এম এ এন ছিদ্দিক
এম এ এন ছিদ্দিক বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা যিনি ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের প্রথম ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব ছিলেন।
এম এ এন ছিদ্দিক | |
---|---|
১ম ডিএমটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক | |
কাজের মেয়াদ ২৬ অক্টোবর ২০১৭ – ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | |
নিয়োগদাতা | ওবায়দুল কাদের |
পূর্বসূরী | পদ সৃষ্ট |
উত্তরসূরী | মোহাম্মদ আবদুর রউফ |
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ | |
সচিব | |
কাজের মেয়াদ ১৬ নভেম্বর ২০১১ – ১১ অক্টোবর ২০১৭ | |
মন্ত্রী | ওবায়দুল কাদের |
পূর্বসূরী | মো: মোজাম্মেল হক খান |
উত্তরসূরী | মোঃ নজরুল ইসলাম |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | মুহাম্মদ আবু নূর ছিদ্দিক[১] ১৩ অক্টোবর ১৯৫৭ ঢাকা জেলা, পূর্ব পাকিস্তান, পাকিস্তান (বর্তমানে নরসিংদী জেলা, বাংলাদেশ) |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | সরকারি কর্মকর্তা |
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাএম এ এন ছিদ্দিক ১৩ অক্টোবর ১৯৫৭ সালে তৎকালীন পাকিস্তানি প্রদেশ পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকা জেলার নারায়ণগঞ্জ মহকুমায় অবস্থিত নরসিংদী থানায় জন্মগ্রহণ করেন।[২] তিনি আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট থেকে জার্মান ভাষা শেখার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্মান অর্জন এবং বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সামাজিক বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাপনার উপর স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা অর্জন করেন।[৩]
পেশাজীবন
সম্পাদনাছিদ্দিক ১৯৮২ সালের বিশেষ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস ব্যাচে জনপ্রশাসন ক্যাডার হিসেবে যোগ দেন। তিনি শেরপুর জেলার প্রশাসক ও চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[২] ১৬ নভেম্বর ২০১১ সালে[২] তিনি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হোন। ২০১৩ সালে তাকে ভারপ্রাপ্ত সচিব থেকে সচিব পদে পদন্নোতি দেওয়া হয়।[৪] ১২ অক্টোবর ২০১৬ সালে তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিলো।[৫] কিন্তু ১০ অক্টোবর ২০১৬ সালে সরকার তাকে আরও এক বছর চুক্তিতে সড়ক বিভাগের সচিব হিসেবে নিয়োগ করে।[২] ১২ অক্টোবর ২০১৭ সালে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সড়ক বিভাগের সচিব পদে মোঃ নজরুল ইসলামকে ছিদ্দিকের স্থলাভিষিক্ত করা হয়।[৬] একই বছরের ২৬ অক্টোবরে ছিদ্দিক ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগ দেন।[৭] তৎকালীন সময়ে কোম্পানির গৃহীত এমআরটি লাইন ৬ প্রকল্পের নির্মাণকাজের অগ্রগতি ১% ছিল। তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালনকালে এর নির্মাণ সম্পন্ন ও কার্যক্রম চালু হয় যা দেশের সর্বপ্রথম মেট্রো রেলপথ।[৮] ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সালে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে মোহাম্মদ আবদুর রউফকে নিয়োগ করা হয়।[৯]
বিতর্ক
সম্পাদনাদ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস প্রকাশিত প্রতিবেদনে মুনিমা সুলতান ছিদ্দিককে "ঢাকা মেট্রোরেলের রাজশাসক" আখ্যা দিয়ে জানায় যে তাকে কোন নির্দিষ্ট মেয়াদ উল্লেখ না করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল এবং ২০২৪ সাল পর্যন্ত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করার আগ পর্যন্ত তিনি অনির্দিষ্টকালের জন্য পদে বহাল ছিলেন।[১০] ডিএমটিসিএলের সঙ্ঘবিধিসমূহ অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালককে পুরকৌশল অথবা যন্ত্রপ্রকৌশলে দীক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু পদে যোগ দেওয়ার পর ছিদ্দিক সঙ্ঘবিধিসমূহ পরিবর্তন করে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের যোগ্যতা হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত সচিব নির্ধারণ করার মাধ্যমে নিজের নিয়োগকে বৈধতা প্রদান করেন।[১১] নিয়ম অনুযায়ী তার ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের বৈঠকে উপস্থিত থাকার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তিনি তা করতেন না। ডিএমটিসিএলের পরিচালক পর্ষদের একটি বৈঠকে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাপ্রবি) অধ্যাপক শামসুল হকের সদস্যতা বাতিল করেন যা ছিল কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ মোতাবেক অবৈধ এবং অধ্যাপক মিজানুর রহমানকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়।[১০] দৈনিক খবরের কাগজ অনুযায়ী ছিদ্দিকের সাথে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুসম্পর্ক ছিল এবং যেকোনো প্রয়োজনে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এড়িয়ে সরাসরি উনার সাথে যোগাযোগ করতেন। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো দমনে তিনি নিজের রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অভিযোগগুলোর ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নিতে বিরত থাকতেন।[১২] মানবজমিন-এর প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ডিএমটিসিএলে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ আছে এবং কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীন ছিল না বলে জানা গেছে। কোম্পানির কর্মকর্তারা ব্যবস্থাপনা নিয়ে ছিদ্দিকের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিল। ২০২১ সালে দিয়াবাড়ি ডিপোতে কোম্পানির প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলেও তিনি বেইলী রোডে অবস্থিত তার সরকারি বাসভবন থেকে ৭০০ মিটার দূরে অবস্থিত প্রবাসী কল্যাণ ভবন থেকে কোম্পানির দপ্তর স্থানান্তর করেননি যার জন্য ভাড়া বাবদ প্রায় ২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয় হয়। তবে ছিদ্দিকের মতে এতে অতিরিক্ত কোন ব্যয় হয়নি বরং এমআরটি লাইন ১, এমআরটি লাইন ৫ ও এমআরটি লাইন ৬-এর স্বল্প সংখ্যক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের তদারকি ও কাজের সমন্বয়ে প্রবাসী কল্যাণ ভবনের অফিসটি অর্থ সাশ্রয়ে ভূমিকা রেখেছে।[১৩] এছাড়া পত্রিকাটির দাবি অনুযায়ী ডিএমটিসিএলের সূত্র হতে প্রাপ্ত তথ্য বলছে যে ১৯ জুলাই ২০২৪ সালে দুর্বৃত্তরাদের হামলার ফলে বন্ধ হয়ে যাওয়া ঢাকা মেট্রোরেল শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর চালুর সম্ভাবনা সৃষ্টির মুহূর্তে ডিএমটিসিএলের কর্মচারীদের বৈষম্যমূলক বেতন কাঠামোর ইস্যুতে করা কর্মবিরতির পেছনে ছিদ্দিক জড়িত ছিল যার ফলে মেট্রোরেল চালুর ব্যাপারে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।[১৪]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরই মেট্রোরেলের মকআপ প্রদর্শন"। সমকাল। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০২৪।
- ↑ ক খ গ ঘ "চুক্তিতে সড়ক সচিব থাকছেন ছিদ্দিক"। বিডিনিউজ২৪.কম। ১০ অক্টোবর ২০১৬। ১৬ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "ব্যবস্থাপনা পরিচালক"। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ইংরেজি ভাষায়)। ৩০ আগস্ট ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "সচিব হলেন ১৭ জন"। বিডিনিউজ২৪.কম। ৩১ জানুয়ারি ২০১৩। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "চলতি বছর অবসরে যাবেন ২৪ সচিব"। বাংলা ট্রিবিউন। ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। ৩০ আগস্ট ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ আগস্ট ২০১৬।
- ↑ "সড়ক বিভাগের নতুন সচিব নজরুল ইসলাম"। ঢাকা টাইমস ২৪। ১২ অক্টোবর ২০১৭। ৩০ আগস্ট ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "এম এ এন সিদ্দিক ডিএমটিসিএলের এমডি"। কালের কণ্ঠ। ৩০ অক্টোবর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৩০ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "DHAKA METRO RAIL INAUGUATION: The MRT-6 success story"। দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস (ইংরেজি ভাষায়)। ৫ নভেম্বর ২০২৩। সংগ্রহের তারিখ ৩ নভেম্বর ২০২৪।
- ↑ "মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিয়োগ বাতিল"। প্রথম আলো। ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪।
- ↑ ক খ সুলতানা, মুনিমা (৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪)। "How a retired bureaucrat becomes metro monarch, muddles matters"। দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০২৪।
- ↑ বসু, সৌগত (২৪ নভেম্বর ২০২৪)। "মেট্রোরেল থেকে আমলাদের বিদায়, অগ্রাধিকার প্রকৌশলীদের"। আজকের পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০২৪।
- ↑ সাহা, জয়ন্ত (১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪)। "মেট্রোর সদ্য সাবেক এমডির বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়"। দৈনিক খবরের কাগজ। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০২৪।
- ↑ হুদা, নাজমুল (১৬ অক্টোবর ২০২৪)। "মেট্রোরেলের সাবেক এমডি'র আয়েশে গচ্চা সাড়ে সাত কোটি"। মানবজমিন। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০২৪।
- ↑ "মেট্রোরেল চালু নিয়ে ডিএমটিসিএল এমডি'র ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন"। মানবজমিন। ১১ আগস্ট ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০ অক্টোবর ২০২৪।