ফাঁদ পাতা অভিযান
এই নিবন্ধটির সাথে অন্য কোন উইকিপিডিয়া নিবন্ধের সংযোগ নেই। |
ফাঁদ পাতা অভিযান মূলত 'ছদ্মবেশী' বা 'ফাঁদ পাতা'-র মতো প্রতারণামূলক একটি কৌশল যার মাধ্যমে ফাঁদে ফেলে অপরাধ করতে সহযোগিতা দিয়ে অপকর্মের ঠিক আগ মুহূর্তে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ধরে ফেলা হয়। এটি ইংরেজিতে স্টিং অপারেশন নামে পরিচিত। এটি এক ধরনের ছদ্মবেশী অভিযান (আন্ডারকভার অপারেশন)। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশে এ ধরনের অভিযান প্রচলিত থাকলেও এর নৈতিক ও আইনি দিক নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।[১][২] সুইডেন, নেদারল্যান্ডসের মতো কয়েকটি দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে ফাঁদ পাতা অভিযান নিষিদ্ধ।[৩]
ফাঁদ পাতা অভিযান | |||
---|---|---|---|
উপরে: মার্কিন নেভাল ক্রিমিনাল ইনভেসটিগেট সার্ভিসের ফাঁদ পাতা অভিযান নিচে: রুশ নেভাল ক্রিমিনাল ইনভেসটিগেট সার্ভিসের ফাঁদ পাতা অভিযান | |||
|
ইতিহাস
সম্পাদনাইংরেজি "স্টিং" শব্দটি মূলত জনপ্রিয়তা পেয়েছে ১৯৭৩ সালের রবার্ট রেডফোর্ড ও পল নিউম্যানের দ্য স্টিং সিনেমা থেকে। ১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী তিনটি সংস্থা যৌথভাবে ফাঁদ পাতা অভিযান চালিয়ে চুরি হওয়া চাঁদের প্রস্তর খণ্ড মায়ামির একটি ভল্ট থেকে উদ্ধার করে। ওই ফাঁদ পাতা অভিযানটির নাম ছিল অপারেশন লুনার একলিপস।[৩][৪]
কর্মকাণ্ড
সম্পাদনাফাঁদ পাতা অভিযানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা কখনও মাদক বা অস্ত্রের ক্রেতা সেজে মাদক ও অস্ত্র বিক্রেতাকে ফাঁদে ফেলেন। নৈতিকতা ইস্যুতে আলোচনা-সমালোচনা যা-ই থাকুক না কেন, অনেক দেশেই এটি বৈধ প্রক্রিয়া। তবে অপরাধ সংঘটনে কাউকে উদ্বুদ্ধ করার বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া দেশে দেশে ভিন্ন। দোষী সাব্যস্ত করার মতো যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়ার আগ পর্যন্ত এ অভিযান চলতে থাকে। আর এ ধরনের তদন্ত অভিযানে গ্রেফতার ও দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তির সংখ্যাও অনেক। সিপিওপির (যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর প্রবলেম ওরিয়েন্টেড পুলিশিং) তথ্য মতে, একটি ফাঁদ পাতা অভিযানে ৭০০ জনকে পর্যন্ত গ্রেফতার করার নজির আছে।[৪]
উদাহরণ
সম্পাদনা- 'আবদুল স্ক্যাম' বা সংক্ষেপে ‘আবস্ক্যাম' অপারেশন যা চুরি হওয়া জিনিসপত্র উদ্ধারে শুরু হলে তা শেষ পর্যন্ত দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে পরিণত হয়েছিল। ঐ তদন্ত অভিযানের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের একজন সিনেটর, প্রতিনিধি পরিষদের পাঁচ সদস্য, নিউ জার্সি স্টেট সিনেটের এক সদস্য, ফিলাডেলফিয়া সিটি কাউন্সিলের কয়েকজন সদস্য এবং অভিবাসন বিভাগের একজন পরিদর্শক দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।[৩]
- ২০১২ সালে আমিনি আল খালিফি নামে মরক্কোর এক নাগরিককে ওয়াশিংটন ডিসিতে গ্রেপ্তার। ২৯ বছর বয়সী মুসলমান যুবককে এফবিআই নকল আত্মঘাতী বিস্ফোরকসহ জামা (সুইসাইড ভেস্ট) ও অকেজো আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ করেছিল। পরিকল্পনা ছিল, ওই জামা পরে খালিফি নির্বিচারে গুলি চালিয়ে লোকজনকে হত্যা করবেন।[২]
- ২০০৯ সালে নিউইয়র্কের রিভারডেল এলাকায় দুটি সিনাগগ (ইহুদি উপাসনালয়) বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করার দায়ে চারজন কৃষ্ণাঙ্গ মুসলমান যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের হামলার পরিকল্পনায় সহযোগিতা করা, অর্থ ও নকল বিস্ফোরক জোগান দিয়েছিল এফবিআই।[২]
- ২১ বছর বয়সী বাংলাদেশি তরুণ কাজী রেজওয়ানুল আহসান নাফিস নিউইয়র্ক শহরে ফেডারেল রিজার্ভ ভবন বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার দায়ে ‘হাতেনাতে’ গ্রেপ্তার।[২]
সমালোচনা
সম্পাদনাফাঁদ পাতা অভিযান নিয়ে অনেক সমালোচনা হচ্ছে কারণ এটি নৈতিক দিক দিয়ে সঠিক নয়। মানুষের মধ্যে অপরাধপ্রবণতাগুলো সুপ্ত অবস্থায় থাকে। নৈতিক দিক দিয়ে না চাইলেও ফাঁদে পড়ে অনেক সময় মানুষ কৌতূহলবশত অপরাধ সংঘটনের পরিকল্পনা করে আনন্দ অনুভব করেন। ফাঁদ পাতা অভিযানের ফাঁদে পড়া ব্যক্তিরা একেকটি ধাপ পার হয়ে এমন পর্যায়ে পৌঁছান, তাদের আর পিছু ফেরার পথ থাকে না।[৩][৫]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ‘সন্ত্রাসী বানানো কারখানা’র শিকার নাফিস ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে, সন্দীপন বসু, আমাদের সময়। প্রকাশের তারিখঃ ২৪-১০-২০১২
- ↑ ক খ গ ঘ সন্ত্রাসবাদের কারখানা! ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৬-০৭-০৬ তারিখে,মশিউল আলম, দৈনিক প্রথম আলো। প্রকাশের তারিখঃ ২৫-১০-২০১২
- ↑ ক খ গ ঘ বিতর্কিত ফাঁদ পাতা অভিযানের শিকার নাফিস! ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে, দৈনিক সংগ্রাম। প্রকাশের তারিখঃ ২১-১০-২০১২
- ↑ ক খ নাফিসকে সব সহায়তা দেবে ঢাকা ॥ সাক্ষাত চেয়েছেন রাষ্ট্রদূত ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১২-০৯-১৫ তারিখে,মাহফুজুর রহমান, দৈনিক জনকণ্ঠ। প্রকাশের তারিখঃ ২১ অক্টোবর ২০১২
- ↑ বিতর্কিত ফাঁদ পাতা অভিযানের শিকার নাফিস![স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ],বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। প্রকাশের তারিখঃ ২০ অক্টোবর ২০১২