ইনসান আলী

ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার

ইনসান আলী (জন্ম: ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৯ - মৃত্যু: ২৪ জুন, ১৯৯৫) প্রেসল এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ত্রিনিদাদীয় বংশোদ্ভূত ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৭০-এর দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

ইনসান আলী
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
ইনসান আলী
জন্ম২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৯
প্রেসল, ত্রিনিদাদ
মৃত্যু২৪ জুন, ১৯৯৫
পোর্ট অব স্পেন, ত্রিনিদাদ
ব্যাটিংয়ের ধরনবামহাতি
বোলিংয়ের ধরনস্লো লেফট-আর্ম চায়নাম্যান
ভূমিকাবোলার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ১৩৯)
১ এপ্রিল ১৯৭১ বনাম ভারত
শেষ টেস্ট১ এপ্রিল ১৯৭৭ বনাম পাকিস্তান
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৬৫ - ১৯৮০ত্রিনিদাদ ও টোবাগো
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ১২ ৯০
রানের সংখ্যা ১৭২ ১,৩৪১
ব্যাটিং গড় ১০.৭৫ ১৩.৮২
১০০/৫০ ০/০ ০/৩
সর্বোচ্চ রান ২৫ ৬৩
বল করেছে ৩,৭১৮ ১৯,২৫৩
উইকেট ৩৪ ৩২৮
বোলিং গড় ৪৭.৬৭ ২৮.৯৩
ইনিংসে ৫ উইকেট ১৭
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৫/৫৯ ৮/৫৮
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৭/০ ৪৩/০
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১১ আগস্ট ২০২০

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে ত্রিনিদাদ ও টোবাগো দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ স্লো লেফট-আর্ম চায়নাম্যান বোলার হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, বামহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিং করতেন তিনি।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট

সম্পাদনা

ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর প্রেসল এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ইনসান আলী ভারতীয় বংশোদ্ভূত ছিলেন। বামহাতি আনঅর্থোডক্স স্পিন বোলিং করতেন। ১৫ এপ্রিল, ১৯৬৬ তারিখে সাউথ ত্রিনিদাদের সদস্যরূপে নর্থ ত্রিনিদাদের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয় তার। এ পর্যায়ে তার বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর ২০২ দিন। খেলায় তিনি ৮৯ রানের বিনিময়ে তিন উইকেট দখল করেন।[]

১৯৬৫-৬৬ মৌসুম থেকে ১৯৭৯-৮০ মৌসুম পর্যন্ত ইনসান আলী’র প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। শীর্ষ ব্যাটসম্যান বাদে নিচেরসারির ব্যাটসম্যানদের কাছে বিভীষিকাময় অধ্যায়ের সূচনা ঘটাতেন। নিজস্ব দ্বিতীয় খেলায় ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর সদস্যরূপে খেলেন। উইন্ডওয়ার্ড আইল্যান্ডসের বিপক্ষে ইনসান আলী ৫/৩২ পান।[] পরবর্তীতে আরও কিছু ভালোমানের খেলা উপহার দেয়ার বদৌলতে সফররত মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ড সভাপতি একাদশের সদস্যরূপে খেলার জন্যে মনোনীত হন।

ইনসান আলী ঘরোয়া পর্যায়ে বেশ ভালো খেলতে থাকেন। প্রায়শঃই স্পিনবান্ধব পোর্ট অব স্পেনের কুইন্স পার্ক ওভালে ত্রিনিদাদের অপ্রতিদ্বন্দ্বী খেলোয়াড় হিসেবে আবির্ভূত হতেন।[]

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট

সম্পাদনা

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে বারোটি টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন ইনসান আলী। ১ এপ্রিল, ১৯৭১ তারিখে ব্রিজটাউনে সফরকারী ভারত দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ১ এপ্রিল, ১৯৭৭ তারিখে পোর্ট অব স্পেনে সফরকারী পাকিস্তান দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

১ এপ্রিল, ১৯৭১ তারিখে ব্রিজটাউনের কেনসিংটন ওভালে সফরকারী ভারত দলের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয় তার। ঐ টেস্টে তিনি ০/৬০ ও ১/৬৫ লাভ করেন।[] ১৯৭০-এর দশকে ধীরগতিসম্পন্ন বামহাতি বোলার হিসেব ১২ টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করেছিলেন। শীর্ণকায় গড়নের অধিকারী ছিলেন। সংগৃহীত ৩৪টি টেস্ট উইকেট লাভের জন্যে তাকে ৪৭.৬৭ গড়ে রান খরচ করতে হয়েছিল।

নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি

সম্পাদনা

১৯৭১-৭২ মৌসুমে পোর্ট অব স্পেনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫/৫৯ লাভের পর থেকে বল হাতে নিয়ে খুব কমই সফল হয়েছিলেন। নিজ দেশে সফরকারী নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে তিনি তার শুরুরদিকের বিশের কোটায় থাকা অবিশ্বাস্য দক্ষতা ও পরিপক্ব খেলোয়াড়ের পরিচয় দেন।[] ছোটখাটো গড়ন, সরু দেহের ক্ষুদ্র অঙ্গুলী নিয়ে বামহাতে স্বল্প দূরত্ব অতিক্রমণে দ্রুততার সাথে বলকে ফ্লিপ করাতেন।[]

এ সিরিজে ইনসান আলী তার সেরা বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। পোর্ট অব স্পেন টেস্টে ৫/৫৯ পান। ব্যাটসম্যানেরা তার চায়নাম্যান বল মোকাবেলায় হিমশিম খায়। একজন লেখক মন্তব্য করেন যে, যদি পরবর্তী গ্রীষ্মে ক্যারিবীয়ায় তাকে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়, তাহলে তিনি নিশ্চিতভাবেই খেলায় বিজয়ীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারবেন।[]

১৯৭২-৭৩ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ গমনে আসে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে তিনি ৪৭.৩০ গড়ে দশ উইকেট পান।[] মাঝে-মধ্যে তিনি জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পান। তন্মধ্যে, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একটি করে টেস্টে অংশ নেন। এপ্রিল, ১৯৭৭ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজস্ব সর্বশেষ টেস্ট খেলেন। পোর্ট অব স্পেনে অনুষ্ঠিত খেলায় ১৫৯ রান খরচায় পাঁচ উইকেট লাভ করেন।[]

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে প্রত্যাখ্যাত হলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে সফলতার ধারা অব্যাহত রাখেন। ১৯৭৩-৭৪ মৌসুমের শেল শিল্ড প্রতিযোগিতায় ২৭ উইকেট নিয়ে নতুন রেকর্ড গড়েন।[] ১৯৭৯-৮০ মৌসুম শেষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন।[১০]

মূল্যায়ন

সম্পাদনা

দূর্বল ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন সত্ত্বেও ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের আধিপত্যবাদের যুগে রহস্যময় স্পিনার হিসেবে স্বীকৃতি পান। ১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরের পূর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড মন্তব্য করেন যে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিরিজ বিজয়ে তিনি হয়তোবা প্রধান ভূমিকা রাখতে পারতেন। তিনি মন্তব্য করেন যে, আলী এখন হয়তোবা নিজের উপর আত্মবিশ্বাসী মনোভাব গড়ে তুলেছেন। তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ও তিনি মনে করতেন যে, কোন খেলোয়াড়ই তার হাতে থেকে রেহাই পাবে না।[]

সাবেক টেস্ট ক্রিকেটার ফ্রাঙ্ক টাইসনও একই অভিমত ব্যক্ত করেন। তার চায়নাম্যান বোলিংয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ে ব্যাটসম্যানেরা পিচের সামনে আসা মানেই উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসা।[১১]

স্বল্পসংখ্যক টেস্ট ক্রিকেটারদের অন্যতম হিসেবে দূর্বল ব্যাটিংশৈলীর অধিকারী ছিলেন ও বোলিংকালে স্ট্যাম্পের প্রান্ত বরাবর দৌঁড়ে আসার অভ্যাস ছিল। কট ও বোল্ডের সম্ভাবনা মাথায় রাখতেন। প্রতিপক্ষীয় ব্যাটসম্যান ও একজন আম্পায়ার মন্তব্য করেন যে, তিনি এলবিডব্লিউ লাভের অধিকারী নন কেননা তিনি আম্পায়ারের দৃষ্টির বাইরে থাকতেন।[] এছাড়াও, তিনি দূর্বলমানের ফিল্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। জনৈক দর্শকের অভিমত, এ পর্যায়ে তিনি স্নায়ুবৈকল্যে ভুগতেন।[১২] ১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে দ্বিতীয় টেস্টে অতিরিক্ত ফিল্ডার হিসেবে আলী মাঠে নামেন ও সাধারণ ক্যাচ তালুবন্দী করতে না পারায় চরম অসন্তুষ্ট হন।[১২]

দলে তিনি আসা-যাওয়ার পালায় ছিলেন। এ সময়ে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ফাস্ট বোলিংয়ের দৌরাত্ম্য বেশ বেড়ে যায়। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের খেলার ধরনকে টেস্টের দিকে নিয়ে যেতে পারেননি। [১৩] ১৯৭০-এর দশক থেকে অন্যান্য ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান স্পিনারদের ন্যায় তিনিও দল নির্বাচকমণ্ডলীসহ অধিনায়কদের কাছ থেকে উপেক্ষার শিকার হয়েছেন। এছাড়াও, অধিনায়কগণ স্পিনারদের উপযোগী ফিল্ডিং সাজাতে পারতেন না।[১৪]

ব্যক্তিগত জীবন

সম্পাদনা

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পরপরই ত্রিনিদাদে ক্লাব ক্রিকেটে খেলতে থাকেন। এ সময়েই তিনি কণ্ঠনালীর ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। [১৩] ২৪ জুন, ১৯৯৫ তারিখে মাত্র ৪৫ বছর বয়সে ত্রিনিদাদের পোর্ট অব স্পেন এলাকায় ইনসান আলী’র দেহাবসান ঘটে। তার সম্মানার্থে প্রেসল এলাকায় ইনসান আলী ওভাল নামকরণ হয়।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Cricket Archive, "South Trinidad v North Trinidad in 1965/66", https://cricketarchive.com/Archive/Scorecards/27/27978.html Accessed 12 August 2009.
  2. Cricket Archive, "Trinidad and Tobago v Windward Islands in 1966/67, https://cricketarchive.com/Archive/Scorecards/28/28621.html Accessed 13 August 2009.
  3. Cozier, T. "Southpaw Spinner Starts for W.I.", The Virgin Islands Daily News, 29 November 1975, p. 12
  4. Cricket Archive, West Indies v India in 1970/71, https://cricketarchive.com/Archive/Scorecards/31/31499.html Accessed 13 August 2009.
  5. Cameron, p. 40.
  6. Cameron, p. 41.
  7. Cricket Archive, "Test Bowling for West Indies Australia in West Indies 1972/73 https://cricketarchive.com/Archive/Events/WI/Australia_in_West_Indies_1972-73/t_West_Indies_Bowling.html Accessed 29 August 2009.
  8. Cricket Archive, "West Indies v Pakistan, 4th Test, 1976/77, https://cricketarchive.com/Archive/Scorecards/36/36904.html, Accessed 29 August 2009.
  9. Benson & Hedges West Indies Cricket Annual 1982, "Five Cricketers of the Year", Caribbean Communications: Christ Church, Barbados, p. 9.
  10. Cricket Archive, "First-Class Matches Played By Inshan Ali", https://cricketarchive.com/Archive/Players/1/1381/First-Class_Matches.html Accessed 2 September 2009.
  11. Tyson, p. 18.
  12. Tyson, p. 97.
  13. Wisden's Cricketers Almanack 1996 http://www.cricinfo.com/wisdenalmanack/content/story/155311.html Accessed 3 September 2009.
  14. Baksh, V. "Where spin is a sin", CricInfo, 19 May 2008, http://content.cricinfo.com/magazine/content/story/351014.html Accessed 23 April 2009.

গ্রন্থপঞ্জি

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা