৩৩৫ বছরের যুদ্ধটি (ওলন্দাজ ভাষায়: Driehonderdvijfendertigjarige Oorlog) হয়েছিল সংযুক্ত নেদারল্যান্ডসসিলি দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে।[] উভয় পক্ষের মধ্যে দীর্ঘ সময় শান্তি চুক্তি না হওয়ায় এই যুদ্ধটি বছরের পর বছর ধরে চলছিল। যদিও উভয় পক্ষ থেকে একটি গুলিও ছোঁড়া হয়নি ও একজন মানুষও আহত বা নিহত হয়নি।[][] এজন্য এই যুদ্ধকে রক্তপাতহীন যুদ্ধ ও পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[] অবশেষে ১৬৫১ সালে শুরু হওয়া এ যুদ্ধ, ১৯৮৬ সালে শান্তি চুক্তির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসান হয়।[][]

৩৩৫ বছরের যুদ্ধ

  সিলি দ্বীপপুঞ্জ
  সংযুক্ত নেদারল্যান্ডস
তারিখ৩০ মার্চ, ১৬৫১ – ১৭ এপ্রিল, ১৯৮৬
অবস্থান
ফলাফল অমীমাংসিত
বিবাদমান পক্ষ
সিলি দ্বীপপুঞ্জ ওলন্দাজ প্রজাতন্ত্র সংযুক্ত নেদারল্যান্ডস
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
স্যার জন গ্রেনভিল অ্যাডমিরাল মার্টেন হারপার্টজোন
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
না না

ইতিহাস

সম্পাদনা

১৬৪২ থেকে ১৬৫২ সাল পর্যন্ত চলা দ্বিতীয় ব্রিটিশ গৃহযুদ্ধের সময় সিলি দ্বীপপুঞ্জ থেকে রাজা চার্লসের অনুগত রয়ালিস্টিক বাহিনী পিছু হঠতে বাধ্য হয় এবং এই দ্বীপে পার্লামেন্টারিয়ানদের আধিপত্য বিস্তার হয়।

এদিকে পার্লামেন্টারিয়াদের দ্বারা সিলি দ্বীপপুঞ্জে সংযুক্ত নেদারল্যান্ডসের একটি নৌজাহাজ আক্রান্ত হয়। সেসময় ডাচরা ব্রিটিশদের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখে চলত কারণ রানী প্রথম এলিজাবেথের সময় তারা তাদের যুদ্ধে ইংরেজদের সাহায্য পেয়েছিল। গৃহযুদ্ধে যে পক্ষই জয় লাভ করবে তারা সে দলকেই সমর্থন দেবে এই নীতি বজায় রেখে চলত।

ডাচ নেভির জাহাজে আক্রমণের ফলে ডাচদের অনেক ক্ষতি হয় যার ফলে ৩০ মার্চ, ১৬৫১ সালে অ্যাডমিরাল মার্টেন হারপারর্টজোন ট্রুম্প সিলিতে আসেন এবং তার জাহাজের জন্য ক্ষতিপূরন দাবি করেন এবং কিন্তু ইংরেজদের পক্ষ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে তিনি সিলিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। তিনি শুধু সিলিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন কারণ তখন অধিকাংশ অঞ্চলই পার্লামেন্টারিয়ানদের দখলে চলে গিয়েছিল। ১৬৫১ সালের জুনে পার্লামেন্টারিয়ানরা রয়ালিস্টিক অ্যাডমিরাল রবার্ট ব্ল্যাককে অঅত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেন। সেসময় ডাচদের আশ্বাস দেওয়া হয় তারা এটার সমাধান করবে। এরপর ডাচরা যুদ্ধ সমাপ্ত না করেই চলে যায়।

শান্তিচুক্তি

সম্পাদনা

১৯৮৫ সালে সিলি দ্বীপপুঞ্জের কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও ইতিহাসবিদ “রয় ডানকান” লন্ডনে অবস্থিত নেদারল্যান্ডস দূতাবাসে একটি চিঠি লিখে এই যুদ্ধ সম্পর্কে যে ধারণা প্রচলিত তা অবসান করার আহ্বান জানান। দূতাবাসের কর্মকর্তারা যুদ্ধের খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন এই ধারণা সত্য এবং ডানকান শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করার জন্য ডাচ রাষ্ট্রদূত “রেইন হাইডিকপারকে” সিলিতে আমন্ত্রণ জানান। রাষ্ট্রদূত সিলিতে এসে ১৭ এপ্রিল, ১৯৮৬ সালে শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।[] এভাবে ৩৫৫ বছর পূর্বে শুরু হওয়া যুদ্ধের অবসান ঘটে। ডাচ দূত মজা করে বলেছিলেন, “সিলিয়ানবাসী সবসময় ভয়ে থাকতেন, আমরা যেকোন সময় তাদের আক্রমণ করতে পারি।”[][]

যথার্থতা

সম্পাদনা

বোউলি (২০০১) এক বিতর্কে বলেন, হুয়াটলক মেমোরিয়ালের চিঠিটিই সম্ভবত যুদ্ধ ঘোষণার এই কিংবদন্তি ছড়িয়েছিল।

“ট্রুম্পের, সরকারের পক্ষ থেকে যুদ্ধ ঘোষণার কোন অনুমতিই ছিল না। কিন্তু তিনি মনে হয় তার বাহিনীর ক্ষমতা প্রদর্শন, হুমকি অথবা বির্শঙ্খলা সৃষ্টি করে তাদের একটি বার্তা দিতে চেয়েছিলেন। যদিও এটা কখোনই সম্ভব নয়। এই ধরনের যে কোন কাজ কমনওয়েল্থ দ্বারা প্রতিহত করা হত। যদি যুদ্ধটি ১৬৫১ সালে শুরু হয়েও থাকে তাহলে তা ১৬৫৪ সালে সমাধান হয়ে যাওয়ার কথা করাণ প্রথম ডাচ যুদ্ধের পর যুক্তরাজ্যসংযুক্ত নেদারল্যান্ডসের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছিল।”

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
পদটীকা
  1. "Dutch Proclaim End of War Against Britain's Scilly Isles"nytimes.com। এপ্রিল ১৮, ১৯৮৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-০২ 
  2. "Islanders ends 335 years war with Hallend"The register Guard। ১৮ এপ্রিল ১৯৮৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-০২ 
  3. "World's Longest War Ended With No Loss Of Life"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-০২ 
  4. "How the world's third longest war ended"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-০২ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. "335 Year War"। ২০১৩-০৫-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-০২ 
  6. "Sicelly, Duch says as 335 years war ends"The Montreal Gazette। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-০২ 
  7. Britain: Peace In Our Time ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ আগস্ট ২০১৩ তারিখে", Time, 28 April 1986.
গ্রন্থপঞ্জি

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা