কামারপুকুর

পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার গোঘাট ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের একটি গ্রাম

কামারপুকুর হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার অন্তর্গত আরামবাগ মহকুমার একটি গ্রাম। কামারপুকুরে গোঘাটসমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের সদর দফতর অবস্থিত।[] []

কামারপুকুর
গ্রাম/তীর্থস্থান
কামারপুকুর গ্রামে রামকৃষ্ণ পরমহংসের পৈতৃক বাড়ি
কামারপুকুর গ্রামে রামকৃষ্ণ পরমহংসের পৈতৃক বাড়ি
কামারপুকুর পশ্চিমবঙ্গ-এ অবস্থিত
কামারপুকুর
কামারপুকুর
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে কামারপুকুর গ্রামের অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২২°৫৫′ উত্তর ৮৭°৩৯′ পূর্ব / ২২.৯১° উত্তর ৮৭.৬৫° পূর্ব / 22.91; 87.65
দেশ ভারত
রাজ্যপশ্চিমবঙ্গ
জেলাহুগলি জেলা
ভাষা
 • সরকারিবাংলাইংরেজি
সময় অঞ্চলভারতীয় সময় (ইউটিসি+৫:৩০)
পিন কোড৭১২৬১২
টেলিফোন কোড০৩২১১


এই গ্রামে ঊনবিংশ শতাব্দীর হিন্দু ধর্মগুরু রামকৃষ্ণ পরমহংসের পৈত্রিক বাড়ি ও জন্মস্থান অবস্থিত। রামকৃষ্ণ পরমহংসের স্ত্রী সারদা দেবীর জন্মস্থান জয়রামবাটী গ্রামও (বাঁকুড়া জেলার অন্তর্গত) কামারপুকুর গ্রামের কাছে অবস্থিত। রামকৃষ্ণ পরমহংসের জন্মস্থান ও পৈতৃক বাড়ি (অধুনা "রামকৃষ্ণ মঠ, কামারপুকুর" নামে রামকৃষ্ণ মঠমিশনের শাখাকেন্দ্র), তার পরিবারের রঘুবীর মন্দির, যুগী শিবমন্দির ও অন্যান্য দ্রষ্টব্য স্থানগুলি এখন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে তীর্থস্থানের মর্যাদা পায়।

নামকরণ

সম্পাদনা

কামারপুকুর গ্রামের আদি নাম সুখলালগঞ্জ। গ্রামের আদি জমিদার সুখলাল গোস্বামীর নামেই এই নাম। সুখলালগঞ্জ, শ্রীপুর, মুকুন্দপুর, মধুবাটীকামারপুকুর — এই পাঁচখানি ছোটো গ্রাম পরস্পরের খুব কাছাকাছি অবস্থিত বলে বহুদিন ধরে সকলের কাছে শুধুমাত্র কামারপুকুর গ্রাম নামেই অভিহিত হয়ে আসছে। অনেকের মতে, শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসের ভিক্ষামাতা ধনী কামারিনীর পিতৃকুলের কোনো এক ব্যক্তিকে দিয়ে স্থানীয় শাসনকর্তা মানিকরাজা যে পুকুরটি খনন করিয়েছিলেন, তাকে কামারদের পুষ্করিনী নামে অভিহিত করত। এই নামটি থেকেই কামারপুকুর নামটির উদ্ভব ঘটে।

পূর্বকথা

সম্পাদনা

বাংলার অন্যান্য গ্রামের মতোই কামারপুকুর গ্রামেও প্রাচীনকালে বহু হিন্দু দেবদেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মন্দিরের মধ্যে শিবমন্দিরের প্রাধান্য ছিল। শিবরাত্রি, গাজন, হরিবাসরহরিনাম সংকীর্তনে গ্রামের লোকের উৎসাহ ছিল সর্বাধিক। তবে বিষ্ণু, কালী, শীতলা, মনসা, বিশালাক্ষীধর্মঠাকুর সমানভাবে পূজা পেতেন। এই ধর্মীয় উদারতার আবহাওয়াতেই শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসের বাল্যকাল অতিবাহিত হয়েছিল।

১৮৩৬ থেকে ১৮৫৩ সাল পর্যন্ত প্রায় সতেরো বছর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ একাদিক্রমে কামারপুকুরে ছিলেন। পরে দক্ষিণেশ্বরে চলে যান। কিন্তু মাঝেমধ্যেই কামারপুকুরে এসে থাকতেন। সাধনাকালের অন্তে প্রায় প্রতিবছরই চতুর্মাস্য (বর্ষা ও শরৎকাল) তিনি কামারপুকুরে এসে কাটাতেন। ১৮৮০ সালে শেষবার কামারপুকুরে আসেন। সেবার আটমাস কাল এখানে অতিবাহিত করেন।

১৮৮৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত-রচয়িতা শ্রীম কামারপুকুর দর্শনে আসেন। শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ তখন অসুস্থ ছিলেন। শ্রীম কামারপুকুর গ্রাম সম্পর্কে লেখেন,

আমি যখন প্রথম কামারপুকুরে যাই, রাস্তার লোক, ক্ষেতের চাষী, সকলকে গিয়া ঠাকুরের কথা জিজ্ঞাসা করিয়াছি, সকলকেই আলিঙ্গন করিতে ইচ্ছা হইত। যেন কত আপন। পশুপক্ষী, বৃক্ষ সকলকে ধন্য মনে হইত। কারণ ইহারা ঠাকুরকে দর্শন ও স্পর্শ করিয়াছে। যিনিই ঠাকুরের কথা বলিয়াছেন, তাঁহাকেই প্রণাম করিয়াছি। ঠাকুর চোখ বদলাইয়া দিয়াছেন কিনা।

শ্রীম কামারপুকুরে গিয়াছিলেন শুনে, শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ খুব খুশি হন। তিনিও শ্রীমর সঙ্গে কামারপুকুরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু সেই ইচ্ছা পূর্ণ হওয়ার আগেই শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের মহাপ্রয়াণ ঘটে। শ্রীম অবশ্য তারপরেও ৮-৯ বার কামারপুকুরে এসেছিলেন। তিনি কামারপুকুরেই স্থায়ীভাবে বসবাসের কথা চিন্তা করেছিলেন। কিন্তু কামারপুকুরকে 'ম্যালেরিয়ার ডিপো' আখ্যা দিয়ে শ্রীশ্রীমা সারদা দেবী শ্রীমকে কামারপুকুরে বসবাসের অনুমতি দেননি।

শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর শ্রীশ্রীমা সারদা দেবী অনেক অভাব-অনটন সহ্য করেও কামারপুকুরের পর্ণকুটিরে দীর্ঘকাল কাটিয়েছিলেন। ১৮৮৯ সালে নরেন্দ্রনাথ (স্বামী বিবেকানন্দ) কামারপুকুরে আসেন। স্বামীজী একবার বলেছিলেন, যারা ভাগ্যবান তারাই সেইসব (কামারপুকুরে ঠাকুরের জন্মভূমি) দর্শন করতে পায়। শ্রীশ্রীমা কিছুকাল ভক্ত গিরিশচন্দ্র ঘোষকে নিয়ে এখানে বাস করেন। শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের সকল সন্ন্যাসী ও গৃহী শিষ্যেরাই কামারপুকুর দর্শনে এসেছিলেন।বর্তমানে প্রতিবছর ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেবের জন্মতিথি উপলক্ষে একটি মেলা অনুষ্ঠিত হয়। যা ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেবের জন্মতিথির দিন থেকে দোল পূর্ণিমা পর্যন্ত হয়। এরপরে আমার হঠাৎ দেখা হল একটি অদ্ভুত গ্রামের। সেই গ্রামের লোকেরা প্রভু যীশু খ্রীষ্ট কে বিশ্বাস করত। পরে আমি অনেক মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম এরকম অনেক গ্রামে পাড়াতে প্রভু যীশুখ্রীষ্টের মন্ডলী শুরু হয়েছে। এবং প্রভু যীশুখ্রীষ্টের নামে অনেকেই সুস্থতা লাভ করেছে। আমি যখন তাদের সঙ্গে কথা বলছিলাম তাদের বিশ্বাস আর তাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের প্রতি প্রেম আমাকে এবং আমার হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল। এই এলাকায় প্রভু যীশু খ্রীষ্টের অনেক অলৌকিক কার্য গুলি ঘটেছে মানুষের জীবনে।

পাদটীকা

সম্পাদনা
  1. "Contact details of Block Development Officers"Hooghly district। Panchayats and Rural Development Department, Government of West Bengal। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-২৬ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. "District Census Handbook: Hugli, Series-20, Part XIIA" (PDF). Map of Hooghly district with CD Block HQs and Police Stations (on the fifth page). Directorate of Census Operations, West Bengal, 2011. Retrieved 20 June 2017.

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা