আইভি রহমান

বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ ও সমাজকর্মী

আইভি রহমান (৭ জুলাই ১৯৩৬ - ২৪ আগস্ট ২০০৪) বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ ও সমাজকর্মী ছিলেন। তার পুরো নাম জেবুন্নাহার আইভি। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ এবং সমাজসেবায় অনন্য ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রাখার জন্য তিনি স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার লাভ করেন।

জেবুন্নাহার আইভি
জন্ম(১৯৩৬-০৭-০৭)৭ জুলাই ১৯৩৬
ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, তৎকালীন অবিভক্ত ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ)
মৃত্যু২৪ আগস্ট ২০০৪(2004-08-24) (বয়স ৬৮)
অন্যান্য নামআইভি রহমান
প্রতিষ্ঠানবাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
আন্দোলনবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ
বাংলাদেশ মহিলা সমিতি
দাম্পত্য সঙ্গীজিল্লুর রহমান
সন্তাননাজমুল হাসান পাপন (এমপি); তানিয়া ও ময়না
পিতা-মাতাজালাল উদ্দিন আহমেদ ও হাসিনা বেগম
আত্মীয়৮ বোন ও ৪ ভাই (শামসুন্নাহার সিদ্দিক [ জন্ম : ১৯২৯- মৃত্যু : ৪ আগষ্ট ২০১৭])
পুরস্কারস্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, ২০০৯ (মরণোত্তর)

ব্যক্তিগত জীবন

সম্পাদনা

আইভি রহমান ১৯৩৪ সালের ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থানার চন্ডিবের গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[] আট বোন ও চার ভাইয়ের মধ্যে তার অবস্থান ছিল পঞ্চম। তার বাবা জালাল উদ্দিন আহমেদ ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসিনা বেগম গৃহিণী ছিলেন।[] তার প্রাথমিক শিক্ষা জীবন ভৈরব থানার অন্তর্গত একটি বিদ্যালয়ে সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় বি.এ (অনার্স) ডিগ্রী লাভ করেন৷

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ জিল্লুর রহমান তাকে ১৯৫৮ সালের ২৭ জুন তারিখে নবম শ্রেণীতে অধ্যয়নকালীন সময়ে বিয়ে করেন।[] পারিবারিক জীবনে ১ পুত্র নাজমুল হাসান পাপন বর্তমান সংসদ সদস্য ও ২ কন্যা সন্তান - তানিয়া ও ময়না'র মা ছিলেন তিনি৷

কর্মজীবন

সম্পাদনা

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমানের নীতি ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে গণতন্ত্রের সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করেন৷ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে ভারতে অস্ত্র চালনা এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সহায়তা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এছাড়া তিনি জয়বাংলা রেডিওতে নিয়মিত কথিকা পাঠ করতেন৷ ১৯৬৯ সালে মহিলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহীর কমিটির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি এ পদে আসীন ছিলেন। এরপর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির মহিলা বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। বাংলাদেশ মহিলা সমিতি পুণঃগঠনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

মৃত্যু-পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ সমিতির সভানেত্রী ও জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি একাধারে মহিলা সংস্থা ও জাতীয় মহিলা সমিতির সভানেত্রী ছিলেন।[]

 
২০২০ সালের সংগৃহীত শহীদ আইভি রহমান পৌর ষ্টেডিয়ামের সম্মুখচিত্র

সম্মাননা

সম্পাদনা

মুক্তিযুদ্ধ এবং সমাজসেবার ক্ষেত্রে অনন্য ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রাখার জন্য আইভি রহমানকে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার-২০০৯ (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। জিল্লুর রহমান মহিলা কলেজের নির্মাণাধীন ছাত্রীনিবাস, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে তোরণ ও নামফলক তার নামে নামাঙ্কিত হয়েছে। তার সম্মানার্থে ভৈরব-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে ভৈরব স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে শহীদ আইভি রহমান পৌর ষ্টেডিয়াম রাখা হয়।[] বাংলাদেশের প্রথম সাঁতার ক্রীড়া আয়োজন সুইমিংপুলের নামে তার নামে নামকরণ করা হয়।[]

মৃত্যু

সম্পাদনা

তিনি ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জনসভায় এক ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন। অতঃপর ২৪ আগস্ট রাত ২টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. মুহম্মদ মনিরুল হক (২৪ আগস্ট ২০২২)। "যে ট্র্যাজেডি জাতি আজও মেনে নিতে পারেনি"দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ২১ আগস্ট ২০২৩ 
  2. "ভৈরবের আইভি রহমান", দৈনিক প্রথম আলো, মুদ্রিত সংস্করণ, খোলা কলম, পৃষ্ঠা-১১, ২৪ আগস্ট ২০১২।
  3. "শেখ হাসিনার চোখে জল"মানবজমিন। ২৪ আগস্ট ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২১ আগস্ট ২০২৩ 
  4. "উদ্বোধনের অপেক্ষায় শহীদ আইভি রহমান স্টেডিয়াম | Purboposhchimbd"Purboposchim। ২০১৯-০৬-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১৯ 
  5. "৭ দিনের মধ্যে স্কোরবোর্ডের অবস্থা জানতে চান পাপন"ঢাকা পোস্ট। ২০২৪-০৫-২৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৯