অরুন্ধতী রায়

ভারতীয় ঔপন্যাসিক
(Arundhati Roy থেকে পুনর্নির্দেশিত)

সুজানা অরুন্ধতী রায় (জন্ম ২৪ নভেম্বর ১৯৫৯) একজন ভারতীয় ঔপন্যাসিক এবং রাজনৈতিক সক্রিয়তাবাদী। তিনি তার উপন্যাস দ্য গড অব স্মল থিংসের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাসটির জন্য ১৯৯৭ সালের ম্যান বুকার পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও তিনি পরিবেশগত সংশ্লিষ্টতা এবং মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়েও জড়িত রয়েছেন।

অরুন্ধতী রায়
জন্ম (1959-11-24) ২৪ নভেম্বর ১৯৫৯ (বয়স ৬৫)
শিলং, মেঘালয়, ভারত
পেশাঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, আন্দোলনকারী
জাতীয়তাভারতীয়
সময়কাল১৯৯৭-বর্তমান
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিদ্য গড অব স্মল থিংস
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারম্যান বুকার পুরস্কার (১৯৯৭)
সিডনি শান্তি পুরস্কার (২০০৪)

স্বাক্ষর

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

অরুন্ধতী রায় ১৯৫৯ সালের ২৪ নভেম্বর ভারতের আসাম রাজ্যের শিলংয়ে অরুন্ধতী জন্মগ্রহণ করেন।[] তার পিতার নাম রঞ্জিত রায় এবং মাতার নাম সিরিয়ান খ্রিস্টান ম্যারি রায়। ম্যারি রায়ও একজন নারী অধিকার কর্মী ছিলেন। তিনি কেরালার আয়মানাম এলাকায় শৈশবকাল কাটান। কত্তায়ামের কর্পাস ক্রিস্টি বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। এরপর তামিলনাড়ুর নীলগিরিতে লরেন্স বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। স্থাপত্যবিদ্যা বিষয়ে দিল্লির পরিকল্পনা ও স্থাপত্য বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। সেখানেই তিনি তার প্রথম স্বামী স্থাপত্যবিশারদ গেরার্ড দ্য কুনহা'র সাথে পরিচিত হন।

প্রারম্ভিক কর্মজীবন: চিত্রনাট্য

সম্পাদনা

অরুন্ধুতী তার কর্মজীবনের প্রথম দিকে, টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রের জন্য কাজ করেছেন। তিনি ইলেকট্রিক মুন (১৯৯২) এবং ইন হুইচ অ্যানি গিভস ইট দোস ওয়ান্স (১৯৮৯) -এর জন্য চিত্রনাট্য লিখেছিলেন। শেষেরটি স্থাপত্যবিদ্যার ছাত্রী হিসাবে তার অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে একটি চলচ্চিত্র, যেখানে তিনি একজন অভিনেত্রী হিসেবেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। [] চলচিত্রদ্বয় তার বৈবাহিক জীবন চলাকালীন, তার স্বামী প্রদীপ কৃশেন দ্বারা পরিচালিত। ১৯৮৮ সালে অরুন্ধতী ইন হুইচ অ্যানি গিভস ইট দোস ওয়ান্স এর জন্য শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য হিসাবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।[] তিনি ১৯৯৪ সালে সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেন, যখন তিনি ফুলন দেবীর জীবনের উপর ভিত্তি করে নির্মিত শেখর কাপুরের চলচ্চিত্র, ব্যান্ডিট কুইন, এর সমালোচনা করেছিলেন। [] তার চলচ্চিত্রের পর্যালোচনাতে "দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান রেপ ট্রিক" শিরোনামে, তিনি "অনুমতি ব্যতিরেকে একজন জীবিত নারীর, ধর্ষণকে ভিন্নভাবে জনসমক্ষে উপস্থাপন করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন", এবং ফুলন দেবীকে কাজে লাগিয়ে তার জীবন ও জীবনের অর্থ, উভয়কে মিথ্যা বর্ণনা করা নিয়ে শেখর কাপুরকে অভিযুক্ত করেন।[][][]

দ্য গড অব স্মল থিংগস

সম্পাদনা

অরুন্ধতী তার প্রথম উপন্যাস "দ্য গড অব স্মল থিংস" ১৯৯২ সালে লিখতে শুরু করেন, যা ১৯৯৬ সালে শেষ হয়। [] বইটি আধা-আত্মজীবনীমূলক এবং একটি প্রধান অংশ আয়ামানামে তার শৈশবের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। []

দ্য গড অব স্মল থিংগস রায়কে আন্তর্জাতিক খ্যাতির শিখরে পৌছে দেয়। বইটি ১৯৯৭ বুকার পুরস্কার পায় এবং ১৯৯৭ এর জন্য নিউ ইয়র্ক টাইমস উল্লেখযোগ্য বইগুলির একটি হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়। [] এটি মৌলিক কথাসাহিত্যের জন্য নিউইয়র্ক টাইমসের বাইশেলস্টেরার তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে পৌঁছেছে। [] শুরু থেকেই, বইটি বাণিজ্যিক সাফল্যও লাভ করেছিল: অরুন্ধতী অর্ধ মিলিয়ন পাউন্ড অগ্রিম হিসাবে পেয়েছিলেন। [] এটি মে মাসে প্রকাশিত হয়েছিল এবং জুন মাসের শেষের দিক অবধি এই বইটি ১৮ টি দেশে বিক্রি হয়েছিল। []

দ্য গড অব স্মল থিংস, আমেরিকান মুখ্য সংবাদপত্রগুলিতে অগ্রণী পর্যালোচনা পায় যেমন দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস (একটি "চকচকে প্রথম উপন্যাস," [16] "অসাধারণ", "প্রাথমিকস্তরে নৈতিকভাবে তেজঃপূর্ণ এবং কল্পনামূলকভাবে এত নমনীয়" [১০]) এবং লস এঞ্জেলেস টাইমস ("কাঁটার মত খোঁচা দেওয়া এবং গুরুত্বপূর্ণ বেগময় উপন্যাস"[১১]) এবং কানাডার প্রকাশনা যেমন টরন্টো স্টার ("একটি সতেজ, ঐন্দ্রজালিক উপন্যাস" [১২])। বছরের শেষের দিকে এটি টাইম দ্বারা ১৯৯৭ এর পাঁচটি সেরা বইগুলির মধ্যে একটি গণ্য হয়।[১৩] যুক্তরাজ্যের সমালোচনামূলক প্রতিক্রিয়া ছিল কম ইতিবাচক, এবং বুকার পুরস্কার দেওয়ায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়; কারমেন কলিল, ১৯৯৬এর একটি বুকার প্রাইজ বিচারক, উপন্যাসটি "জঘন্য" নামে অভিহিত করেন, এবং দ্য গার্ডিয়ান প্রসঙ্গটি "গভীরভাবে বিষণ্ণজনক" বলে উল্লেখ করে। [১৪] ভারতে, বইটি সমালোচিত হয় বিশেষ করে অরুন্ধতীর গৃহ রাজ্য কেরালার মুখ্যমন্ত্রী, ই.কে.নয়ান কর্তৃক যৌনতার অসংযত বিবরণ জন্য,[১৫] যেখানে তাকে অশ্লীলতার অভিযোগের উত্তর দিতে হয়।[১৬]

পুরস্কার

সম্পাদনা

দ্য গড অব স্মল থিংস উপন্যাসের জন্যে ১৯৯৭ সালে বুকার পুরস্কার লাভ করেন অরুন্ধতী। এ পুরস্কারের অর্থ মূল্য ছিল $৩০,০০০।[১৭] পুরস্কার প্রদান উৎসবে আয়োজক কমিটি উল্লেখ করেন, 'বইটিতে সকল বিষয়াবলি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যা ইতোমধ্যেই সৃষ্ট হয়েছে'।[১৮] এর পূর্বে তিনি 'ইন হুইচ এনি গিভস ইট দোজ ওয়ানসে'র জন্যে ১৯৮৯ সালে সেরা চিত্রনাট্যকার হিসেবে ন্যাশনাল ফিল্ম এ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন।[১৯]

২০০২ সালে তিনি লান্নান ফাউন্ডেশনের 'সাংস্কৃতিক মুক্তি পুরস্কার' লাভ করেন। 'বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সরকার ও সংস্থাগুলো কর্তৃক সাধারণ নাগরিকগোষ্ঠীর উপর প্রভাব বিস্তার' শিরোনামীয় প্রবন্ধে তার জীবন উৎসর্গ এবং মুক্তি, ন্যায়বিচার ও সাংস্কৃতিক বৈষম্য দূরীকরণের বিষয়াবলি তুলে ধরা হয়েছিল।[২০]

ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন

সম্পাদনা

অরুন্ধতী রায় প্রথম গেরার্ড দ্য কুনহার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। পরবর্তীতে তাদের বিচ্ছেদ ঘটার পর ১৯৮৪ সালে দ্বিতীয়বারেরমত বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তার স্বামী প্রদীপ কৃষাণ নামের একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ১৯৮৫ সালে পুরস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র মাসি সাহিবে উপজাতীয় বালিকার চরিত্রে অভিনয় করেন। দ্য গড অব স্মল থিংসের সাফল্যের পূর্বে আর্থিক সচ্ছলতা আনয়ণে অনেকগুলো কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। তন্মধ্যে - দিল্লির পাঁচতারা হোটেলে এরোবিক্‌স ক্লাস পরিচালনা করা অন্যতম। অরুন্ধতী'র কাকাতো ভাই প্রণয় রায় টিভি মিডিয়া গ্রুপ এনডিটিভির প্রধান।[২১] বর্তমানে অরুন্ধতী রায় দিল্লিতে বসবাস করছেন।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Arundhati Roy, 1959 –"The South Asian Literary Recordings ProjectLibrary of Congress, New Delhi Office। ১৫ নভেম্বর ২০০২। ৪ এপ্রিল ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ এপ্রিল ২০০৯ 
  2. "Arundhati Roy, Author-Activist" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ নভেম্বর ২০১০ তারিখে, India Today. Retrieved 16 June 2013
  3. "36th National Film Awards (PDF)" (পিডিএফ)Directorate of Film Festivals। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ 
  4. The Great Indian Rape-Trick ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে @ SAWNET -The South Asian Women's NETwork. Retrieved 25 November 2011.
  5. "Arundhati Roy: A 'small hero'"BBC News। ৬ মার্চ ২০০২। 
  6. Ramesh, Randeep (১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৭)। "Live to tell"The Guardian। London। ৬ মে ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ এপ্রিল ২০০৯ 
  7. Roy, Amitabh (২০০৫)। The God of Small Things: A Novel of Social Commitment। Atlantic। পৃষ্ঠা 37–38। আইএসবিএন 978-81-269-0409-9 
  8. "Notable Books of the Year 1997"New York Times। ৭ ডিসেম্বর ১৯৯৭। ৯ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০০৭ 
  9. "Best Sellers Plus"New York Times। ২৫ জানুয়ারি ১৯৯৮। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০০৭ 
  10. Truax, Alice (২৫ মে ১৯৯৭)। "A Silver Thimble in Her Fist"The New York Times 
  11. Eder, Richard (১ জুন ১৯৯৭)। "As the world turns: rev. of The God of Small Things"Los Angeles Times। পৃষ্ঠা 2। ৪ জুন ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জানুয়ারি ২০১০ 
  12. Carey, Barbara (৭ জুন ১৯৯৭)। "A lush, magical novel of India"। Toronto Star। পৃষ্ঠা M.21। 
  13. "Books: The best of 1997"Time। ২৯ ডিসেম্বর ১৯৯৭। ২৫ আগস্ট ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জানুয়ারি ২০১০ 
  14. "The scene is set for the Booker battle"BBC News। ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জানুয়ারি ২০১০ 
  15. Kutty, N. Madhavan (৯ নভেম্বর ১৯৯৭)। "Comrade of Small Jokes"The Indian Express। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জানুয়ারি ২০১০ 
  16. Bumiller, Elisabeth (২৯ জুলাই ১৯৯৭)। "A Novelist Beginning with a Bang"New York Times। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জানুয়ারি ২০১০ 
  17. "Arundhati Roy interviewed by David Barsamian". The South Asian. September 2001.
  18. ""Previous winners – 1997". Booker Prize Foundation. Archived from the original on 27 January 2007. Retrieved 21 March 2007."। ২৭ জানুয়ারি ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০০৭ 
  19. In Which Annie Gives It Those Ones – Awards Internet Movie Database.
  20. ""2002 Lannan Cultural Freedom Prize awarded to Arundhati Roy". Lannan Foundation. Archived from the original on 6 February 2007. Retrieved 21 March 2007."। ৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ অক্টোবর ২০১২ 
  21. Rediff On The NeT: Mary Roy celebrates her daughter's victory.

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা
Interviews and speeches
পুরস্কার
পূর্বসূরী
গ্রাহাম সুইফট
ম্যান বুকার পুরস্কার‎ বিজয়ী
১৯৯৭
উত্তরসূরী
ইয়ান ম্যাকইউয়ান