১৮৭২ এফএ কাপ ফাইনাল
১৮৭২ এফ.এ কাপ ফাইনাল ফুটবল ম্যাচটি ১৮৭২ সালের ১৬ মার্চ লন্ডনের কেনিংটন ওভাল মাঠে ওয়ান্ডারারস এবং রয়াল ইঞ্জিনিয়ারস এর মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। ফুটবল এসোসিয়েশন চ্যালেঞ্জ কাপ (বর্তমান এফএ কাপ) এর প্রথম আয়োজনের ফাইনাল ম্যাচ ছিল এটি। এফ.এ কাপ বর্তমানে ইংল্যান্ড এর প্রধান কাপ প্রতিযোগিতা এবং বিশ্বের সবচেয়ে পুরাতন ফুটবল প্রতিযোগিতা। প্রথম আসরে ১৫ টি দল অংশগ্রহণ করে এবং প্রতিযোগিতার বিভিন্ন নিয়মের কারণে ওয়ান্ডারেস চার টি রাউন্ডের মধ্যে মাত্র একটি ম্যাচ জিতে ফাইনালে পৌছে যায়। স্কটিস ক্লাব কুইন্স পার্ক এর সাথে সেমিফাইনালে তারা ড্র করে, কিন্তু স্কটিসরা ফিরতি ম্যাচ খেলার জন্য লন্ডনে পৌছতে না পারলে তারা প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পরে যায় এবং ওয়ান্ডারেস বিনা ম্যাচ খেলেই ফাইনালে পৌছে যায়।
প্রতিযোগিতা | ১৮৭১-৭২ এফ.এ কাপ | ||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
| |||||||
তারিখ | ১৬ মার্চ, ১৮৭২ | ||||||
রেফারি | আলফ্রেড স্টেয়ার (আপটন পার্ক) | ||||||
দর্শক সংখ্যা | ২,০০০ | ||||||
ফাইনাল ম্যাচটি একটি মাত্র গোলের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়। খেলার ১৫ মিনিটে ওয়ান্ডারাসের হয়ে মরটন বোটস গোলটি করে, যিনি প্রতিযোগিতার প্রথম দিকে চেকার ক্লাবের হয়ে ছদ্মনামে খেলে। ইঞ্জিনিয়ারস'রা তাদের অসাধারণ পাসিং ফুটবলের জন্য প্রশংসিত হয়, কিন্তু অধিকাংশ দল সে সময় ড্রিবলিং এর উপর বেশি জোড় দিতো। ইঞ্জিনিয়ারস'রা যদিও একটিও গোল করতে পারেনি। ওয়ান্ডারেস প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার পরবর্তী মাস পর্যন্ত ট্রফি পায় নি, পল মল রেস্টুরেন্টে বিশেষ অভ্যর্থনা দিয়ে তাদের ট্রফি দেয়া হয়।
ফাইনালে পৌছার পথ
সম্পাদনাউদ্বোধনী আসরে ১৫ টি দল অংশগ্রহণ করা যাদের মধ্যে ওয়ান্ডারেস এবং ইঞ্জিনিয়ারস ২ টি এবং তারা উভয়ই প্রথম রাউন্ডে ঘরের মাঠে খেলে।[১] হ্যারো চেকারস এর বিপক্ষে ওয়ান্ডেরাস এবং রেইগেট প্রাইওরি এর বিপক্ষে দ্যা ইঞ্জিনিয়ারস এর তাদের প্রথম ম্যাচ খেলার কথা ছিল। কিন্তু দুটি ম্যাচের একটিও অনুষ্ঠিত হয়নি। দল দুটিকেই প্রতিযোগিতা থেকে প্রত্যাহার করা হয় এবং ঘরের দল দুটি অনায়েসে পরের রাউন্ডে উঠে যায়।[১] পরের রাউন্ডে দুই দলেই ঘরের বাইরে খেলতে যায় এবং জয়লাভ করে। ডিসেম্বরে ক্যাফাম রোভারস কে ৩-১ গোলে ওয়ান্ডেরাস এবং পরের মাসে হিচিন কে ৫-০ গোলে দ্যা ইঞ্জিনিয়ারস পরাজিত করে।[১]
কোয়ার্টার ফাইনাল পর্বে ওয়ান্ডেরাস ০-০ গোলে ক্রিস্টাল প্যালেস (বর্তমান ক্রিস্টাল প্যালেস থেমে ভিন্ন) এর সাথে ড্র করে।[১] পুনরায় খেলাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও প্রতিযোগিতার নিয়ম অনুসারে (কোন ম্যাচ ড্র হলে পুনরায় ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে অথবা উভয় দল পরের রাউন্ডে যাবে) আয়োজক কমিটি দুই দলকেই পরের রাউন্ডে পাঠায়।[২] দ্যা ইঞ্জিনিয়ারস ২-০ গোলে হ্যাম্পস্টেড কে পরাজিত করে। সেমিফাইনালে স্কটিস ক্লাব কুইন্স পার্ক এর সাথে ওয়ান্ডেরাসের খেলা পরে। কুইন্স পার্ক ওয়াকওভার সিস্টেমের কারণে কোন ম্যাচ না খেলেই সেমিফাইনালে পৌছে।[১] প্রথমে ম্যাচটি ০-০ ড্র হলে ফিরতি ম্যাচ নিয়মানুযায়ী লন্ডনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু স্কটিস ক্লাবটি গ্লাসগো থেকে লন্ডন পর্যন্ত ট্রিপের খরচ যোগাতে না পারলে ওয়ান্ডারেস ওয়াকওভার পায় এবং ফাইনালে প্রবেশ করে।[৩] দ্যা ইঞ্জিনিয়ারস সেমিফাইনাল ম্যাচে ০-০ ড্র করে এবং ফিরতি ম্যাচে ৩-০ গোলে ক্রিস্টাল প্যালেস কে হারায়।[১]
ম্যাচ
সম্পাদনাসারাংশ
সম্পাদনাসে সময়কার যুগ অনুযায়ী উভয় দল ডিফেন্স ছেড়ে অ্যাটাকে বেশি ফোকাস করে। দ্যা ইঞ্জিনিয়ারস সাতজন এবং ওয়ান্ডেরাস আটজন ফরোয়ার্ড নিয়ে মাঠে নামে।[৪] ওয়ান্ডারেস ফরোয়ার্ড মরটন বেটস প্রতিযোগিতার প্রথমদিকে এ.এইচ চেকারের হয়ে ছদ্মনামে খেলে এবং পরবর্তীতে হ্যারো চেকার ক্লাব থেকে তার মেম্বারশীপ বাতিল করে।[৫] কিছু সূত্র থেকে জানা যায়, প্রতিযোগিতার প্রথম দিকে সে অন্য নামে খেলে যেন সে পরবর্তীতে আলাদা দলের হয়ে খেলতে পারে। অস্বাভাবিক হলেও এটা সত্য যে, আগেকার যুগে খেলোয়াড় দের ক্লাবগুলোর সাথে সেভাবে নিবন্ধিত হওয়ার প্রয়োজন ছিল না।[৬] ভবিষ্যত ইংল্যান্ড ক্যাপ্টেন কাথবার্ট ওটাওয়ে ১৮৭১-৭২ সিজনের এফ.এ কাপ সিজনে কোন আপত্তি ছাড়াই দুটি ভিন্ন ক্লাবে খেলে।[৭]
ওয়ান্ডারেস ক্যাপ্টেন সি.ডব্লিউ.এলকক কয়েন টস জিতে এবং হার্লেফোর্ড রোড প্বার্শ ডিফেন্ড করার জন্য বেছে নেয় যেন ইঞ্জিনিয়ারস এর খেলোয়াড় দের মুখে সূর্যের আলো পরে।[৪] খেলার শুরুতে রয়াল ইঞ্জিনিয়ারস এর এডমন্ড ক্রেসওয়েল ইঞ্জুরিতে পরে এবং মাঠ ছাড়ার নিয়ম না থাকায় ম্যাচের পরবর্তী সময় বেকার বসে থাকতে হয়।[৮] ওয়ান্ডেরাসের ট্যাকটিক্স ছিল ড্রিবলিং অপর দিকে ইঞ্জিনিয়ারস এর পছন্দ ছিল পাসিং।[৯]
ম্যাচ শুরুর ১৫ মিনিটের মধ্যেই ওয়ান্ডেরাস এগিয়ে যায়। রবার্ট ভিদালের অসাধারণ ড্রিবলিং এর পর বেশ বাঁকানো সটে গোল করে বেটস। তখনকার নিয়মানুযায়ী একটি গোল হলে প্বার্শ পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারসরা এই নিয়মের কোন ফায়দা তুলতে পারেনি কারণ ততক্ষনে সূর্য তাদের পিছনে চলে গিয়েছিল। ওয়ান্ডেরাসের খেলোয়াড় তখনও আধিপত্য বিস্তার করে খেলছিলো।[৮] ২০ মিনিট যাওয়ার পর ইঞ্জিনিয়ারস এর গোলকিপার উইলিয়াম ম্যারিম্যান কে কাটিয়ে গোল করে এলকক, কিন্তু চার্লস ওলাস্টন এর হ্যান্ডবল এর কারণে গোলটি বাতিল করা হয়।[৪] ওয়ান্ডেরাস নিয়মিত ইঞ্জিনিয়ারস এর গোলে আক্রমণ চালিয়ে যায়। শুধুমাত্র ম্যারিম্যান এর দক্ষতার কারণে তাদের গোলসংখ্যা আর বাড়েনি। পত্রিকায় তাঁর পারফরমেন্স কে "পারফেক্ট" আখ্যা দেয়া হয়।[১০] ওয়ান্ডেরাস তাদের লিড ধরে থাকে এবং ১-০ গোলে ম্যাচের নিষ্পত্তি ঘটে।[১১] দ্যা ফিল্ড পত্রিকা ফাইনাল ম্যাচটিকে ওভালের তখন পর্যন্ত সবচেয়ে দ্রুততম এবং কঠিনতম ম্যাচ বলে এবং কোন এসোসিয়েশন প্রতিযোগিতায় ওয়ান্ডেরাসের সেটাই ছিল সবচেয়ে ভালো ব্যক্তিগত এবং দলগত পারফরমেন্স।[৮]
বিস্তারিত
সম্পাদনাওয়ান্ডেরাস
|
রয়াল ইঞ্জিনিয়ার্স
|
|
|
সহকারী রেফারি:
|
৯০ মিনিট সাধারণ সময়।
৩০ মিনিট অতিরিক্ত দেয়া হবে যদি ড্র হয়, অধিনায়কের মতানুযায়ি।
পুনরায় ড্র হলে আবার খেলা হবে।
কোন বদলি খেলোয়াড় নেই।
ম্যাচ পরবর্তী বিষয়সমূহ
সম্পাদনা১১ এপ্রিল পল মল রেস্টুরেন্ট, চ্যারিং ক্রসে ওয়ান্ডেরাসের বার্ষিক ডিনার পার্টিতে দ্যা ফুটবল এসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট মি. ই.সি.মোরলে তাদের হাতে ট্রফি তুলে দেয়।[১২] ফুটবল এসোসিয়েশন বিজয়ী দলের সব খেলোয়াড়কে সিল্ক ব্যাজ প্রদান করে এবং ওয়ান্ডেরাস এসোসিয়েশন সব খেলোয়াড়দের সোনার মেডেল প্রদান করে।[৪] প্রতিযোগিতার আসল প্রত্যয় অনুযায়ী ওয়ান্ডেরাস পরবর্তী সালের এফ.এ কাপ ফাইনালে সরাসরি অংশগ্রহণ করে।[১৩] শুধুমাত্র এই একবারি এই নিয়ম মানা হয়।[১৪]
১৯৩৮ সালে দ্যা টাইমস থমাস হুমান এর মৃত্যু বিষয়ক একটি স্মারক প্রকাশ করে যেখানে সে দাবি করে যে ১৮৭২ এর ফাইনালের গোলটি সে করেছে। কিন্তু তার এ দাবি মানা হয়নি এবং সবখানে এখনোও বেটস গোলস্কোরার হিসেবে লিপিবদ্ধ আছে। ধারণা করা হয়, হুমান বৃদ্ধ বয়সে ১৮৭২ এর ফাইনালকে তার অন্য কোন খেলা ম্যাচের সাথে গুলিয়ে ফেলে এমন মন্তব্য করেছে।[১৫]
২০১০ সালে লন্ডনে একটি অকশনে ঐ ফাইনালের একটি মেডেল নিলামে তোলা হয়। ১৯৫০ সালের একটি বাড়ি খালি করার সময় একজন জুয়েলার্স এটি কিনে এবং আশা করে যে £৫০০০০ দিয়ে বিক্রি করবে[১৬] কিন্তু প্রফেশনাল ফুটবল এসোসিয়েশন এটিকে £৭০৫০০ দিয়ে কিনে নেয়।[১৭]
২০১২ সালের ৭ নভেম্বর ওভালে ওয়ান্ডেরাস এবং দ্যা ইঞ্জিনিয়ারস এর নতুন দলের মধ্যে ঐ ম্যাচের একটি ফিরতি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।[১৮] কিন্তু ফলাফল আসল ফাইনাল থেকে একদম বিপরীত হয়, যেখানে দ্যা ইঞ্জিনিয়ারস ৭-১ গোলে ওয়ান্ডেরাস কে পরাজিত করে।[১৯]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- General
- Warsop, Keith (২০০৪)। The Early FA Cup Finals and the Southern Amateurs। SoccerData। আইএসবিএন 1-899468-78-1।
- Specific
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ "England FA Challenge Cup 1871–72"। Rec.Sport.Soccer Statistics Foundation। ২৭ জানুয়ারি ২০০১। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০০৯।
- ↑ Warsop, p. 29.
- ↑ "F.A. Cup 1871–72"। The Football Club History Database। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০১১।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ Warsop, p. 40.
- ↑ Warsop, p. 62.
- ↑ Warsop, p. 55.
- ↑ Warsop, p. 111.
- ↑ ক খ গ Warsop, p. 28.
- ↑ Warsop, p. 14.
- ↑ Warsop, p. 11.
- ↑ Gibbons, Philip (২০০১)। Association Football in Victorian England – A History of the Game from 1863 to 1900। Upfront Publishing। পৃষ্ঠা 35–36। আইএসবিএন 1-84426-035-6।
- ↑ Matthews, Tony (২০০৬)। Football Firsts। Capella। পৃষ্ঠা 85। আইএসবিএন 1-84193-451-8।
- ↑ Warsop, p. 41.
- ↑ "F.A. Cup 1872–73"। The Football Club History Database। ২০০৮-০৪-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০০৯।
- ↑ Warsop, p. 90.
- ↑ "Great season of sporting antiques"। Antiques Trade Gazette। ২৫ অক্টোবর ২০১০। ১২ নভেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ নভেম্বর ২০১০।
- ↑ "PFA buy medal from first FA Cup Final"। The Mirror। ৯ নভেম্বর ২০১০। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মার্চ ২০১১।
- ↑ Cunningham, Sam (৭ নভেম্বর ২০১২)। "Wanderers and Royal Engineers set for FA Cup final remake... 140 years after original showdown"। Daily Mail। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০১২।
- ↑ Al-Samarrai, Riath (৭ নভেম্বর ২০১২)। "Engineers steamroll Wanderers 7-1 in repeat of first ever FA Cup final at The Oval... 140 years after the original"। Daily Mail। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০১২।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- 1872 FA Cup Final at The Football Association