গনোরিয়া
গনোরিয়া(ইংরেজি: Gonorrhea) হচ্ছে একটি যৌনবাহিত রোগ। Neisseria gonorrhoeae (নিশেরিয়া গনোরি) নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া এই রোগের জন্য দায়ী।[২] পুরুষের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া (ডিজইউরিয়া) ও মূত্রনালি দিয়ে পুঁজ বের হয়, টেস্টিকলে ব্যথা প্রভৃতি দেখা যায়। স্ত্রীলোকের ক্ষেত্রে অনেক সময় কোনো লক্ষণ থাকে না আবার কারো ক্ষেত্রে যোনিপথে পুঁজ বের হয় এবং তলপেটে ব্যথা হতে পারে। যদি সময়মত এই রোগের চিকিৎসা না করালে পুরুষ ও মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই এই রোগ আশেপাশে ছড়িয়ে যেতে পারে এবং পুরুষের এপিডিডাইমিস ও মহিলার তলপেটে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। গনোরিয়া সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে, এমনকি এটি শরীরের অস্থিসন্ধিসমূহ ও হার্টের কপাটিকাকেও আক্রান্ত করতে পারে।[২][৩]
গনোরিয়া | |
---|---|
প্রতিশব্দ | gonococcal infection, gonococcal urethritis, gonorrhoea, the clap[১] |
বিশেষত্ব | চর্মরোগবিদ্যা, বৃক্কশল্যবিদ্যা, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিজ্ঞান |
২৫ বছরের নিচে যৌনকার্যে সক্রিয় সকল নারীদের প্রতিবছর এই রোগের পরীক্ষা করানো উচিত।[৪] সমকামী পুরুষদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। [৪]
যৌনমিলনের সময় কনডম ব্যবহার করে গনোরিয়া প্রতিরোধ করা যায়।[৪]
রোগতত্ত্ব
সম্পাদনা no data <13 13–26 26–39 39–52 52–65 65–78 | 78–91 91–104 104–117 117–130 130–143 >143 |
প্রতিবছর প্রায় ৪৪৮ মিলিয়ন লোক যৌনবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়, এর মধ্যে প্রায় ৭৮ থেকে ৮৮ মিলিয়ন গনোরিয়ার রোগী। [৫][৬] যুক্তরাজ্যে ২০০৫ সালে ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী প্রতি এক লক্ষ পুরুষদের মধ্যে ১৯৬ জন এবং ১৬-১৯ বছর বয়সী প্রতি এক লক্ষ তরুণীর মধ্যে ১৩৩ জন গনোরিয়ায় আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়।[৭]
অল্পবয়স্কা তরুণীদের এই রোগে আক্রান্ত হবার হার সবচেয়ে বেশি।[৪] ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী ৯০০ জন গনোরিয়ার রোগী মৃত্যু বরণ করে যেখানে ১৯৯০ সালে এই সংখ্যা ছিলো ১১০০ জন।[৮] এই রোগের সুপ্তিকাল হচ্ছে ২ -১৪ দিন তবে ৪ থেকে ৬ দিনের মধ্যেই লক্ষণসমূহ প্রকাশ পেতে শুরু করে।[৯] কোনো পুরুষ একবার গনোরিয়ায় আক্রান্ত হলে পরবর্তীতে তার প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।[১০]
কারণ
সম্পাদনাNeisseria gonorrhoeae নামক ব্যাক্টেরিয়ার মাধ্যমে গনোরিয়া রোগ হয়।[৭]
বিস্তার
সম্পাদনাযৌনমিলনের মাধ্যমে এক ব্যক্তি থেকে আরেকজনের দেহে এই রোগের জীবাণু ছড়ায়। এটা যোনিপথ, মুখগহ্বর বা পায়ুপথ যে কোনো পথেই ছড়াতে পারে। [৭][১১] গনোরিয়ায় আক্রান্ত মহিলার সাথে একবার যৌনকর্ম করলে পুরুষলোকের এই রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা ২০%, তবে সমকামী পুরুষের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি আরও অনেক বেশি।[১২] আক্রান্ত পুরুষের সাথে একবার যৌনমিলনে একজন মহিলার এই রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি প্রায় ৬০-৮০%।[১৩]
বাচ্চা জন্মদানের সময় গনোরিয়ায় আক্রান্ত মায়ের শরীর থেকে এই রোগের জীবাণু বাচ্চাকে আক্রান্ত করতে পারে।এটি যখন বাচ্চার চোখকে আক্রান্ত করে তখন তাকে অফথালমিয়া নিওন্যাটোরাম বা নিওন্যাটাল কনজাংটিভাইটিস বলে।[৭]
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে জীবাণু দ্বারা দূষিত বস্তুর মাধ্যমেও ছড়াতে পারে।[১৫] এই বস্তুগুলো হলো গোসলের পানি, কাপড়চোপড়, তোয়ালে প্রভৃতি।[১৫] তবে এরকম ঘটনা খুবই বিরল।[১৬]
প্রতিরোধ
সম্পাদনাপ্রতিরোধের একমাত্র উপায় হচ্ছে কেবল একজন সঙ্গিনীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক রাখা নিশ্চিতভাবে যার গনোরিয়া নেই। বহুগামিতা পরিত্যাগ ও সঠিক পদ্ধতিতে কনডম ব্যবহারের মাধ্যমে এই রোগ সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করা সম্ভব।[১৭][১৮][১৯]
চিকিৎসা
সম্পাদনাএই রোগের চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয় যেমন সেফট্রায়াক্সন, এজিথ্রোমাইসিন, ডক্সিসাইক্লিন ইত্যাদি। [২০][২১] চিকিৎসার তিন মাস পর পুনঃপরীক্ষার সুপারিশ করা হয়।[৪]
গবেষণা
সম্পাদনাগনোরিয়া রোগের একটি টিকা আবিষ্কার করা হয়েছে যেটি ইঁদুরের শরীরে কার্যকর।[২২] আরও গবেষণার মাধ্যমে যতক্ষণ না এটা প্রমাণ হচ্ছে যে এই টিকা মানব শরীরে নিরাপদ ও সমান কার্যকর ততক্ষণ পর্যন্ত এটি চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে না।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Oxford English Dictionary
- ↑ ক খ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;CDC2014
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;Mor2016
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ ক খ গ ঘ ঙ Workowski, KA; Bolan, GA (৫ জুন ২০১৫)। "Sexually transmitted diseases treatment guidelines, 2015."। MMWR. Recommendations and reports : Morbidity and mortality weekly report. Recommendations and reports / Centers for Disease Control। 64 (RR-03): 1–137। পিএমআইডি 26042815।
- ↑ Global Burden of Disease Study 2013, Collaborators (২২ আগস্ট ২০১৫)। "Global, regional, and national incidence, prevalence, and years lived with disability for 301 acute and chronic diseases and injuries in 188 countries, 1990-2013: a systematic analysis for the Global Burden of Disease Study 2013."। Lancet (London, England)। 386 (9995): 743–800। ডিওআই:10.1016/s0140-6736(15)60692-4। পিএমআইডি 26063472।
- ↑ Emergence of multi-drug resistant Neisseria gonorrhoeae (পিডিএফ) (প্রতিবেদন)। World Health Organisation। ২০১১। পৃষ্ঠা 2। ২০১৪-০৯-১২ তারিখে মূল (pdf) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৭-২৬।
- ↑ ক খ গ ঘ Moran JS (২০০৭)। "Gonorrhoea"। Clin Evid (Online)। 2007। পিএমআইডি 19454057। পিএমসি 2943790 ।
- ↑ Lozano, R (ডিসে ১৫, ২০১২)। "lobal and regional mortality from 235 causes of death for 20 age groups in 1990 and 2010: a systematic analysis for the Global Burden of Disease Study 2010."। Lancet। 380 (9859): 2095–128। ডিওআই:10.1016/S0140-6736(12)61728-0। পিএমআইডি 23245604।
- ↑ Marr, Lisa (২০০৭) [1998]। Sexually Transmitted Diseases: A Physician Tells You What You Need to Know (Second সংস্করণ)। Baltimore, Maryland: Johns Hopkins University। আইএসবিএন 978-0-8018-8658-4।
- ↑ Caini, Saverio; Gandini, Sara; Dudas, Maria; Bremer, Viviane; Severi, Ettore; Gherasim, Alin (২০১৪)। "Sexually transmitted infections and prostate cancer risk: A systematic review and meta-analysis"। Cancer Epidemiology। 38 (4): 329–338। ডিওআই:10.1016/j.canep.2014.06.002। পিএমআইডি 24986642।
- ↑ Trebach, Joshua D.; Chaulk, C. Patrick; Page, Kathleen R.; Tuddenham, Susan; Ghanem, Khalil G. (২০১৫)। "Neisseria gonorrhoeae and Chlamydia trachomatis Among Women Reporting Extragenital Exposures"। Sexually Transmitted Diseases। 42 (5): 233–239। আইএসএসএন 0148-5717। ডিওআই:10.1097/OLQ.0000000000000248।
- ↑ Howard Brown Health Center: STI Annual Report, 2009
- ↑ National Institute of Allergy and Infectious Diseases; National Institutes of Health, Department of Health and Human Services (2001-07-20). "Workshop Summary: Scientific Evidence on Condom Effectiveness for Sexually Transmitted Disease (STD) Prevention". Hyatt Dulles Airport, Herndon, Virginia. pp14
- ↑ "Prophylaxis for Gonococcal and Chlamydial Ophthalmia Neonatorum in the Canadian Guide to Clinical Preventative Health Care" (পিডিএফ)। Public Health Agency of Canada। ১০ মার্চ ২০১০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০১৬।
- ↑ ক খ Goodyear-Smith, F (নভেম্বর ২০০৭)। "What is the evidence for non-sexual transmission of gonorrhoea in children after the neonatal period? A systematic review."। Journal of forensic and legal medicine। 14 (8): 489–502। ডিওআই:10.1016/j.jflm.2007.04.001। পিএমআইডি 17961874।
- ↑ "webmd – What Can You Catch in Restrooms? -"।
- ↑ section: Prevention
- ↑ section: How can gonorrhea be prevented?
- ↑ Desai, Monica; Woodhall, Sarah C; Nardone, Anthony; Burns, Fiona; Mercey, Danielle; Gilson, Richard (২০১৫)। "Active recall to increase HIV and STI testing: a systematic review"। Sexually Transmitted Infections: sextrans–2014–051930। আইএসএসএন 1368-4973। ডিওআই:10.1136/sextrans-2014-051930।
- ↑ Groopman, Jerome (২০১২-১০-০১)। "Sex and the Superbug"। The New Yorker। LXXXVIII (30): 26–31। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১০-১৩।
...public-health experts [see]...the emergence of a strain of gonorrhea that is resistant to the last drug available against it, and the harbinger of a sexually transmitted global epidemic.
- ↑ "Antibiotic-Resistant Gonorrhea"। Centers for Disease Control and Prevention। মে ৮, ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ মে ১২, ২০১৩।
- ↑ Jerse, AE; Bash, MC; Russell, MW (২০ মার্চ ২০১৪)। "Vaccines against gonorrhea: current status and future challenges."। Vaccine। 32 (14): 1579–87। ডিওআই:10.1016/j.vaccine.2013.08.067। পিএমআইডি 24016806। পিএমসি 4682887 ।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- কার্লিতে গনোরিয়া (ইংরেজি)
- "Gonorrhea - CDC Fact Sheet"