কাঞ্জর
কাঞ্জর হল একটি হিন্দু উপজাতি। ভারত এবং পাকিস্তানে এদের উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যা আছে।
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল | |
---|---|
ভারত • পাকিস্তান | |
ভাষা | |
কাঞ্জরি • হিন্দি • রাজস্থানী • ভোজপুরি • উর্দু • পাঞ্জাবি | |
ধর্ম | |
হিন্দুধর্ম • শিখধর্ম • ইসলাম | |
সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী | |
পাথরকাট |
বেশিরভাগ কাঞ্জর জনগণই কাঞ্জরি ভাষায় কথা বলে। কাঞ্জরি একটি কম পরিচিত ইন্দো আর্য ভাষা, তবে এদের প্রায় সকলেই পাঞ্জাবি ভাষাতেও কথা বলে।[১] কাঞ্জরিরা তাদের মাতৃভাষা নারসি ছাড়াও আরও ৪-৫টি ভাষায় কথা বলে। নারসি ভাষাটি প্রাণী এবং পাখির বিভিন্ন ধরনের শব্দ, সংকেত পূর্ণ শব্দ এবং ইশারা নিয়ে গঠিত।[২]
ইতিহাস
সম্পাদনাঔপনিবেশিক আমলে, কাঞ্জরদের অপরাধী উপজাতি আইন, ১৮৭১-এর অধীনে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল, এদের এমন একটি উপজাতি হিসাবে উপস্থাপিত করা হয়েছিল যারা "জামিন অযোগ্য অপরাধের পদ্ধতিগত কাজে আসক্ত।"[৩]
বর্তমান পরিস্থিতি
সম্পাদনাভারত
সম্পাদনা১৯৫২ সালে কাঞ্জররা ভারতের বিমুক্ত উপজাতি হিসেবে ঘোষিত হয়, সেই সময় ফৌজদারি উপজাতি আইন অভ্যাসগত অপরাধীদের আইন দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রদায়টির তাদের নামের সঙ্গে যথেষ্ট সামাজিক কলঙ্ক বহন করে, প্রধানত তাদের ঐতিহ্যের সংস্কৃতি মূলধারার ভারতের সংস্কৃতি থেকে পৃথক হওয়ার কারণে এই ঘটনা ঘটেছে।[৪]
২০১১ সালের জনগণনায় দেখা গেছে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে কাঞ্জরের জনসংখ্যা ১,১৫,৯৬৮ জন।[৫]
পাকিস্তান
সম্পাদনাপাকিস্তানে, দুটি স্বতন্ত্র সম্প্রদায় কাঞ্জরি নামে পরিচিত। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তারা ভবঘুরে কারিগর এবং বিনোদনকারীদের পেশার সাথে যুক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের তৈরি টেরাকোটা খেলনার জন্য তারা সবচেয়ে বেশি পরিচিত। করাচিতে, উর্দুভাষী সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচুর সংখায় উত্তর ভারতের কাঞ্জরদের বংশধর আছে। তাদের অধিকাংশই দিল্লি এবং লখনউ থেকে করাচিতে চলে এসেছিল। 'কাঞ্জর' শব্দটি সাধারণভাবে উপজাতি বোঝানোর চেয়ে নিম্ন নৈতিক চরিত্রের ব্যক্তিকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।[৬][৭]
কাঞ্জররা মাঝে মাঝে লাহোরের আশে পাশের অঞ্চলের সাথে সংযুক্ত থাকে। তারা মূলত একটি হিন্দু উপজাতি হলেও পরে তাদের কিছুজন শিখ এবং কিছু ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে গিয়েছিল। কয়েক শতাব্দী ধরে লখনউ ছিল ধনী পরিবারদের একটি কেন্দ্র। কাঞ্জরিরা তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য লখনউতে পাঠাতো। মনে করা হয় যে এই মহিলারাই উর্দুভাষী সংস্কৃতি এবং গর্বের শিকড় বহন করে এনেছে। সেখান থেকে অনেকেই দেশভাগের পর করাচিতে চলে এসেছিল। করাচিতে, এই ধরনের উর্দুভাষী পরিবারগুলি যথেষ্ট শিক্ষিত কিন্তু তাদের বংশাবলী থেকে সহজেই কাঞ্জরদের খুঁজে পাওয়া যায়। এটি কয়েক শতাব্দী ধরে কাঞ্জরদের একটি বৃহৎ সম্প্রদায়ের আবাসস্থল। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে: "একজন কাঞ্জর তার জন্মের দিন থেকেই তবলা এবং ঘুঙুরের আওআজ শুনতে পায় এবং তার অ-কাঞ্জর বন্ধুরা বিদ্যালয়ে যাওয়া শুরু করার আগেই সঙ্গীতে তার আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু করতে হবে।"[৮]
যাযাবর হলেও, কাঞ্জররা একটি নির্দিষ্ট পথ অনুসরণ করে এবং প্রায়ই তারা যে গ্রামে যায় তাদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে। পুরুষদের অনেকেই কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। তাদের তাঁবু তৈরি করা হয় চেরা বাঁশ বা মুঞ্জি ঘাস দিয়ে, এবং তাদের শিবিরগুলি গ্রামের প্রান্তে দেখতে পাওয়া যায়, পাশাপাশি শহুরে এলাকা যেমন ফয়সালাবাদ এবং লাহোরেও দেখা যায়।[১]
জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে
সম্পাদনাজয়শঙ্কর প্রসাদের হিন্দি গল্প ইন্দ্রজাল এর বিষয় ছিল কাঞ্জররা।
ললিউডের বোল চলচ্চিত্রে, বিশিষ্ট চরিত্র সাকা কাঞ্জরি, একজন ধর্মান্ধ হাকিমকে আর্থিকভাবে সাহায্য করেছিল। হাকিমটি নিজের ছেলেকে সম্মান রক্ষার্থে হত্যা করে পুলিশকে ঘুষ দিয়েছিল সেই মৃতদেহ সমাধিস্থ করার জন্য। বিনিময়ে 'হাকিম'কে সাকা কাঞ্জরির মেয়ে মীনার জন্য একটি কন্যা সন্তানকে বহন করতে হয়েছিল।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ Kanjar Social Organization by Joseph C Berland in The other nomads: peripatetic minorities in cross-cultural perspective / edited by Aparna Rao pages247 to 268 আইএসবিএন ৩-৪১২-০৮০৮৫-৩ Köln : Böhlau, 1987.
- ↑ Madan Meena: Secret Language of the Kanjar Community, Fellowship from Firebird Foundation for Anthropological Research, USA
- ↑ Nanta Village The Imperial Gazetteer of India, 1908, v. 18, p. 367.
- ↑ {{cite journal |last=Dayal |first=Surbhi |date=February 2020 |title=Kanjar subculture: socialisation for amongst traditional entertainers in India |journal=[[Culture, Health ] |publisher=Taylor & Francis |volume=23 |issue=2 |pages=273–283 |doi=10.1080/13691058.2019.1705397 |pmid=32031496 |eissn=1464-5351 |issn=1369-1058 |oclc=41546256 |s2cid=211047159}}
- ↑ "A-10 Individual Scheduled Caste Primary Census Abstract Data and its Appendix - Uttar Pradesh"। Registrar General & Census Commissioner, India। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০২-০৬।
- ↑ Kanjar Social Organization by Joseph C Berland in The other nomads : peripatetic minorities in cross-cultural perspective / edited by Aparna Rao pages247 to 268 আইএসবিএন ৩-৪১২-০৮০৮৫-৩ Köln : Böhlau, 1987.
- ↑ Taboo: The Hidden Culture of a Red Light Area by Fouzia Saeed, Oxford University Press আইএসবিএন ০১৯৫৭৯৭৯৬৫
- ↑ Taboo: The Hidden Culture of a Red Light Area by Fouzia Saeed, Oxford University Press, page 61