স্থিতিস্থাপক বিক্ষেপণ
বিক্ষেপণ তত্ত্ব, নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞান এবং কণা পদার্থবিজ্ঞানে কোন কণার স্থিতিস্থাপক বিক্ষেপণ বলতে কণাটির এমন এক বিক্ষেপণকে বোঝানো হয় যেখানে কণাটির গতিশক্তি তার ভরবেগ কেন্দ্রের কাঠামোতে সংরক্ষিত থাকে কিন্তু সংঘর্ষের পর এটি যে দিকে ছড়িয়ে পড়ে তার অভিমুখ অন্য আরেকটি কণা বা বিভবের সাথে এর মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়। উপরন্তু ভরবেগ কেন্দ্রের কাঠামোতে যখন কণার গতিশক্তি ধ্রুব থাকে তখন পর্যবেক্ষণ কাঠামোয় এর শক্তি অধ্রুব হয়। সাধারণভাবে বলা যায়, স্থিতিস্থাপক বিক্ষেপণ এমনই একটি প্রক্রিয়ার কথা বলে যেখানে সিস্টেমের মোট গতিশক্তি সংরক্ষিত থাকে। উচ্চ শক্তি সম্পন্ন অতিপারমাণবিক কণার স্থিতিস্থাপক বিক্ষেপণের সময় রৈখিক শক্তি-স্থানান্তর ঘটে। সংঘর্ষে অংশগ্রহণকারী সংঘটন কণাটির শক্তি এবং গতি, সংঘর্ষের পর যে বিন্দুতে কণাটি থেমে যায় তার চারপাশের সমান বা অনুরূপ হ্রাস না পাওয়া পর্যন্ত, রৈখিক শক্তি-স্থানান্তর ঘটতে থাকে।
আবার তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গের স্থিতিস্থাপক বিক্ষেপণ হলো সেই বিক্ষেপণ যেখানে বিক্ষিপ্ত তরঙ্গটি সংঘটন তরঙ্গের অনুরূপ হয় অর্থাৎ বিক্ষেপণের আগে ও পরে তরঙ্গ একই থাকে। তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গের স্থিতিস্থাপক বিক্ষেপণে তরঙ্গের অভিমুখের পরিবর্তন এবং সমবর্তন ঘটতে পারে। তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গের বিক্ষেপণে তরঙ্গদৈর্ঘ্য ও কম্পাঙ্কের খুবই সামান্য পরিমাণে পরিবর্তন হলে একে আপাত-স্থিতিস্থাপক বিক্ষেপণ বলা হয়।[১] শনাক্তযোগ্য এবং পরিমাপযোগ্য এই সামান্য পরিবর্তন ডপলার ক্রিয়া প্রদর্শন করে। রেইলি বিক্ষেপণ এবং মি বিক্ষেপণ হলো স্থিতিস্থাপক বিক্ষেপণ।
রাদারফোর্ড বিক্ষেপণ
সম্পাদনাযখন পরমাণু এবং অণুর কুলম্ব বিভবের অধীনে অর্থাৎ চার্জের প্রভাবে সংঘর্ষে অংশগ্রহণকারী ইলেকট্রন ও আলফা কণার মতো কণাগুলোর অপবর্তন ঘটে তখন এই স্থিতিস্থাপক বিক্ষেপণের এই প্রক্রিয়াকে রাদারফোর্ড বিক্ষেপণ বলা হয়। প্রতিফলন উচ্চ-শক্তি ইলেকট্রন অপবর্তন (RHEED, গ্যাস ইলেক্ট্রন অপবর্তন (GED) এবং সঞ্চালন ইলেকট্রন অপবর্তন (TED) এর মতো অনেক ইলেকট্রন-অপবর্তন পদ্ধতির ক্ষেত্রে যেখানে সংঘর্ষে লিপ্ত কণার ইলেকট্রনের যথেষ্ট পরিমাণে উচ্চ শক্তি (>10 keV) থাকে সেসব ক্ষেত্রে ইলেকট্রনের স্থিতিস্থাপক বিক্ষেপণই মূখ্য হয় এবং খুব সামান্য পরিমাণে অস্থিতিস্থাপক বিক্ষেপণ ঘটলেও তা উপেক্ষা করা যায়। এক্ষেত্রে বিক্ষেপণ তীব্রতাকে ভরবেগ স্থানান্তরের একটি ফাংশনরূপে প্রকাশ করা হয় যেখানে ভরবেগ স্থানান্তরকে সংঘর্ষে লিপ্ত ইলেক্ট্রনের ভরবেগ ভেক্টর এবং সংঘর্ষের পর বিক্ষিপ্ত ইলেকট্রনের ভরবেগ ভেক্টরের পার্থক্যরূপে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
আলোর স্থিতিস্থাপক বিক্ষেপণ
সম্পাদনা- থমসন বিক্ষেপণে একটি ফোটন ইলেকট্রনের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে যা কম্পটন বিক্ষেপণের নিম্ন-শক্তি সীমা।
- রেইলি বিক্ষেপণে একটি ফোটন, বিক্ষেপণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী সংঘটন ফোটনের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের চেয়ে ক্ষুদ্র কণা দ্বারা গঠিত একটি মাধ্যমকে ভেদ করে। এই বিক্ষেপণ প্রক্রিয়ায় সংঘটন ফোটনের শক্তি এবং এই কারণে তরঙ্গদৈর্ঘ্য সংরক্ষিত থাকে এবং শুধু এর দিকের পরিবর্তন ঘটে। এই ক্ষেত্রে বিক্ষেপণের তীব্রতা সংঘটন ফোটনের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের চতুর্ঘাতের ব্যাস্তানুপাতিক হয়।
নিউক্লীয় কণার পদার্থবিজ্ঞান
সম্পাদনাপ্রধান যেসব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রোটন বা তার চেয়ে বেশি ভরের কণাগুলো পদার্থের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে স্থিতিস্থাপক বিক্ষেপণ হলো সেই সব প্রক্রিয়ার মধ্যে একটি। প্রোটন, নিউট্রন, হিলিয়াম আয়ন এবং HZE আয়নগুলো আপেক্ষিক শক্তিতে বিলীন হওয়ার আগে অসংখ্য স্থিতিস্থাপক সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে। মহাজাগতিক রশ্মি, সৌর প্রোটন ঘটনা, নিউক্লীয় অস্ত্র এবং নিউক্লীয় চুল্লীর নকশায় মুক্ত নিউট্রনের নিঃসরণ সহ বহু ধরনের আয়নীকরণ বিকিরণের ক্ষেত্রে উপরন্তু মহাকাশযানের নকশা এবং পৃথিবীর ভূচৌম্বকত্বের গবেষণার ক্ষেত্রে স্থিতিস্থাপক বিক্ষেপণ প্রধান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটি কার্যকর জৈবিক ঢালের নকশা প্রণয়ন করার সময় কণার রৈখিক শক্তি-স্থানান্তরের দিকে যথাযথ মনোযোগ দিতে হয় কারণ কণাগুলো এই ঢালের মাধ্যমেই ছড়িয়ে পড়ে। নিউক্লীয় চুল্লিতে উচ্চ গতির একটি নিউট্রন ধীর গতির তাপীয় নিউট্রনে পরিণত হওয়ার নিমিত্তে এটি তার সঞ্চার পথে স্থিতিস্থাপক বিক্ষেপণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গমন করায় এর গড় মুক্ত পথ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আহিত কণাগুলোর স্থিতিস্থাপক বিক্ষেপণ ঘটার পাশাপাশি এরা তাদের মৌলিক আধান থেকেও সৃষ্ট প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়েও যেতে পারে। কণাগুলোর মৌলিক আধান থেকে সৃষ্ট এই প্রতিক্রিয়া তাদেরকে নিউক্লিয়াস থেকে বিকর্ষিত করে এবং এর ফলে তড়িৎ ক্ষেত্রের অভ্যন্তরে এদের সঞ্চার পথ বেঁকে যায়। এছাড়াও কণাগুলোর অস্থিতিস্থাপক বিক্ষেপণও ঘটতে পারে এবং সেগুলো নিউক্লীয় বিক্রিয়ার নিমিত্তে সঞ্চিত হতে পারে। অন্যান্য ভারী কণা অপেক্ষা প্রোটন এবং নিউট্রন এমনটা বেশি করে ঘটিয়ে থাকে। উপরন্তু নিউট্রন একটি সংঘটন নিউক্লিয়াসের বিভাজন ঘটাতেও সক্ষম। ডিউটেরিয়াম এবং লিথিয়ামের মতো হালকা নিউক্লিয়াসগুলো নিউক্লীয় সংযোজন বিক্রিয়ায় পরস্পরের সাথে মিশে যেতে পারে।
স্থিতিস্থাপক বিক্ষেপণের চিরায়ত তত্ত্ব
সম্পাদনাস্থিতিস্থাপক বিক্ষেপণের কোয়ান্টাম তত্ত্ব
সম্পাদনাকোয়ান্টাম বলবিদ্যায় সুসংজ্ঞায়িত সংঘাত প্যারামিটার (impact parameter) এবং একই তরঙ্গমুখযুক্ত কণা প্রবাহকে (collimated particle current) একই সময়ে নির্বাহ করা সম্ভব নয়।[২]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Kumar Sharma, Subodh (২০১৭)। Elastic Scattering of Electromagnetic Radiation (ইংরেজি ভাষায়)। CRC Press। পৃষ্ঠা ১৩। আইএসবিএন 9781315152219।
- ↑ "Elastic Scattering"। www.researchgate.net। জানুয়ারি ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০২১।