হ্যারি ফস্টার
হেনরি নলিজ ফস্টার, এমবিই (ইংরেজি: Harry Foster; জন্ম: ৩০ অক্টোবর, ১৮৭৩ - মৃত্যু: ২৩ জুন, ১৯৫০) ওরচেস্টারশায়ারের ম্যালভার্ন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী প্রথম-শ্রেণীর বিখ্যাত ইংরেজ ক্রিকেট তারকা ছিলেন। ১৮৯৭ থেকে ১৯২৫ সময়কালে ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ওরচেস্টারশায়ার দলের প্রতিনিধিত্ব করতেন। এছাড়াও, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবে খেলেছেন।
ব্যক্তিগত তথ্য | |||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | হেনরি নলিজ ফস্টার | ||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | ম্যালভার্ন, ওরচেস্টারশায়ার, ইংল্যান্ড | ৩০ অক্টোবর ১৮৭৩||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ২৩ জুন ১৯৫০ কিংসথর্ন, হিয়ারফোর্ডশায়ার, ইংল্যান্ড | (বয়স ৭৬)||||||||||||||||||||||||||
উচ্চতা | ৬ ফুট ০ ইঞ্চি (১.৮৩ মিটার) | ||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | ||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | ডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম | ||||||||||||||||||||||||||
ভূমিকা | ব্যাটসম্যান | ||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | |||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল | |||||||||||||||||||||||||||
ঘরোয়া দলের তথ্য | |||||||||||||||||||||||||||
বছর | দল | ||||||||||||||||||||||||||
১৮৯৪–১৮৯৬ | অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় | ||||||||||||||||||||||||||
১৮৯৭–১৯০৯ | মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব | ||||||||||||||||||||||||||
১৮৯৯–১৯২৫ | ওরচেস্টারশায়ার | ||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | |||||||||||||||||||||||||||
| |||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১ জুন ২০১৯ |
দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। পাশাপাশি দলের প্রয়োজনে ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন হেনরি ফস্টার নামে পরিচিত হ্যারি ফস্টার।
শৈশবকাল
সম্পাদনাম্যালভার্ন কলেজে পড়াশোনা করেছেন। ১৮৯২ সালে অক্সফোর্ডের ট্রিনিটি কলেজ থেকে ম্যাট্রিকুলেশন ডিগ্রী লাভ করেন। ১৮৯২ সালে ডব্লিউ. এল. ফস্টার, ডব্লিউ. ডব্লিউ. লো ও সি. জে. বার্নআপকে পিছনে ফেলে ব্যাটিং গড়ে শীর্ষে ছিলেন। অক্সফোর্ডের পক্ষে প্রথমবারের মতো প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। তবে, ১৮৯৩ সালে কোন খেলায় তাকে রাখা হয়নি। অবশ্য পরবর্তী তিন বছরেই কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে খেলেন ও ব্লুধারী হন।
আশ্চর্যজনকভাবে অক্সফোর্ডে থাকাকালে ১৮৯৩ সালে প্রথম একাদশ দলে খেলার জন্যে তাকে কোন যাচাই-বাছাইয়ের খেলায় নেয়া হয়নি। ১৮৯৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলায় অক্সফোর্ডের সদস্যরূপে দুই ঘণ্টা ব্যাটিং করে ১২১ রান তুলেন। ৩৩১ রানের লক্ষ্যমাত্রায় ধাবিত অক্সফোর্ড দল ১৯৬ রানে তাদের ইনিংস গুটিয়ে ফেলে। ১৮৯৬ সালে অক্সফোর্ড একাদশ ৩৩০ রান তুলে কেমব্রিজকে ছয় উইকেটে পরাজিত করা দলের সদস্য ছিলেন।
র্যাকেট খেলায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন হ্যারি ফস্টার। আটবার এককে ও অনেকবার দ্বৈত খেলায় ইংরেজ চ্যাম্পিয়ন হন। ১৮৯২ সালে পাবলিক স্কুলস চ্যাম্পিয়নশীপে ম্যালভার্নের পক্ষে তিনি ও তার ভাই ডব্লিউ. এল. ফস্টার জয়ী হয়েছিলেন।[১] পরবর্তী চার বছর তিনি অক্সফোর্ডের পক্ষে একক ও দ্বৈত খেলায় প্রতিনিধিত্ব করেন। বেশ কয়েকবার যোগ্য সঙ্গীর অভাবে দ্বৈত চ্যাম্পিয়নশীপে শিরোপা জয় করা থেকে বঞ্চিত হন। ১৮৯৪ থেকে ১৯০০ ও ১৯০৪ সালে একক চ্যাম্পিয়নশীপে শিরোপা লাভ করেন। চারবার অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে র্যাকেট খেলায় প্রতিনিধিত্ব করেন।
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট
সম্পাদনাঅক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে আসার পর অনেকগুলো বছর ওরচেস্টারশায়ার একাদশের প্রধান ব্যাটিংস্তম্ভ ছিলেন। তবে, টেস্ট ক্রিকেট খেলার প্রতি তার কোন আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়নি। ১৮৯৪ থেকে ১৯২৫ সাল পর্যন্ত হ্যারি ফস্টারের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। পরিবারের সাত ভাইয়ের মধ্যে তিনি জ্যেষ্ঠ ছিলেন। তার ভ্রাতাগণ হলেন - উইলফ্রিড ফস্টার, আর. ই. ফস্টার, বিএস ফস্টার, জিএন ফস্টার, এমকে ফস্টার, এনজেএ ফস্টার। সাত ফস্টার ভাই সম্মিলিতভাবে ৪২,০০০-এর অধিক প্রথম-শ্রেণীর রান তুলেন। এছাড়াও তার শ্যালক - ডব্লিউ গ্রীনস্টক, পুত্র - সিকে ফস্টার, ভাইপো - জেডব্লিউ গ্রীনস্টক ও পিজি ফস্টার প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছেন।
মাত্র ১৪ বছর বয়সে ওরচেস্টারশায়ারের পক্ষে খেলতে থাকেন। অনেকগুলো মৌসুমেই স্বীয় ভ্রাতা টিপ ফস্টারের পরেই কাউন্টি দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। আট মৌসুমে সহস্র রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। পাঁচবার ৪০-এর অধিক গড়ে রান তুলেছিলেন। সমগ্র প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনে ২৯টি শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন। তন্মধ্যে, ১৯০৩ সালে সমারসেটের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২১৬ রানের ইনিংস খেলেন। এ ইনিংসটিই ওরচেস্টারশায়ার দল তাদের প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে দ্বি-শতকের সন্ধান পায়।[২] এরপর ১৯০৮ সালে ওয়ারউইকশায়ারের বিপক্ষে ২১৫ রান সংগ্রহ করেন। উভয় ইনিংসই ওরচেস্টারে করেছিলেন। ১৯০৮ সালে ৪৮ গড়ে রান তুলেছিলেন। ১৯১৩ সালে ৩৫ গড়ে প্রায় সহস্র রানের কাছাকাছি ছিলেন।
ছয়বার জেন্টলম্যানের সদস্যরূপে প্লেয়ার্সের বিপক্ষে খেলেন। আর. ই. টিপ ফস্টার টেস্ট ক্রিকেট খেলার সুযোগ পেলেও দূর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি এ সৌভাগ্য লাভ করতে পারেননি। কিন্তু, ১৯১০ সালে জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের খেলাগুলোয় শৌখিন দলের নেতৃত্বে ছিলেন। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে অসামান্য ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯১১ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন হ্যারি ফস্টার।[৩]
অধিনায়ক
সম্পাদনা১৮৯৯ সাল থেকে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের প্রথম আসরে ওরচেস্টারশায়ারের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন হ্যারি ফস্টার। ১৯০১ সাল বাদে ১৯১০ সাল পর্যন্ত প্রত্যেক মৌসুমেই দলের নেতৃত্বে ছিলেন। কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে প্রথম ১২ মৌসুমের মধ্যে ১১ মৌসুম অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯১০ সালে ওরচেস্টারশায়ারের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। তবে, ১৯১৩ মৌসুমে পুনরায় তাকে এ দায়িত্বে ফিরিয়ে আনা হয়। ১৯২৫ সাল পর্যন্ত দলটিতে খেলে অবসর গ্রহণ করেন।
তার কাট ও অফ-ড্রাইভগুলো বেশ দর্শনীয় ছিল। মাঝারিসারিতে আক্রমণধর্মী ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। শর্ট স্লিপ অঞ্চলে দূর্দান্ত ফিল্ডিং করতেন। ছয় ফুট উচ্চতার অধিকারী হ্যারি ফস্টার অক্সফোর্ডে থাকাকালে সাড়ে দশ স্টোন ওজনের অধিকারী ছিলেন।
প্রশাসনে অংশগ্রহণ
সম্পাদনা১৯০৭, ১৯১২ ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইংল্যান্ড দলের নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতি মনোনীত হয়েছিলেন।
১৯০৭ সালে ভগলার, সোয়ার্জ, ফকনার ও হোয়াইটের ন্যায় খ্যাতনামা বোলারদের নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা দল আসলে ইংরেজ একাদশ গড়তে লর্ড হককে সি. এইচ. বি. মারশ্যামসহ তিনি সহযোগিতা করেন। পাঁচ বছর পর ১৯১২ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত দূর্বলমানের ত্রি-দেশীয় প্রতিযোগিতায় ফস্টার, জন শাটার ও সি. বি. ফ্রাই ইংল্যান্ড দল গঠনের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯২১ সালে যুদ্ধ পরবর্তীকালে ফস্টার, আর. এইচ. স্পুনার ও জন ড্যানিয়েল ইংল্যান্ড একাদশ গড়েন।
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনা১৮৬৭ সালে ২৩ বছর বয়সে ১৮৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ম্যালভার্ন কলেজের কর্মী হিসেবে যোগদান করেন। ১৮৬৯ সালে পাদ্রী হিসেবে কাজ করেন। ১৮৭১ সালে ম্যালভার্ন কলেজের হাউজমাস্টারের পদে থাকাকালীন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এ পদে তিনি ৪৮ বছর ছিলেন। ক্রিকেট ও রাগবি ফাইভস খেলার পাশাপাশি নৌকাচালনা ও তীরন্দাজীতে কেমব্রিজের উইনচেস্টার কলেজের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ম্যালভার্নের ক্রিকেট পিচ প্রস্তুতকরণ, ফুটবল মাঠ দেখাশোনা, র্যাকেট কোর্ট প্রস্তুতে জড়িত ছিলেন। মিডল্যান্ডসের প্রথম গল্ফার ছিলেন ও ওরচেস্টারশায়ার গল্ফ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি। স্টক এডিথ ও পিএইচ ফোলির প্রিস্টউডের সম্পত্তির ভূমি প্রতিনিধি ছিলেন।[৪]
দশ সন্তানের জনক তিনি। সাত ছেলে ও তিন মেয়ে জন্মগ্রহণ করে। ২৩ জুন, ১৯৫০ তারিখে ৭৭ বছর বয়সে হিয়ারফোর্ডশায়ারের অ্যাকোনবারির কিংসথর্ন এলাকায় হ্যারি ফস্টারের দেহাবসান ঘটে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Wisden Almanack 'Henry Foster: Cricketer Of The Year, 1911'. Retrieved 14 June 2009.
- ↑ "Most Runs in an Innings for Worcestershire"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মার্চ ২০০৯।
- ↑ Wisden Almanack 'Henry Foster: Cricketer Of The Year, 1911'
- ↑ Sale Particulars for those estates in 1913 and 1919.
আরও দেখুন
সম্পাদনাবহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- ইএসপিএনক্রিকইনফোতে হ্যারি ফস্টার (ইংরেজি)
- ক্রিকেটআর্কাইভে হ্যারি ফস্টার (সদস্যতা প্রয়োজনীয়) (ইংরেজি)
ক্রীড়া অবস্থান | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী নবসৃষ্ট |
ওরচেস্টারশায়ার ক্রিকেট অধিনায়ক ১৮৯৯–১৯০০ |
উত্তরসূরী টিপ ফস্টার |
পূর্বসূরী টিপ ফস্টার |
ওরচেস্টারশায়ার ক্রিকেট অধিনায়ক ১৯০২–১৯১০ |
উত্তরসূরী জর্জ সিম্পসন-হেওয়ার্ড |
পূর্বসূরী জর্জ সিম্পসন-হেওয়ার্ড |
ওরচেস্টারশায়ার ক্রিকেট অধিনায়ক ১৯১৩ |
উত্তরসূরী উইলিয়াম টেলর |