যুক্ত হন। ছাত্রাবস্থায় তিনি আনন্দমোহন বসুসহ আরো বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার সাথে বিভিন্ন আন্দোলনে অংশ নেন। তিনি ও সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনৈতিক প্রচার ও সিভিল সার্ভিস রুলের বিরুদ্ধে জনমত তৈরির জন্য ভারতের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেছেন। তৎকালীন নীল চাষীরা নীল আয়কর আদায়কারীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করলে ১৮৯০ সালে তিনি তাদের আন্দোলনে যোগদান করেন। ১৮৮৫ সালে জাতীয় কংগ্রেসের সাথে যুক্ত হন।[]

কৃষ্ণকুমার বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের একজন প্রথমসারির নেতা ছিলেন। তিনি আন্দোলনের প্রতি জনমত তৈরিতে কাজ করেন। ১৯০৬ সালে বরিশালে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক কংগ্রেসের একটি অধিবেশনে তিনি পুলিশ কর্তৃক অত্যাচার ও নির্যাতনের প্রতিবাদ করেন। ১৯০৮ সালে মানিকতলা বোমা হামলা মামলায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯০৮ সালের ১০ ডিসেম্বর ব্রিটিশ সরকার তাকে স্বদেশী আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করে এবং আগ্রা জেলে কারারুদ্ধ করে। ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধী অসহযোগ আন্দোলন শুরু করার পর তিনি এ আন্দোলনের বিরোধিতা করেন।[]

সাংবাদিকতা

সম্পাদনা

কৃষ্ণকুমার সঞ্জীবনী নামে একটি জাতীয়তাবাদী বাংলা সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন।[] ১৮৮৩ সালে তিনি অন্যদের সাথে নিয়ে পত্রিকাটি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন এবং প্রতিষ্ঠালগ্নেই এর সম্পাদক নিযুক্ত হন।[] পত্রিকার মাধ্যমে তিনি সম্পাদক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। আসামের চা মালিকদের কর্তৃক তাদের শ্রমিকদের উপর অত্যাচারের কাহিনী নিয়ে ‘চা অথবা কুলির রক্ত’ শিরোনামে তার লেখনী জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ফলশ্রুতিতে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় একটি আইন পাশ হয়।[]

ব্যক্তিগত জীবন

সম্পাদনা

কৃষ্ণকুমার ব্যক্তিগত জীবনে ১৮৮১ সালে রাজনারায়ণ বসুর চতুর্থ কন্যা লীলাবতী মিত্র সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।[] তিনি ১৯৩৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন।[]

গ্রন্থ

সম্পাদনা

কৃষ্ণকুমার রচিত উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহের মধ্যে রয়েছে: মহম্মদ-চরিত, বুদ্ধদেব-চরিত, রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড, রাণী আলেকজান্দ্রা, রাজা ও রাণী ও বৌদ্ধধর্মের সংক্ষিপ্ত বিবরণ।[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. বাংলাদেশ জেলা গেজেটীয়ার টাংগাইল। নুরুল ইসলাম খান, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়। ১৯৯০। পৃষ্ঠা ২৭৮। 
  2. "মিত্র, কৃষ্ণকুমার"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০