স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) হল বাংলাদেশ সরকারের একটি সাংগঠনিক অধিদপ্তর। স্থানীয় সরকারের আওতাভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভবন তৈরীর ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং সাহায্যের জন্য বাংলাদেশ সরকার এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করে।[১]
নীতিবাক্য | উন্নয়নের গণতন্ত্র শেখ হাসিনার মূলমন্ত্র |
---|---|
অবস্থান |
|
ওয়েবসাইট | www |
ইতিহাস
সম্পাদনাস্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) দেশের অন্যতম বৃহৎ প্রকৌশল সংস্থা। ৬০ এর দশকে পল্লীপূর্ত কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে কার্যক্রম শুরু করলেও সময়ের পরিক্রমায় এর পরিধি ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে শহরের সীমানায় রয়েছে এলজিইডির বিশাল কর্মযজ্ঞ।
পল্লি অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ এবং হাট-বাজার ও গ্রোথ সেন্টার উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিকে গতিশীল করতে এলজিইডি যে অবদান রেখেছে তা আজ দৃশ্যমান। দেশের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি অর্জনে এসব অবকাঠামোর অবদান অপরিসীম। প্রত্যন্ত পল্লির মানুষ আজ সর্বোচ্চ দুই কিলোমিটারের মধ্যে পাকা সড়ক ব্যবহারের সুবিধা পাচ্ছে। মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে পল্লির এসব অবকাঠামো ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।
গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি এলজিইডি শহর ও নগর অঞ্চলেও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। নগর স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে (পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন) কারিগরি সহায়তা প্রদান ও এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ব্যবস্থা ও দক্ষতা উন্নয়নেও এলজিইডি সম্পৃক্ত।
দেশের কৃষি ও মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতেও এলজিইডি বিশেষ ভূমিকা পালন করছে সারাদেশে ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে। এসব প্রকল্পে স্থানীয় অংশীজনদের অংশগ্রহণে প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সল্প ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
স্থানীয় পর্যায়ে গ্রামীণ ও নগর অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি এসব অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে বিভিন্ন বিষয়ে কারিগরি সহায়তা প্রদান এলজিইডির কর্মতালিকার অংশ। একইসঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দিয়ে থাকে এলজিইডি।
উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়নে অবকাঠামোর তথ্যভান্ডার, মানচিত্র, কারিগরি বিনির্দেশ, ম্যানুয়াল ইত্যাদি প্রণয়ন এবং দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি ও কর্মদক্ষতা বাড়াতে সংস্থার নিজস্ব কর্মকর্তা/কর্মচারী, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য অংশীজনদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে এলজিইডি।
কার্যক্রম
সম্পাদনাস্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর স্থানীয় সরকারের আওতাভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভবন তৈরীর ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং সাহায্যের জন্য বাংলাদেশ সরকার এই সংগঠনটি তৈরী করে। এই প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন সেতু-কালভার্ট, রাস্তা ইত্যাদি নির্মাণ করতে পরিকল্পনা প্রণয়নসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জনের ক্ষেত্রে পল্লী উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকের সূচনালগ্নে পল্লী উন্নয়নের জন্য কুমিল্লা মডেলের নিম্ন চারটি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল, যার মধ্যে ছিল-
- থানা প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন কেন্দ্র
- পল্লীপূর্ত কর্মসূচি
- থানা সেচ কর্মসূচি
- দ্বি-স্তর বিশিষ্ট সমবায়
কুমিল্লা মডেলের অন্তর্ভুক্ত পল্লীপূর্ত কর্মসূচি বাস্তবায়ন ছিল মূলতঃ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের মূল ভিত্তি। পরবর্তীতে সত্তরের দশকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতায় এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য একটি ইঞ্জিনিয়ারিং সেল গঠন করা হয়, যা ১৯৮২ সালে উন্নয়ন বাজেটের আওতায় ‘ওয়ার্কস প্রোগ্রাম উইং’ এ রুপান্তরিত হয়। ১৯৮৪ সালের অক্টোবরে ওয়ার্কস প্রোগ্রাম উইং রাজস্ব বাজেটের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল ব্যুরো (এলজিইবি) রূপে পুনর্গঠিত হয়। ১৯৯২ সালের আগস্ট মাসে এলজিইবিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) হিসেবে উন্নীত করা হয়।
কুমিল্লা মডেলের অন্তর্গত চারটি কর্মসূচির মধ্যে দ্বি-স্তর বিশিষ্ট সমবায় কর্মসূচি বাদে অবশিষ্ট তিনটির কাজ বাস্তবায়ন করছে এলজিইডি। এসব কার্যক্রম- গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন ও নগর উন্নয়ন। এই তিনটি সেক্টরের আওতায় বাস্তবায়ন করা হয়ে থাকে। এলজিইডি একটি বিকেন্দ্রীকৃত প্রতিষ্ঠান, যার জনবলের প্রায় আটানব্বই শতাংশ মাঠ পর্যায়ে কাজ করে।
লক্ষ্য
সম্পাদনাস্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি ও অকৃষি খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ব্যবস্থা উন্নীতকরণ এবং স্থানীয় পর্যায়ে দারিদ্র্য বিমোচনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করা।
দূরদর্শী চিন্তাভাবনা
সম্পাদনাএলজিইডির কিছু দূরদর্শী চিন্তাভাবনা রয়েছে।
- এলজিইডি সরকারি সংস্থা হিসেবে পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও কার্যকরভাবে নিম্নোক্ত পরষ্পরসম্পর্কীত ও সহায়ক কার্যক্রমসমূহ বাস্তবায়নে ভূমিকা পালন করবে।
- সামাজিক ও পরিবেশগত বিষয়সমূহ বিবেচনায় নিয়ে জনগণ ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে পরিবহন, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় কাজ করবে।
- কারিগরি ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের সক্ষমতা উন্নয়ন এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও অংশীজনদের সেবা প্রদান করবে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "লোকাল গর্ভনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট - বাংলাপিডিয়া"। bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-৩১।