স্বামী বীরেশ্বরানন্দ

রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের দশম সভাপতি

স্বামী বীরেশ্বরানন্দ (৩১ অক্টোবর ১৮৯২ - ১৩ মার্চ ১৯৮৫) ছিলেন রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের দশম সভাপতি (১৯৬৬ -১৯৮৫)। []

স্বামী বীরেশ্বরানন্দ
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম
পান্ডুরং প্রভু

(১৮৯২-১০-৩১)৩১ অক্টোবর ১৮৯২
মৃত্যু১৩ মার্চ ১৯৮৫(1985-03-13) (বয়স ৯২)
ধর্মহিন্দুধর্ম
ক্রমরামকৃষ্ণ মিশন
দর্শনঅদ্বৈত বেদান্ত
ধর্মীয় জীবন
গুরুসারদা দেবী

পিতৃদত্ত নাম ছিল পান্ডুরং প্রভু। পরে তিনি প্রভু মহারাজ নামে পরিচিত হন। ব্রিটিশ আমলের দক্ষিণ ভারতের  ম্যাঙ্গালোরের কাছে গুরুপুরায় ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দের ৩১ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। অল্প বয়সে পিতার মৃত্যুর পর, তিনি মায়ের সঙ্গে ম্যাঙ্গালোরে তার মামার বাড়িতে চলে আসেন। পাঁচ বছর বয়সে তাকে স্বামী বিবেকানন্দ আশীর্বাদ করেছিলেন। [] পান্ডুরং প্রভু মাদ্রাজের (বর্তমানে চেন্নাইয়ের) প্রেসিডেন্সি কলেজে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং আইনের স্নাতক হন। সেসময়ে তিনি স্বামী বিবেকানন্দের সম্পূর্ণ রচনা পড়েছিলেন এবং রামকৃষ্ণের ভাবধারায় ও বিবেকানন্দের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথমার্ধে মাদ্রাজের শ্রীরামকৃষ্ণ সংঘে যোগ দেন। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে জয়রামবাটিতে সারদা মায়ের কাছে দীক্ষা নেন এবং ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১২ জানুয়ারি স্বামী ব্রহ্মানন্দের কাছে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। সন্ন্যাস নেওয়ার পর তিনি স্বামী বীরেশ্বরানন্দ নামে পরিচিত হন এবং বারাণসী যান। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে উত্তরাখণ্ডের মায়াবতীতে অদ্বৈত আশ্রমে সন্ন্যাস কর্মী হিসাবে কাজ করেন এবং পরে কলকাতা অফিসের ব্যবস্থাপক হন এবং ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে সংস্থার প্রধান হন।১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি রামকৃষ্ণ মঠের ট্রাস্টির এবং রামকৃষ্ণ মিশনের গভর্নিং বডির সদস্য হন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের ৭ এপ্রিল তিনি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অন্যতম যুগ্ম সচিবের দায়িত্ব পান। সে দায়িত্ব পালনে তিনি বারাণসী উড়িষ্যার, মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির, শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে আশ্রমের কাজ সংগঠিত করতে থাকেন। অবশেষে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে বেলুড় মঠে ফিরে আসেন এবং সেসময় হতে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতীয় উপমহাদেশ এবং এশিয়া যখন এক সংকটময় সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, তখন তিনি সফলভাবে বেশ কয়েকটি ত্রাণকার্য, (বিশেষকরে বাংলাজুড়ে দুর্ভিক্ষের সময়) পরিচালনা করেন। স্বাস্থ্যের কারণে, স্বামী মাধবানন্দ যখন সাধারণ সম্পাদকের কার্য হতে কিছুদিন (১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ) অব্যাহতি নেন, তখন বীরেশ্বরানন্দ সে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক হন। অবশেষে ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে স্বামী মাধবানন্দের মৃত্যুর পর, ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দের ২২ ফেব্রুয়ারি অধ্যক্ষের পদে আসীন হন। স্বামী ব্রহ্মানন্দেরপর তিনিই দীর্ঘ ঊনিশ বৎসর সংঘাধ্যক্ষ ছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণের ভাবধারায়, অধ্যক্ষ হিসাবে স্বামী বীরেশ্বরানন্দ ভারতজুড়ে রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ আন্দোলনের বার্তা ছড়িয়ে দিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন।মেয়াদকালে তিনি গ্রামীণ উন্নয়নে, 'পল্লীমঙ্গল' এবং স্ব-কর্মসংস্থানে যুবকদের প্রশিক্ষণে, সমাজের নিম্নবর্গের মানুষের সামগ্রিক উন্নতির জন্য,'জনশিক্ষা' সহ অনেক জনহিতকর কর্মকাণ্ডের প্রবর্তন করেছিলেন। এর ফলে, মিশনের পরিষেবার পরিধি যেমন প্রসারিত হয়েছিল, তেমনই নতুন ক্ষেত্রে উদ্যোগীদের উৎসাহিত করেছিল। [] যদিও স্বামী বীরেশ্বরানন্দ মঠ ও মিশনের অনেক সময় প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকতেন, তবুও অল্প সময় পেলেই নিজের পড়াশোনায় ব্যয় করতেন। ইংরেজিতে অনেক সংস্কৃত ধর্মগ্রন্থ অনুবাদ করেছেন। যেমন - ভগবদ্গীতায়  শ্রীধর আচার্যের টীকাটিপ্পনি, আদি শঙ্কর রামানুজের ব্রহ্মসূত্রের উপর ভাষ্যাদি।  

১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের ১৩ মার্চ স্বামী বীরেশ্বরানন্দ ৯২ বৎসর বয়সে বেলুড় মঠে পরলোক গমন করেন।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Swami Vireswarananda (ইংরাজীতে)"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-৩০ 
  2. "Swami Vireswarananda: A Biography & Pictures"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-৩০