আখিরা হত্যাকাণ্ড
আখিরা গণহত্যা ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের দিনাজপুর জেলার বাড়ইহাটের নিকটে অনুষ্ঠিত একটি গণহত্যা। স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি বাহিনী দেশান্তরী হিন্দুদের ওপর এই গণহত্যা সংঘটিত করে।[১][২][৩][৪] গণহত্যায় প্রায় ১০০ জন হিন্দু প্রাণ হারান বলে ধারণা করা হয়।[১]
আখিরা গণহত্যা | |
---|---|
স্থান | বাড়ইহাট, দিনাজপুর, পূর্ব পাকিস্তান |
তারিখ | ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ (+০৬:০০) |
লক্ষ্য | বাঙালি হিন্দু |
হামলার ধরন | ব্রাশফায়ার, গণহত্যা, হত্যাকাণ্ড |
ব্যবহৃত অস্ত্র | মেশিনগান |
নিহত | ৯৩-১২৫ |
হামলাকারী দল | পাকিস্তান সেনাবাহিনী, রাজাকার |
ঘটনাপ্রবাহ
সম্পাদনা১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে স্থানীয় রাজাকার বাহিনীর সদস্য পার্বতীপুরের রামচন্দ্রপুর গ্রামের কেনান উদ্দিন সরকার আশেপাশের বদরগঞ্জ, খোলাহাটী, বিরামপুর, আফতাবগঞ্জ ও শেরপুর গ্রামের প্রায় ৫০টি হিন্দু পরিবারকে নিরাপদে ভারতে পৌঁছে দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে নিয়ে আসেন। এই হিন্দু পরিবারগুলোকে বর্তমান ফুলবাড়ি উপজেলার বাড়ইহাট নামক স্থানে আটকে রাখেন। এই সময় রাজাকার ও আল বদর বাহিনী কর্তৃক হিন্দুদের থেকে টাকা ও মূল্যবান অলঙ্কার কেড়ে নেওয়ার পর পাকিস্তানি বাহিনীকে খবর পাঠানো হয়। সেনাবাহিনী বেলা এগারোটার দিকে হিন্দু জিম্মিদের বাড়ইহাটের ১০০ মিটার দক্ষিণে আখিরা নামক স্থানে নিয়ে গিয়ে পুরুষ এবং নারী ও শিশুদের আলাদা সারি বেঁধে দাঁড় করিয়ে মেশিনগানের ব্রাশফায়ারের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। কিছু সংখ্যক শিশু ও কিশোর, যারা গুলির পরও বেঁচে গিয়েছিল, তাদের বেয়োনেট দিয়ে হত্যা করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে পুরুষদের হত্যার পর, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলেই নারীদের সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে।[৪] বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর স্থানীয় বাসিন্দারা কেনান উদ্দিন সরকারকে জবাই করার মাধ্যমে শাস্তির বিধান করে।[২]
প্রাণহানি
সম্পাদনাসেনাবাহিনীর হাতে জিম্মি হিন্দু পরিবারের পুরুষ সদস্যদের ঘটনাস্থলেই হত্যা করা হয়। এই গণহত্যায় কম করে ৮৫ জন শহীদ হন, বলে প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এছাড়া আরও আটজন প্রত্যক্ষদর্শী মুসলিম গ্রামবাসীকেও পরবর্তীকালে হত্যা করা হয়। আবার কারও কারও মতে এই হত্যাকাণ্ডে প্রায় ১২৫ জন হিন্দু মারা যান। ঘটনায় প্রকৃত মৃতের সংখ্যা নিয়ে মতভেদ থাকার কারণে মৃতের সংখ্যাকে প্রায় ১০০ হিসেবে গণ্য করা হয়।
স্মৃতিসৌধ
সম্পাদনাআখিরা গণহত্যার স্থানে শহীদদের স্মরণে এখন পর্যন্ত কোনো স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়নি। যদিও স্থানীয় গ্রামবাসী গণহত্যায় মৃতদের স্মরণে কুরআনখানি ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে থাকে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ আখিরা গণহত্যা দিবস আজ। The Daily Janakantha। এপ্রিল ১৭, ২০১০। মার্চ ৪, ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৬, ২০১২।
- ↑ ক খ Ali, Sheikh Sabeer। আখিরা গণহত্যা দিবস আজ। Dainik Karatoa। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৬, ২০১২।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ আজ ১৭ এপ্রিল দিনাজপুরের ফুলবাড়ি আখিরা গণহত্যা দিবস। dinajpurnews.com। এপ্রিল ১৭, ২০১০। জুলাই ৮, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৬, ২০১২।
- ↑ ক খ Sarkar, Sanket (এপ্রিল ১৭, ২০১১)। আজ ১৭ এপ্রিল ফুলবাড়ীর আখিরা গণহত্যা দিবস। bdreport24.com। মে ৯, ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৬, ২০১২।