হোলবোল
হোলবোল কৃষকসমাজে প্রচলিত একটি লোকসঙ্গীত। এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদিয়া জেলা এবং বাংলাদেশের যশোর জেলার একটি প্রচলিত লোকসঙ্গীত। এর মধ্যে কোনো ধর্মীয় আচার-আচরণ সংযুক্ত নেই। নিম্নশ্রেণীর হিন্দু এবং মুসলিম কৃষকরা একইসঙ্গে এই গান গেয়ে তাদের অবসর জীবন অতিবাহিত করে।[১]
গাওয়ার সময়
সম্পাদনাকৃষিকর্মে কখনো অবসর পেলেই কৃষকেরা তাদের কন্ঠে এই গান গায়। তবে পৌষ মাসেই এই গানের প্রকৃত সময় বলে মনে করা হয়। এই গানের সঙ্গে স্ত্রীদের কোনো সম্পর্ক নেই, পুরুষেরাই এই গান গেয়ে থাকে। মূল গায়েন একটি পদ গাইবার পর অন্যান্যরা ওই কথারই পুনরাবৃত্তি করে।
নিদর্শন
সম্পাদনাহোলবোল গানের অবলম্বন বলতে রামায়নের কাহিনি অন্যতম। নদিয়া জেলায় একটি গান শুলতে পাওয়া যায়-
আহা উজুদার গো দশরথ গো রাজা ছিল বড় পুণ্যবান।
একই দণ্ডে চারি ভাই গো জন্মেছিলেন রাম।
বড় হইলেন রামচন্দ্র মেজ গো লক্ষ্মণ,
সেজ হলেন ভরত ঠাকুর ছোট শত্রুঘন।
সাময়িক ঘটনাকে অবলম্বন করেও হোলবোলের গান রচিত হয়। নদিয়া জেলার মাজদিয়াতে এই রকম কিছু গান শোনা যায়-
হাহা, ফাগুন মাসের পাঁচই তারিখে দৈবী গজব হল,
হাহা, মটর ছোলা সরষে, সব ফেলায়ে গেল।
হাহা, কতই ফেলল ছোলা সরষে, থাল ঘটি বাটি,
হাহা, তাহার চেয়ে অধিক ফেলল ব্রিটিশ রাজার মাটি।
হাহা, দুই পক্ষ দুই রাজা হয়ে সংসার জলে গেল,
হাহা, এবার বুঝিল ভাত বেঘোরে কোলের ছেলে ম'ল।
মা জননী কেঁদে বলে কি করি উপায়,
গভরমেন্টের লোক এসে বলে খাল বাঁধিতে চল।
খাল বাঁধিতে না গেলে টাকা দিবে নাকো,
মাটির ঝুরি মাথায় নিয়ে ভিমরি লেগে গেল।
এবার বুঝিল মনে হল আমাদের জান গেল।
পাকিস্তানে কাজ নাই মোদের হিন্দুস্তানে চল,
হিন্দুস্তানে গিয়ে মোরা সবাই শান্তি হব।
এই গানে পাকিস্তান সরকারের অত্যাচার ফুটে এসেছে। গানের পরবর্তী অংশে পাকিস্তান ছেড়ে ভারতে আগমনের কথার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।[২]
অন্যান্য
সম্পাদনাএছাড়া বেহুলা লখীন্দরের কাহিনি নিয়েও এই গান গাওয়া হয়। তবে এগুলি শুধু মনসা পুজোর সময় শোনা যায়। শ্রাবণ মাস ব্যাপী এই গীত হলেও অন্য সময় এই গান গাওয়া হয় না।[৩]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা