পরমশিব প্রভাকর কুমারমঙ্গল
জেনারেল পরবশিব প্রভাকর কুমারমঙ্গল (১ জুলাই ১৯১৩ - ১৩ মার্চ ২০০০) ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন জেনারেল ছিলেন। তিনি ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ভারতীয় সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক ছিলেন। তিনি কেসিআইও (কিংস কমিশন্ড ইন্ডিয়ান অফিসার্স) হিসেবে ভারতের সর্বশেষ সেনাপ্রধান।
পি পি কুমারমঙ্গল ডিএসও, এমবিই | |
---|---|
সেনাবাহিনী প্রধান (ভারত) | |
কাজের মেয়াদ ৮ জুন ১৯৬৬ – ৭ জুন ১৯৬৯ | |
পূর্বসূরী | জেনারেল জয়ন্ত নাথ চৌধুরী |
উত্তরসূরী | জেনারেল স্যাম মানেক শ |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | কুমারমঙ্গল, মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি, ভারত | ১ জুলাই ১৯১৩
মৃত্যু | ১৩ মার্চ ২০০০ মাদ্রাজ (বর্তমানে চেন্নাই) | (বয়স ৮৬)
সম্পর্ক | পি সুব্বারায় (মুখ্যমন্ত্রী, পিতা) |
পুরস্কার | পদ্মবিভূষণ বিশিষ্ট পরিষেবা আদেশ অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ারের সদস্য |
সামরিক পরিষেবা | |
আনুগত্য | ব্রিটিশ ভারত (১৯৩৩-১৯৪৭) ভারত (১৯৪৭-এর পরে) |
শাখা | ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী ভারতীয় সেনাবাহিনী |
কাজের মেয়াদ | ১৯৩৩–১৯৬৯ |
পদ | জেনারেল |
ইউনিট | রেজিমেন্ট অব আর্টিলারী |
কমান্ড | ইস্টার্ন কমান্ড (ভারত) |
যুদ্ধ | দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৪৭ ভারত-চীন যুদ্ধ ১৯৬৫-এর পাক-ভারত যুদ্ধ |
প্রথম জীবন এবং শিক্ষা
সম্পাদনাদক্ষিণ ভারতের তামিল অঞ্চলের কুমারমঙ্গল পরিবারে জন্ম নেন পরবশিব। তার পিতা পি সুব্বারায় মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সীর একসময়কার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। পরমশিব ব্রিটেনের এটোন কলেজে পড়ে রাজকীয় সেনা একাডেমী উলউইচে যোগদান করেন এবং ১৯৩৩ সালের ৩১ আগস্ট কমিশনপ্রাপ্ত হন।[১] ১২ নভেম্বর ১৯৩৪ সালে তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন,[২] এবং ২ মার্চ পদোন্নতি পেয়ে তিনি লেফটেনেন্ট পদে উন্নীত হন।[৩]
সামরিক জীবন
সম্পাদনাদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
সম্পাদনা১৯৪১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি কুমারমঙ্গল ক্যাপ্টেন হন।[৪] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে,২৭ মে, ১৯৪২ সালে অস্থায়ী মেজর হিসেবে বীর হাকীমের দক্ষিণদিকে ৭ম ফিল্ড ব্যাটারি, ২য় ফিল্ড রেজিমেন্ট, ভারতীয় আর্টিলারিকে নেতৃত্ব দিয়ে লিবিয়ার ১৭১ বিন্দুতে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য তাকে ডিসটিংগুয়িস্ট সার্ভিস অর্ডারে (DSO) ভূষিত করা হয়।[৫] পরবর্তীতে ১৯৪২ সালে ইতালিয়ানরা তাকে যুদ্ধবন্দী হিসেবে গ্রেপ্তার করে এবং ইতালির যুদ্ধবন্দী শিবিরে আটক রাখে। ১৯৪৩ সালের সেপ্টেম্বরে ইতালিয়ানদের যুদ্ধবিরতির সময়ে তিনি পলায়ন করেন; যাইহোক, জানুয়ারি, ১৯৪৪ সালে তিনি আবার আটক ও বন্দী হন, এসময় জার্মানিতে, যুদ্ধবন্দীদের জন্য একটি উচ্চ নিরাপত্তা শিবির, স্টালাগ লুফ্ট ৩-এ তাকে স্থানান্তর করা হয়। যুদ্ধ শেষে ১৯৪৫ সালে তিনি ভারতে প্রত্যাবর্তন করেন।
যুদ্ধোত্তর
সম্পাদনা১৮ এপ্রিল, ১৯৪৬ সালে ক্যাপ্টেন কুমারমঙ্গলকে অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (এমবিই) এর একজন সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় এবং ১লা জুলাই মেজর পদে উন্নীত করা হয়।[৬][৭] তিনি ভারতের স্বাধীনতার পরের বছর (১৯৪৮ সালে) তিনি ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি পান।
১৯৬৩ সালের মে মাসে পরমশিব জেনারেল পদে ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৬৪ সালের নভেম্বরে তিনি সেনাবাহিনীর ডেপুটি প্রধান হন এবং ১৯৬৫ সালের ১৫ই জানুয়ারি তিনি সেনাবাহিনীর ভাইস প্রধান হন। ৮ জুন ১৯৬৬ সালে, জেনারেল কুমারমঙ্গল সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে, সম্মানজনক পদে প্রথম ভারতীয় গোলন্দাজ অফিসার এবং প্যারাট্রপারের দায়িত্ব নেন। সেনাপ্রধান হিসেবে তার মেয়াদ অকীর্তিত হলেও পুনর্গঠন সেবা, অস্ত্রশস্ত্রের আধুনিকীকরণ, প্রশিক্ষণ এবং কৌশলপদ্ধতি যা তিনি ১৯৬৫-এর যুদ্ধ থেকে অর্জন করেছেন তা ছিল পরিশ্রান্তকর। ৭ জুন, ১৯৬৯ সালে অবসর গ্রহণের আগমুহূর্ত পর্যন্ত তিনি টানা ৩৬ বছর ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি পদ্মবিভূষণ পদকে ভূষিত হন।
আমেরিকার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি
সম্পাদনাজেনারেল কুমারমঙ্গল ওকলাহোমার ফোর্ট সিলের আর্টিলারি স্কুলে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তার পত্র থেকে এটা প্রমাণিত যে তিনি আমেরিকানদের দ্বারা খুব একটা প্রভাবিত হননি। তিনি তাদের আক্রমনাত্মক হীনমন্যতায় ভুগছিলেন এবং একটি নতুন স্বাধীন ভারত আমেরিকান প্রভাবের অধীনে আসার বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। ১৯৪৭ সালে চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী র কাছে তার লিখিত চিঠিটি থেকে একটি উদ্ধৃতাংশ দেয়া হয়েছে:
- "এই দেশটি এমন নয় যে আমি একে কখনও পছন্দ করব। আমি তাদের কাছ থেকে খুব উচ্চ মতামত পাইনি। যেসব লোকের সাথে আমি চলাফেরা করি তারা খুবই সদয়, অতিথিপরায়ণ এবং আমাদের উভয়ের জন্য খুব ভালো। তবে একরকম আমার মনে হয় সেখানে কৃত্রিমতার একটি ছাপ রয়েছে এবং যা অন্যকে প্রভাবিত করতে চেষ্টা করার ফল স্বরূপ। আমি মনে করি তারা পুরনো পৃথিবী এবং এর পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং সংস্কৃতির প্রতি খুব ঈর্ষান্বিত এবং এর ফলে একটি আক্রমনাত্মক হীনমন্যতার রূপ নেয়। তাদের নৈতিকতার অবস্থায় মনে হয়, কেউ নেই। মানুষদের দেখে মনে হয় একে অপরকে ঠকানোর চেষ্টা করে, প্রধানত জালিয়াতি করে আনন্দ বোধ করে। রাজনীতিবিদরা হচ্ছে কালোবাজারি এবং দেশের বড়বড় ব্যবসায় গুলো সবকিছুকে আঁকড়ে ধরে আছে। ক্ষুদ্র গ্রাম্য ব্যবসায়ী ও কৃষকদেরকে আমার মনে হয় বড়বড় ব্যক্তিদের সাথে তাদের হাত সুরক্ষিতভাবে বাঁধা আছে। আমি আশা করি যে আমাদের দেশ সতর্কতার সাথে এগিয়ে যাবে তবে সম্পূর্ণরূপে ঐ রাষ্ট্রের প্রভাবের অধীনে না।"[৮]
অন্যান্য আগ্রহ
সম্পাদনাএছাড়াও তিনি পোলো খেলোয়াড়, অশ্বারোহী, শো জাম্পার এবং ক্রিকেটার ছিলেন। তিনি মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব-এর একজন সদস্য, রয়্যাল হরটিকালচারাল সোসাইটির একজন ফেলো, এবং ভারতীয় পোলো এ্যাসোসিয়েশন ও ভারতের অশ্বারোহী ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। সেনা প্রধান হিসেবে অবসর নেয়ার সময়, তিনি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর ন্যাচার-ভারতের (WWF-India) গঠনকালে এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
পুরস্কার এবং সম্মাননা
সম্পাদনা- ২৭ মে ১৯৪২ সালে লিবিয়ায় একটি অসামান্য কাজের জন্য ডিসটিংগুয়িস্ট সার্ভিস অর্ডারে পুরস্কৃত করা হয়।
মৃত্যু
সম্পাদনাহৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২০০০ সালের ১৩ই মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "নং. 33974"। দ্যা লন্ডন গেজেট (ইংরেজি ভাষায়)। ১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৩।
- ↑ "নং. 34129"। দ্যা লন্ডন গেজেট (ইংরেজি ভাষায়)। ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৫।
- ↑ "নং. 34173"। দ্যা লন্ডন গেজেট (ইংরেজি ভাষায়)। ২১ জুন ১৯৩৫।
- ↑ "নং. 35165"। দ্যা লন্ডন গেজেট (ইংরেজি ভাষায়)। ১৬ মে ১৯৪১।
- ↑ "নং. 35665"। দ্যা লন্ডন গেজেট (সম্পূরক) (ইংরেজি ভাষায়)। ১১ আগস্ট ১৯৪২।
- ↑ "নং. 37536"। দ্যা লন্ডন গেজেট (সম্পূরক) (ইংরেজি ভাষায়)। ১৬ এপ্রিল ১৯৪৬।
- ↑ "নং. 38069"। দ্যা লন্ডন গেজেট (ইংরেজি ভাষায়)। ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭।
- ↑ P.P. Kumaramangalam to C. Rajagopalachari, 22 December 1947, in File 82, Fifth Installment, C. Rajagopalachari Papers, NMML.
সামরিক দপ্তর | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী লে. জে. টি. বি. হেন্ডারসন ব্রুক্স |
জেনারেল পদে ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডিং-ইন-চীফ ১৯৬৩-১৯৬৪ |
উত্তরসূরী লে. জেনারেল স্যাম মানেক শ |
পূর্বসূরী জয়ন্তনাথ চৌধুরী |
সেনাবাহিনী প্রধান ১৯৬৬–১৯৬৯ |
উত্তরসূরী শ্যাম মানেকশ’ |