আমানউল্লাহ কবির
শহীদ আমানউল্লাহ কবির (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৬ আগস্ট ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[১]
আমানউল্লাহ কবির | |
---|---|
মৃত্যু | ১৬ আগস্ট ১৯৭১ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীর বিক্রম |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাআমানউল্লাহ কবিরের জন্ম জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার ৮ নং ফুলকোচা ইউনিয়নে কোনামালঞ্চ গ্রামে। তার বাবার নাম আহমদ আলী এবং মায়ের নাম জমিলা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম ফিরোজা বেগম। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। [২]
কর্মজীবন
সম্পাদনাআমানউল্লাহ কবির রেলওয়েতে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে তিনি কর্মস্থল ত্যাগ করে গ্রামের বাড়ি চলে যান। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মে মাসের মাঝামাঝি ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে ১১ নম্বর সেক্টরের মহেন্দ্রগঞ্জ সাব-সেক্টর এলাকায় যুদ্ধ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
সম্পাদনাজামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ থানার ধানুয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত কামালপুর গ্রাম। এই গ্রামের মাঝামাঝি ছিল সীমান্ত ফাঁড়ি । বকশীগঞ্জ থানা সদর থেকে চার কিলোমিটার উত্তরে এর অবস্থান। সীমান্তের ওপারে ছিল ভারতের মেঘালয় রাজ্য। ১৯৭১ সালে কামালপুরে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্ত একটি ঘাঁটি। এখানে প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ছিল তাদের ৩১ বালুচ রেজিমেন্টের একটি দল এবং বিপুলসংখ্যক রেঞ্জার্স, ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্স ও রাজাকার। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এখানে অবস্থান নেওয়ার পর থেকেই মুক্তিবাহিনী বিচ্ছিন্ন আক্রমণ ও গেরিলা আক্রমণের মাধ্যমে তাদের নাজেহাল ও হয়রানি করতে থাকে। ৩১ জুলাইয়ের যুদ্ধের পর থেকে প্রায় দিনই মুক্তিবাহিনীর দল কামালপুর এবং এর পার্শ্ববর্তী ধানুয়া, উঠানিপাড়া, ঘাসিরগাঁও, পালবাড়ী, বক্সপাড়া, মাঝিরচর প্রভৃতি স্থানে আকস্মিক আক্রমণ চালাতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৬ আগস্ট মুক্তিবাহিনীর সুবেদার মনসুরের নেতৃত্বে ১৩৫ জনের মুক্তিযোদ্ধার একটি দল আকস্মিকভাবে কামালপুরে আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের বেশির ভাগই ছিলেন স্বল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গণযোদ্ধা। আমানউল্লাহ কবিরও ছিলেন স্বল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। মুক্তিযোদ্ধারা লক্ষ্যস্থলে পৌঁছে পাকিস্তানিদের আক্রমণ করা মাত্র তারাও পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করে ঘাঁটির একদম কাছাকাছি গিয়ে অবস্থান নেন। ৩১ জুলাইয়ের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের ঘাঁটিতে অত্যাধুনিক অস্ত্রের মজুদ আরও বাড়িয়ে ফেলে। এর মধ্যে ছিল কয়েকটি ৮১ এমএম মর্টার ও দূরপাল্লার স্বয়ংক্রিয় হেভি মেশিনগান। পাশে বকশীগঞ্জে ছিল তাদের ৮৩ ইনডিপেনডেন্ট মর্টার ব্যাটারি। সেগুলো দিয়ে পাকিস্তানিরা পাল্টা ব্যাপক আক্রমণ শুরু করে। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে অস্ত্র বলতে কেবল এলএমজি, স্টেনগান ও রাইফেল। হালকা এসব অস্ত্রশস্ত্র দিয়েই আমানউল্লাহ কবিরসহ মুক্তিযোদ্ধারা সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকেন। পাকিস্তানি সেনাদের পাল্টা আক্রমণ মোকাবিলা করে একটু একটু এগিয়ে যান। পাকিস্তানিরা মাঝেমধ্যে আলো জ্বেলে যুদ্ধস্থল পর্যবেক্ষণ করছিল। এই আলোয় তারা অনেক মুক্তিযোদ্ধার অবস্থান চিহ্নিত করে ফেলে। এরপর এগিয়ে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর তারা মেশিনগানের গুলিবর্ষণ শুরু করে। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের নিজ নিজ অবস্থানে টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় অনেক মুক্তিযোদ্ধা পিছু হটতে বাধ্য হন। কিন্তু আমানউল্লাহ কবিরসহ কয়েকজন পাকিস্তানিদের তীব্র আক্রমণ উপেক্ষা করে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন। এমন সময় গুলিবিদ্ধ হন আমানউল্লাহ কবির। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। শহীদ হন তিনি। এই যুদ্ধে সে দিন আমানউল্লাহ কবিরসহ সাত-আটজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।[৩]
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১৫-১০-২০১১[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ১৭১। আইএসবিএন 9789843338884।