হাসিরাশি দেবী
হাসিরাশি দেবী ( জন্ম : ১৯১১ — মৃত্যুঃ ১২ জুন ১৯৯৩) একজন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী ও শিশুসাহিত্যিক।[২]
হাসিরাশি দেবী | |
---|---|
জন্ম | ১৯১১ |
মৃত্যু | ১২ জুন, ১৯৯৩ (বয়স ৮২) খাটুরা গোবরডাঙা |
পেশা | বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী ও শিশুসাহিত্যিক |
দাম্পত্য সঙ্গী | সুশীলকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়[১] |
পিতা-মাতা | গোপালচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় (পিতা) সুশীলাবালা দেবী ( মাতা) |
পুরস্কার | ভুবনমোহনী দাসী পদক |
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাহাসিরাশি দেবীর পিতার নাম ছিল গোপাল চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। মাতা সুশীলাবালা দেবী। আইনজীবী পিতার কর্মক্ষেত্র পশ্চিম দিনাজপুরে তার জন্ম এবং স্বগৃহেই তার শিক্ষা। প্রথাগত শিক্ষা ছিল না। আট-নয় বৎসর বয়সে পিতার মৃত্যু হলে অবিভক্ত চব্বিশ পরগনা জেলার গোবরডাঙার নিকট খাঁটুরা গ্রামে মামার বাড়িতে আসেন। মাত্র ১১ বছর বয়েসে তার বিবাহ হয় সুশীলকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। কিন্তু বিবাহোত্তর জীবন সুখের হয়নি। একমাত্র কন্যাসন্তানেরও অকালমৃত্যু হয় এবং তারপরেই স্বামীও প্রয়াত হন। তার অগ্রজা বিখ্যাত বাঙালি সাহিত্যিক, গীতিকার ও শিক্ষাব্রতী প্রভাবতী দেবী সরস্বতী।
চিত্রশিল্প ও সাহিত্যচর্চা
সম্পাদনাহাসিরাশির অল্প বয়সেই শিল্পী জীবনের হাতেখড়ি। গোপনে ছবি আঁকতেন, পাছে কেউ দেখে ফেলে এই ভয়ে। সাহিত্য রচনা শুরু করেন বড় বোন প্রভাবতী দেবী সরস্বতীর অনুপ্রেরণায়। তার সঙ্গেই জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে যাতায়াত করতেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর , অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসেন। ছবি আঁকার দক্ষতা ছিল তার। সেকারণে অবনীন্দ্রনাথ তার গুণগ্রাহী ছিলেন। আর রবীন্দ্রনাথ তার দক্ষতার জন্য নাম দিয়েছিলেন 'চিত্রলেখা'।[৩] অবনীন্দ্রনাথের কাছে তিনি পেন্টিংয়ের কাছ শেখেন। পরে ভাস্কর্য শিখতে সরকারি চারুকলা মহাবিদ্যালয়ে। প্যারিসে প্রেরিত তার চিত্র বহুল প্রসংশিত ও বিক্রিত। কলকাতা ছাড়াও দিল্লী, বোম্বাই ও লক্ষৌতে প্রদর্শিত হয়েছে । এছাড়া সাহিত্য রচনাতে সমান পারদর্শীতা অর্জন করছিলেন। প্রধানত শিশু সাহিত্যিক হলেও সাহিত্যের অন্যান্য ক্ষেত্রেও তার অনায়াস বিচরণ ঘটেছে। কবিতা ও ছোটদের জন্য ছড়া লিখেছেন প্রচুর। অধিকাংশই অবশ্যই হারিয়ে গেছে। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ষাট। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল-
- আখ্যানমূলক উপন্যাস -
- 'নিষ্প্রদীপ'
- 'মানুষের ঘর'
- 'বন্দী বিধাতা'
- 'ভোরের ভৈরবী'
- 'রক্তলীলার রত্নরাজি'
- 'রাজকুমার জাগো'
- জীবনী গ্রন্থ -
- কবিতা ও ছড়াগ্রন্থ হল -
- 'স্বনির্বাচিত কবিতা'
- 'বর্ণালী'
- 'হট্টগোল'[৪]
সম্মাননা
সম্পাদনাসাহিত্যে অবদানের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুবনমোহনী সুবর্ণপদক পেয়েছেন। তার 'মেঘদূত' চিত্রটি মধ্যপ্রদেশের সরকারের পুরস্কার লাভ করে।
অন্যান্য
সম্পাদনাশিশুদের জন্য তিনি বহুবার আকাশবাণী কলকাতার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। এছাড়া সংগীতবিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। এইচ.এম.ভি. গ্রামোফোন কোম্পানির রেকর্ড করা গানও আছে তার। দিদি প্রভাবতী দেবী সরস্বতীর মতো সমাজসেবা, দেশপ্রেম ও নারী প্রগতিতে উৎসাহী ছিলেন তিনি। সভাসমিতিতে,আকাশবাণীতে নারীচেতনা ও নারীপ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। জীবনে তিনি এত লিখেছেন, এত এঁকেছেন, কিন্তু জীবনটা ছিল তার বড়ো দুঃখের। জীবনে শেষ পর্যায়ে নিঃসঙ্গ জীবন কাটান গোবরডাঙার খাটুরা হাই স্কুলচত্বরের একটিমাত্র ঘরে। ক্ষীণ দৃষ্টি নিয়ে তখন কিছু কিছু লিখেছেন, এঁকেছেন।
মৃত্যু
সম্পাদনা১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে সেই অবস্থাতেই তিনি লিখেছেন-
" চাঁদের ভেতর চরকা কাটা বুড়ি,আজো হাঁটে দিয়েই হামাগুড়ি সেও কি, আমার মতো থুরথুরিয়ে হাঁটে আর, বসে বসে কেবল চরকা কাটে।"
১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসের ১২ তারিখে মারা যান হাসিরাশি দেবী।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ জানকীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। চিত্রাঙ্কনে বাংলার মেয়ো। ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল, কলকাতা। পৃষ্ঠা ৩৫।
- ↑ অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৪৭৮, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
- ↑ "বিস্মৃত এক সরস্বতী"। www.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-০১।
- ↑ "পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১৮৯ - উইকিসংকলন একটি মুক্ত পাঠাগার"। bn.wikisource.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-০১।