হাইনরিখ হের্ত্‌স

জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী
(হাইনরিখ রুডল্‌ফ হের্‌ৎস থেকে পুনর্নির্দেশিত)

হাইনরিখ রুডল্ফ হের্ত্‌‌স (জার্মান: Heinrich Rudolf Hertz; জার্মান: [hɛʁʦ]); ২২ ফেব্রুয়ারি ১৮৫৭ – ১ জানুয়ারি ১৮৯৪) বা প্রচলিত ভাষায় হেনরিখ হার্টজ ছিলেন একজন জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি প্রথম সন্দেহাতীতভাবে তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন, যা এর পূর্বে জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েলের আলোর তাড়িতচৌম্বক তত্ত্বের মাধ্যমে অনুমান করা হয়েছিল। ১৮৮৮ সালে তিনি সর্বপ্রথম একটি যন্ত্রের সাহায্যে অত্যন্ত উচ্চ কম্পাঙ্কের বেতার তরঙ্গ তৈরি ও শনাক্ত করেন এবং এর সাহায্যে তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন। তার নামেই কম্পাঙ্কের আন্তর্জাতিক এককের নামকরণ করা হয়েছে হার্জ[]

হাইনরিখ রুডল্ফ হের্ত্‌‌স
হার্টজ, আনু. ১৮৯০
জন্ম
হাইনরিখ রুডল্ফ হের্ত্‌‌স

(১৮৫৭-০২-২২)২২ ফেব্রুয়ারি ১৮৫৭
মৃত্যু১ জানুয়ারি ১৮৯৪(1894-01-01) (বয়স ৩৬)
সমাধিওলসডর্ফ কবরস্থান, হামবুর্গ
মাতৃশিক্ষায়তনবার্লিন বিশ্ববিদ্যালয় (পিএইচডি)
পরিচিতির কারণ
দাম্পত্য সঙ্গীএলিজাবেথ ডল (বি. ১৮৮৬)
সন্তান২ জন, যার মধ্যে মাথিল্ডে উল্লেখযোগ্য
পিতা-মাতা
আত্মীয়গুস্তাভ লুডভিগ হার্টজ (ভাইপো)
পুরস্কারমাতেউচ্চি পদক (১৮৮৮)
রামফোর্ড পদক (১৮৯০)
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রপদার্থবিজ্ঞান
প্রতিষ্ঠানসমূহ
ডক্টরাল উপদেষ্টাsহারমান ফন হেল্মহলৎস
গুস্তাভ কিরশহফ

হেইনরিখ রুডলফ হার্টজ ১৮৫৭ সালে হামবুর্গ শহরে জন্মগ্রহণ করেন, যা তখন জার্মান কনফেডারেশন-এর একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল। তিনি একটি সমৃদ্ধ এবং শিক্ষিত হানসিয়াটিক পরিবারের সন্তান ছিলেন। তার পিতার নাম ছিল গুস্তাভ ফার্দিনান্ড হার্টজ[] তার মায়ের নাম ছিল আনা এলিসাবেথ ফেফারকর্ন।[]

হামবুর্গের গেলেহর্টেনশুলে দেস জোহানেউমস-এ পড়াশোনা করার সময় হার্টজ বিজ্ঞানের পাশাপাশি ভাষাতেও প্রতিভার পরিচয় দেন। তিনি আরবি শেখেন। পরে তিনি জার্মানির ড্রেসডেন, মিউনিখ, এবং বার্লিন-এ বিজ্ঞান ও প্রকৌশল নিয়ে পড়াশোনা করেন। বার্লিনে তিনি গুস্তাভ আর. কির্চহফ এবং হার্মান ফন হেল্মহোল্টজ-এর অধীনে পড়াশোনা করেন। ১৮৮০ সালে তিনি বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি অর্জন করেন। পরবর্তী তিন বছর তিনি হেল্মহোল্টজের অধীনে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণার জন্য থেকে যান এবং তার সহকারী হিসেবে কাজ করেন। ১৮৮৩ সালে তিনি কিয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। ১৮৮৫ সালে তিনি কার্লসরুহে বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণ অধ্যাপক হন।[]

১৮৮৬ সালে হার্টজ এলিজাবেথ ডল-এর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এলিজাবেথ ছিলেন কার্লসরুহের জ্যামিতি বিষয়ের লেকচারার ম্যাক্স ডল-এর কন্যা। তাদের দুই কন্যা ছিল: জোহানা, যার জন্ম ২০ অক্টোবর ১৮৮৭ সালে এবং মাথিল্ড, যার জন্ম ১৪ জানুয়ারি ১৮৯১ সালে। মাথিল্ড পরবর্তীতে একজন বিশিষ্ট জীববিজ্ঞানী হন। এই সময়ে হার্টজ বৈদ্যুতিক চৌম্বক তরঙ্গ নিয়ে তার গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা সম্পন্ন করেন।[]

১৮৮৯ সালের ৩ এপ্রিল হার্টজ বন বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক এবং পদার্থবিদ্যা ইনস্টিটিউটের পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি এই পদে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। এই সময়ে তিনি তাত্ত্বিক বলবিদ্যা নিয়ে কাজ করেন। তার কাজ ডি প্রিন্সিপিয়েন ডার মেকানিক ইন নোয়েম জুসামেনহাং দারগেশটেল্ট (বলবিদ্যার নীতিগুলো একটি নতুন রূপে উপস্থাপন) শিরোনামে একটি বইয়ে সংকলিত হয়, যা তার মৃত্যুর পর ১৮৯৪ সালে প্রকাশিত হয়।[]

মৃত্যু

সম্পাদনা

১৮৯২ সালে হার্টজ গুরুতর মাইগ্রেন-এর পর একটি সংক্রমণে আক্রান্ত হন। অসুস্থতার চিকিৎসার জন্য তার অস্ত্রোপচার করা হয়। তবে অস্ত্রোপচারের জটিলতায় তিনি মারা যান। ধারণা করা হয়, তার অসুস্থতার কারণ ছিল একটি মারাত্মক হাড়ের রোগ।[]

১৮৯৪ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে জার্মানির বন শহরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাকে হামবুর্গ শহরের ওলসডর্ফ কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।[][][১০]

হার্টজের স্ত্রী, এলিজাবেথ হার্টজ (née ডল; ১৮৬৪–১৯৪১), আর কখনও বিয়ে করেননি। হার্টজ তার দুই কন্যা, জোহানা (১৮৮৭–১৯৬৭) এবং মাথিল্ড (১৮৯১–১৯৭৫)-কে রেখে গিয়েছিলেন। তবে তাদের কেউই বিয়ে করেননি বা সন্তানের জন্ম দেননি। ফলে হার্টজের আর কোনও জীবিত বংশধর নেই।[১১]

গবেষণা

সম্পাদনা

তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ

সম্পাদনা
১৮৮৭ সালে হার্টজের তৈরি রেডিও তরঙ্গ উৎপাদন ও সনাক্তকরণের যন্ত্র: একটি স্পার্ক-গ্যাপ ট্রান্সমিটার (বামে) যা ডিপোল অ্যান্টেনা এবং একটি স্পার্ক গ্যাপ (S) নিয়ে গঠিত। এটি একটি রুহমকর্ফ কয়েল (T) থেকে উচ্চ ভোল্টেজের পালসের মাধ্যমে চালিত। ডানপাশে একটি রিসিভার রয়েছে, যা একটি লুপ অ্যান্টেনা এবং স্পার্ক গ্যাপ দিয়ে গঠিত।
হার্টজের একটি রেডিও তরঙ্গ রিসিভার: একটি লুপ অ্যান্টেনা যার নিচের অংশে একটি সামঞ্জস্যযোগ্য স্পার্ক মাইক্রোমিটার রয়েছে।[১২]

১৮৬৪ সালে, স্কটিশ গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানী জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল তড়িৎচুম্বকত্বের একটি পূর্ণাঙ্গ তত্ত্ব প্রস্তাব করেন, যা বর্তমানে ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণ নামে পরিচিত। ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্ব অনুযায়ী, যুক্ত তড়িৎ ক্ষেত্র এবং চৌম্বক ক্ষেত্র মহাশূন্যে "তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ" আকারে ভ্রমণ করতে পারে। ম্যাক্সওয়েল প্রস্তাব করেন যে আলো আসলে স্বল্প তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ। তবে কেউ এটি প্রমাণ করতে পারেনি বা অন্যান্য তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ তৈরি বা সনাক্ত করতে সক্ষম হয়নি।[১৩]

হের্টজ ১৮৭৯ সালে তার গবেষণার সময় হেলমহল্টজ প্রস্তাব করেছিলেন যে, হের্টজের ডক্টরাল গবেষণার বিষয় হতে পারে ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্ব পরীক্ষা করা। সেই বছর হেলমহল্টজ প্রুশিয়ান বিজ্ঞান একাডেমি-তে "বার্লিন পুরস্কার" সমস্যাটি প্রস্তাব করেন। এটি এমন কোনো পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে যে নিরোধকের পোলারাইজেশন ও ডিপোলারাইজেশনে একটি বৈদ্যুতিক চৌম্বকীয় প্রভাব রয়েছে, যা ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্ব দ্বারা পূর্বাভাস করা হয়েছিল।[১৪][১৫] হেলমহল্টজ নিশ্চিত ছিলেন যে হের্টজই এটি জেতার সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী।[১৫]

কিন্তু হের্টজ উপযুক্ত যন্ত্রপাতি তৈরি করার কোনো উপায় দেখতে পাননি এবং একে খুবই কঠিন মনে করেছিলেন। এর পরিবর্তে, তিনি বৈদ্যুতিক চৌম্বকীয় প্রবর্তন নিয়ে কাজ শুরু করেন। কিয়েলে থাকার সময় তিনি ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণ বিশ্লেষণ করেন এবং দেখান যে এটি "দূর থেকে প্রভাবের" তত্ত্বের চেয়ে বেশি বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রাখে।[১৬]

১৮৮৬ সালের শরতে, কার্লসরুহেতে অধ্যাপকের পদ পাওয়ার পর, হের্টজ রিস স্পাইরাল নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছিলেন। তখন তিনি লক্ষ্য করেন, একটি লেইডেন জার-এর মাধ্যমে এক কুণ্ডলে বৈদ্যুতিক চার্জ প্রবাহিত করলে, অপর কুণ্ডলে স্পার্ক তৈরি হয়। তখন তিনি উপলব্ধি করেন যে, ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্ব প্রমাণের জন্য তিনি একটি যন্ত্রপাতি তৈরি করতে পারবেন (যদিও ১৮৭৯ সালের "বার্লিন পুরস্কার" ১৮৮২ সালে অলঙ্ঘিত অবস্থায় মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছিল)।[১৭][১৮]

হের্টজ একটি ডাইপোল অ্যান্টেনা ব্যবহার করেন, যার মধ্যে দুইটি সমান্তরাল এক মিটার দৈর্ঘ্যের তার ছিল এবং তাদের ভেতরের প্রান্তে একটি স্পার্ক গ্যাপ ছিল। তার বাইরের প্রান্তে সংযুক্ত ছিল দস্তার গোলক, যা ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়। অ্যান্টেনাটি রুহমকর্ফ কয়েল থেকে প্রাপ্ত প্রায় ৩০ কিলোভোল্ট উচ্চ ভোল্টেজ পালস দ্বারা উত্তেজিত হতো। তিনি তরঙ্গ গ্রহণ করেন একটি রেজোন্যান্ট একক লুপ অ্যান্টেনার মাধ্যমে, যার প্রান্তে একটি স্পার্ক মাইক্রোমিটার ছিল। এই পরীক্ষার মাধ্যমে, বর্তমানে রেডিও তরঙ্গ নামে পরিচিত বেশ।

 
হের্টজের প্রথম রেডিও ট্রান্সমিটার: এটি একটি ধারণক্ষমতা যুক্ত ডাইপোল রেজোনেটর, যা একজোড়া এক মিটার দীর্ঘ কপার তার দিয়ে তৈরি। এর মধ্যে ৭.৫ মিমি স্পার্ক গ্যাপ রয়েছে এবং প্রান্তগুলোতে ৩০ সেন্টিমিটার দস্তার গোলক স্থাপন করা হয়েছে।[১২] ইনডাকশন কয়েল দ্বারা দুটি প্রান্তে উচ্চ ভোল্টেজ প্রয়োগ করার ফলে স্পার্ক তৈরি হয়। এই স্পার্কের ফলে তারগুলোতে স্থায়ী তরঙ্গ তৈরি হয়, যা রেডিও তরঙ্গ হিসেবে বিকিরণ করে। এই তরঙ্গের ফ্রিকোয়েন্সি ছিল প্রায় ৫০ মেগাহার্জ, যা আধুনিক টেলিভিশন ট্রান্সমিটারে ব্যবহৃত হয়।

১৮৮৬ থেকে ১৮৮৯ সালের মধ্যে হের্টজ ধারাবাহিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে তিনি যেসব প্রভাব পর্যবেক্ষণ করছিলেন, সেগুলো ম্যাক্সওয়েলের পূর্বাভাস অনুযায়ী তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের ফলাফল। ১৮৮৭ সালের নভেম্বর মাসে তিনি "On Electromagnetic Effects Produced by Electrical Disturbances in Insulators" শিরোনামে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। এরপর ১৮৮৮ সালে বার্লিন একাডেমিতে হেলমহল্টজের কাছে একাধিক গবেষণাপত্র প্রেরণ করেন। এসব পত্রে তিনি দেখান যে মুক্ত মহাকাশে অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ একটি নির্দিষ্ট গতিতে চলতে পারে।[১৮][১৯]

হের্টজ তার পরীক্ষায় অসিলেটর প্রায় ১২ মিটার দূরে একটি দস্তার প্রতিফলক প্লেটের সামনে স্থাপন করেন। এর ফলে স্থায়ী তরঙ্গ তৈরি হয়। প্রতিটি তরঙ্গ ছিল প্রায় ৪ মিটার দীর্ঘ।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] রিং ডিটেক্টরের সাহায্যে তিনি তরঙ্গের মাত্রা এবং এর বিভিন্ন উপাদানের দিক নির্ধারণ করেন।

তিনি ম্যাক্সওয়েলের তরঙ্গ পরিমাপ করেন এবং দেখান যে এসব তরঙ্গের গতি আলোকে সমান। তরঙ্গের তড়িৎ ক্ষেত্রের তীব্রতা, তরঙ্গের মেরুকরণ, এবং প্রতিফলনও তিনি পরীক্ষা করেন।

এই পরীক্ষাগুলো প্রমাণ করে যে আলো এবং এই তরঙ্গগুলো উভয়ই তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণের রূপ, যা ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণের নিয়ম মেনে চলে।[২০]

হের্টজের দিকনির্দেশক স্পার্ক ট্রান্সমিটার (মাঝে), যা একটি হাফ-ওয়েভ ডাইপোল অ্যান্টেনা। এটি দুইটি ১৩ সেন্টিমিটার পিতলের রড দিয়ে তৈরি, যার কেন্দ্রে একটি স্পার্ক গ্যাপ রয়েছে (বড় ছবি বামে) এবং এটি রুহমকর্ফ কয়েল দ্বারা চালিত। অ্যান্টেনাটি ১.২ মিটার x ২ মিটার আকারের ধাতব শীটের প্যারাবলিক রিফ্লেক্টর-এর ফোকাল লাইনে স্থাপন করা হয়েছে।[২১] এটি ৬৬ সেন্টিমিটার তরঙ্গের একটি রশ্মি বিকিরণ করে যার ফ্রিকোয়েন্সি প্রায় ৪৫০ মেগাহার্জ। রিসিভার (ডানে)ও একই ধরনের প্যারাবলিক ডাইপোল অ্যান্টেনা যার সাথে স্পার্ক মাইক্রোমিটার সংযুক্ত।
হের্টজের রেডিও তরঙ্গের পোলারাইজেশন প্রদর্শন: রিসিভারটি কোনো সংকেত গ্রহণ করে না যখন অ্যান্টেনাগুলো পরস্পরের লম্ব অবস্থায় থাকে, কিন্তু রিসিভার ঘোরানোর সঙ্গে সঙ্গে সংকেত শক্তিশালী হয় (যা স্পার্কের দৈর্ঘ্যে বোঝা যায়) এবং সর্বাধিক হয় যখন ডাইপোলগুলো সমান্তরাল অবস্থায় থাকে।[২১]
পোলারাইজেশনের আরেকটি প্রদর্শনী: তরঙ্গগুলো পোলারাইজিং ফিল্টারের মধ্য দিয়ে রিসিভারে পৌঁছায় শুধুমাত্র তখনই যখন তারগুলো ডাইপোলের লম্ব অবস্থায় থাকে (A), কিন্তু সমান্তরাল অবস্থায় থাকে না (B)[২১]
প্রতিসরণ প্রদর্শনী: যখন তরঙ্গগুলো পিচ প্রিজমের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে, তখন এগুলো বাঁক নেয়। এটি আলো তরঙ্গের কাঁচ প্রিজমে প্রতিসরণের মতো।[২১]
একটি ধাতব পাতের প্রতিফলন থেকে তৈরি স্থায়ী তরঙ্গের হের্টজের চিত্র

হের্টজ তার রেডিও তরঙ্গ পরীক্ষাগুলোর ব্যবহারিক গুরুত্ব বুঝতে পারেননি। তিনি বলেছিলেন,[২২][২৩][২৪]

এর কোনো ব্যবহার নেই... এটা কেবল একটা পরীক্ষা যা প্রমাণ করে যে ম্যাস্ট্রো ম্যাক্সওয়েল সঠিক ছিলেন—আমাদের এই রহস্যময় তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গগুলো রয়েছে যা আমরা খালি চোখে দেখতে পারি না। কিন্তু তারা সেখানে আছে।

তার আবিষ্কারগুলোর ব্যবহারিক প্রয়োগ সম্পর্কে জানতে চাইলে হের্টজ উত্তর দিয়েছিলেন,[২২][২৫]

আমার ধারণা, কিছুই না।

হের্টজের পরীক্ষার মাধ্যমে আকাশপথে তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের অস্তিত্ব প্রমাণিত হওয়ার পর এই নতুন ধরনের তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা শুরু হয়। এই তরঙ্গগুলোকে "হের্টজিয়ান তরঙ্গ" বলা হতো, যা ১৯১০ সালের দিকে "রেডিও তরঙ্গ" নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। পরবর্তী দশ বছরের মধ্যে অলিভার লজ, ফার্ডিনান্ড ব্রাউন এবং গুলিয়েলমো মার্কনি রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে প্রথম তারেরবিহীন টেলিগ্রাফি এবং রেডিও যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করেন। এর মাধ্যমেই রেডিও সম্প্রচার এবং পরে টেলিভিশনের সূচনা হয়। ১৯০৯ সালে ব্রাউন এবং মার্কনি "তারেরবিহীন টেলিগ্রাফির উন্নয়নে অবদানের জন্য" পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পান।[২৬]

আজকের দিনে, রেডিও বৈশ্বিক টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের একটি অপরিহার্য প্রযুক্তি এবং আধুনিক তারবিহীন ডিভাইসের জন্য যোগাযোগের একটি মাধ্যম।[২৭][২৮]

ক্যাথোড রশ্মি

সম্পাদনা

১৮৮৩ সালে, হের্টজ প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে ক্যাথোড রশ্মি তড়িৎ নিরপেক্ষ। তিনি এক্সপেরিমেন্টে এমন একটি ফলাফল পান, যা তিনি ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক ক্ষেত্রের অভাবে তির্যক না হওয়া হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। তবে, জে. জে. থমসন ১৮৯৭ সালে ব্যাখ্যা করেন যে হের্টজ পরীক্ষায় তির্যক ইলেকট্রোডগুলোকে টিউবের একটি উচ্চ-পরিবাহী অঞ্চলে স্থাপন করেছিলেন। এর ফলে, ইলেকট্রোডগুলোর পৃষ্ঠের কাছে একটি শক্তিশালী স্ক্রিনিং প্রভাব সৃষ্টি হয়েছিল।[২৯] নয় বছর পর হের্টজ ক্যাথোড রশ্মি নিয়ে পরীক্ষা শুরু করেন এবং প্রমাণ করেন যে ক্যাথোড রশ্মি খুব পাতলা ধাতব ফয়েল (যেমন অ্যালুমিনিয়াম) ভেদ করতে পারে। হাইনরিখ হের্টজের ছাত্র ফিলিপ লেনার্ড এই "রশ্মি প্রভাব" নিয়ে আরও গবেষণা করেন। তিনি ক্যাথোড টিউবের একটি সংস্করণ তৈরি করেন এবং এক্স-রশ্মির মাধ্যমে বিভিন্ন পদার্থে প্রবেশ ক্ষমতা অধ্যয়ন করেন। তবে, লেনার্ড বুঝতে পারেননি যে তিনি এক্স-রশ্মি উৎপাদন করছিলেন। হার্মান ভন হেল্মহল্টজ এক্স-রশ্মির জন্য গাণিতিক সমীকরণ তৈরি করেন। তিনি উইলহেম কনরাড রন্টজেন এই আবিষ্কারটি করার ও ঘোষণা দেওয়ার আগে একটি বিভাজন তত্ত্ব প্রস্তাব করেছিলেন। এটি আলো সম্পর্কিত তড়িৎচুম্বকীয় তত্ত্বের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছিল (Wiedmann's Annalen, Vol. XLVIII)। তবে, তিনি প্রকৃত এক্স-রশ্মি নিয়ে কাজ করেননি।[৩০]

আলোক-তড়িৎ প্রভাব

সম্পাদনা

হের্টজ ফটোইলেকট্রিক প্রভাব প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন (যা পরে আলবার্ট আইনস্টাইন ব্যাখ্যা করেছিলেন)। তিনি লক্ষ্য করেন যে একটি চার্জযুক্ত বস্তু অতিবেগুনী বিকিরণ (UV) দ্বারা আলোকিত হলে দ্রুত তার চার্জ হারায়। ১৮৮৭ সালে, তিনি ফটোইলেকট্রিক প্রভাব এবং তড়িৎচুম্বকীয় (EM) তরঙ্গ উৎপাদন ও গ্রহণের পর্যবেক্ষণ করেন। এটি Annalen der Physik জার্নালে প্রকাশিত হয়।

তার রিসিভার একটি কয়েল এবং স্পার্ক গ্যাপ নিয়ে গঠিত ছিল। ইএম তরঙ্গ সনাক্ত হলে একটি স্পার্ক দেখা যেত। স্পার্ক ভালোভাবে দেখার জন্য তিনি যন্ত্রটি একটি অন্ধকার বাক্সে রাখেন। তিনি লক্ষ্য করেন, বাক্সে থাকার সময় স্পার্কের সর্বাধিক দৈর্ঘ্য কমে যায়। ইএম তরঙ্গের উৎস ও রিসিভারের মধ্যে একটি কাঁচের প্যানেল রাখলে অতিবেগুনী বিকিরণ (UV) শোষিত হয়। এটি ইলেকট্রনকে স্পার্ক গ্যাপ অতিক্রমে সহায়তা করত। কাঁচ সরানোর পর স্পার্কের দৈর্ঘ্য বাড়ত। কাঁচের পরিবর্তে যখন তিনি কোয়ার্টজ ব্যবহার করেন, তখন কোনো হ্রাস দেখা যায়নি, কারণ কোয়ার্টজ UV বিকিরণ শোষণ করে না।

হের্টজ তার কয়েক মাসের গবেষণা শেষ করেন এবং প্রাপ্ত ফলাফল রিপোর্ট করেন। তবে তিনি এই প্রভাব নিয়ে আর কোনো গভীর অনুসন্ধান চালাননি, বা পর্যবেক্ষণকৃত ঘটনা কীভাবে ঘটে তা ব্যাখ্যা করার কোনো প্রচেষ্টাও করেননি।[৩১]

সংস্পর্শ বলবিজ্ঞান

সম্পাদনা
 
কার্লসরু ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি ক্যাম্পাসে হাইনরিখ হের্টজ স্মৃতিসৌধ, যেখানে লেখা, এই স্থানে, হাইনরিখ হের্টজ ১৮৮৫-১৮৮৯ সালে তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ আবিষ্কার করেন।

১৮৮১ এবং ১৮৮২ সালে, হের্টজ দুটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন[৩২][৩৩][৩৪], যা পরবর্তীতে সংস্পর্শ বলবিজ্ঞান নামে পরিচিত হয়। এটি ভবিষ্যতের তত্ত্বগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসাবে প্রমাণিত হয়।

জোসেফ ভ্যালেন্টিন বুসিনেস্ক হের্টজের কাজ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করেন। তিনি এই কাজকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রমাণ করেন। হের্টজের কাজ মূলত বর্ণনা করে, কীভাবে দুটি অক্ষ-সমমিত বস্তু যোগাযোগে এসে চাপ প্রয়োগের অধীনে আচরণ করবে। তিনি ইলাস্টিসিটি এবং ধারাবাহিক যান্ত্রিকতা তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে ফলাফল পান।

তবে তার তত্ত্বের সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা ছিল যে, তিনি দুটি কঠিন পদার্থের মধ্যে আসঞ্জন-এর প্রকৃতি উপেক্ষা করেছিলেন। এটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, যখন পদার্থগুলো উচ্চ ইলাস্টিসিটি ধারণ করতে শুরু করে। সেই সময়ে আসঞ্জন উপেক্ষা করা স্বাভাবিক ছিল, কারণ এটি পরীক্ষার কোনো কার্যকর পদ্ধতি তখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত হয়নি।[৩৫]

হের্টজ তার তত্ত্ব বিকাশে নিউটনের রিং নিয়ে পরীক্ষা করেছিলেন। তিনি লক্ষ্য করেন, একটি কাচের গোলককে একটি লেন্সের উপর রাখলে একটি উপবৃত্তাকার নিউটনের রিং গঠন হয়। তিনি অনুমান করেন যে, গোলকটির চাপ একটি উপবৃত্তাকার বন্টন অনুসরণ করে। তার তত্ত্বটি পরীক্ষা করার সময়, তিনি গোলকটি লেন্সে যতটুকু গভীরতা পর্যন্ত প্রবেশ করেছে তা নির্ণয়ে নিউটনের রিং ব্যবহৃত করেন।

১৯৭১ সালে কেনেথ এল. জনসন, কে. কেন্ডাল এবং এ. ডি. রবার্টস (JKR) হের্টজের তত্ত্ব ব্যবহার করে একটি নতুন তত্ত্ব প্রণয়ন করেন। এটি আসঞ্জন উপস্থিত থাকলে গোলকের সৃষ্ট স্থানচ্যুতি বা অনুপ্রবেশ গভীরতা নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।[৩৬] যদি উপকরণগুলোর আসঞ্জন শূন্য ধরে নেওয়া হয়, তবে তাদের তত্ত্ব থেকে হের্টজের তত্ত্ব পুনরুদ্ধার করা যায়।

একইভাবে, কিন্তু ভিন্ন অনুমানের উপর ভিত্তি করে, বরিস ডেরজাগুইন, ভি. এম. মুলার এবং ওয়াই. পি. টোপোরভ ১৯৭৫ সালে একটি নতুন তত্ত্ব প্রকাশ করেন। গবেষণা মহলে এটি DMT তত্ত্ব নামে পরিচিত হয়। শূন্য আসঞ্জন ধরে নিলে এই তত্ত্ব থেকেও হের্টজের ফলাফল পুনরুদ্ধার করা যায়। যদিও DMT তত্ত্বটি প্রথমে অপরিপক্ক ছিল এবং গ্রহণযোগ্য হওয়ার আগে একাধিক সংশোধনের প্রয়োজন হয়।

DMT এবং JKR তত্ত্ব উভয়ই সংস্পর্শ বলবিজ্ঞানর ভিত্তি তৈরি করে। এগুলোর উপর ভিত্তি করে সমস্ত পরিবর্তনশীল যোগাযোগ মডেল তৈরি হয়েছে এবং ন্যানোইনডেন্টেশন এবং অ্যাটোমিক ফোর্স মাইক্রোস্কোপিতে উপাদান পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই মডেলগুলো ট্রাইবোলজি ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হের্টজকে ডানকান ডাউসন দ্বারা "ঘর্ষণবিদ্যার ২৩ জন ব্যক্তি"-এর একজন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।[৩৭]

তার তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ নিয়ে গবেষণার (যা তিনি নিজে তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন না[২২]) আগেও হের্টজের সংস্পর্শ বলবিজ্ঞান সম্পর্কিত গবেষণা ন্যানোটেকনোলজির যুগকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করেছে।

হের্টজ হের্টজিয়ান শঙ্কু সম্পর্কেও বর্ণনা করেছিলেন। এটি ভঙ্গুর পদার্থে ভঙ্গুর প্রক্রিয়ার একটি ধরন, যা চাপ তরঙ্গের প্রভাবের ফলে ঘটে।[৩৮]

আবহাওয়াবিজ্ঞান

সম্পাদনা

হের্টজের সব সময় আবহাওয়াবিজ্ঞানের প্রতি গভীর আগ্রহ ছিল, যা সম্ভবত তার ভিলহেল্ম ভন বেজোল্ড-এর সঙ্গে সম্পর্কের কারণে সৃষ্টি হয়েছিল। বেজোল্ড ছিলেন তার অধ্যাপক, যিনি ১৮৭৮ সালের গ্রীষ্মে মিউনিখ পলিটেকনিকের একটি ল্যাব কোর্সে তাকে শিক্ষা দিয়েছিলেন। বের্লিন-এ হেলমহোল্টজ এর সহকারী হিসেবে কাজ করার সময়, হের্টজ কিছু ছোটখাটো প্রবন্ধ লিখেছিলেন, যার মধ্যে ছিল তরল বাষ্পীভবন সম্পর্কিত গবেষণা,[৩৯] একটি নতুন ধরনের হাইগ্রোমিটার, এবং অ্যাডিয়াবেটিক পরিবর্তনের মাধ্যমে আর্দ্র বায়ুর বৈশিষ্ট্য নির্ধারণের জন্য একটি গ্রাফিক পদ্ধতি।[৪০]

বিজ্ঞান দর্শন

সম্পাদনা

১৮৯৪ সালে তার বই প্রিন্সিপলস অব মেকানিক্স-এর ভূমিকার মধ্যে, হের্টজ তার সময়ের মধ্যে ব্যবহার করা বিভিন্ন "ছবি" নিয়ে আলোচনা করেন, যার মধ্যে ছিল নিউটনের মেকানিক্স (যা ভর এবং বলের উপর ভিত্তি করে), একটি দ্বিতীয় ছবি (যা শক্তির সংরক্ষণ এবং হ্যামিলটনের সুত্র এর উপর ভিত্তি করে) এবং তার নিজের ছবি (যা শুধুমাত্র স্থান, সময়, ভর এবং হের্টজের ন্যূনতম বাঁক তত্ত্ব এর উপর ভিত্তি করে), এগুলোকে তিনি 'অনুমোদনযোগ্যতা', 'সঠিকতা' এবং 'উপযুক্ততা' এর দৃষ্টিতে তুলনা করেন।[৪১] হের্টজ "খালি অনুমান" দূর করতে এবং নিউটনের বল ধারণা এবং দূরত্বে ক্রিয়া তত্ত্বের বিরুদ্ধে যুক্তি দিতে চেয়েছিলেন।[৪১] দার্শনিক লুডভিগ উইটটেনস্টাইন হের্টজের কাজ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তার ছবি তত্ত্বটি ১৯২১ সালে ট্র্যাকটাটাস লজিকো-ফিলসফিকাস-এ ভাষার ছবি তত্ত্বে বিস্তৃত করেন, যা যৌক্তিক পজিটিভিজম-এর উপর প্রভাব ফেলেছিল।[৪১] উইটটেনস্টাইন ব্লু অ্যান্ড ব্রাউন বুকস-এ তাকে উদ্ধৃত করেছেন।[৪২]

নাৎসি বাহিনীর অত্যাচার

সম্পাদনা

হেনরিক হার্টজ সারা জীবন এক জন লুথেরিয়ান ছিলেন এবং সে কখনই নিজেকে ইহুদি ধর্মালম্বীদের এক জন বলে মনে করেননি৷ কারণ ১৮৩৪ সালে তার বাবার পরিবারের সবাই তাদের ধর্ম পরিবর্তন করে লুথেরানিজম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন [৪৩] যখন তার বাবার বয়স সাত বছর ছিল৷ [৪৪]

তা সত্ত্বেও হার্টজের মৃত্যুর অনেকদিন পর যখন নাৎসি শাসনতন্ত্র ক্ষমতায় আসে তখন তারা তার ছবি হ্যামবার্গ সিটি হলের (রাথাউস) বিখ্যাত সম্মানজনক স্থান থেকে সরিয়ে নেন৷ এর মূল কারণ ছিল তার আংশিক ইহুদী বংশানুক্রম৷ ( এর পর তার ছবি জনসাধারণের প্রদর্শনের জন্য রেখে দেওয়া হয়[৪৫]) ১৯৩০ সালে হার্টজের বিধবা স্ত্রী এবং তার কন্যারা জার্মানি ছেড়ে ইংল্যান্ড চলে যান।

পদক ও সম্মাননা

সম্পাদনা
 
হেনরিক হার্টজ

হেনরিক হার্টজের ভাগ্নে গুস্তাভ লুডভিগ হার্টজ ছিলেন একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, এবং গুস্তাভের ছেলে কার্ল হেলমুট হার্টজ চিকিৎসা বিজ্ঞানের আল্ট্রাসনোগ্রাফি আবিষ্কার করেছিলেন।

১৯৩০ সালে আই ইসি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার সম্মানে ক্ম্পাংকের এস আই একক হার্জ, প্রতি সেকেন্ডে একটি ঘটনার সংখ্যার পুনরাবৃত্তির অভিব্যক্তি। ১৯৬০ সাল সি জি পি এম কর্তৃক সরকারি ভাবে আগের নামের জায়্গায় সাইকেল পার সেকেন্ড নামে প্রতিস্থাপিত হয়।

১৯২৮ সালে হেইনরিখ হার্টজ ইনস্টিটিউট ফর অসিলেশন রিসার্চ বার্লিনে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এটি ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউট ফর টেলিকমিউনিকেশনস, হেইনরিখ হার্টজ ইনস্টিটিউট, এইচএইচআই নামে পরিচিত।

১৯৬৯ সালে পূর্ব জার্মানিতে হেইনরিখ হার্টজ স্মারক পদক[৪৬] তৈরি করা হয়।

আইইইই হেইনরিখ হার্টজ পদক, যা ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, "হার্টজিয়ান তরঙ্গে অসাধারণ অর্জনের জন্য [...] প্রতি বছর এমন একজন ব্যক্তিকে প্রদান করা হয় যাঁর অর্জন তাত্ত্বিক বা পরীক্ষামূলক প্রকৃতির"।

১৯৯২ সালে অ্যারিজোনার মাউন্ট গ্রাহামে নির্মিত সাবমিলিমিটার রেডিও টেলিস্কোপ তার নামানুসারে রাখা হয়।

চাঁদের দূরবর্তী পৃষ্ঠে, পূর্ব প্রান্তের ঠিক পেছনে অবস্থিত একটি গহ্বর হল হার্টজ গহ্বর, যা তার সম্মানে নামকরণ করা হয়েছে।

২০১২ সালে তার জন্মদিনে গুগল তার কর্মজীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে একটি গুগল ডুডল প্রকাশ করে, যা হোম পেজে প্রদর্শিত হয়।[৪৭][৪৮]

কাজসমূহ

সম্পাদনা

Ueber die Induction in rotirenden Kugeln (জার্মান ভাষায়)। বার্লিন: গুস্তাফ শাডে। ১৮৮০। 

Die Prinzipien der Mechanik in neuem Zusammenhange dargestellt (জার্মান ভাষায়)। লিপজিগ: ইয়োহান আম্ব্রোসিউস বার্থ। ১৮৯৪। 

Schriften vermischten Inhalts (জার্মান ভাষায়)। লিপজিগ: ইয়োহান আম্ব্রোসিউস বার্থ। ১৮৯৫। 

নিবন্ধ

সম্পাদনা

হার্টজ, এইচ.আর. "Ueber sehr schnelle electrische Schwingungen", Annalen der Physik, খণ্ড 267, সংখ্যা 7, পৃষ্ঠা 421–448, মে 1887 ডিওআই:10.1002/andp.18872670707

হার্টজ, এইচ.আর. "Ueber einen Einfluss des ultravioletten Lichtes auf die electrische Entladung", Annalen der Physik, খণ্ড 267, সংখ্যা 8, পৃষ্ঠা 983–1000, জুন 1887 ডিওআই:10.1002/andp.18872670827

হার্টজ, এইচ.আর. "Ueber die Einwirkung einer geradlinigen electrischen Schwingung auf eine benachbarte Strombahn", Annalen der Physik, খণ্ড 270, সংখ্যা 5, পৃষ্ঠা 155–170, মার্চ 1888 ডিওআই:10.1002/andp.18882700510

হার্টজ, এইচ.আর. "Ueber die Ausbreitungsgeschwindigkeit der electrodynamischen Wirkungen", Annalen der Physik, খণ্ড 270, সংখ্যা 7, পৃষ্ঠা 551–569, মে 1888 ডিওআই:10.1002/andp.18882700708

হার্টজ, এইচ. আর. (১৮৯৯) The Principles of Mechanics Presented in a New Form, লন্ডন, ম্যাকমিলান, হেরমান ফন হেলমহল্টজ-এর ভূমিকাসহ (Die Prinzipien der Mechanik in neuem Zusammenhange dargestellt, লিপজিগ, ১৮৯৪ সালে মরণোত্তর প্রকাশিত ইংরেজি অনুবাদ)।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. IEC History ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৯ মে ২০১৩ তারিখে. Iec.ch.
  2. "Biography: Heinrich Rudolf Hertz"। MacTutor History of Mathematics archive। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ 
  3. Buchwald 2011, পৃ. ৪৫
  4. Buchwald 2011, পৃ. ৫১–৬৫
  5. Buchwald 2011, পৃ. ২১৮
  6. Stathis Psillos, Philosophy of Science A-Z, Edinburgh University Press · 2007, পৃ. ১০৭
  7. Robertson, O'Connor। "Heinrich Rudolf Hertz"MacTutor। University of Saint Andrews, Scotland। সংগ্রহের তারিখ ২০ অক্টোবর ২০২০ 
  8. Hamburger Friedhöfe » Ohlsdorf » Prominente. Friedhof-hamburg.de. Retrieved 22 August 2014.
  9. Plan Ohlsdorfer Friedhof (Map of Ohlsdorf Cemetery). friedhof-hamburg.de.
  10. IEEE Institute, Did You Know? Historical ‘Facts’ That Are Not True ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১০ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে
  11. Susskind, Charles. (1995). Heinrich Hertz: A Short Life. San Francisco: San Francisco Press. আইএসবিএন ০-৯১১৩০২-৭৪-৩
  12. Appleyard, Rollo (অক্টোবর ১৯২৭)। "Pioneers of Electrical Communication part 5 – Heinrich Rudolph Hertz" (পিডিএফ)Electrical Communication। New York: International Standard Electric Corp.। 6 (2): 63–77। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫ চিত্রদ্বয় প্রকাশিত হয়েছে পৃষ্ঠা ৬৬, ফিগার ৩ এবং পৃষ্ঠা ৭০, ফিগার ৯-এ।
  13. O'Connor, J.J.; Robertson, E.F. (নভেম্বর ১৯৯৭)। "James Clerk Maxwell"। School of Mathematical and Computational Sciences University of St Andrews। ৫ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০২১ 
  14. Heinrich Hertz. nndb.com. Retrieved 22 August 2014.
  15. Baird, Davis, Hughes, R.I.G. and Nordmann, Alfred eds. (1998). Heinrich Hertz: Classical Physicist, Modern Philosopher. New York: Springer-Verlag. আইএসবিএন ০-৭৯২৩-৪৬৫৩-X. p. 49
  16. Heilbron, John L. (2005) The Oxford Guide to the History of Physics and Astronomy. Oxford University Press. আইএসবিএন ০১৯৫১৭১৯৮৫. p. 148
  17. Baird, Davis, Hughes, R.I.G. and Nordmann, Alfred eds. (1998). Heinrich Hertz: Classical Physicist, Modern Philosopher. New York: Springer-Verlag. আইএসবিএন ০-৭৯২৩-৪৬৫৩-X. p. 53
  18. Huurdeman, Anton A. (2003) The Worldwide History of Telecommunications. Wiley. আইএসবিএন ০৪৭১২০৫০৫২. p. 202
  19. "The most important Experiments – The most important Experiments and their Publication between 1886 and 1889"। Fraunhofer Heinrich Hertz Institute। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  20. Buchwald 2011, pp. 77-91
  21. Pierce, George Washington (১৯১০)। Principles of Wireless Telegraphy। New York: McGraw-Hill Book Co.। পৃষ্ঠা 51–55। 
  22. "Heinrich Rudolph Hertz"History। Institute of Chemistry, Hebrew Univ. of Jerusalem website। ২০০৪। Archived from the original on ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ৬ মার্চ ২০১৮ 
  23. Capri, Anton Z. (2007) Quips, quotes, and quanta: an anecdotal history of physics. World Scientific. আইএসবিএন ৯৮১২৭০৯২০৭. p 93.
  24. Norton, Andrew (২০০০)। Dynamic Fields and Waves। CRC Press। পৃষ্ঠা 83। আইএসবিএন 0750307196 
  25. Heinrich Hertz (১৮৯৩)। Electric Waves: Being Researches on the Propagation of Electric Action with Finite Velocity Through Space। Dover Publications। আইএসবিএন 1-4297-4036-1 
  26. "The Nobel Prize in Physics 1909"। Nobel Foundation। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ 
  27. "Heinrich Hertz | German physicist"Encyclopedia Britannica (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২১ 
  28. "How Radio Works"HowStuffWorks। ৭ ডিসেম্বর ২০০০। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০১৯ 
  29. Thomson, George (১৯৭০)। "An Unfortunate Experiment: Hertz and the Nature of Cathode Rays"Notes and Records of the Royal Society of London25 (2): 237–242। আইএসএসএন 0035-9149জেস্টোর 530878ডিওআই:10.1098/rsnr.1970.0032 
  30. Buchwald 2011, pp. 151-153
  31. Buchwald 2011, p. 244
  32. Hertz, Heinrich (১৮৮২)। "Ueber die Berührung fester elastischer Körper"Journal für die reine und angewandte Mathematik1882 (92): 156–171। এসটুসিআইডি 123604617ডিওআই:10.1515/crll.1882.92.156 
  33. Hertz, Heinrich (১৮৮২)। "Über die Berührung fester elastischer Körper und über die Härte"Verhandlungen des Vereins zur Beförderung des Gewerbefleißes1882: 449–463। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ 
  34. Hertz, Heinrich (১৯৮৬)। Miscellaneous Papers। London: Macmillan and Co, Ltd.। পৃষ্ঠা 146–183। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ 
  35. Tevis D. B. Jacobs, C. M. Mate, Kevin T. Turner, Robert W Carpick, Understanding the tip-sample contact: An overview of contact mechanics at the nanoscale, November 2013
  36. Johnson, K. L.; Kendall, K.; Roberts, A. D. (১৯৭১)। "Surface energy and contact of elastic solids" (পিডিএফ)Proceedings of the Royal Society A324 (1558): 301–313। এসটুসিআইডি 137730057ডিওআই:10.1098/rspa.1971.0141 বিবকোড:1971RSPSA.324..301J 
  37. Dowson, Duncan (১ এপ্রিল ১৯৭৯)। "Men of Tribology: Heinrich Rudolph Hertz (1857–1894) and Richard Stribeck (1861–1950)"Journal of Lubrication Technology (ইংরেজি ভাষায়)। 101 (2): 115–119। আইএসএসএন 0022-2305ডিওআই:10.1115/1.3453287 
  38. "Purdue University - Study on Hertzian cone crack"
  39. Hertz, H. (১৮৮২)। "Ueber die Verdunstung der Flüssigkeiten, insbesondere des Quecksilbers, im luftleeren Raume"Annalen der Physik (ইংরেজি ভাষায়)। 253 (10): 177–193। আইএসএসএন 1521-3889ডিওআই:10.1002/andp.18822531002বিবকোড:1882AnP...253..177H 
  40. Mulligan, J. F.; Hertz, H. G. (১৯৯৭)। "An unpublished lecture by Heinrich Hertz: "On the energy balance of the Earth""। American Journal of Physics65 (1): 36–45। ডিওআই:10.1119/1.18565 বিবকোড:1997AmJPh..65...36M 
  41. Barker, Peter (২০১৬), "Hertz, Heinrich Rudolf (1857–94)", Routledge Encyclopedia of Philosophy (1 সংস্করণ), London: Routledge, আইএসবিএন 978-0-415-25069-6, ডিওআই:10.4324/9780415249126-q046-1, সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-২৪ 
  42. Fielding, James Matthew (২০২৩)। The Movement of Thought: Wittgenstein on Time, Change and History। Springer International Publishing। পৃষ্ঠা 219। 
  43. Koertge, Noretta. (2007). Dictionary of Scientific Biography. New York: Thomson-Gale. আইএসবিএন ০-৬৮৪-৩১৩২০-০. Vol. 6, p. 340.
  44. Wolff, Stefan L. (2008-01-04) Juden wider Willen – Wie es den Nachkommen des Physikers Heinrich Hertz im NS-Wissenschaftsbetrieb erging. Jüdische Allgemeine.
  45. Robertson, Struan II. Buildings Integral to the Former Life and/or Persecution of Jews in Hamburg – Eimsbüttel/Rotherbaum I. uni-hamburg.de
  46. Heinrich Rudolf Hertz ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ জুন ২০১৩ তারিখে. Highfields-arc.co.uk. Retrieved 22 August 2014.
  47. Albanesius, Chloe (২২ ফেব্রুয়ারি ২০১২)। "Google Doodle Honors Heinrich Hertz, Electromagnetic Wave Pioneer"PC Magazine। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১২ 
  48. Heinrich Rudolf Hertz's 155th Birthday. Google (22 February 2012). Retrieved 22 August 2014.

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা