আদনান মেন্দেরেস
আদনান মেন্দেরেস (তুর্কি: [adˈnan mendeˈɾes]; ১৮৯৯ – ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৬১) ছিলেন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী। ১৯৫০ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত তিনি এই পদে ছিলেন। তিনি তুরস্কের ডেমোক্রেটিক পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৬০ সালে সংঘটিত অভ্যুত্থানের পর সামরিক জান্তা তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড দেয়। একই সাথে তার মন্ত্রীসভার দুইজন সদস্য ফাতিন রুশতু জোরলু ও হাসান পোলাতকানকেও ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। তিনি শেষ তুর্কি রাজনৈতিক নেতা যাকে সামরিক অভ্যুত্থানের পর ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।
আদনান মেন্দেরেস | |
---|---|
তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ২২ মে ১৯৫০ – ২৭ মে ১৯৬০ | |
রাষ্ট্রপতি | জালাল বায়ার |
পূর্বসূরী | শামসউদ্দিন গুনালতাই |
উত্তরসূরী | জামাল গুরসাল |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ১৮৯৯ কোচারলি, আইদিন প্রদেশ, উসমানীয় সাম্রাজ্য |
মৃত্যু | ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৬১ (বয়স ৬১–৬২) ইমরালি, তুরস্ক |
রাজনৈতিক দল | লিবারেল রিপাবলিকান পার্টি রিপাবলিকান পিপল'স পার্টি ডেমোক্রেটিক পার্টি |
দাম্পত্য সঙ্গী | বেরিন মেন্দেরেস (১৯০৬–১৯৯৪) |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয় |
ধর্ম | ইসলাম |
স্বাক্ষর |
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাআদনান মেন্দেরেস ১৮৯৯ সালে আইদিন প্রদেশের কোচারলিতে একটি ক্রিমিয়ান তাতার বংশোদ্ভূত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[১][পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন] প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহণের পর তিনি ইজমিরের আমেরিকান কলেজে লেখাপোড়া করেছেন। তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি গ্রীকদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। এজন্য তাকে পদক প্রদান করা হয়। তিনি আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে স্নাতক হন। ১৯৩০ সালে তিনি আইদিনে লিবারেল রিপাবলিকান পার্টির একটি শাখা সংগঠিত করেছেন।[২] দলটি বিলুপ্ত হওয়ার পর মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক তাকে রিপাবলিকান পিপল'স পার্টিতে আমন্ত্রণ জানান এবং ১৯৩১ সালে দলের নেতৃবৃন্দ কর্তৃক তাকে আইদিনের ডেপুটি নির্বাচিত করা হয়। ১৯৪৫ সালে ইসমত ইনোনুর জাতীয়করণ নীতি নিয়ে দলের মধ্যে বিরোধিতার কারণে তিনি ও তার দুই সহকর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।[৩]
ক্ষমতালাভ
সম্পাদনা১৯৪৬ সালের ৭ জানুয়ারি আদনান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী জালাল বায়ার ডেমোক্রেটিক পার্টি গঠন করেন। ১৯২৪ সালে গঠিত কাজিম কারাবেকিরের প্রোগ্রেসিভ রিপাবলিক পার্টি, ১৯৩০ সালে গঠিত আলি ফেতহি ওকাইরের লিবারেল রিপাবলিকান পার্টি ও ১৯৪৫ সালে গঠিত নুরি দেমিরাগের ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট পার্টির পরে এটি ছিল তুরস্কের চতুর্থ বৈধ বিরোধী দল। তিনি ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে তিনি কুতাহিয়ার ডেপুটি নির্বাচিত হন। ১৯৫০ সালের ১৪ মে তুরস্কের প্রথম স্বাধীন নির্বাচনে তাদের দল ৫২% ভোট পায়। এরপর মেন্দেরেস প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৫৫ সালে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও গ্রহণ করেন। ১৯৫৪ ও ১৯৫৭ সালের নির্বাচনেও তিনি জয়ী হন।
তার ১০ বছর প্রধানমন্ত্রীত্বকালে তুরস্কের অর্থনীতি বার্ষিক ৯% হারে বৃদ্ধি পায়।[৪] এসময় তুরস্ক ন্যাটোতে যোগ দেয়। মার্শাল পরিকল্পনার মাধ্যমে মার্কিন আর্থিক সমর্থনে কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি করা হয়; যোগাযোগ, শক্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ইনসুরেন্স ও ব্যাংকিং খাতে উন্নতি হয়। ১৯৫৫ সালে সংঘটিত গ্রীক বিরোধী ইস্তানবুলের দাঙ্গার জন্য বিরোধী দল তার সরকারকে দায়ী করেছিল।[৫] এসময় ইস্তানবুলের অনেক গ্রীক দোকান, বাড়িঘর ধ্বংস হয়।
বিমান দুর্ঘটনা
সম্পাদনাইস্তানবুল থেকে লন্ডন যাওয়ার সময় ১৯৫৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি আদনান মেন্দেরেস ও সরকারি কর্মকর্তাদের বহনকারী তুর্কি এয়ারলাইন্সের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয় এবং এতে আগুন ধরে যায়। এতে ৫ জন যাত্রী ও ৮ জন ক্রু নিহত হন। তবে আদনান এতে অনেকটা অক্ষত ছিলেন। তাকে এরপর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।
সাইপ্রাস ইস্যুতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড ম্যাকমিলান ও গ্রীক প্রধানমন্ত্রী কনস্টান্টাইন কারামানলিসের সাথে লন্ডন চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য তিনি যাত্রা করেছিলেন।[৬] ১৯৫৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে থাকা অবস্থায় তিনি লন্ডন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি দেশে ফিরে আসেন।
রাজনৈতিক বিশ্বাস
সম্পাদনাআতাতুর্ক ও তার দলের তুলনায় আদনান মেন্দেরেস ঐতিহ্যবাহী জীবনপদ্ধতি এবং ইসলাম চর্চার প্রতি সহনশীল ছিলেন। ১৯৫০ সালের নির্বাচনের সময় তিনি আরবি ভাষায় আজান দেয়ার অনুমতি প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ইতিপূর্বে তুরস্কে আরবিতে আজান নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তিনি ইতিপূর্বে বন্ধ করা কয়েক হাজার মসজিদ পুনরায় চালু করেন। এজন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা তাকে দোষারোপ করে। তার অন্যতম পদক্ষেপ ছিল তুর্কি নোট থেকে ইসমত ইনোনুর ছবি তুলে দিয়ে মোস্তফা কামালের ছবি ব্যবহার।[৭]
পূর্বসূরিদের চেয়ে আদনান মেন্দেরেস মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে তৎপর ছিলেন। তার অর্থনৈতিক নীতির কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে তিনি জনপ্রিয় হয়েছিলেন।
অভ্যুত্থান ও মৃত্যুদন্ড
সম্পাদনা১৯৬০ সালের ২৭ মে তুরস্কে সংঘটিত সামরিক অভ্যুত্থানে সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয় এবং আদনান মেন্দেরেসকে দলের অন্যান্য নেতাদের সাথে গ্রেপ্তার করা হয়।[৮] তাদের বিরুদ্ধে তুরস্কের সংবিধান লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন অভিযোগ করা হয়। ইয়াসিয়াদা দ্বীপে স্থাপিত সামরিক আদালতে তাদের বিচার অনুষ্ঠিত হয়। বিচারে তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। দেশে বিদেশে বিরোধিতা সত্ত্বেও ১৯৬১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ইমরালি দ্বীপে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।[৯] দুই মাস পরে মেন্দেরেসের বিরোধীপক্ষ ইসমত ইনোনু সামরিক শাসনের অধীনে নতুন সরকার গঠন করেন।[১০]
স্মরণ
সম্পাদনা১৯৯০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তার ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তুরস্কের সংসদ তার মরণোত্তর ক্ষমা ঘোষণা করে। তার কবর স্থানান্তর করে ইস্তানবুলে তার নামে একই মাজারে দাফন করা হয়। তার সাথে ফাঁসিতে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ফাতিন রুশতু জোরলু ও হাসান পোলাতকানকেও মরণোত্তর ক্ষমা করা হয়।[১১] আইদিনের আদনান মেন্দেরেস বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইজমিরের আদনান মেন্দেরেস বিমানবন্দর তার সম্মানে নামকরণ করা হয়েছে। তার নামে দুইটি উচ্চ বিদ্যালয়ও রয়েছে। এছাড়াও তুরস্কে তার নামে বিভিন্ন স্থান, সড়ক রয়েছে।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Aydemir, Şevket Süreyya. "Menderes'in Dramı", Remzi Kitabevi, Istanbul 1984
- ↑ Erik Jan Zürcher, Turkey: a modern history, I.B.Tauris, 2004, আইএসবিএন ৯৭৮-১-৮৬০৬৪-৯৫৮-৫ p.397
- ↑ Heper, Metin; Sayari, Sabri (২০০২)। Political leaders and democracy in Turkey। Lexington Books। আইএসবিএন 978-0-7391-0352-4।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৪ জানুয়ারি ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৬।
- ↑ 6–7 Eylül Olayları ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১২ মে ২০১৪ তারিখে (তুর্কি)
- ↑ "1959: Turkish leader involved in fatal crash"। BBC News। ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৯। সংগ্রহের তারিখ ২৩ এপ্রিল ২০১০।
- ↑ Andrew Mango (২৬ আগস্ট ২০০২)। Ataturk: The Biography of the founder of Modern Turkey। Overlook। পৃষ্ঠা 36। আইএসবিএন 978-1-59020-924-0।
Now the Democrat Party government outdid him in signs of respect for Atatürk's memory.
- ↑ "FACTBOX: Coups in Turkey over last 50 years"। Reuters। ১৭ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ "Adnan Menderes hanged"। Dawn। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০১৬।
- ↑ Oron, Yitzhak (১৯৬১)। Middle East Record Volume 2। Jerusalem: The Moshe Dayan Center। পৃষ্ঠা 573। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০১৬।
- ↑ Polley, Martin (২০০০)। A-Z of modern Europe since 1789। Routledge। আইএসবিএন 978-0-415-18597-4।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- Adnan Menderes Turkish Biography
- Adnan Menderes – Time Magazine ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ জানুয়ারি ২০০৯ তারিখে
- ফাইন্ড এ গ্রেইভে Adnan Menderes (ইংরেজি)
রাজনৈতিক দপ্তর | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী মুহাম্মদ ফুয়াদ কোপরুলু |
তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ৯ ডিসেম্বর ১৯৫৫–২৮ জুলাই ১৯৫৭ |
উত্তরসূরী হাসান শামি এরগিন |
পূর্বসূরী মুহাম্মদ ফুয়াদ কোপরুলু |
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ১৯৫৫ |
উত্তরসূরী ফাতিন রুশতু জোরলু |
পূর্বসূরী শামসউদ্দিন গুনালতাই |
তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী ২২ মে ১৯৫০–২৭ মে ১৯৬০ |
উত্তরসূরী জামাল গুরসাল |
পার্টির রাজনৈতিক কার্যালয় | ||
পূর্বসূরী জালাল বায়ার |
ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা ৯ জুন ১৯৫০–২৭ মে ১৯৬০ |
উত্তরসূরী সুলাইমান দেমিরেল (জাস্টিস পার্টি) ও নাজিমউদ্দিন এরবাকান (ন্যাশনাল সেলভেশন পার্টি) |