২০১৯ বান্দিপুর দাবানল
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের বান্দিপুর জাতীয় উদ্যান জুড়ে অসংখ্য জায়গায় বন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ভারতীয় স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ইসরো) এর জাতীয় রিমোট সেন্সিং সেন্টার আগুনে আক্রান্ত মোট এলাকাটির একটি মূল্যায়ন করে। ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত শেষ পাঁচ দিনে পোড়া জায়গাটির পরিমাণ প্রায় ১০,৯২০ একর হবে বলে অনুমান করা হয়েছে। [২][৩][৪]
২০১৯ বদ্রিপুর দাবানল | |
---|---|
অবস্থান | চামররাজানগর জেলা, কর্ণাটক, ভারত |
স্থানাঙ্ক | ১১°৩৯′৪২″ উত্তর ৭৬°৩৭′৩৮″ পূর্ব / ১১.৬৬১৬৭° উত্তর ৭৬.৬২৭২২° পূর্ব |
পরিসংখ্যান | |
তারিখ | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯[১] | – ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
অগ্নিদগ্ধ এলাকা | ৪,৪১৯.৫৪ হেক্টর (১০,৯২০.৯ একর)[১] |
কারণ | নাশকতার ঘটনা |
হতাহত | বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ |
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ এর মধ্যে বড় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হলেও কিছু অঞ্চল তখনও জ্বলতে থাকে। আগুনটি তামিলনাড়ুর মুদুমালাই বন এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রায় ৪০ একর জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তামিলনাড়ু বন বিভাগ আগুন যাতে আরও ছড়িয়ে না যায় সেজন্য ব্যবস্থা নিয়েছিল। [৩][৫]
পটভূমি
সম্পাদনা২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, বান্দিপুর টাইগার রিজার্ভে দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। পূর্ববর্তী বছরগুলির মতো নয়, হঠাৎ জলবায়ু পরিবর্তন এবং শুকনো ঘাস ও ল্যান্টানার দ্রুত বর্ধনের কারণে এই প্রথম বান্দিপুরে দাবানল শুরু হয়। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে পার্কে বাইসন, হাতি, চিতাবাঘ এবং বাঘের মতো বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীর মৃত্যু হয়নি বলে মনে হয়েছে। [৬]
বান্দিপুর অঞ্চলে ১০,০০০ একরেরও বেশি বন ধ্বংস হয়েছিল। আগুন বাতাসের কারণে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কর্তৃপক্ষ গুন্দলুপেত - উটি জাতীয় সড়ক বন্ধ এবং বান্দিপুর জাতীয় উদ্যানের সাফারি বাতিল করে। প্রবল বাতাস দমকল বাহিনী, বন কর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবীদের কাজকে আরও কঠিন করে তুলেছিল। [৭]
আগুন কুণ্ডকেরে রেঞ্জ ধ্বংস করেছিল, বড়কট্টে ও গুদ্দাকেরে অঞ্চলে ছড়িয়ে, পরে হিমাবতী গোপালস্বামী পাহাড়ে পৌছে যায়। এটি জারকাল কেরে এবং গৌরি কালু পাহাড়ের বন ধ্বংস করেছে। আগুনে পুড়ে হাজার হাজার গাছ সহ অনেক ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীরা এবং সরীসৃপ মারা গিয়েছিল। আগের দু'বছরে বান্দিপুর জাতীয় উদ্যানে বন-অগ্নিকান্ডের কোনও ঘটনা নজরে আসে নি। [৭]
অগ্নিকাণ্ড-নির্বাপণ
সম্পাদনা২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ বিকেলে দুটি এমআই ১৭ ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছিল। বান্ধিপুর টাইগার রিজার্ভে তিন দিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করে। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ এ অপারেশনটি মূলত কর্ণাটকের চামারজনগর জেলার গোপালস্বামী পাহাড়ের সীমাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। অন্য দুটি রেঞ্জ কুন্ডাকেরে এবং বান্দিপুর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। [৮] কর্ণাটক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এইচডি কুমারস্বামী ভারতীয় বিমান বাহিনীকে সাহায্যের জন্য অনুরোধ করার পরে এই হেলিকপ্টারগুলি মোতায়েন করা হয়েছিল। [৯] একটি হেলিকপ্টার করদিকাল পাহাড়ের সীমা পর্যন্ত এগিয়ে গিয়েছিল এবং অন্যটি চামানা হাল্লার শীর্ষের সাধারণ এলাকায় আগুন নির্বাপণে কাজ করে।
বোলাগুদ্দা এবং ক্যানিভ মন্দির অঞ্চল হেলিকপ্টার অগ্নি-নির্বাপণের অধীনে ছিল [১০] হেলিকপ্টার দুটি মোট ১০ বার উড়ে উড়েছিল, প্রায় ৩০,০০০ লিটার পানি ছিটায়। [৮]
ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন
সম্পাদনাস্যাটেলাইট চিত্রগু দাবানলের কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেখিয়েছে। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) জাতীয় রিমোট সেন্সিং সেন্টার, হায়দরাবাদ, সেন্টিনেল -২ উপগ্রহের তথ্যের ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। জানিয়েছে যে বান্দিপুরে ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ এর মধ্যে ১৫,৪৪.২৭ একর বন এলাকা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রকৃতি সংরক্ষণ ফাউন্ডেশনের বন্যজীবন বিজ্ঞানী ময়ূর দোরস্বামী মধুসূদন অনুমান করেছিলেন যে, জাতীয় রিমোট সেন্সিং সেন্টারটি বন্দিপুরের (রাজস্ব জমি) প্রশাসনিক অংশের ক্ষতি বাদ দেয়ার কারণে মোট এলাকার পরিমাণ ১ ১৭,০০০ একর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। [১১]
আগুনের কারণে হতাহতের সংখ্যা এখনও অনুমান করা যায়নি। বন্যজীবনের আধিকারিকরা বলছেন যে ছোট প্রাণী, সরীসৃপ, যা ধীর গতিতে চলতে থাকে তারাই বেশি মারা গেছে। চিতা ও বাঘের মতো বড় স্তন্যপায়ী প্রাণীরা বান্দিপুর টাইগার রিজার্ভ ও আশেপাশের অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছিল। [১১]
তদন্ত
সম্পাদনাকর্ণাটকের শীর্ষ বন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে "নাশকতার ঘটনা" আগুনের কারণ ছিল। [১২] বন কর্মকর্তারা বনে আগুন দেওয়ার অভিযোগে দুই রাখালকে গ্রেপ্তার করে। বাঘটিকে এক মাস বা তারও বেশি সময় ধরে এই অঞ্চলে দেখা গিয়েছিল। বান্দিপুরে তাদের গবাদি পশুদের উপর বাঘের আক্রমণের আশঙ্কায়, ২০১৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তারা এই বাঘটিকে তাড়াতে আগুন লাগিয়েছিলো। তাতে আগুন লেগে দাবানলের সৃষ্টি হয়। ফলে হাজার হাজার একর বান্দিপুর বন এলাকা ধ্বংস হয়ে যায়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বন্যজীবন সংরক্ষণ আইন, ১৯৭২ এর ২৭, ২৯, ৩০, ৩১, ৫০ এবং ৫১ ধারায় মামলা করা হয়েছিল। [১৩][১৪]
চিত্র
সম্পাদনা-
Forest fire spreading across the forest region due to dry grass
-
Smoke coming out of Bandipur Forest area in February 2019
-
Burnt Region of Bandipur Forest in February 2019
-
Massive Bandipur forest fires burning across GS hills region
-
Bandipr Forest Fire satellite image taken by NASA's VIIRS sensor
-
Large smoke can be seen from distance due Bandipur forest fire
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "CM's aerial survey of Bandipur today"। Deccan Herald। ২৭ ফেব্রু ২০১৯।
- ↑ "Core areas of Bandipur hit by forest fire, say experts"। Hindustan Times। ২৬ ফেব্রু ২০১৯।
- ↑ ক খ "Wildfire destroys over 10,000 acres of Bandipur forest"। The Indian Express। ২৫ ফেব্রু ২০১৯।
- ↑ "Estimates of Bandipur fire damage vary"। The Hindu। ২৫ ফেব্রু ২০১৯।
- ↑ "Bandipur forest fire stoked by bureaucratic friction, inaction"। Hindustan Times। ২৫ ফেব্রু ২০১৯।
- ↑ "Karnataka Continues To Battle Wildfire In Bandipur Forest Area"। NDTV। ২৫ ফেব্রু ২০১৯।
- ↑ ক খ "Fire turns 2,500 acres of Bandipur forest to ashes"। The Indian Express। ২৪ ফেব্রু ২০১৯।
- ↑ ক খ "Bandipur fire: IAF helicopters pressed into service"। All India Radio। ২৫ ফেব্রু ২০১৯। ৪ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০২০।
- ↑ "Bandipur forest fire: IAF to help Karnataka govt douse fire in Bandipur Tiger Reserve"। Times Now। ২৫ ফেব্রু ২০১৯।
- ↑ "Bandipur fire: Air Force choppers join efforts to douse blaze at tiger reserve"। Scroll। ২৫ ফেব্রু ২০১৯।
- ↑ ক খ "When Bandipur burned"। The Hindu। ৯ মার্চ ২০১৯।
- ↑ "karnataka: Bandipur fire doused, forest official confirm'act of sabotage'"। Times Of India। ২৫ ফেব্রু ২০১৯।
- ↑ "Bandipur blaze: Two shepherds arrested"। Bangalore Mirror। ৩ মার্চ ২০১৯।
- ↑ "The Massive Wildfire That Burnt Down Bandipur Tiger Reserve Was Ignited By Shepherds To Keep Tigers Away"। Indiatimes। ৩ মার্চ ২০১৯।