১৯৭৪ রমনা হত্যাকাণ্ড
১৯৭৪ রমনা গণহত্যা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সমর্থকদের ওপর ১৯৭৪ সালের ১৭ই মার্চ পরিচালিত একটি গণহত্যা। সেদিন জাসদের আন্দোলনকারী কর্মীরা ঢাকার রমনা এলাকায় অবস্থিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুহাম্মদ মনসুর আলীর বাসভবন ঘেরাও করলে জাতীয় রক্ষীবাহিনীর সদস্যরা তাদের ওপরে গুলিবর্ষণ করে, যার ফলে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে।[১] এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় অন্তত ৫০ জন নিহত হয়।[২]
পটভূমি
সম্পাদনা১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে এবং নব্য স্বাধীনতা দেশ কীভাবে পরিচালিত হবে তা নিয়ে একটি মতাদর্শগত দ্বন্দের সূত্রপাত হয়। তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেত্রীবৃন্দ গণতন্ত্রকে প্রথম পছন্দ হিসেবে বিবেচনা করলেও আ স ম আবদুর রব এবং শাহজাহান সিরাজের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার বিরোধিতা করে। ছাত্রলীগের এই অংশটি মূলত সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম খানের অনুসারী ছিল। তারা পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ বিরোধী একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন, যার লক্ষ্য ছিল সমাজতন্ত্রের একটি ধারা প্রতিষ্ঠা করা, যেটিকে তারা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র হিসেবে অভিহিত করতেন।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল গঠনের পরপরই জাসদ নেতাকর্মীরা শেখ মুজিবুর রহমানের জাতীয় রক্ষীবাহিনীর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। সেসময়ে জাতীয় রক্ষীবাহিনীর সদস্যরা বিরোধী রাজনীতিবিদদের বাড়িতে হামলা, লুণ্ঠন, নির্যাতন, হত্যা, বিরোধী মতাদর্শীদের গুম করা সহ বহু বেআইনি কাজে যুক্ত থাকার ব্যাপারে অভিযুক্ত ছিলেন।
ঘোষণা
সম্পাদনাদুর্নীতি, ত্রাণ সামগ্রীর অপব্যবহার, বিপণনকারীদের দ্বারা প্রয়োজনীয় পণ্য মজুদ এবং ভারতে খাদ্যশস্য চোরাচালানের কারণে ১৯৭৪ সালের প্রথম দিকে মুদ্রাস্ফীতি হয়েছিল। উপরন্তু, জাতীয় রক্ষী বাহিনী এই প্রতিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ভাবে নেমে আসে। জাসদ ২৯ দফা উপস্থাপন করে এবং ১৯৭৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ত্রাণ সামগ্রী ও খাদ্যশস্য বিতরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারি স্থাপনাগুলো কে ঘিরে ফেলার ঘোষণা দেয়। বিবৃতিতে বলা হয়,
আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে ক্ষমতায় ২৫ মাস অতিবাহিত করেছে। সীমাহীন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ফ্যাসিবাদ, বেসামরিক নাগরিকদের নির্যাতন এবং পুঁজিবাদীদের নিকৃষ্ট শাসনের কারণে
একদিকে মুজিব সরকার, অন্যদিকে অন্য জাতির দাসত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মানুষের জীবন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
এ ধরনের পরিস্থিতি অনির্দিষ্টকালের জন্য বিরাজ করতে দেওয়া উচিত নয়। অতএব, নিপীড়ক এবং নিপীড়িতদের মধ্যে কে বেঁচে থাকবে তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে।
দেশের মানুষ মনে করে, ১৯৭৪ সালের ১৫ মার্চের মধ্যে জনগণের দাবি পূরণে সরকার যথেষ্ট সময় পাবে। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি বিষয়টি গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করার জন্য।
আর সরকার যদি দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়, তাহলে আমরা সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে নিম্নোক্ত কর্মসূচিতে যাব।
- জেলা প্রশাসক, উপ-বিভাগীয় প্রশাসক ও সার্কেল অফিসারদের অফিস অবরুদ্ধ থাকবে।
- কারাগারগুলো কে ঘিরে থাকবে মানুষ
- ধনী কৃষকদের বাড়িগুলি মানুষ দ্বারা বেষ্টিত করা হবে
- জনগণ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের ঘিরে ফেলবে।
- ত্রাণ কমিটির চেয়ারম্যানদের ঘিরে থাকবে জনগণ।
- লাইসেন্সধারী, কালোবাজারি এবং দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের ঘিরে রাখা হবে।
- সরকারি জমির দখলদারদের ঘিরে রাখা হবে মানুষ
- ব্যক্তিগত বাড়ি ও পরিত্যক্ত সম্পত্তির দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে।
- সস্তায় খাদ্যশস্য বিতরণ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
- ট্রেড কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের কার্যালয়, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কেন্দ্র এবং অন্যান্য সরকারি অফিস জনগণ দ্বারা বেষ্টিত থাকবে।
- এই মুহুর্তে রাষ্ট্রপতি প্রাসাদ, সচিবালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন জনসাধারণ দ্বারা অবরুদ্ধ থাকবে।
- আন্দোলনের সফলতার সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত কর্মসূচি পালন করা হবে।
ঘোষণাপত্রে আওয়ামী লীগ সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বা ১৭ মার্চ ভয়াবহ পরিণতি মোকাবেলার জন্য প্রায় এক মাস সময় দেওয়া হয়।
১৭ই মার্চ
সম্পাদনাগত ১৭ মার্চ আল্টিমেটামের সময়সীমা নির্ধারণে জাসদের ডাকা জনসভা ডাকায় রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকার জাসদের সমর্থক ও ক্ষুব্ধ জনতা জড়ো হতে শুরু করে।[৩] তারা সরকার বিরোধী লিফলেটও বিতরণ করে।[১]
মিছিলটি সূর্যাস্তের আগেই শেষ হওয়ার কথা ছিল এবং পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মনসুর আলীর বাসভবনের দিকে যাত্রা করে কিছু ক্ষনের জন্য বাড়িটি ঘিরে রাখার পরে একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু সভা শুরু হওয়ার পর আ স ম আবদুর রব, মোহাম্মদ আবদুল জলিলসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের বক্তব্যে তা উত্তেজিত হতে শুরু করে। সভা শেষ হওয়ার পর রমনা এলাকার মিন্টো রোডের দিকে মিছিল শুরু করে জনতা, যেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবন অবস্থিত। বাসভবনের গেটে পৌঁছানোর পর জনতা বাড়িটি ঘিরে ফেলে। উত্তেজিত একদল লোক গেট পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
সমাবেশটি ছত্রভঙ্গ করতে এবং অবরোধ বানচাল করতে পুলিশ জনতাকে অভিযুক্ত করে এবং পুলিশ এবং জাসদের লোকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। জনতার ওপর কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়তে শুরু করলে জাসদের লোকজন পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করে। কয়েক মিনিটের মধ্যে এলাকাটি রণক্ষেত্রে পরিণত হয় এবং জাতীয় রক্ষী বাহিনীকে ডাকা হয়।
মৃতের সংখ্যা
সম্পাদনাফলাফল
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "Rizvi now blasts Inu at press briefing"। The Daily Star। UNB। জুন ১৫, ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১১, ২০১৬।
- ↑ আহমেদ, মহিউদ্দিন, জাসদের উত্থান ও পতনঃ অস্থির সময়ের রাজনীতি, প্রথম প্রকাশ ২০১৫, পৃ. ১১১, প্রথমা প্রকাশনী, ঢাকা.
- ↑ Mascarenhas, Anthony (১৯৮৬)। Bangladesh: A Legacy of Blood। London: Hodder and Stoughton। পৃষ্ঠা 59। আইএসবিএন 978-0-340-39420-5।
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |