বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স
বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স বা ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ভারত সরকারের একটি সীমান্ত প্রহরী সংস্থা। ১৯৬৫ সালের ১ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থা ভারতের আধাসামরিক বাহিনীর একটি অংশ এবং এর প্রাথমিক দায়িত্ব হল শান্তির সময় ভারতের আন্তর্জাতিক সীমান্ত পাহারা দেওয়া ও আন্তর্দেশীয় অপরাধ প্রতিহত করা। ভারতের অধিকাংশ আধাসামরিক বাহিনীর মতো বিএসএফ-ও ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণাধীন। এই বাহিনী দেশের অন্যতম আইন রক্ষাকারী সংস্থা হিসেবেও পরিচিত।
সংস্থার রূপরেখা | |
---|---|
সদর দপ্তর | ফোর্স হেড কোয়ার্টারস, ব্লক ১০ সিজিও কমপ্লেক্স লোধি রোড নতুন দিল্লি ১১০০০৩ |
সংস্থা নির্বাহী |
|
অধিভূক্ত সংস্থা |
|
ওয়েবসাইট | bsf.nic.in |
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর ১৮৬টি ব্যাটেলিয়নে মোট ২৪০,০০০ জওয়ান কর্মরত রয়েছেন। এর মধ্যে মহিলা ব্যাটেলিয়নও বিদ্যমান।[১][২]
ইতিহাস
সম্পাদনাভারতীয় প্রজাতন্ত্র এমনই একটি যুক্তরাষ্ট্র যেখানে কেন্দ্রীয় সরকার নামে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ও রাজ্যের সরকার একযোগে রাজনৈতিক ক্ষমতা ভোগ করেন। সেই কারণে ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত প্রতিটি সীমান্তবর্তী রাজ্যের স্থানীয় সশস্ত্র পুলিশ ব্যাটেলিয়নই ভারতের আন্তর্জাতিক সীমান্ত পাহারার কাজে নিযুক্ত থাকত। তাদের মধ্যে পারস্পরিক সংযোগের অত্যন্ত অভাব ছিল।১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের মূল কারণ হিসেবে তৎকালীন সীমান্ত প্রহরা ব্যবস্থাকেই দায়ী করে একটি সুসংহত কেন্দ্রীয় সংস্থা হিসেবে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স স্থাপিত হয়। এই সংস্থার নির্দিষ্ট কাজ হয় ভারতের আন্তর্জাতিক সীমান্ত পাহারা দেওয়া। ১৯৭১ সালের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে যেসব অঞ্চলে ভারতের সামরিক বাহিনী পূর্ণশক্তিতে উপস্থিত থাকতে পারেনি সেইসব অঞ্চলে বিএসএফ-এর আধাসামরিক দক্ষতাকে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে কাজে লাগানো হয়; এমনকি লঙ্গেওয়ালার যুদ্ধেও বিএসএফ অংশগ্রহণ করে।প্রথমদিকে কেবলমাত্র ভারতের বহিঃসীমান্ত রক্ষার কাজে নিযুক্ত থাকলেও সাম্প্রতিক কালে রাষ্ট্রদ্রোহ বা সন্ত্রাসবাদবিরোধী অপারেশনের সময় ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সহায়তা করার দায়িত্বও বিএসএফ-এর উপর বর্তানো হয়েছে। ১৯৮৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীরে রাষ্ট্রদ্রোহমূলক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ এবং অল্পসংখ্যক সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ) ঘনায়মান হিংসাকে নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে সংগ্রাম করতে থাকে; তখন ভারত সরকার জম্মু ও কাশ্মীরে ইসলামি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রেরণ করেন। রাষ্ট্রদ্রোহীদের হানায় প্রথমদিকে বিএসএফ-কে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে হলেও পরবর্তীকালে তারা উল্লেখনীয় সাফল্য অর্জন করে। একটি গোয়েন্দা সংস্থা স্থাপন করে স্থানীয় নাগরিকদের সহায়তায় তারা জঙ্গি নেতাদের গ্রেফতার করে।২০০৩ সালের অগস্ট মাসে জৈস-ই-মহম্মদের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ডার তথা ২০০১ সালের ভারতীয় সংসদ জঙ্গিহানার মূল পরিকল্পনাকারী গাজি বাবাকে হত্যা করে বিএসএফ। শ্রীনগরে গাজি বাবার আড্ডায় বিএসএফ অতর্কিতে হানা দেয় এবং এক গুলিযুদ্ধের পর তিনি নিহত হন।সন্ত্রাসবাদবিরোধী ভূমিকায় বিএসএফ-এর সাফল্য সত্ত্বেও সরকারে কেউ কেউ মনে করেন এই বাড়তি দায়িত্ব সংস্থার প্রধান অধ্যাদেশের অংশ হয়ে পড়ছে। ফলে দেশের সীমান্তরক্ষার যে প্রাথমিক দায়িত্ব তাদের উপর অর্পিত হয়েছিল তার ক্ষতি হচ্ছে। ভারত সরকার বর্তমানে প্রতিটি সিকিউরিটি এজেন্সিকে তার অধ্যাদেশের অন্তর্ভুক্ত না করার প্রস্তাব রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাই জম্মু ও কাশ্মীরে নিযুক্ত ১৬ ব্যাটেলিয়ন বিএসএফ জওয়ানদের রাষ্ট্রদ্রোহবিরোধী অপারেশনের দায়িত্ব থেকে ধীরে ধীরে অব্যাহতি দিয়ে তাদের সীমান্তরক্ষার কাজে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে সন্ত্রাসবাদবিরোধী অপারেশনের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কয়েকটি সিআরপিএফ ইউনিট।বিএসএফ-এর বর্তমান ডিরেক্টর জেনারেল এম এল কুমাওয়াত ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসের আধিকারিক। তিনি অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা।
অস্র উপকরণ
সম্পাদনাবিমান
সম্পাদনাAircraft | Photo | Origin | Role | Version | Number | Comment |
---|---|---|---|---|---|---|
Fixed-wing aircraft (5) | ||||||
Hawker Siddeley HS 748 | যুক্তরাজ্য ভারত |
Tactical transport | HS 748-100 | 2 | As of 2009.[৩] | |
Beechcraft Super King Air | যুক্তরাষ্ট্র | Utility aircraft | B200 | 1 | crashed in December 2015 | |
Embraer 135 | ব্রাজিল | VIP transport | Embraer-135 J | 2 | As of 2009.[৪] | |
Helicopters (16) | ||||||
HAL Dhruv | ভারত | Utility helicopter | 8 | As of 2009.[৩] | ||
Mi-17 | সোভিয়েত ইউনিয়ন রাশিয়া |
Transport helicopter | Mi-17 Mi-17V5 |
6 2 |
As of 2009.[৩] As of 2014.[৫] |
সমালোচনা
সম্পাদনা২০০৮ সালের অগস্ট মাসে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে বিএসএফ অফিসারেরা জানিয়েছিলেন পূর্ববর্তী ছয় মাসে সীমান্ত-অনুপ্রবেশের চেষ্টা করতে গিয়ে মোট ৫৯ জন তাদের হাতে নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৩৪ জন বাংলাদেশী, ২১ জন ভারতীয় ও বাকিদের পরিচয় জানা যায়নি।[৬]
গণ মাধ্যমে হতাহতের সংবাদ
সম্পাদনা- কুড়িগ্রাম ভূরুঙ্গামারী ভোটহাট সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আব্দুল শেখ (৫০) নামে বাংলাদেশি এক গরুর ব্যবসায়ী গুরুতর আহত হন। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভারতের কুচবিহার জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। [৭]
- পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার আমজুয়ানী ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের মদনবাড়ী-শুকানী বর্ডারে বিএসএফের গুলিতে সুজন আলী (২৫) নামের এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন।[৮]
- লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের জালঙ্গি সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে এক বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন। নিহত মোহাম্মদ আলী (৩৬) উপজেলার কিসামত নির্মজা গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে। [৯]
- পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর ইনিয়নের আমজুয়ানী গ্রামের যুবক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন (৪০) ভারতীয় সিমান্তরক্ষী বাহিনের গুলিতে নিহত হয়েছেন। [১০]
- সিলেটের বিছনাকান্দি সীমান্তে বাংলাদেশি যুবক জামাল উদ্দিনের মৃত্যু হয় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে। [১১]
- ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে বাংলাদেশি এক গরু ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তির নাম বদির হোসেন (৪৫)। তার বাড়ি জেলার রানীশংকৈল উপজেলার কালিগাঁও গ্রামে। [১২]
- দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার ভাইগড় সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ‘গুলিতে’ অকিম উদ্দিন (২০) নামে একজন গরু ব্যবসায়ী নিহত হন। অকিমের এক স্বজন অভিযোগ করেছেন, বিএসএফ সদস্যরা অকিমকে রাইফেলের বাঁট দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন। পরে ঘটনা ধামাচাপা দিতে গুলি করা হয়। [১৩]
- পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় ভুতিপুকুর সীমান্ত বর্ডার এলকা সাঁও নদীতে স্বপন (৩০) নামে এক পাথর শ্রমিক বিএসএফ এর গুলিতে নিহত।[১৪]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ http://www.globalsecurity.org/military/world/india/bsf.htm Global Security
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুলাই ২০১০।
- ↑ ক খ গ ঘ S. Anandan (১২ এপ্রিল ২০০৯)। "BSF buys 8 Dhruv helicopters"। The Hindu। ১৯ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৪।
- ↑ Chethan Kumar (৯ জানুয়ারি ২০১৫)। "IAF gets first overhauled Su-30 MKI"। The Times of India। ১০ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জানুয়ারি ২০১৫।
- ↑ "Two new Mi-17 helicopters to bolster BSF air wing"। Zee News। ২৯ জুলাই ২০১৪। ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৪।
- ↑ India says 59 killed over last six months on Bangladesh border ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে, Reuters, August 24, 2008.
- ↑ http://archive.prothom-alo.com/detail/date/2010-07-09/news/33174[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], "বিএসএফের গুলিতে", নিজস্ব প্রতিবেদক, কুড়িগ্রাম | তারিখ: ০৭-০১-২০১০
- ↑ "তেঁতুলিয়ায় বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত"। banglanews24.com। ২০২৩-০৭-০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-০৫।
- ↑ http://archive.prothom-alo.com/detail/date/2010-07-09/news/19059[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], "বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত", পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি | তারিখ: ১৩-১১-২০০৯
- ↑ "পঞ্চগড়ে বিএসএফের গু *লি*তে বাংলাদেশি নি*হ*ত"। একাত্তর। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-০৬।
- ↑ http://archive.prothom-alo.com/detail/date/2010-07-09/news/63281[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], "পতাকা বৈঠকে দুঃখ প্রকাশ: বিছনাকান্দি সীমান্তে সেই যুবকের মৃত্যু হয় বিএসএফের গুলিতে", নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট | তারিখ: ১৪-০৫-২০১০
- ↑ http://archive.prothom-alo.com/detail/date/2010-07-09/news/13417[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], "ঠাকুরগাঁও সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত", ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি | তারিখ: ১৯-১০-২০০৯
- ↑ http://archive.prothom-alo.com/detail/date/2010-07-11/news/77682[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], "স্বজনের দাবি পিটিয়ে হত্যা, দেড় বছরে নিহত ১১: দিনাজপুর সীমান্তে বিএসএফের ‘গুলিতে’ বাংলাদেশি নিহত", দিনাজপুর অফিস | তারিখ: ১১-০৭-২০১০
- ↑ Somoy tv News। "বিএসএফের গুলিতে পঞ্চগড়ে পাথর শ্রমিক নিহত"। Archived from the original on ২০২৩-০৫-২২। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-২২।