কিতো
কিতো (স্পেনীয় উচ্চারণ: [ˈkito] (; )টেমপ্লেট:Lang-qu), আনুষ্ঠানিকভাবে 'সান ফ্রান্সিসকো ডি কিতো, ইকুয়েডরের রাজধানী, এর মেট্রোপলিটন এলাকায় আনুমানিক ২.৮ মিলিয়ন জনসংখ্যা রয়েছে। এটি পিচিঞ্চা প্রদেশের রাজধানীও। কিতো পিচিঞ্চার পূর্ব ঢালে একটি উপত্যকায় অবস্থিত, আন্দিজ পর্বতমালায় একটি সক্রিয় মিশ্র আগ্নেয়গিরি, ২,৮৫০ মিটার (9,৩৫০ ফুট) উচ্চতায়, এটিকে সর্বোচ্চ। বা বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাজধানী শহর।
কিতো | |
---|---|
রাজধানী শহর | |
সান ফ্রান্সিসকো ডি কুইটো | |
লুয়া ত্রুটি মডিউল:অবস্থান_মানচিত্ এর 393 নং লাইনে: স্থানাঙ্কের মান বিকৃত।ইকুয়েডরের মধ্যে কিতোর অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ০০°১৩′১২″ দক্ষিণ ৭৮°৩০′৪৫″ পশ্চিম | |
দেশ | ইকুয়েডর |
Province | Pichincha |
Canton | Metropolitan District of Quito |
Spanish foundation | ৬ ডিসেম্বর ১৫৩৪ |
প্রতিষ্ঠাতা | Sebastián de Benalcázar |
নামকরণের কারণ | Quitu |
Urban parishes | 32 urban parishes |
সরকার | |
• ধরন | Mayor and council |
• Governing body | Municipality of Quito |
• Mayor | Pabel Muñoz |
• Vice mayor | María Fernanda Racines |
আয়তন (approx.) | |
• রাজধানী শহর | ১৯৭.৫ বর্গকিমি (৭৬.৩ বর্গমাইল) |
• মহানগর | ৪,২১৭.৯৫ বর্গকিমি (১,৬২৮.৫৬ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ২,৮৫০ মিটার (৯,৩৫০ ফুট) |
জনসংখ্যা (2022) | |
• রাজধানী শহর | ১৭,৬৩,২৭৫ |
• জনঘনত্ব | ৮,৯০০/বর্গকিমি (২৩,০০০/বর্গমাইল) |
• মহানগর | ৩১,৫৬,১৮২ |
• মহানগর জনঘনত্ব | ৭৫০/বর্গকিমি (১,৯০০/বর্গমাইল) |
• Demonym | Quiteño |
সময় অঞ্চল | ECT (ইউটিসি−5) |
Postal code | EC170150 |
এলাকা কোড | (0)2 |
Languages | Spanish |
Climate | Cfb |
প্রাতিষ্ঠানিক নাম | City of Quito |
ধরন | Cultural |
মানদণ্ড | ii, iv |
মনোনীত | 1978 (2nd session) |
Region | Latin America and the Caribbean |
কিতো হল ইকুয়েডরের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র কারণ দেশের প্রধান সরকারি, প্রশাসনিক, এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলি শহরের মধ্যে অবস্থিত। ইকুয়েডরে উপস্থিতি সহ বেশিরভাগ ট্রান্সন্যাশনাল কোম্পানির সদর দফতর সেখানে রয়েছে। এটি দেশের দুটি প্রধান শিল্প কেন্দ্রগুলির মধ্যে একটি—গুয়াইয়াকিল বন্দর শহর অন্যটি।
ইতিহাস
সম্পাদনাপ্রাক কলম্বিয়ান পর্যায়
সম্পাদনাকিতোতে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া গিয়েছিল ১৯৬০ সালে লস চিলো ও টম্বাকোর পূর্ব উপত্যকার মধ্যবর্তী ইলাও আগ্নেয়গিরির ঢালে। প্রত্নতাত্ত্বিক রবার্ট ই বেল ১৯৬০ সালে এই নিদর্শন খনন করে আবিষ্কার করেন। শিকারিরা ৮০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে কাচসদৃশ আগ্নেয় শিলার তৈরি এক ধরনের অস্ত্রের নিদর্শন এখানে রেখে যায়। এল ইঙ্গা নামে পরিচিত এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানের ব্যাপারে সর্বপ্রথম রবার্ট বেলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন অ্যালেন গ্রাফাম। ভূতাত্ত্বিক হিসেবে ইকুয়েডরে চাকরিরত অবস্থায় গ্রাফামের প্রত্নতত্ত্বে আকর্ষণ হয়। ১৯৫৬ সালে এই স্থানটির ভূমি থেকে বিভিন্ন নিদর্শন সংগ্রহ করেন। পালেও-ইন্ডিয়ান পুরাণিদর্শনে পূর্ব আগ্রহ এবং যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস ও নেব্রাস্কায় মানব আদিম মানবদের নিদর্শনের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি অনুমান করেন যে এই অঞ্চলটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ এক আবিষ্কার।
কিতোর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মানব বসতির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন পাওয়া গিয়েছিল কতোকোল্লাও এর বর্তমান নিকটবর্তী এলাকায় (খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০)। বহু খাতে পরিপূর্ণ এই এলাকার ২৬ হেক্টরের বেশি অঞ্চল এই প্রাগৈতিহাসিক গ্রামটির অন্তর্ভুক্ত ছিল। আয়তাকার প্রাচীন বাড়িগুলোর নিকটে মৃৎশিল্প ও প্রস্তর শিল্পের নিদর্শন পাওয়া গেছে। কতোকোল্লাও এর আদিম মানবগণ এই স্থান থেকে স্থানান্তরিত হয়ে উপকূলবর্তী এলাকায় চলে গিয়েছিল।
প্রাক ঔপনিবেশিক যাজক ও ঐতিহাসিকরা কিতো জনগণ ও কিতো সাম্রাজ্যের ব্যাপারে লিখেছিলেন। তাদের লেখা অনুসারে কারা নামে পরিচিত অন্য এক প্রজাতির লোকেরা ৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে উপকূল্বর্তী এলাকা থেকে এসে এই অঞ্চল দখল করে। ১৫শ শতাব্দীতে ইনকারা এই অঞ্চল দখল করার আগ পর্যন্ত কারা-কিতো নামে পরিচিত এই অঞ্চল কারা জনগোষ্ঠীদের অধীনেই ছিল। স্প্যানিশরা দখল করার পরও কিছু কিতো বংশধরেরা এই শহরে বেঁচে ছিল।
কিন্তু বিংশ শতাব্দীতে এসে, কিছু বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধিক গবেষণার পর কিতো-কারা সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন। এর প্রধান কারণ হচ্ছে যে এই এলাকার খুব কম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনই পাওয়া গিয়েছিল। ইতিহাসবিদরা ভাবতে শুরু করেন যে এই রাজ্যের ধারণাটি ছিল উঁচুভূমির আদিম হিস্পানিক মানুষদের সৃষ্ট কিংবদন্তি।
একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে কিতোর নিকটবর্তী ফ্লোরিডায় ২০ মিটার গভীর একটি সমাধির সন্ধান পাওয়া যায় যা এক নতুন দিগন্তের সূচনা করে। এই নিদর্শন ৮০০ খ্রিষ্টাব্দে কিতোদের উচ্চ গুণসম্পন্ন কারুশিল্প এবং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আচারের জটিলতার উপস্থিতির প্রমাণ প্রদান করে। এই সমাধির নিদর্শন সংরক্ষণ ও জটিল সংস্কৃতির ব্যাখ্যা প্রদানের উদ্দেশ্যে ২০১০ সালে ফ্লোরিডা জাদুঘর চালু হয়।
ঔপনিবেশিক পর্যায়
সম্পাদনা১৫৩৪ সাল পর্যন্ত ইনকা উপজাতিদের স্প্যানিশ উপনিবেশ প্রতিরোধের প্রচেষ্টা পাওয়া যায়। দিয়েগো দি আলমাদ্রো ১৫ই আগস্ট, ১৫৩৪ সালে সান্তিয়াগো দি কিতো প্রতিষ্ঠা করেন যাকে পরবর্তীতে ২৮শে আগস্ট, ১৫৩৪ সালে স্যান ফ্রান্সিসকো দি কিতো নামে নামকরণ করা হয়। পরবর্তীতে ৬ই ডিসেম্বর, ১৫৩৪ এ সেবাস্তিয়ান দি বেনালকাজার এর নেতৃত্বে ২০৪ জন ব্যক্তি মিলে শহরটির বর্তমান স্থানেই পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। তিনি এলাকার নেতা রুমিনাহুলকে আটক করেন যার মধ্য দিয়ে সকল প্রতিরোধের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ১৫৩৫ সালের ১০ই জানুয়ারি রুমিনাহুলকে হত্যা করা হয়।
১৮৪১ সালের ২৮শে মার্চ কিতো কে শহর হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ১৫৫৬ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি শহরটিকে Noble y Muy Leal Ciudad de San Francisco de Quito (স্যান ফ্রান্সিসকো দি কিতো এর খুব মহৎ ও অনুগত শহর) উপাধি দেওয়া হয়। এই ঘোষণা শহরটির উন্নয়নের পরবর্তী ধাপের সূচনা করে। ১৫৬৩ সালে শহরটির স্পেনের Real Audiencia (প্রশাসনিক জেলা) এর একটি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৭১৭ সাল পর্যন্ত শহরটি পেরু viceroyalty (রাজপ্রতিনিধিত্ব) এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরবর্তীতে তা নব্য গ্রানাদা রাজ প্রতিনিধিত্ব এর অংশ হয়। উভয় রাজপ্রতিনিধিত্ব এর অধীনেই জেলাটি কিতো থেকেই পরিচালিত হয়।
স্প্যানিশরা কিতোতে রোমান ক্যাথলিক ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেছিল। শহরটি সরকারীভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগেই প্রথম গির্জা (এল বেলান) নির্মিত হয়েছিল। ঔপনিবেশিক সময়কালে নির্মিত প্রায় ২০টি গির্জা এবং কনভেন্টগুলির মধ্যে প্রথমটি স্যান ফ্রান্সিসকো কনভেন্ট যা ১৫৩৫ সালের জানুয়ারিতে নির্মিত হয়েছিল। স্প্যানিশরা আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে খ্রিস্টধর্মে রূপান্তরিত করে এবং তাদের নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করে।
১৭৩৩ সালে, স্প্যানিশ উপনিবেশের প্রায় ২১০ বছর পরে কিতো প্রায় ১০,০০০ জনগণের একটি শহর ছিল। কিতো বিদ্রোহের সময় ১৭৬৫ এবং ১৭৬৬ এর মধ্যে স্প্যানিশদের কাছ থেকে স্বল্প সময়ের জন্য কিতো নিজের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করেছিল।
১৮১০ সালের ২রা আগস্ট পেরু থেকে ঔপনিবেশিক সেনারা উপস্থিত হয়ে এই বিদ্রোহের নেতাদের এবং প্রায় ২০০ জন ব্যাক্তিকে হত্যা করে এই প্রাথমিক আন্দোলনটিকে ব্যর্থ করে। তবে ধারাবাহিক বিদ্রোহের শেষে সিমন বলিভারের নেতৃত্বে হোসে দি সুক্রে ১৮২২ সালের ২৪শে মে আগ্নেয়গিরির ঢালে পিচিঞ্চা যুদ্ধে সেনাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাদের বিজয় কিতো এবং আশেপাশের অঞ্চলগুলির স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করেছিল।
প্রজাতান্ত্রিক ইকুয়েডর
সম্পাদনা১৮৩৩ সালে কিতো মুক্ত অধিবাসী সমাজের সদস্যরা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার পরে তাদের হত্যা করা হয়েছিল। ১৮৪৫ সালের মার্চ মাসের ৬ তারিখ মার্সিস্ট বিপ্লব শুরু হয়। ১৮৭৫ সালে দেশটির রাষ্ট্রপতি গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মোরেনোকে কিতোতে হত্যা করা হয়েছিল। এর দু'বছর পরে, ১৮৭৭ সালে আর্চবিশপ হোসে ইগানাসিও চেকা ওয়াই বার্বাকে কুইটোতে গণ উদযাপনের সময় বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়।
১৮৮২ সালে বিদ্রোহীরা স্বৈরশাসক ইগনাসিও দে ভেনটিমিল্লার শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে। যাহোক, এতে সারা দেশে যে সহিংসতা শুরু হয়েছিল তা শেষ করেনি। ১৮৮৩ সালের ৯ই জুলাই উদারপন্থী কমান্ডার এলয় আলফারো গায়াকিলের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন এবং বিরোধিতার পরেও তিনি ৪ঠা সেপ্টেম্বর ১৮৯৫ ইকুয়েডরের রাষ্ট্রপতি হন। ১৯১১ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব শেষ করে তিনি ইউরোপে চলে যান।১৯১২ সালে তিনি ইকুয়েডরে ফিরে এসে ক্ষমতায় ফিরে যাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলেন। ১৯১২ সালের ২৮ জানুয়ারী তাকে গ্রেপ্তার করা হয় ও কারাগারে বন্দী করা হয় এবং হত্যা করা হয়। তাঁর মৃতদেহ রাস্তা দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় কিতো শহরের একটি পার্কে, যেখানে তার দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
১৮৮২ সালে বিদ্রোহীরা স্বৈরশাসক ইগনাসিও দে ভেনটিমিল্লার শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে। যাহোক, এতে সারা দেশে যে সহিংসতা শুরু হয়েছিল তা শেষ করেনি। ১৮৮৩ সালের ৯ই জুলাই উদারপন্থী কমান্ডার এলয় আলফারো গায়াকিলের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন এবং ৪ঠা সেপ্টেম্বর ১৮৯৫ ইকুয়েডরের রাষ্ট্রপতি হন। ১৯১১ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব শেষ করে তিনি ইউরোপে চলে যান।১৯১২ সালে তিনি ইকুয়েডরে ফিরে এসে ক্ষমতায় ফিরে যাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলেন। ১৯১২ সালের ২৮ জানুয়ারী তাকে গ্রেপ্তার করা হয় ও কারাগারে বন্দী করা হয় এবং হত্যা করা হয়। তাঁর মৃতদেহ রাস্তা দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় কিতো শহরের একটি পার্কে, যেখানে তার দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
১৯৩২ সালে Four Days' War (চার দিনের যুদ্ধ) শুরু হয়। এটি ছিল একটি গৃহযুদ্ধ যা নেপতালি বোনিফাজ এর পেরুভিয়ান পাসপোর্ট বহনের উপলব্ধি ও তার নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শুরু হয়। ১৯৪৯ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি এইচ জি ওয়েলসের উপন্যাস দ্য ওয়ার অফ দ্য ওয়ার্ল্ডসের উপন্যাসের বাস্তবধর্মী প্রচারের ফলে শহরব্যাপী আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং দাঙ্গাবাজদের দেওয়া আগুনে পুড়ে বিশের বেশি লোকের মৃত্যু হয়।
একুশ শতক
সম্পাদনা২০১১ সালে শহরটির জনসংখ্যা ছিল ২,২৩৯,১৯১। ২০০২ সাল থেকে শহরটি ঐতিহাসিক কেন্দ্রগুলো নবায়নের কাজ চলছে। একটি জলাশয় ভরাট করে নির্মিত পুরনো বিমানবন্দরটি ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ এ বন্ধ করা হয়। এই অঞ্চলটি "পার্কে বাইসেনটারিও" (দ্বিখণ্ডক পার্ক) হিসেবে পুনর্নবীকরণ করা হয়। কেন্দ্রীয় কুইটো থেকে ৪৫ মিনিট দূরত্বের নতুন মার্সিকাল সুক্রে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ এ বিমান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
২০০৩ এবং ২০০৪ এর মধ্যে শহরটি উত্তর থেকে দক্ষিণে অতিক্রমকারী করে মেট্রোবাস (Ecovia) এর বাস লাইনগুলি নির্মিত হয়েছিল। ট্র্যাফিক প্রবাহ বৃদ্ধি করতে অনেক রাস্তা বর্ধিত ও প্রসারিত করা হয় এবং রাস্তাগুলো জ্যামিতিকভাবে পুনর্গঠন করা হয়। একটি নতুন পাতাল রেল তৈরির কাজ এখনো চলছে।
ভূগোল
সম্পাদনাকিতো ইকুয়েডরের উত্তর উচ্চভূমি অঞ্চলে গুয়ায়ল্লাম্বা নদী অববাহিকায় অবস্থিত। শহরটি পিচিঞ্চা আগ্নেয়গিরির পূর্ব অংশে একটি দীর্ঘ মালভূমিতে অবস্থিত। গুয়ায়ল্লাম্বা নদীর উপত্যকায় যেখানে কিতো রয়েছে আগ্নেয়গিরিতে পূর্ণ যাদের মধ্যে কয়েকটি বরফ দ্বারা আবৃত এবং একটি পরিষ্কার দিনে শহর থেকে দৃশ্যমান। নিরক্ষীয় অঞ্চলের নিকটতম রাজধানী শহর কিতো। কিতোর উচ্চতা ২,৮২০ মিটার (৯,২৫০ ফুট)।
নিকটবর্তী আগ্নেয়গিরি
সম্পাদনাকিতোর নিকটতম আগ্নেয়গিরিটি হলো পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত পিচিঞ্চা। কিতো হলো একমাত্র রাজধানী শহর যা একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরির এত কাছাকাছি গড়ে উঠেছে। পিচিঞ্চা আগ্নেয়গিরির কয়েকটি চূড়া রয়েছে যার মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪,৭০০ মিটার (১৫,৪০০ ফুট) উপরে রুকু পিচিঞ্চা এবং ৪,৭৯৪ মিটার (১৫,৭২৮ ফুট) উপরে গুয়াগুয়া পিচিঞ্চা রয়েছে।
পিচিঞ্চা একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি এবং জাতীয় পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওফিজিক্যাল ইনস্টিটিউটের আগ্নেয়গিরিবিদেরা এর তদারকি করছেন। সবচেয়ে বড় অগ্ন্যুৎপাতটি ঘটেছিল ১৬৬০ সালে যখন ২৫ সেন্টিমিটারের (৯.৮ ইঞ্চি) বেশি ছাই শহরটকে ঢেকে ফেলেছিল। উনিশ শতকে তিনটি ছোটখাটো অগ্ন্যুৎপাত ঘটেছিল। সর্বশেষ অগ্ন্যুৎপাত এর ঘটনা ১৯৯৯ সালের ৫ ই অক্টোবর রেকর্ড করা হয়েছিল, যখন কয়েক কুণ্ডলী ধোঁয়া দেখা যায় এবং অনেক ছাই শহরে জমা হয়।
আশেপাশের অন্যান্য আগ্নেয়গিরির ক্রিয়াকলাপও শহরটিকে প্রভাবিত করতে পারে। ২০০২ সালের নভেম্বরে আগ্নেয়গিরি রেভেন্টেডর উদ্গীরিত হয়েছিল এবং শহরটিতে বেশ কয়েক সেন্টিমিটার গভীরতার সূক্ষ্ম ছাই কণা বর্ষিত হয়েছিল।
জলবায়ু
সম্পাদনাকিতোর দক্ষিণাঞ্চলের জলবায়ু উপ-ক্রান্তীয় উচ্চভূমি জলবায়ু রয়েছে (কপেন জলবায়ু শ্রেণিবিভাগ সিএফবি), যেখানে উত্তরাঞ্চলে উষ্ণ-গ্রীষ্মীয় ভূমধ্য জলবায়ু রয়েছে (কপেন জলবায়ু শ্রেণিবিভাগ সিএসবি)। নিরক্ষীয় অঞ্চলে অবস্থান ও এর উচ্চতার কারণে, কিতোতে মোটামুটি শীতল আবহাওয়া বিদ্যমান থাকে। দুপুরের গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২১.৪° সেলসিয়াস (৭০.৫° ফারেনহাইট), এবং রাতের সময় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.৮° সেলসিয়াস ৪৯.৬° ফারেনহাইট) হয়। বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ১৫.৬° সেলসিয়াস (৬০.১° ফারেনহাইট) হয়। শহরটিতে কেবল দুটি ঋতু রয়েছে: শুষ্ক এবং আর্দ্র। শুকনো মৌসুম হচ্ছে জুন থেকে সেপ্টেম্বর (৪ মাস) যাকে গ্রীষ্ম হিসাবে উল্লেখ করা হয়। আর্দ্র মৌসুম হচ্ছে অক্টোবর থেকে মে (৮ মাস) যাকে শীত হিসাবে অভিহিত করা হয়। অবস্থানের উপর ভিত্তি করে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় ১০০০ মিমি (৩৯ ইঞ্চি) হতে পারে।
উচ্চতার জন্যে কিতো বিশ্বের সর্বাধিক সৌর বিকিরণ গ্রহণকারী শহরগুলোর মধ্যে একটি। কখনও কখনও দুপুরবেলা ইউভি সূচক এর মাত্রা ২৪ এ পৌঁছে যায়।
কুইটো প্রায় নিরক্ষীয় অঞ্চলে অবস্থিত যার অর্থ হলো উচ্চ চাপ এখানে অত্যন্ত বিরল। চাপ স্থিতিশীল থাকায় খুব নিম্নচাপও বিরল।উচ্চ চাপের অভাব সত্ত্বেও কিতো নিষ্পত্তি আবহাওয়া অনুভব করতে পারে। সাধারণত, উচ্চচাপ মধ্যরাতের কাছাকাছি এবং নিম্নচাপ মধ্য বিকেলের দিকে দেখা যায়।
স্থল অঞ্চল
সম্পাদনাকিতো তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত যাদের প্রতিটি পাহাড় দ্বারা পৃথকীকৃত:
- কেন্দ্রীয়: ঔপনিবেশিক প্রাচীন শহরটি এখানে অবস্থিত
- দক্ষিণ: মূলত শিল্পাঞ্চল ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির আবাসিক অঞ্চল
- উত্তর: আধুনিক কিতো, সুউচ্চ ভবন, শপিং সেন্টার, অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত মানুষদের আবাসিক অঞ্চলে পরিপূর্ণ।
অর্থনীতি
সম্পাদনাজাতীয় জিডিপিতে ও মাথাপিছু আয়ে সর্বোচ্চ অবদানকারী শহর হলো কিতো। ইকুয়েডরের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালিত সর্বশেষ সমীক্ষা অনুসারে কিতো ইকুয়েডরে সর্বোচ্চ পরিমাণ কর আদায় করেছে, যা ২০০৯ সালে ৫৭% ছাড়িয়েছে। বর্তমানে এটি দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চল।
কিতোতে শীর্ষস্থানীয় শিল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে টেক্সটাইল শিল্প, ধাতু শিল্প। কৃষিক্ষেত্রে প্রধান রপ্তানি দ্রব্য কফি, চিনি, কাকাও, চাল, কলা এবং পাম তেল।
দেশটির বৃহত্তম এবং লাতিন আমেরিকার অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান পেট্রোইকুয়েডরের সদর দপ্তর কিতোতে অবস্থিত।
অনেক জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, তেল কর্পোরেশন এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ের সদর দপ্তর এবং আঞ্চলিক দপ্তরগুলোও কিতোতে অবস্থিত যা একে একটি বিশ্বমানের ব্যবসায়িক নগরী হিসাবে গড়ে তুলেছে।
"The World according to" এর বৈশ্বিক শহর প্রতিবেদন, যা বৈশ্বিক শহরের নেটওয়ার্কের সাথে একটি শহরের সংহতকরণের পরিমাপ করে সেই প্রতিবেদনে কুইটোকে বিটা শহর হিসাবে স্থান দেওয়া হয়েছে যা অঞ্চলটিকে বা রাষ্ট্রটিকে বিশ্ব অর্থনীতির সাথে যুক্ত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মহানগরী হিসেবে ভূমিকা রাখছে।
রাজনীতি
সম্পাদনাসরকার
সম্পাদনাকিতো একজন মেয়র এবং ১৫ সদস্যের একটি পরিষদ দ্বারা পরিচালিত। মেয়র পাঁচ বছরের মেয়াদে নির্বাচিত হন এবং মেয়াদ শেষে পুনরায় নির্বাচিত হতে পারবেন। কিতো (ক্যান্টন) মেট্রোপলিটন জেলায় এই পরিষদের সদস্য সংখ্যা দ্বিগুণ হয়। বর্তমান মেয়র হলেন জর্জে ইউন্ডা মাচাদো।
শহুরে যাজকপল্লী
সম্পাদনাইকুয়েডরে ক্যান্টনগুলো যাজকপল্লীতে বিভক্ত হয় কারণ এগুলো মূলত ক্যাথলিক চার্চের দ্বারা পরিচালিত হতো। যাজকপল্লীগুলোকে শহুরে বলা হয় যদি তারা তাদের সংশ্লিষ্ট ক্যান্টনের মূল সীমানার মধ্যে থাকে এবং সেই সীমানার বাইরে থাকলে তাকে গ্রাম্য যাজকপল্লী বলা হয়। কিতো শহরের ভিতরে, যাজকপল্লীগুলো যেসব সংস্থার অধীনে (যেমন, পৌরসভা, ডাক পরিষেবা, ইকুয়েডর পরিসংখ্যান সংস্থা) সেসব সংস্থার উপর ভিত্তি করে ভাগ করা হয়।
২০০৮ সালের হিসাব অনুসারে কিতো পৌরসভা শহরটিকে ৩২ টি শহুরে যাজকপল্লীতে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রশাসনিক কাজের উদ্দেশ্যে কিতোর পৌরসভাগুলো এই যাজকপল্লীগুলো ব্যবহার করে যা ২০০১ সাল থেকে এটি ক্যাবিলডোস নামেও পরিচিত। এই যাজকপল্লীগুলো হলো:
- বেলিসারিও কুয়েভেদো
- কারসেলেন
- সেন্ট্রো হিস্তোরিকো
- চিলিবুলো
- চিলোগালো
- চিম্বাকাল্লে
- কচাপাম্বা
- কমিতে দেল পুয়েবলো
- কনসেপসিওন
- কতোকোল্লাও
- এল কনডাডো
- এল ইনকা
- গুয়ামানি
- ইনাকিতো
- ইচিম্বা
- জিপিজাপা
- কেনেডি
- লা আর্গেলিয়া
- লা ইকুয়েটোরিয়ানা
- লা ফেরোভিয়ারিয়া
- লা লিবার্তাদ
- লা মেনা
- মাগদালেনা
- ম্যারিস্কাল সুক্রে
- পনকিয়ানো
- পুয়েনগাসি
- কিতুম্বে
- রুমিপাম্বা
- স্যান বার্তোলো
- স্যান হুয়ান
- সোলান্দা
- তুরুবাম্বা
ধর্মচর্চা সংক্রান্ত যাজকপল্লী
সম্পাদনাকিতোর রোমান ক্যাথলিক আর্চডোসিস শহরটিকে ১৬৭টি যাজকপল্লীতে বিভক্ত করেছে যা ১৭টি অঞ্চলের সমন্বয়ে গঠিত।
যোগাযোগ
সম্পাদনাগণপরিবহন
সম্পাদনামেট্রোবাস কিউ নেটওয়ার্ক যা "রেড ইন্টিগ্রেডা দে ট্রান্সপোর্টে পাবলিকো" নামেও পরিচিত। এটি কিতোতে দ্রুত বাস ট্রানজিট ব্যবস্থা এবং এটি শহরে উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে যায়। এটি তিনটি বিভাগে বিভক্ত - সবুজ লাইন (কেন্দ্রীয় বাস ব্যবস্থা, এল ট্রলি বা ট্রলিবাস নামেও পরিচিত), লাল লাইন (উত্তর-পূর্ব ইকোভা) এবং নীল লাইন (উত্তর-পশ্চিম কেন্দ্রীয় করিডোর)। দ্রুত বাস ট্রানজিট ব্যবস্থা ছাড়াও শহরে প্রচুর বাস চলাচল করে। বাসগুলোর নাম এবং নম্বর উভয়ই রয়েছে এবং তাদের নির্দিষ্ট রুট রয়েছে। সকল ট্যাক্সি ক্যাবগুলো হলুদ এবং তাদের প্রত্যেকটির মিটারই ভাড়া দেখায় । এখানে প্রায় ৮৮০০ টি নিবন্ধিত ট্যাক্সিক্যাব রয়েছে।
আগস্ট ২০১২ এ কিতো পৌরসভা বাইসাই কিউ নামে বাইসাইকেল ভাগাভাগির পদ্ধতি চালু করে।
বিমান পথ
সম্পাদনাখেলাধুলা
সম্পাদনাকিতোতে দেশের সাতটি বিশিষ্ট ফুটবল ক্লাব রয়েছে। শহরের শীর্ষ ক্লাবগুলো (এলডিইউ কিতো, এল ন্যাসিয়োনাল) মোট ২৮ টি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে এবং খেলেছে সমস্ত চ্যাম্পিয়নশিপের অর্ধেকেরও বেশি খেলায়। দেপোর্তিবো কিতো এবং আউকাস হল জাতীয় লিগে খেলা প্রথম ঘরের দল। দেপোর্তিবো কিতো তিনটি ঘরের দলের মধ্যে প্রথম শিরোপা জিতেছিল।
কিতোর আরও মজার তথ্য হল স্টেডিয়ামগুলি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,৮০০ মিটার (৯,২০০ ফুট) উপরে অবস্থিত। একটি বিদেশী দলের বিপক্ষে খেললে এই শহর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য এবং স্থানীয় দলগুলির জন্য একটি দুর্দান্ত সুবিধা প্রদান করে এবং ইকুয়েডর গত দুটি বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করার এটি অন্যতম একটি কারণ।[১]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Quito Sports"। studylanguages.org। ৫ মার্চ ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ নভেম্বর ২০১৬।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- উইকিভ্রমণ থেকে কিতো ভ্রমণ নির্দেশিকা পড়ুন।