হাজার বছর ধরে
হাজার বছর ধরে প্রখ্যাত বাংলাদেশী ঔপন্যাসিক ও চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান রচিত একটি কালজয়ী সামাজিক উপন্যাস। ১৯৬৪ সালে এ উপন্যাসটির জন্য তিনি আদমজী পুরস্কারে সম্মানিত হন।
লেখক | জহির রায়হান |
---|---|
মূল শিরোনাম | হাজার বছর ধরে |
প্রচ্ছদ শিল্পী | ধ্রুব এষ |
দেশ | বাংলাদেশ |
ভাষা | বাংলা |
ধরন | সামাজিক উপন্যাস |
প্রকাশিত |
|
মিডিয়া ধরন | মুদ্রিত গ্রন্থ |
পৃষ্ঠাসংখ্যা | ৬৪ |
আইএসবিএন | ৯৭৮৯৮৪৪০৪৩৫৭২ |
কাহিনী সংক্ষেপ
সম্পাদনানদী বয়ে চলেছে আপন গতিতে। গাছে গাছে ফুল ফোটে। আকাশে পাখি উড়ে- আপন মনে গান গায়। হাজার বছর ধরে যেই জীবনধারা বয়ে চলেছে, তাতে আশা-নিরাশা, প্রেম-ভালবাসা, চাওয়া-পাওয়ার খেলা চললেও তা সহজে চোখে পড়ে না, অন্ধকারে ঢাকা থাকে। কঠিন অচলায়তন সমাজে আর যাই থাকুক, নারীর কোনো অধিকার নেই। নারী হাতের পুতুল মাত্র। পুরুষ তাকে যেমন নাচায় তেমন নাচে। নিজের ইচ্ছেতে কাউকে বিয়ে করাটা এমন সমাজে অপরাধ, গুরুতর অপরাধ। অন্ধকার এই সমাজে আনাচে কানাচে বাস করে কুসংস্কার, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, নারী নির্যাতন। পরীর দীঘির পাড়ের একটি গ্রামকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে কাহিনী। কখন এই গ্রামের গোড়াপত্তন হয়েছিল কেউ বলতে পারে না। এক বন্যায় “কাশেম শিকদার” আর তার বউ “ছমিরন বিবি” বানের পানিতে ভেলায় ভাসতে ভাসতে এসে ঠাঁই নিয়েছিল এই জায়গায়। সেই থেকে এখানে পত্তন হয়েছে শিকদার বাড়ির।
শিকদার বাড়িতে বাস করে বৃদ্ধ “মকবুল” ও তার তিন স্ত্রী সহ “আবুল”, “রশিদ”, “ফকিরের মা” ও “মন্তু” এবং আরো অনেকে। বৃদ্ধ মকবুলের চতুর্দশবর্ষী বউ টুনির মনটা মকবুলের শাসন মানতে চায় না। সে চায় খোলা আকাশের নিচে বেড়াতে, হাসতে, খেলতে। তাই সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয় অল্প বয়সী সুঠামদেহী মন্তুকে। মন্তু বাবা-মা হারা, অনাথ। বিভিন্ন কাজ করে বেড়ায়। টুনি আর মন্তু সকলের অগোচরে রাতের বেলায় বেরিয়ে পড়ে মাছ ধরতে। বর্ষায় যায় শাপলা তুলতে। এমনি করে দুজন দুজনার কাছে এসে যায়। অব্যক্ত ভালবাসার জোয়ারে ভাসে ওরা দু’জন। কিন্ত কেউ মুখ ফুঁটে বলতে পারেনা মনের কথা, লোক লজ্জার ভয়ে। সমাজের রক্ত চক্ষু ওদের দূরে রাখে।
গ্রাম-বাংলায় যা হয়, কলেরা বসন্তের বাতাস লাগলে উজাড় হয়ে যায় কয়েক ঘর মানুষ। ডাক্তার না দেখিয়ে তারা টুকটাক তাবিজ করে, এভাবেই দিন চলে। মকবুলের আকস্মিক মৃত্যুর পর মন্তু যখন মনের কথা টুনিকে খুলে বলে তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। গনু মোল্লা, রশিদ, ফকিরের মা, সালেহা কেউই নেই। টুনির সঙ্গে মন্তুর অনেক দিন দেখা হয়নি। টুনি হারিয়ে গেছে ওর জীবন থেকে। তবুও টুনিকে মাঝে মাঝে মনে পড়ে মন্তুর। এমনি করে অনেকটা সময় পার হয়েছে। রাতের বেলা সুরত আলীর ছেলে ওর বাপের মতোই পুঁথি করে- “শোন শোন বন্ধুগনে শোন দিয়া মন, ভেলুয়ার কথা কিছু শোন সর্বজন।” ভেলুয়া সুন্দরীর কথা সবাই শোনে। একই তালে, একই সুরে হাজার বছরের অন্ধকার এক ইতিহাস নিয়ে এগিয়ে চলে সবাই। হাজার বছরের পুরনো জোৎস্না ভরা রাতে একই পুঁথির সুর ভেসে বেড়ায় বাতাসে।
কালের আবর্তে সময় গড়ায়। প্রকৃতিতেও পরিবর্তন আসে। শুধু পরিবর্তন আসেনা অন্ধকার, কুসংস্কারাচ্ছন্ন গ্রাম বাংলার আচলায়াতন সমাজে।
চরিত্রসমূহ
সম্পাদনা- বুড়ো মকবুল - শিকদার বাড়ির প্রধান ও মুরব্বি
- আমেনা - বুড়ো মকবুলের প্রথম স্ত্রী
- ফাতেমা - বুড়ো মকবুলের দ্বিতীয় স্ত্রী
- টুনি - বুড়ো মকবুলের তৃতীয়া স্ত্রী ও উপন্যাসের নায়িকা
- মন্তু - উপন্যাসের মূলচরিত্র ( মকবুলের দুঃসম্পর্কের ভাই)
- আম্বিয়া - করিমের বোন, উপন্যাসের শেষ পর্যায়ে মন্তুর স্ত্রী
- ফকিরের মা - প্রতিবেশী
- আবুল - প্রতিবেশী
- হালিমা - আবুলের স্ত্রী
- গনু মোল্লা - ধর্মীয় ব্যক্তি (প্রতিবেশী)
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনাজহির রায়হান হাজার বছর ধরে উপন্যাসের জন্য ১৯৬৪ সালে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।
রূপায়ন
সম্পাদনাচলচ্চিত্র
সম্পাদনা২০০৫ সালে জহির রায়হানের দ্বিতীয়া স্ত্রী কোহিনুর আক্তার সুচন্দা হাজার বছর ধরে উপন্যাস অবলম্বনে একই নামে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।[১] এ চলচ্চিত্রে প্রধান দুটি চরিত্র মন্তু ও টুনির ভুমিকায় যথাক্রমে রিয়াজ ও শশী অভিনয় করেন। এছাড়াও শাহনুর, সুচন্দা, এটিএম শামসুজ্জামান বিভিন্ন চরিত্র চিত্রায়িত করেছেন। চলচ্চিত্রটি সমালোচক ও দর্শকদের কাছে বেশ প্রশংসিত হয়। সেবছর এটি ছয়টি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নেয়।[২] এছাড়াও তিনটি বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার অর্জন করে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "জহির রায়হানের হাজার বছর ধরে'র টুনি"। দৈনিক প্রথম আলো। ৩০ ডিসেম্বর ২০১১। ৭ মে ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানুয়ারি ২০১৬।
- ↑ "হাজার বছর ধরে"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০১-৩০।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- গুডরিডস এ হাজার বছর ধরে উপন্যাস