কালিপদ বসু

বাঙালি গণিতবিদ

কালীপদ বসু, যিনি কে. পি. বসু নামেও পরিচিত, (২৪ নভেম্বর,১৮৬০ - এপ্রিল,১৯১৫) [] একজন প্রখ্যাত বাঙালি গণিতশাস্ত্রবিদ ও বিজ্ঞানশিক্ষক।[] তিনি কে. পি. বসু পাবলিশিং কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা।[]

কালীপদ বসু
(কে. পি. বসু)
জন্ম
কালীপদ বসু

২৪ নভেম্বর ১৮৬০
মৃত্যুনভেম্বর,১৯১৪
জাতীয়তাবাঙালি
মাতৃশিক্ষায়তনকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
দাম্পত্য সঙ্গীমেঘমালা বসু

জন্ম ও বাল্যকাল

সম্পাদনা

কে. পি. বসু বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার হরিশংকরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[] তাঁর পিতা মহিমাচরণ বসু স্থানীয় হরিশংকরপুর রেজিস্ট্রি অফিসের (তৎকালীন ঝিনাইদহ রেজিস্ট্রি অফিস হরিশংকরপুর গ্রামে অবস্থিত ছিল) একজন ভেন্ডার ছিলেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

জগদ্বিখ্যাত গণিতবিদ অধ্যাপক কালিপদ বসু বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত কে. পি. বসু নামে। তিনি ঝিনেদার সূর্যসন্তান। ২৪ নভেম্বর ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে, ব্রিটিশ রাজ আমলে, অবিভক্ত ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি অঞ্চলের সুপরিচিত ঐতিহাসিক জেলা যশোরের উল্লেখযোগ্য মহাকুমা ঝিনাইদহ সদরের হরিশংকরপুর গ্রামে (যা বর্তমান বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার সদর থানার হরিশংকরপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত) তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

কে. পি. বসু স্বগ্রামের কুমারী মেঘমালা ঘোষের সাথে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন।

শিক্ষাজীবন

সম্পাদনা

কে.পি বসুর শিক্ষা জীবনের সূচনা হয় নিজ গ্রামের পাঠশালায় মেধাবী শিক্ষক নছিম উদ্দিন মন্ডলের কাছে। কে. পি বসুর গণিতমনস্কতা সৃষ্টিতে তাঁর ভূমিকা অপরিসীম। কে. পি. বসু গ্রামের স্কুলে পাঠ সমাপনান্তে লর্ড রিপন কলেজে ভর্তি হন এবং এখানে থেকে এন্ট্রান্স পাশ করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে হতে গণিত শাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন।[][]

কর্মজীবন

সম্পাদনা
 
কালিপদ বসুর বাড়ি।

পড়াশোনা শেষ করে তিনি ১৮৯২ সালে ঢাকা কলেজে গণিত শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন এবং এখানেই আমৃত্যু কর্মরত ছিলেন।[][]

তিনি কলকাতায় ‘কে. পি বসু পাবলিশিং কোম্পানী’ প্রতিষ্ঠা করেন। অধ্যবসায়, পরিশ্রম, মেধা ও প্রজ্ঞায় তিনি প্রতিষ্ঠা অর্জন করেন ও প্রভূত অর্থের মালিক হয়েছিলেন। ১৯০৭ সালে, জন্মভূমি হরিশংকরপুরের নবগঙ্গা নদীর তীরে, এক একর জমির উপর ১৭ কক্ষ বিশিষ্ট প্রাসাদোপম দ্বিতল ভবন নির্মাণ করেন। কর্মরত অবস্থায় প্রবাসে থেকেও তিনি নিজ গ্রামের উন্নতি ও সংস্কারসাধনে উদ্যোগী ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে এই মহান গণিতবিদ অত্যন্ত সদালাপী, অমায়িক ও অনাড়ম্বর ছিলেন।

কে. পি বসু ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় অনুষ্ঠিত সর্বভারতীয় ম্যাথামেটিক্স কনফারেন্সে 'হাউ টু টিচ ম্যাথামেটিক্স' প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন। তিনি তখনকার প্রচলিত 'কড়াকিয়া' ও 'গণ্ডাকিয়া' পদ্ধতি বর্জন করে দশমিক পদ্ধতি চালুর সুপারিশ করেন। অ্যালজ়েব্রা মেড ইজ়ি (১৮৯০), সহজ বীজগণিত (অ্যালজ়েব্রা মেড ইজ়ির বাংলা সংস্করণ, প্রকাশকাল ১৯৩৭)সহ বেশ কিছু গণিতশাস্ত্রের পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন।

কে.পি বসু ১৮৮২ সালে হান্টার কমিশন সুপারিশকৃত ‘আধুনিক এলজাবরা’ (ইউরোপীয় সংস্করণ) বইটির অধ্যয়ন ও অনুশীলনের পথকে সুগম, প্রাঞ্জল ও সহজ করে তোলেন। কে.পি বসু অসংখ্য নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে অঙ্কশাস্ত্রের কলেবর বৃদ্ধি ও উৎকর্ষ সাধন করেছেন। অধ্যাপনার সাথে সাথে তিনি বীজগণিত ও জ্যামিতি শাস্ত্রের উপর গবেষণা চালিয়ে যান। তাঁর ঐকান্তিক সাধনায় ‘এ্যালজেব্রা মেড ইজি’ ‘মর্ডান জিওমেট্রি’ , ‘ইন্টারমিডিয়েট সলিড জিওমেট্রি’ প্রভৃতি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। প্রকাশনা শিল্পের প্রতিও তাঁর মনোযোগ আকৃষ্ট হয়েছিল।

সম্মাননা

সম্পাদনা

কে. পি. বসু ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর পার্নিসিয়াস ম্যালেরিয়া জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঢাকাতে পরলোক গমন করেন। তাঁর মৃতদেহ ঝিনাইদহে পৌঁছালে সকল অফিস আদালত বন্ধ হয়ে যায়। শোকাভিভূত হাজার হাজর মানুষ তাঁকে শেষ শ্রদ্ধায় নবগঙ্গা নদীর তীরে উপস্থিত হয়। ঝিনাইদহ শহরে তাঁর নামে একটি সড়কের নাম 'কে. পি. বসু সড়ক' নামকরণ করা হয়েছে।[]

গ্রন্থরাজি

সম্পাদনা

তিনি বেশ কিছু গণিতশাস্ত্রের পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন:[]

  • অ্যালজ়েব্রা মেড ইজ়ি (১৮৯০)
  • সহজ বীজগণিত (অ্যালজ়েব্রা মেড ইজ়ির বাংলা সংস্করণ, প্রকাশকাল ১৯৩৭)
  • মডার্ন জিওমেট্রি
  • ইন্টারমিডিয়েট সলিড জিওমেট্রি
  • ম্যাট্রিকুলেশন জিওমেট্রি (১৯৩৩)

আরও দেখুন

সম্পাদনা

সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ১৩০, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. "ঝিনাইদহের ঐতিহ্য নবগঙ্গা নদীর তীরে জগদ্বিখ্যাত গণিতবিদ কে.পি. বসুর বাড়ী"। ১১ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুলাই ২০১৫ 
  3. "ঝিনাইদহ জেলা তথ্য বাতায়ন"। ৮ জুলাই ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুলাই ২০১৫ 
  4. "অধ্যাপক কালিপদ বসু"। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুলাই ২০১৫ 
  5. "কে. পি. বসুর বাড়ী"। বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০২০ 
  6. "ঝিনাইদহের ঐতিহ্য নবগঙ্গা নদীর তীরে জগদ্বিখ্যাত গণিতবিদ কে.পি. বসুর বাড়ী"। ১১ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুলাই ২০১৫ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা