হিতেশ বিশ্বাস (মৃত্যু: ১৯ মে ১৯৬১) হলেন একজন ভারতীয় তরুণ, যিনি ভারতের অসম রাজ্যের রাজ্য ভাষা হিসাবে বাংলাকে অন্তর্ভূক্তির দাবীতে আন্দোলন চলাকালীন ১৯৬১ সালের ১৯ মে শিলচর রেলস্টেশন এলাকায় আধা-সামরিক বাহিনীর ছোড়া গুলিতে শহীদ হন।[][][]

হিতেশ বিশ্বাস
জন্ম
মৃত্যু১৯ মে ১৯৬১
মৃত্যুর কারণনিরাপত্তা বাহিনীর ছোড়া গুলি
জাতীয়তাভারতীয়
পরিচিতির কারণঅসমের বাংলা ভাষা শহীদ

জন্ম ও পারিবারিক পরিচিতি

সম্পাদনা

হিতেশ বিশ্বাসের আদিনিবাস ছিল বর্তমান বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। মাত্র বারো বছর বয়সে পিতৃহীন হিতেশ বিশ্বাস বাস্তুহারা হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ত্রিপুরার খোয়াই শহরের উদ্বাস্তু কলোনির বাসিন্দা হন। মা, ছোট ভাই ও এক বোনের সংসার ছিল তাদের। শিলচর শহরে ভগ্নিপতির বাসায় অবস্থানকালে মাতৃভাষার জন্য জীবনদান করেন।[]

শিক্ষা জীবন

সম্পাদনা

মৃত্যু

সম্পাদনা
 
শিলচর রেলস্টেশনকে "ভাষা শহিদ স্টেশন, শিলচর" নামকরণ করে স্থাপিত ফলক।

বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৬১ সালের ১৯ মে অসমের শিলচর, করিমগঞ্জহাইলাকান্দিতে হরতাল আহ্বান করা হয় এবং সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, শিলচর রেলস্টেশন থেকে বিকেল ৪টার সময়সূচির ট্রেনটির সময় পার হয়ে যাওয়ার পর হরতালের পরিসমাপ্তি ঘটবে।[] সকালবেলায় হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে অতিবাহিত হয় এবং সেদিন ভোর ৫:৪০-এর ট্রেনটির কোনো টিকিট বিক্রী হয়নি; কিন্তু, দুপুরে স্টেশনে বিএসএফের সদস্যরা এসে উপস্থিত হয় সরকারি স্থাপনার নিরাপত্তা দানের উদ্দেশ্যে।[]

 
বরাক ভাষা আন্দোলনের সত্যাগ্রহীদের উপর সৈন্যদের লাঠিচার্জ।

বিকেল ২:৩০-এর দিকে পুলিশ কয়েক জন সত্যাগ্রহীকে গ্রেপ্তার করে একটি ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়ার সময় পিকেটাররা এর তীব্র প্রতিবাদ করে ও ট্রাকটিতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়।[] এর প্রেক্ষিতে বেলা ২:৩৫ নাগাদ রেলস্টেশন সুরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা বিএসএফ সৈন্যরা আন্দোলনকারীদের বন্দুক ও লাঠি দিয়ে মারতে শুরু করে এবং পরবর্তী সাত মিনিটের মধ্যে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে তারা ১৭ রাউন্ড গুলিও চালায়।[] এই গুলি সরাসরি ১২ জন আন্দোলনকারীর দেহে বিদ্ধ হলে হিতেশসহ ৯ জন তাতে আঘাত পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে নিহত হন [][]

স্মারক

সম্পাদনা
 
শিলচর রেলস্টেশন এলাকায় অবস্থিত ভাষা শহীদ স্মারক।

নিহত হওয়ার পরদিন, ২০ মে, হিতেশসহ ভাষা শহীদদের মৃতদেহ নিয়ে শিলচরে বিশাল শোকমিছিল করার পর শেষকৃত্য করা হয় শিলচর শ্মশানে।[] তাদের স্মৃতি-বিজড়িত শিলচর রেলস্টেশনটির বর্তমান নামকরণ করা হয়েছে "ভাষা শহিদ স্টেশন, শিলচর"।[][] শিলচর শ্মশানে হিতেশসহ ১১ জন শহীদের স্মরণে নির্মাণ করা হয়েছে ১১টি স্মৃতিস্তম্ভ এবং শিলচর রেলস্টেশনের সামনেও তৈরি করা হয়েছে তাদের প্রত্যেকের জন্য ১টি করে স্তম্ভ।[] এছাড়াও, শিলচর শহরের গান্ধিবাগে তাদের স্মরণে গড়ে তোলা হয়েছে শিলচর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার[][]

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. সাহা, অমর (২০ মে ২০১২)। "আরেক ফাল্গুনের কথা"দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১ ডিসেম্বর ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. মাহবুব, এম. আর. (৪ জুন ২০১৬)। "আসামে বাংলা ভাষা-আন্দোলন"দৈনিক ইনকিলাব। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  3. "যথাযোগ্য মর্যাদায় বরাক উপত্যকায় পালিত হলো ভাষা শহিদ দিবস"আজকের অনলাইন কাগজ। ১৯ মে ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. "আসামে বাংলা ভাষা আন্দোলনে ১১ শহিদের কথা"sarabangla.net। ১৮ মে ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ 
  5. বাহার উদ্দিন (১৯ মে ২০১৫)। "ঊনিশের উন্নতশির"দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ১ ডিসেম্বর ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  6. মুখোপাধ্যায়, বৈদ্যনাথ (১৯ মে ২০১৩)। "বাঙালির চেতনায় শুধু একুশে, স্থান নেই উনিশের শহীদদের"। এই সময়। কলকাতা। 
  7. "পশ্চিমবঙ্গে শিলচরের ভাষা শহীদদের স্মরণ"বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ১৯ মে ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৭ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা
  • "REPORT of Non Official Enquiry Commission of CACHAR" [কাছাড়ের অফিসিয়াল তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন] (পিডিএফ) (ইংরেজি ভাষায়)। শিলচর-৫, আসাম: এ. কে. দাশ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  • বিশ্বাস, সুকুমার। আসামে ভাষা আন্দোলন ও বাঙালি-প্রসঙ্গ ১৯৪৭-১৯৬১। আগরতলা, ত্রিপুরা: পারুল প্রকাশনী প্রাইভেট লিমিটেড। আইএসবিএন 93-8670-825-6