অটোগ্রাফ (২০১০-এর চলচ্চিত্র)
অটোগ্রাফ ২০১০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্র। খ্যাতনামা পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র এটি। ২০১০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এবং শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস প্রযোজিত এই চলচ্চিত্রে মুখ্য ভূমিকায় আছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, নন্দনা সেন, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত প্রমুখ।
অটোগ্রাফ | |
---|---|
পরিচালক | সৃজিত মুখোপাধ্যায় |
প্রযোজক | শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস |
রচয়িতা | সৃজিত মুখোপাধ্যায় |
শ্রেষ্ঠাংশে | প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় নন্দনা সেন ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত |
সুরকার | দেবজ্যোতি মিশ্র অনুপম রায় |
চিত্রগ্রাহক | সৌমিক হালদার |
মুক্তি |
|
স্থিতিকাল | ১২০ মিনিট |
দেশ | ভারত |
ভাষা | বাংলা |
চলচ্চিত্রটি বিশ্ববিখ্যাত পরিচালক সত্যজিৎ রায় পরিচালিত এবং মহানায়ক উত্তম কুমার অভিনীত নায়ক-এর প্রতি এক শ্রদ্ধাজ্ঞাপন।
কাহিনী
সম্পাদনাচলচ্চিত্রটি শুরু হয় সত্যজিৎ রায়ের খ্যাতনামা চলচ্চিত্র নায়ক পুনঃনির্মাণের একটি প্রস্তাব থেকে। নতুন পরিচালক ও কাহিনীনির্মাতা শুভব্রত (ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত) বিখ্যাত বাঙালি অভিনেতা অরুণ চ্যাটার্জী (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়) কে এই প্রস্তাব দেয়। অরুণ এই প্রস্তাবে রাজি হয় এবং চলচ্চিত্রের প্রযোজনা করতেও রাজি হয়। শুভব্রত তার বান্ধবী শ্রীনন্দিতা বা শ্রীন (নন্দনা সেন) কে অরুণের বিপরীতে অভিনয়ের অণুরোধ করে। এরমধ্যে অরুন ও শ্রীন পরস্পরের কাছে আসে এবং অরুণ তাকে নিজের অতীতের নানা ঘটনা বলে এবং আবেগের মাধ্যমে পরিস্থিতকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেয়। এই ঘটনা ক্যামেরায় ধারণ করে শুভব্রত তা প্রেসের কাছে ছেড়ে দেয়। এতে শ্রীনন্দিতা রেগে গিয়ে শুভব্রতর সাথে নিজের সম্পর্ক ভেঙে দেয়। অরুণ ভাবে এই কাজ শ্রীনন্দিতা করেছে এবং সে তার সাথে ঝগড়া করে চলচ্চিত্রের মুক্তিকেই বন্ধ করে দেয়। পরে সে সব জানে যে এই ঘটনায় শ্রীনের কোন দোষ নেই। সে নিজের ভুল স্বীকার করে অণুতপ্ত হয় এবং শ্রীনের কাছে ফিরে আসতে হয়। চলচ্চিত্রের শেষে দেখা যায় যে শ্রীন তার সাথে অরুণের পরিচয়কালীন সময়ে যে ধাবাতে মিলত, সেখানেই নিজের মোবাইল নম্বর রাখছে।
অভিনয়ে
সম্পাদনা- অরুণ চ্যাটার্জী চরিত্রে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়
- শ্রীনন্দিতা চরিত্রে নন্দনা সেন
- শুভব্রত মিত্র চরিত্রে ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত
- রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত
- মনোজ সরকার চরিত্রে বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী
- আশীষ চক্রবর্তী চরিত্রে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়
- পার্থপ্রতিম নাগ চরিত্রে দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায়
- অহনা দাশগুপ্ত চরিত্রে সোহিনী পাল
- মলয় দাসগুপ্ত চরিত্রে ধ্রুব মুখোপাধ্যায়
- তরুণ মুখার্জী চরিত্রে দিলীপ রায়
- রূপালী গুপ্ত চরিত্রে ঋ সেন
- নন্দিনী চরিত্রে সংঘশ্রী সিনহা মিত্র
- সৃজিত মুখোপাধ্যায়
সঙ্গীত
সম্পাদনাদেবজ্যোতি মিশ্র এবং অনুপম রায় এই চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেন। গানের কথা লেখেন অনুপম রায়, শ্রীজাত এবং সৃজিত মুখোপাধ্যায়। গোটা বাংলার দর্শকদের কাছে আমাকে আমার মত থাকতে দাও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। চল রাস্তায়, উঠেছে জেগে সকালগুলো ও বেঁচে থাকার গানও সমালোচকদের প্রশংসা কুড়োয়।
# | শিরোনাম | কণ্ঠশিল্পী(রা) |
---|---|---|
১ | "বেঁচে থাকার গান - সংস্করণ ১" | রূপম ইসলাম |
২ | "চল রাস্তায় - নারী কণ্ঠ" | শ্রেয়া ঘোষাল |
৩ | "ভাগে জানা হ্যাঁয় কাহা" | শঙ্কর মহাদেবন |
৪ | "ফাঁদে পড়িয়া" | আনন্দি বসু |
৫ | "বেঁচে থাকার গান - সংস্করণ ২" | সপ্তর্ষী মুখোপাধ্যায় |
৬ | "চল রাস্তায় - পুরুষ কণ্ঠ" | প্রিয়ম মুখোপাধ্যায় |
৭ | "উঠেছে জেগে সকালগুলো" | শ্রেয়া ঘোষাল |
৮ | "আমাকে আমার মত থাকতে দাও" | অনুপম রায় |
ক্ষুদ্র সংযুক্তি
সম্পাদনাচলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্র অরুণ চ্যাটার্জী (উত্তম কুমারের আসল নাম)। সৃজিতের স্পর্শ চলচ্চিত্রটিকে তাৎপর্যপূর্ণভাবে নায়ক থেকে সরিয়ে আনেন। চলচ্চিত্রটির কিছু তথ্যসূত্র নেয়া হয়েছে ইংমার বার্গম্যানদের মত চলচ্চিত্রনির্মাতাদের এবং ওয়াইল্ড স্ট্রবেরিস-এর মত চলচ্চিত্রের থেকে। এতে আর ডি বর্মণ এবং দ্য গডফাদার-এর উল্লেখ আছে। এর একটি দৃশ্যে ওয়ং কার ওয়াইর চলচ্চিত্র ইন দ্য মুড ফর লাভ থেকে "জুমেজু'র থিম" ব্যবহৃত হয়েছে। চলচ্চিত্র ব্যবহৃত স্টুডিওর দেয়ালে দেখা যায় বাংলার কিংবদন্তি চলচ্চিত্রনির্মাতা ঋত্বিক ঘটক ও জলসাঘর থেকে ছবি বিশ্বাস-এর ছবি ঝোলানো ছিল। অটোগ্রাফ বাংলা ছবির জগতের অন্যতম বেশি আয় করা ছবিগুলোর একটি।
স্বীকৃতি
সম্পাদনা১৭ই অক্টোবর, ২০১০ সালে আন্তর্জাতিকভাবে আবুধাবি চলচ্চিত্র উৎসবে এর প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠিত হয়। নিউ ইয়র্কের এমআইএএসি (মাহিন্দ্রা ইন্দো-আমেরিকান আর্টস কাউন্সিল) (২০১০)-এ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় সেরা অভিনেতার মনোনয়ন লাভ করেন। গ্লাসগো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব এবং লন্ডন ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসব (২০১১) তে চলচ্চিত্রটি অফিশিয়ালভাবে নির্বাচিত হয়। কালা ঘোড়া চলচ্চিত্র উৎসব (মুম্বই) এবং দর্পন চলচ্চিত্র উৎসব (সিঙ্গাপুর) এ এর প্রদর্শনী হয়।
কলকাতা বক্স অফিস অনুযায়ী এটি দিল্লি, মুম্বই, ব্যাঙ্গালোর ও পুনে ছাড়াই শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই টানা ১২০ দিন চলে।
চলচ্চিত্রটি এখন পর্যন্ত মোট ২১টি পুরস্কার লাভ করে।
পুরস্কার | বিভাগ | মনোনিত | ফলাফল |
---|---|---|---|
বিগ বাংলা মুভি অ্যাওয়ার্ড | সেরা চলচ্চিত্র | "অটোগ্রাফ" | বিজয়ী |
সেরা পরিচালক | সৃজিত মুখোপাধ্যায় | বিজয়ী | |
সেরা অভিনেতা | প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় | বিজয়ী | |
সেরা খলনায়ক | ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত | বিজয়ী | |
সেরা চিত্রধারক | বিজয়ী | ||
সেরা সম্পাদনা | বিজয়ী | ||
সেরা চিত্রনাট্য ও সংলাপ | বিজয়ী | ||
সেরা সঙ্গীত পরিচালক | অনুপম রায় | বিজয়ী | |
সেরা লিরিসিস্ট | অনুপম রায় ("আমাকে আমার মত থাকতে দাও") | বিজয়ী | |
সেরা কণ্ঠশিল্পী (পুরুষ) | রূপম ইসলাম ("বেঁচে থাকার গান") | বিজয়ী | |
সেরা কণ্ঠশিল্পী (নারী) | শ্রেয়া ঘোষাল ("চল রাস্তায়") | বিজয়ী | |
জি বাংলার গৌরব | সেরা চলচ্চিত্র | "অটোগ্রাফ" | বিজয়ী |
সেরা পরিচালক | সৃজিত মুখোপাধ্যায় | বিজয়ী | |
সেরা নতুন পরিচালক'' | সৃজিত মুখোপাধ্যায় | বিজয়ী | |
সেরা অভিনেতা | প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় | বিজয়ী | |
সেরা চিত্রনাট্য ও সংলাপ | বিজয়ী | ||
সেরা সঙ্গীত পরিচালক | অনুপম রায় | বিজয়ী | |
সেরা লিরিসিস্ট | অনুপম রায় ("আমাকে আমার মত থাকতে দাও") | বিজয়ী | |
সেরা কণ্ঠশিল্পী (পুরুষ) | রূপম ইসলাম ("বেঁচে থাকার গান") | বিজয়ী | |
সেরা কণ্ঠশিল্পী (নারী) | শ্রেয়া ঘোষাল ("চল রাস্তায়") | বিজয়ী | |
কেকেএন-এবিপি বাংলা মিউজিক অ্যাওয়ার্ড | সেরা অ্যালবাম | "অটোগ্রাফ" | বিজয়ী |
সেরা গান | অনুপম রায় ("আমাকে আমার মত থাকতে দাও") | বিজয়ী | |
সেরা কণ্ঠশিল্পী (পুরুষ) | রূপম ইসলাম ("বেঁচে থাকার গান") | বিজয়ী | |
সেরা লিরিসিস্ট | অনুপম রায় ("আমাকে আমার মত থাকতে দাও") | বিজয়ী | |
আনন্দলোক অ্যাওয়ার্ড | সেরা গান | অনুপম রায় ("আমাকে আমার মত থাকতে দাও") | বিজয়ী |
স্টার জলসা এন্টারটেইনমেন্ট অ্যাওয়ার্ড | সেরা পরিচালক | সৃজিত মুখোপাধ্যায় | বিজয়ী |
সেরা অভিনেতা | প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় | বিজয়ী | |
সেরা চিত্রধারক | বিজয়ী | ||
সেরা সম্পাদনা | বিজয়ী | ||
সেরা চিত্রনাট্য | বিজয়ী | ||
সেরা লিরিসিস্ট | শ্রীজাত ("আমাকে আমার মত থাকতে দাও") | বিজয়ী | |
সেরা কণ্ঠশিল্পী (নারী) | শ্রেয়া ঘোষাল ("চল রাস্তায়") | বিজয়ী | |
সেরা আপকামিং ট্যালেন্ট | অনুপম রায় | বিজয়ী | |
একাদশ টেলিসিনে অ্যাওয়ার্ড | সেরা চলচ্চিত্র | "অটোগ্রাফ" | বিজয়ী |
সেরা পরিচালক | সৃজিত মুখোপাধ্যায় | বিজয়ী | |
সেরা অভিনেত্রী | নন্দনা সেন | বিজয়ী | |
সেরা লিরিসিস্ট | অনুপম রায় ("আমাকে আমার মত থাকতে দাও") | বিজয়ী | |
সেরা কণ্ঠশিল্পী (পুরুষ) | রূপম ইসলাম ("বেঁচে থাকার গান") | বিজয়ী | |
বিগ বাংলা রাইজিং স্টার অ্যাওয়ার্ড | সেরা পরিচালক | সৃজিত মুখোপাধ্যায় | বিজয়ী |
সেরা অভিনেত্রী | নন্দনা সেন | বিজয়ী | |
সেরা কণ্ঠশিল্পী | অনুপম রায় | বিজয়ী | |
এমআইএএসি (মাহিন্দ্রা ইন্দো-আমেরিকান আর্টস কাউন্সিল) (২০১০) | সেরা অভিনেতা | প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ("অটোগ্রাফ") | মনোনীত |
রিভিউ
সম্পাদনারিভিউ ওয়েবসাইট ক্যালকাটাটিউব.কম বলে, "এটি অবশ্য দর্শনীয় একটি চলচ্চিত্র যা আপনার হৃদয় ও আত্মাকে স্পর্শ করবে।" এটি আরো বলে যে চলচ্চিত্রটি ছবি বানানোর অন্তঃদৃষ্টিপূর্ণ বাইট ধারণ করার মত করেই দৃশ্যাধারণ করা হয়েছে। সাবধানতার সাথে চিত্রধারণ, সাথে সম্পূর্ণ চিত্রজুড়ে ধীর প্রযোজনা নকশা, সাথে সঙ্গীত এবং শব্দ অভিনয়ের একটি অংশে পরিণত হয়েছে। কোন ছেলেখেলা সংলাপ নয়, বরং এতে প্রয়োজনীয় নীরবতা আছে।[১]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Chatterji, Shoma A.। "Autograph Movie Review"। CalcuttaTube। ২০ অক্টোবর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১০।
2. ^Gautam Chakraborty "Parichalaker Bajimaat - Autograph Movie Review" Anandabazaar Patrika, 23 October 2010.
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে অটোগ্রাফ (ইংরেজি)
- দাপ্তরিক ওয়েবসাইট
- অটোগ্রাফ সঙ্গীতের কথা
- অটোগ্রাফ রিভিউ CalcuttaTube.com -এ
- অটোগ্রাফ একটি রিভিউ ilovekolkata.in -এ