আমানুল্লাহ কবির
আমানুল্লাহ কবীর (২৪ জানুয়ারি ১৯৪৭ - ১৬ জানুয়ারি ২০১৯) বাংলাদেশী সাংবাদিক ও লেখক। তিনি বাংলাদেশের সরকারি সংবাদ সংস্থা বাসসের পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ছিলেন।[১] আমানুল্লাহ বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব দৈনিক পত্রিকায় নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে থেকে পাঁচ দশক ধরে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৭১ সালে তিনি রনাঙ্গণে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পূর্ব পাকিস্তান পরবর্তী বাংলাদেশে তিনি সাংবাদিকদের রুটি-রুজি আন্দোলনের পুরাধা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।[২]
আমানুল্লাহ কবির | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা | (বয়স ৭১)
মৃত্যুর কারণ | ডায়াবেটিক |
জাতীয়তা | বাংলাদেশ |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশ |
পেশা | সাংবাদিক ও লেখক |
কর্মজীবন | ১৯৬৯-২০১৯ |
পরিচিতির কারণ | সাংবাদিক নেতা |
রাজনৈতিক দল | বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি সমর্থক |
সন্তান | ২ কন্যা, ৩ পুত্র শাতিল কবির (বড় পুত্র) |
পিতা-মাতা |
|
ব্যক্তিগত ও শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাআমানুল্লাহ কবির ২৪ জানুয়ারি ১৯৪৭ সালে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার রেখিরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও ফুলকোচা ইউনিয়নের প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যান বছির উদ্দিন মাস্টারের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালে আমানুল্লাহ কবির হাজরাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ ও রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন।[৩][৪]
কর্মজীবন
সম্পাদনাআমানুল্লাহ কবীর ১৯৬৯ সালে দৈনিক পয়গাম পত্রিকা দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন। ১৯৭১ সালে ইংরেজি সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত হন। দ্য পিপল-এ কাজ করার সময় শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হামলা চালিয়ে পত্রিকার অফিসটি গুড়িয়ে দেয়। অল্পের জন্যে প্রাণে বেঁচে যান আমানুল্লাহ করিব। পরে তিনি ঢাকা নগরী ছেড়ে জামালপুরের মেরান্দহ উপজেলার রেখিরপাড় গ্রামে তার জন্মস্থানে ফিরে যান। সেখান থেকে সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।[৫][৬]
স্বাধীনতার পর দ্য পিপল পুনরায় আত্মপ্রকাশ করলে তিনি আবার এ পত্রিকায় যোগ দিয়ে স্বাধীন বাংলায় সাংবাদিকতা শুরু করেন। এরপর দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের অক্টোবরে তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক পদে নিযুক্ত হন।[৭] ২০০৪ সাল থেকে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাংবাদিকতা পেশার শত ব্যস্ততায় কবিতা, গল্প ও বেশ কিছু প্রবন্ধ লিখেছেন। পরবর্তী সময়ে সমসাময়িক ঘটনার ওপর বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় লেখার ওপরই বেশি গুরুত্ব দেন। [৮]
মৃত্যুর আগের ৫ বছর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জ্যেষ্ঠ সম্পাদক ছিলেন। বাংলাদেশের এক সময়কার জনপ্রিয় ইংরেজি দৈনিক নিউ নেশনের বার্তা সম্পাদক ছিলেন। কাজ করেছেন টেলিগ্রাফ পত্রিকায়।[৯][১০]
সামাজিক কাজ
সম্পাদনাআমানুল্লাহ ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন এবং ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের দুই বার মহাসচিব নির্বাচিত হন। ঢাকাস্থ জামালপুর সমিতি এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি ছিলেন প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সক্রিয় ও একনিষ্ঠ কর্মী। সেই থেকে সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি তার গভীর অনুরাগ তৈরি হয়। [৪]
প্রকাশিত গ্রন্থ
সম্পাদনাআমানুল্লাহ সংবাদপত্র সম্পাদনার পাশাপাশি ১০টি বই লিখেছেন।
- লজ এন্ড ডিসিশন গন কম্পিনশন ইন বাংলাদেশ [বাংলাদেশে ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত আইন ও সিদ্ধান্ত]
- রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের লড়াই
- জেলায় জেলায় ভাষা আন্দোলন ও অন্যান্য প্রসঙ্গ
- সংঘাতে রাজনীতি
- নিস্তব্দতার মাতম
- না উট না পাখি
- নদী ও অন্ধকারের রূপ
- মুখোশবাড়ি
- ৭ নবেম্বর ইতিহাসের মোড় (যৌথ লেখক)[১১]
অসুস্থতা ও মৃত্যু
সম্পাদনাআমানুল্লাহ ডায়াবেটিক ও কিডনি জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ সালে ঢাকা ইবনে সীনা হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
আরো পড়ুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "'এরশাদের আমলে পালিয়ে বেড়াতেন আমানুল্লাহ কবীর'"। ২০১৯-০১-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-১৬।
- ↑ "Senior journalist Amanullah Kabir dies"। ঢাকা ট্রিবিউন (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০১-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-১৬।
- ↑ "চলে গেলেন সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীর"। দ্য ডেইলি স্টার। ২০১৯-০১-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-১৬।
- ↑ ক খ "সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবির গুরুতর অসুস্থ্য"। দৈনিক জামালপুর।
- ↑ "প্রখ্যাত সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবির আর নেই"। unb.com.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-১৬।
- ↑ ডেস্ক, অনলাইন (২০১৯-০১-১৬)। "প্রবীণ সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীর আর নেই - বাংলাভিশন | দৃষ্টি জুড়ে দেশ"। বাংলাভিশন। ২০১৯-০৭-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-১৬।
- ↑ "সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীর আর নেই"। www.jaijaidinbd.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-১৬।
- ↑ "হুমকির মুখে এক সময় পালিয়ে বেড়াতেন আমানুল্লাহ কবীর"। somoynews.tv। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-১৬।
- ↑ "Amanullah Kabir laid to rest in Jamalpur"। ঢাকা ট্রিবিউন (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০১-১৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-১৬।
- ↑ "না ফেরার দেশে চলে গেলন সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবির"। বাংলা টিভি। ২০১৯-০১-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-১৬।
- ↑ "আমানুল্লাহ কবীর এর বই সমূহ"। www.rokomari.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-১৬।