কম্বোজ পাল রাজবংশ
কম্বোজ পাল রাজবংশ দশম ও একাদশ শতাব্দীতে উত্তর ও পূর্ব বঙ্গ শাসন করত। পাল সম্রাট দ্বিতীয় বিগ্রহপালের শাসনকালে এই রাজবংশ তাদের যুদ্ধে পরাস্ত করে নতুন শক্তিরূপে উঠে আসে।
বাংলায় কম্বোজ পাল শাসনের প্রমাণ
সম্পাদনাদিনাজপুর স্তম্ভলিপি
সম্পাদনাদশম শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে নির্মিত[১]:৫৪ দিনাজপুর স্তম্ভলিপিতে কম্বোজান্বয় গৌড়পতির উল্লেখ রয়েছে। এই তাম্রশাসনটি কোন একজন গৌড়েশ্বর কম্বোজরাজের শাসনকালে একটি শিবমন্দিরে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীকালে মুসলিম শাসনকালে গৌড় থেকে চল্লিশ মাইল পূর্বে বাণগড় নামক স্থানে স্থানান্তরিত করা হয়। অষ্টাদশ শতাব্দীতে মহারাজ রামনাথ এই স্তম্ভলিপিটিকে দিনাজপুরে স্থানান্তরিত করেন বলে এটি দিনাজপুর স্তম্ভলিপি নামে পরিচিত হয়।[২]:৩,৪
ইর্দা তাম্রশাসন
সম্পাদনা১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে আবিষ্কৃত[৩] ইর্দা তাম্রশাসনে কম্বোজ রাজাদের বংশতালিকার বর্ণনা রয়েছে। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে এই তাম্রশাসন দশম শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে নির্মিত হয়েছে। সেই কারণে ঐতিহাসিকেরা মনে করেন যে দিনাজপুর স্তম্ভলিপিতে উল্লিখিত কম্বোজান্বয় গৌড়পতি এবং ইর্দা তাম্রশাসনে উল্লিখিত কম্বোজবংশতিলক পরমসৌগত মহারাজাধিরাজ পরমেশ্বর পরমভট্টারক রাজ্যপাল একই কম্বোজবংশের অন্তর্গত নৃপতি। এই তাম্রশাসনে এই রাজবংশের রাজ্যপাল, নারায়ণপাল, নয়পাল প্রভৃতি শাসকদের নামের উল্লেখ রয়েছে।[২]:৩১৫[৪]:৩৮২,৩৮৩[৫]:২০৮,২১০
বাণগড় তাম্রশাসন
সম্পাদনাপাল সম্রাট প্রথম মহীপালের বাণগড় লিপি বাংলায় কম্বোজ শাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এই তাম্রশাসন থেকে জানা যায় যে, প্রথম মহীপাল যুদ্ধে জয়লাভ করে অনধিকৃতবিলুপ্ত পিতৃরাজ্যের উদ্ধার সাধন করেন।[n ১]
ভৌগোলিক সীমা
সম্পাদনাকম্বোজ পাল রাজ্যের ভৌগোলিক অঞ্চল সম্বন্ধে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। ইর্দা তাম্রশাসন অনুসারে এই রাজ্যের অধীনে বর্ধমানভুক্তি ও দণ্ডভুক্তি অঞ্চল ছিল। দিনাজপুরের স্তম্ভলিপি থেকে জানা যায় যে, গৌড় এই রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, রাঢ় অঞ্চল এই রাজ্যের অধীনস্থ হয়েছিল।[৭]:১২৭
শাসক
সম্পাদনাকম্বোজ পাল রাজবংশের রাজ্যপাল, নারায়ণপাল, নয়পাল ও ধর্মপাল নামক চারজন রাজার নাম জানতে পারা যায়। নয়পালের ইর্দা তাম্রশাসন থেকে জানা যায় যে এই বংশের রাজাদের পরমেশ্বর, পরমভট্টারক, মহারাজাধিরাজ ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত করা হত। এই তাম্রশাসন থেকে জানা যায় যে, রাজ্যপাল এই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এবং তিনি কম্বোজবংশতিলক পরমসৌগত মহারাজাধিরাজ পরমেশ্বর পরমভট্টারক উপাধি গ্রহণ করেছিলেন। এই বংশের দ্বিতীয় রাজা নারায়ণপাল ও তৃতীয় রাজা নয়পাল ছিলেন রাজ্যপালের দুই পুত্র। মজুমদারের মতে, দিনাজপুর স্তম্ভলিপিতে উল্লিখিত কুঞ্জার্ঘটবর্ষণ শব্দটি কম্বোজান্বয় গৌড়পতির ব্যক্তিগত নাম ছাড়া কিছু নয়। সেই হিসেবে এই রাজবংশের আরেক রাজা হিসেবে কুঞ্জার্ঘটবর্ষণের নাম করা যায়। কিন্তু অন্যান্য কয়েকজন ঐতিহাসিকদের মতে দিনাজপুর স্তম্ভলিপি ও ইর্দা তাম্রশাসন একই সময়ে নির্মিত হওয়ায় কম্বোজান্বয় গৌড়পতি এবং কম্বোজবংশতিলক রাজ্যপাল একই ব্যক্তি। এই মত অবশ্য অধিকাংশ ঐতিহাসিকেরা মানতে চাননি কারণ পরমসৌগত উপাধিধারী রাজ্যপাল অবশ্যই একজন বৌদ্ধধর্মাবলম্বী ছিলেন, অপরদিকে দিনাজপুর স্তম্ভলিপিতে উল্লিখিত রাজা ছিলেন শৈব। সেই কারণে শৈবধর্মাবলম্বী নয়পাল এবং দিনাজপুর স্তম্ভলিপির কম্বোজান্বয় গৌড়পতি একই ব্যক্তি বলে মনে করা হয়। এই রাজবংশের ধর্মপাল নামক এক রাজার নাম পাওয়া যায়, যিনি একাদশ শতাব্দীতে রাজত্ব করতেন।[৮]:৩৮০, ৩৮৩[৯]:১০৯[১]:৫৪[২]:৩১৬, ৩১৮[১০]:৪১৩[১১]:৩৭৯, ৩৮০
পাদটীকা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ Dr. R. C. Majumdar, Dr A. D. Pusalkar, History and Culture of Indian People, The Age of Imperial Kanauj, 1964,
- ↑ ক খ গ K. S. Dardi, Ancient Kamboja, People and the Country, 1981
- ↑ Epigraphia Indica, XXII, 1933-34, pp 150-158, Dr N. G. Majumdar
- ↑ Dr R. K. Mukerjee; Ancient India, 1956
- ↑ S Kirpal Singh, The Kambojas Through the Ages, 2005
- ↑ বাণগড়ে আবিষ্কৃত প্রথম মহীপালের তাম্রশাসন, গৌড়লেখমালা, পৃঃ ৯৫
- ↑ Dr Ramesh Chandra Majumdar, History of Ancient Bengal, 1971.
- ↑ Dr Benoychandra Sen, Some Historical Aspects of the Inscriptions of Bengal: Pre-Muhammadan Epochs, 1942
- ↑ Journal of the Varendra Research Museum, Vol.1-4 1972-1975/1976, Varendra Research Museum - Bangladesh
- ↑ B. P. Sinha, Decline of the Kingdom of Magadha
- ↑ B. C. Sen, Some Historical Aspects of the Inscriptions of Bengal