কবিতা কৃষ্ণমূর্তি
কবিতা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যম (সারদা কৃষ্ণমূর্তি নামে ১৯৫৮ সালের ২৫ শে জানুয়ারিতে জন্মগ্রহণ করেন) (তামিল: கவிதா கிருஷ்ணமூர்த்தி) তিনি একজন জনপ্রিয় ভারতীয় সঙ্গীত শিল্পী। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন ভাষায় গান করেছেন। [১] বিশেষ করে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন চলচ্চিত্রে তিনি গান করেছেন। বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালকদের মধ্যে এ আর রহমান, আর ডি বর্মন প্রমুখের সাথে তিনি কাজ করেছেন। [২] [৩]
কবিতা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যম Kavita Krishnamurthy Subramaniam | |
---|---|
প্রাথমিক তথ্য | |
জন্মনাম | সারদা কৃষ্ণমূর্তি |
উপনাম | কবিতা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যম |
জন্ম | ২৫ জানুয়ারি ১৯৫৮ |
উদ্ভব | দিল্লি, ভারত |
পেশা | প্লে-ব্যাক শিল্পী, ফিউশন গায়িকা |
কার্যকাল | ১৯৮০ - বর্তমান |
তিনি চার বার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন। ২০০৬ সালে সঙ্গীতে তার অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ভারত সরকারের কাছ থেকে তিনি পদ্মশ্রী খেতাব পান। ২০১৩ সালের মার্চে একটি অ্যাপ চালু করেছেন। যেটি অ্যাপল এবং গুগলের অ্যাপ স্টোরে পাওয়া যাবে। [৪]
শৈশব কাল
সম্পাদনাজন্মের সময় নাম ছিলো সারদা কৃষ্ণমূর্তি[৫] তিনি দিল্লি'র একটি তামিল পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। বাবার নাম টি. এস. কৃষ্ণমূর্তি । মিসেস ভট্টাচার্য্য নামে তাঁদের পারিবারিকসূত্রে বন্ধু, যাঁকে তিনি মামণি বলে সম্বোধন করেন, তার কাছে প্রথম গান শিখতে শুরু করেন। প্রথম দিকে তিনি রবীন্দ্রসংগীত শিখতেন। [৩] এরপর বলরাম পুরী'র কাছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শেখেন। মাত্র আট বছর বয়স থেকেই তিনি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতেন।
কর্ম জীবন
সম্পাদনামাত্র নয় বছর বয়সেই জনপ্রিয় এবং কিংবদন্তি শিল্পী লতা মঙ্গেশকর এর সাথে গান করার সুযোগ পান। ১৪ বছর বয়সে তিনি মুম্বই এ আসেন। এখানে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে অর্থনীতিতে বিএ অনার্স করেন। একদিন একটি অনুষ্ঠানে দৈবক্রমে রানু মুখার্জীর (হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে) সাক্ষাত পান। রানু কবিতাকে তার বাবার কাছে নিয়ে যান। [৫] হেমন্ত মুখোপাধ্যায় কবিতার কন্ঠ শুনে অভিভূত হন এবং বিভিন্ন প্রোগ্রামে গান করার সুযোগ দেন। এমনই এক অনুষ্ঠানে মান্না দে কবিতার গান শোনেন। এবং কবিতাকে বিভিন্ন জায়গাতে গান করার সুযোগ করে দেন। তরুণ মজুমদার পরিচালিত ১৯৭২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত জনপ্রিয় ছায়াছবি শ্রীমান পৃথ্বীরাজ এ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গীত পরিচালনায় লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে দ্বৈতকন্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত সখী ভাবনা কাহারে বলে এক্ষেত্রে অন্যতম উল্লেখযোগ্য। এর সঙ্গে সঙ্গেই তার সেই পারিবারিক ঘনিষ্ঠ, যাঁর কাছে তিনি প্রথম গান শিখেছিলেন, তার মাধ্যমে কবিতা বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক লক্ষ্মীকান্ত্ এর সাথে পরিচিত হন।[৫] লক্ষ্মীকান্ত্ তাঁকে কাজ করার সুযোগ দেন।
১৯৮০ সালে তিনি প্রথম গান করেন মাং ভারো সাজনা ছবিতে। কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত গানটি শেষ পর্যন্ত বাদ যায়। অবশেষে ১৯৮৫ সালে বলিউডে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে জনপ্রিয় হিন্দি চলচ্চিত্র পেয়ার ঝুকতা নাহি-এর তুমসে মিলকর না জানে কিউ গানটির মধ্য দিয়ে। এর পরেই তিনি একের পর এক হিট গান উপহার দিতে থাকেন। যেমনঃ মি.ইন্ডিয়া ছবির হাওয়া হাওয়াই এবং করতে হ্যয় হম পেয়ার মিঃ ইন্ডিয়া সে। এর কিছুদিন পরেই তিনি জনপ্রিয় কিংবদন্তি শিল্পী কিশোর কুমার এর সাথে কাজ করার সুযোগ পান।
১৯৯০ সালের দিকে তিনি লিডিং কণ্ঠশিল্পীদের তালিকায় চলে আসেন। এরপর থেকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি তাঁকে। কাজ করে গেছেন একের পর এক বিখ্যাত ছবিতে এবং বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালকদের সাথে।
এ লাভ স্টোরি, ইয়ারানা, অগ্নি সাক্ষী, ভৈরবী, খামোশি এমন সব চলচ্চিত্রে গান করার পর তিনি নিজেকে একটি অন্যতম উচ্চতায় তুলে ধরেন। কাজ শুরু করেন বিখ্যাত সব শিল্পী আর সঙ্গীত পরিচালকদের সাথে যেমনঃ বাপ্পি লাহিড়ী, এ আর রহমান, ইসমাইল দরবার, নাদিম-শ্রাবণ, যতীন ললিত, বিজু শাহ এবং অনু মালিক। এছাড়াও তিনি অনেক শিল্পীর সাথে ডুয়েট গান করেন যেমনঃ কিশোর কুমার, সুরেশ ওয়াকার, কুমার শানু, উদিত নারায়ণ এবং সোনু নিগম আর নারী কণ্ঠশিল্পীদের মধ্যে অলকা ইয়াগনিক, অনুরাধা পাঢ়য়াল এবং সাধনা সারগাম এর সাথে তিনি সফল জুটি হিসেবে অনেক গান করেন।
শাস্ত্রীয় সংগীতে মনোনিবেশ
সম্পাদনা১৯৯৯ সালের ১১ নভেম্বর তিনি জনপ্রিয় বেয়ালা বাদক ড. এল সুব্রামানিয়াম এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এবং চলচ্চিত্রে গান করা থেকে প্রায় সরে আসেন। এসময় তিনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে মননিবেশ করেন। পাঁচ মহাদেশের শিল্পীদের নিয়ে করা অয়ের্নার ব্রসের গ্লোবাল ফিউশন এর তিনি অন্যতম গায়িকা। এসময় তিনি যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, দূর প্রাচ্য, মধ্য প্রাচ্য সহ বিভিন্ন যায়গাতে গান পরিবেশনের জন্য ভ্রমণ করেন। যেমন লন্ডনের রয়েল আলবার্ট হল, ওয়াশিংটনের জন এফ কেনেডি সেন্টার, নিউ ইয়র্ক এর ম্যাডিসন স্কয়ার ও লিংকন সেন্টার এবং বেইজিং, সিঙ্গাপুর ও কুয়ালালামপুর এর বিভিন্ন কনসার্টে তিনি অংশগ্রহণ করেন।
শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি বিভিন্ন পপ এবং গজলেও কন্ঠ দেন তিনি।
পপ ও ভক্তি সংগীত
সম্পাদনাবিভিন্ন ধরনের গানের পাশাপাশি কবিতা পপ এবং ভক্তিমূলক অনেক গানে কন্ঠ দেন। যেমনঃ
- আদি গণেশ
- ভেঙ্কটেশ সুপ্রভাতম্
- শিব শ্লোক
- কই আকেলে কাহা
- মীরা কা রাম
- মহালক্ষ্মী স্তোত্রম্
- পপ টাইম
- সাঁই কা বর দান
- সাগুফতাগি
- দিল কি আওয়াজ
- এথেন্স
- অস্মিতা
- মাহিয়া
- হদ কর দি আপনে
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনাকবিতা কৃষ্ণমূর্তি বিখ্যাত বেহালাবাদক লক্ষ্মীনারায়ণ সুব্রহ্মণ্যম-এর সাথে ১১ নভেম্বর ১৯৯৯ এ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের কোনো সন্তান নাই। কিন্তু, লক্ষ্মীনারায়ণবাবুর আগের পক্ষে তিন সন্তান আছে। এরমধ্যে বিন্দু সুব্রহ্মণ্যম সঙ্গীত শিল্পী এবং রচয়িতা। নারায়ণ সুব্রহ্মণ্যম একজন ডাক্তার আর অম্বি সুব্রহ্মণ্যম অন্যতম একজন বেহালাবাদক। [৬][৭]
২০০৭ সালে কবিতা এবং তার স্বামী একত্রে ব্যাঙ্গালুরুতে একটি সঙ্গীত সংস্থা তৈরি করেছেন। যার নাম সুব্রহ্মণ্যম অ্যাকাডেমি।[৮]
পুরস্কার এবং সম্মাননা
সম্পাদনাকবিতা কৃষ্ণমূর্তি অসংখ্য পুরস্কার এবং সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। যেমনঃ
সরকারি সম্মাননা
- ২০০৫ – পদ্মশ্রী – ভারত সরকার প্রদত্ত চতুর্থ সর্বোচ্চ সম্মাননা
- ২০০৩ – বেস্ট ফিমেল প্লে-ব্যাক শিল্পী হিসেবে শ্রেয়া ঘোষাল এর সাথে দেবদাস চলচ্চিত্রের ডোলা রে ডোলা গানের জন্য
- ১৯৯৭– বেস্ট ফিমেল প্লে-ব্যাক শিল্পী – আজ মে উপর গানের জন্য খামোশি চলচ্চিত্র
- ১৯৯৬– বেস্ট ফিমেল প্লে-ব্যাক শিল্পী – মেরে পিয়া ঘার আয়ে গানের জন্য ইয়ারা না চলচ্চিত্র
- ১৯৯৫– বেস্ট ফিমেল প্লে-ব্যাক শিল্পী – পেয়ার হুয়া চুপকে সে এ লাভ স্টোরি চলচ্চিত্র
- ১৯৯৭ –বেস্ট ফিমেল প্লে-ব্যাক শিল্পী – আজ মে উপর গানের জন্য খামোশি চলচ্চিত্র
- ২০০০– বেস্ট ফিমেল প্লে-ব্যাক শিল্পী – হাম দিল দে চুকে সানাম গানের জন্য হাম দিল দে চুকে সানাম চলচ্চিত্র
- ২০০৩ – বেস্ট ফিমেল প্লে-ব্যাক শিল্পী হিসেবে শ্রেয়া ঘোষাল এর সাথে দেবদাস চলচ্চিত্রের ডোলা রে ডোলা গানের জন্য
- ২০০০– বেস্ট ফিমেল প্লে-ব্যাক শিল্পী – নিমুড়া গানের জন্য
আন্তর্জাতিক ভারতীয় চলচ্চিত্র অ্যাকাডেমি পুরস্কার
- ২০০৩– বেস্ট ফিমেল প্লে-ব্যাক শিল্পী হিসেবে শ্রেয়া ঘোষাল এর সাথে দেবদাস' চলচ্চিত্রের ডোলা রে ডোলা গানের জন্য
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Priyanka Dasgupta (১৯ ডিসেম্বর ২০০৯)। "Kavita Krishnamurthy conquering global shores"। Times of India। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১০।
- ↑ Pallab Bhattacharya (৩ ডিসেম্বর ২০০৯)। "Solidarity against terror through music and poetry"। Daily Star। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১০।
- ↑ ক খ গ Rupa Damodaran (৮ মে ২০০৪)। "Bollywood Kavita trills for good lyrics"। News Straits Times। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১০।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "iTunes app for Kavita Krishnamurthy"।
- ↑ ক খ গ Amit Puri (২৩ আগস্ট ২০০৩)। "...kehte hain mujhko Hawa Hawaii"। The Tribune। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১০।
- ↑ http://www.rediff.com/getahead/slide-show/slide-show-1-achievers-interview-with-bindu-subramaniam/20110512.htm
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৩১ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৯।
- ↑ http://www.sapaindia.com