হায়াতে শিবলী
হায়াতে শিবলী (উর্দু: حیات شبلی) শিবলী নোমানীকে নিয়ে রচিত সুলাইমান নদভীর একটি জীবনী সাহিত্য।[১] শিবলী নোমানী ছিলেন সুলাইমান নদভীর জীবনের মোড় পরিবর্তনকারী অন্যতম শিক্ষাগুরু। নোমানীর জীবদ্দশায় অনেকেই তার জীবনী সংকলনের আগ্রহ প্রকাশ করলেও তিনি তাতে অনুমতি দেননি। তিনি এই কাজের জন্য তার প্রিয় শিষ্য সুলাইমান নদভীকে অসিয়ত করে যান। সুলাইমান নদভী ১৯৪০ সালে এই গ্রন্থটি রচনা শুরু করেন এবং ১৯৪৩ সালে সমাপ্ত করেন। এটি দারুল মুসান্নিফীন থেকে ৬৬ তম গ্রন্থ হিসেবে প্রথম প্রকাশিত হয়। তিনি এই গ্রন্থটিতে শিবলী নোমানীর জীবনী ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার অবদান রচনার পাশাপাশি এতে ফুটিয়ে তুলেন সমকালীন ভারতবর্ষের মুসলমানদের প্রায় পঞ্চাশ বছরের শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থার একটি ঐতিহাসিক চিত্র। আবুল হাসান আলী নদভী গ্রন্থটির গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন, ‘হায়াতে শিবলী দেখতে একজন বিখ্যাত আলিমের ব্যক্তিগত জীবনী বলে মনে হলেও বাস্তবিক এটি মুসলমানদের এক শতাব্দীকালের ধর্মীয়, শিক্ষা, সভ্যতা ও চিন্তাগত উন্নতির ইতিহাস। এটি ব্যতীত তৎকালীন মুসলমানদের জাতীয় স্বভাবধারা ও বর্তমান যুগ সন্ধিক্ষণের বাস্তব অবস্থা বোঝা বড় কঠিন।’[২]
লেখক | সুলাইমান নদভী |
---|---|
মূল শিরোনাম | উর্দু: حیات شبلی |
ভাষা | উর্দু (মূল) |
বিষয় | শিবলী নোমানী |
ধরন | জীবনী |
প্রকাশিত | ১৯৪৩ |
প্রকাশক | দারুল মুসান্নিফীন |
পৃষ্ঠাসংখ্যা | ৮৪৬ |
ওসিএলসি | ৭৯৩৩৮৪৯৪০ |
২৯৭.০৯ |
গঠন
সম্পাদনা৮৪৬ পৃষ্ঠা বিশিষ্ট গ্রন্থটির শুরুতে ৫৭ পৃষ্ঠা জুড়ে একটি ভূমিকায় প্রাচ্যে ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষার প্রচার-প্রসারের ইতিহাস লিখা হয়েছে। একটি জীবনীসাহিত্য মূলক গ্রন্থ হিসেবে শিবলী নোমানীর জন্ম, বংশ, শিক্ষা ও কর্ম সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা এবং সৈয়দ আহমদ খানের সাথে আধুনিক শিক্ষা বিস্তারের কাজ করার বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে গ্রন্থের ৫৮–১৬৯ পৃষ্ঠায়। পাশাপাশি শিবলী নোমানী যে আযমগড় শহরে দারুল মুসান্নিফীনের গোড়াপত্তন করেছিলেন সেই আযমগড় শহরের ইতিহাস ও তৎকালীন অবস্থার বিবরণ দেয়া হয়েছে এ অংশে। আর শিবলী নোমানীর রচনাবলী সম্পর্কে অত্যন্ত তথ্যবহুল ও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে গ্রন্থের ১৭০–২৯৬ পৃষ্ঠায়। এমনিভাবে গ্রন্থের ২৯৭–৪১১ পৃষ্ঠায় দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামার গোড়াপত্তনের ইতিহাস ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে। প্রাসঙ্গিকক্রমে শিবলী নোমানীর কাশ্মীর সফর ও কাবুল সফরের বিষয়টিও আনা হয়েছে। শিবলী নোমানী নদওয়াতুল উলামার দায়িত্ব গ্রহণের পর সেখানে আধুনিক শিক্ষার পাঠক্রম চালু করা, ইংরেজি শিক্ষা চালু করা, হিন্দি ও সংস্কৃত শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক আরবি শিক্ষা চালু করার বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে গ্রন্থের ৪১২–৪৪৭ পৃষ্ঠার মধ্যে। আর ৪৪৮–৫০৫ পৃষ্ঠায় দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামার আর্থিক উন্নতি ও সার্বিক উন্নয়নের ব্যাপারে শিবলী নোমানীর অবদানের কথা তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি এ সময়ে আলীগড়, ঢাকা, মোজাফফরপুর সহ বিভিন্ন জায়গায় তার ভ্রমনবৃত্তান্ত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ইসলামি শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে শিবলী নোমানীর অন্যান্য ধর্মীয় ও জাতীয় অবদানসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে গ্রন্থের ৫০৬–৫৮৬ পৃষ্ঠায়। শিবলী নোমানী ইসলামি রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তার মনে প্রাণে ও চিন্তা-চেতনায় ছিল শুধু ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতি ও প্রসার। তার এ রাজনৈতিক চিন্তাধারা এবং সমসাময়িক রাজনৈতিক অবস্থার চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গ্রন্থের ৫৮৭–৬৩৬ পৃষ্ঠায়। নদওয়াতুল উলামায় দায়িত্ব পালন কালে বিভিন্ন জনের বিরোধীতা এবং তার দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়ার বিষয়টি আলোচিত হয়েছে ৬৩৭–৬৬৭ পৃষ্ঠায়। গ্রন্থটির ৬৬৮–৬৯৬ পৃষ্ঠায় শিবলী স্কুল প্রতিষ্ঠা, মাদরাসাতুল ইসলাহ প্রতিষ্ঠা এবং দারুল মুসান্নিফীন নামক গ্রন্থ প্রকাশনা একাডেমী প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তার জীবনের শেষ দিকে তার অমর গ্রন্থ সীরাতুন নবী রচনা শুরু করা ও দুই খণ্ড সমাপ্তের বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে ৬৯৭–৭১৮ পৃষ্ঠায়। আর ৭১৯–৭২৫ পৃষ্ঠায় তার ইন্তিকাল, রেখে যাওয়া সন্তানাদি ও পরিবার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। গ্রন্থের প্রায় শেষভাগে ৭২৬–৮৩৬ পৃষ্ঠায় শিবলী নোমানীর চাল-চলন, অভ্যাস ও চরিত্র সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। পাশাপাশি তার সমসাময়িক বিভিন্ন সাহিত্যিক, তার বন্ধুবর্গ এবং বিভিন্ন মাসআলা সম্পর্কে তার আকিদা ও মতামত তুলে ধরা হয়েছে। আর সবশেষে গ্রন্থের শেষ ১০ পৃষ্ঠায় তথা ৮৩৬–৮৪৬ পৃষ্ঠায় শিবলী নোমানীর মৃত্যুতে বিভিন্ন কবি সাহিত্যিকদের শোকগাথা ও কবিতা উল্লেখ করার মাধ্যমে গ্রন্থের ইতি টানা হয়েছে।[২]
মূল্যায়ন
সম্পাদনাগ্রন্থটি সম্পর্কে ড. শামস তাবরীয খান অভিমত ব্যক্ত করে বলেন,[২]
“ | হায়াতে শিবলী জীবনীসাহিত্য রচনা ও ঘটনা বিবরণী সাহিত্য রচনার একটি পূর্ণাঙ্গ মাপকাঠি ও আদর্শিক নমুনা। এতে একজন ব্যক্তির জীবনী রচনার পাশাপাশি শত আন্দোলন এবং সাংস্কৃতিক অবস্থাদির একটি পূর্ণাঙ্গ লেখ্যচিত্র প্রস্তুত করা হয়েছে। | ” |
গ্রন্থটি সম্পর্কে আবুল হাসান আলী নদভীর একটি বক্তব্য হল,
“ | হায়াতে শিবলী দেখতে একজন বিখ্যাত আলিমের ব্যক্তিগত জীবনী বলে মনে হলেও বাস্তবিক এটি মুসলমানদের এক শতাব্দীকালের ধর্মীয়, শিক্ষা, সভ্যতা ও চিন্তাগত উন্নতির ইতিহাস। এটি ব্যতীত তৎকালীন মুসলমানদের জাতীয় স্বভাবধারা ও বর্তমান যুগ সন্ধিক্ষণের বাস্তব অবস্থা বোঝা বড় কঠিন। এর মধ্যে আনুমানিক সব সমসাময়িক আন্দোলন এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিগত সময়ের ইতিবৃত্তি কাহিনি ও ঘটনাপ্রবাহ চলে এসেছে। শুধু এ গ্রন্থেই সৈয়দ সুলাইমান হাজারো পৃষ্ঠার নির্যাস এবং বিশটি গ্রন্থের তথ্য-উপাত্ত একত্রিত করে দিয়েছেন। | ” |
গ্রন্ধটি সম্পর্কে ছবাহ উদ্দীন আব্দুর রহমানের একটি মন্তব্য হল,[২]
“ | গ্রন্থটি একজন সুখ্যাতিসম্পন্ন, মহান মর্যাদাশালী ও মহানুভব উস্তাদের সমীপে একজন জ্ঞানী ছাত্রের আন্তরিক মুহাব্বত ও প্রসন্নতাপূর্ণ উপহার। এতে শিবলী নোমানীর জ্ঞানগত সফলতা ও সব উদ্ভাবন এবং তৎসময়ের সর্ব প্রকার শিক্ষা, সংস্কার, ধর্মীয় ও জাতীয় আন্দোলনে তার সংশ্লিষ্ঠতার বিবরণের সাথে সাথে হিন্দুস্তানের মুসলমানদের পঞ্চাশ বছরের জ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, শিক্ষা ও ধর্ম বিষয়ক ঘটনাপ্রবাহের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। | ” |
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ইমরান, আতিফ (২০২০)। Contribution of Syed Sulaiman Nadvi to Islamic studies [ইসলামিক স্টাডিজে সৈয়দ সুলাইমান নদভীর অবদান] (গবেষণাপত্র)। ভারত: আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ৪২–৪৫। hdl:10603/346360।
- ↑ ক খ গ ঘ বাহারুল ইসলাম, মোহাম্মদ (২০১৭)। উর্দু সাহিত্যে সৈয়দ সুলাইমান নদভীর অবদান (গবেষণাপত্র)। উর্দু বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ১৩২–১৩৭।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- হায়াতে শিবলী–এর উর্দু সংস্করণ