সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি হচ্ছে বাংলাদেশের শরী'আহ ভিত্তিক পরিচালিত একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক। ব্যাংকটি ১৯৯৫ সালের ২২শে নভেম্বর "সোস্যাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড" নামে যাত্রা শুরু করে। পরে এটির নাম পরিবর্তন করে বর্তমান নাম "সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি" রাখা হয়। বর্তমানে, এ ব্যাংকের মোট ১৮০টি শাখা, ২৩৬টি উপশাখা এবং ৩৭৪টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট রয়েছে।[২]
ধরন | বেসরকারী |
---|---|
শিল্প | ব্যাংকিং |
প্রতিষ্ঠাকাল | ঢাকা, বাংলাদেশ |
সদরদপ্তর | ঢাকা, বাংলাদেশ |
প্রধান ব্যক্তি |
|
পণ্যসমূহ | ব্যাংকিং সেবা ভোক্তা ব্যাংকিং কর্পোরেট ব্যাংকিং অর্থায়ন ব্যাংকিং ইসলামী ব্যাংকিং |
ওয়েবসাইট | সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি |
ইতিহাস
সম্পাদনাব্যাংকটি কোম্পানি আইন ১৯৯৪-এর অধীনে নিবন্ধিত হয়ে ১৯৯৫ সালের ২২ নভেম্বর তারিখে কার্যক্রম শুরু করে।[৩] এটি ইসলামী শরীয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত একটি ব্যাংক।[৪] ওআইসি’র সাবেক মহাসচিব ড. হামিদ আল গাবীদ, সৌদি আরবের ডেপুটি স্পিকার ও রাবেতার সাবেক মহাসচিব ড. আবদুল্লাহ ওমর নাসীফ, সৌদি আরবের সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী সালেহ জামজুম এবং ইসলামি আর্ন্তজাতিক তহবিল (আইআইএফ) ও আন্তর্জাতিক ইসলামি ত্রাণ সংস্থা (আইআইআরও) এই ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তা।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ স্থানীয় শরীয়াহ ভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক। আইআইআরও ও লাযনাত ছিলো এই ব্যাংকের দুটি শেয়ারহোল্ডার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। তবে মার্কিন সিনেটের স্থায়ী উপকমিটির ২০১২ সালের ১৭ই জুলাই প্রকাশিত ইউ.এস. ভালনারেবিলিটিজ টু মানি লন্ডারিং, ড্রাগস অ্যান্ড টেরর ফিন্যান্সিং: এইচএসবিসি কেস হিস্টরি শীর্ষক প্রতিবেদনে ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু অভিযোগ আনে[৫]; যদিও এসব অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি, আইআইআরও ও লাযনাতকে তাদের শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার জন্য বলা হয়।[৬] ২০১৫ সালে ব্যাংকটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট ওজর দেখায় আর্থিক লেনদেনে অনিয়মের কারণে।[৭]
পরিচালনা
সম্পাদনাএকজন চেয়ারম্যান-এর নেতৃত্বে ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিচালক পর্ষদ ব্যাংকটির সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসন তদারকিসহ ব্যবসায়িক ও অন্যান্য নীতিমালা অনুমোদন করে। ব্যাংকটির সকল প্রকার ব্যাংকিং ব্যবসায়ে ইসলামি শরীয়াহ ও সুদমুক্ত নীতির বাস্তবায়ন এবং পরিচালনা নিশ্চিত করার জন্য ৮ সদস্যবিশিষ্ট একটি শরীয়াহ কাউন্সিল রয়েছে। এছাড়া ১৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি বিদেশি অবৈতনিক আন্তর্জাতিক পরামর্শক কাউন্সিল ব্যাংকটিকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ব্যাংকিং ব্যবসায় পরিচালনায় প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশনা প্রদান করে।
কার্যক্রম
সম্পাদনাব্যাংকটি আনুষ্ঠানিকভাবে সাধারণ ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা, অনানুষ্ঠানিকভাবে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য মাইক্রোক্রেডিট এবং এসএমই ফিন্যান্স ও স্বেচ্ছামূলক এ তিন খাতে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আধুনিক ব্যাংক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে এ ব্যাংক ইসলামি ব্যাংকগুলির মধ্যে প্রথম স্যাটেলাইট প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রাহকগণকে অনলাইন ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। সংযুক্ত করেছে মোবাইল ব্যাংকিং আ্যাপ ’এসআইবিএল নাউ’। বর্তমানে ব্যাংকটির সর্বমোট ১৮০টি শাখা, ২৩৬টি উপশাখা এবং ৩৭৪টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ২২০টি এটিএম রয়েছে।[৮]
অনানুষ্ঠানিক খাতের মাধ্যমে এসআইবিএল ক্ষুদ্রঋণ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ সুবিধা প্রদান করে থাকে।
ব্যাংকিং পণ্য এবং সেবাসমূহ
সম্পাদনাবিনিয়োগ পণ্য
সম্পাদনা- বাই-মুয়াজ্জল
- এইচপিএসএম
- এইচপিএসএম ইজারা
- মুরাবাহা
- মুশারাকা
- বাই-সালাম
- কোয়ার্ড এবং অন্যান্য
আমানত পণ্য
সম্পাদনা- মুদারবা স্কিম আমানত
- আল ওয়াদিয়াহ চলতি হিসাব
- মুদারাবা সঞ্চয়ী হিসাব
- মুদারাবা সঞ্চয়ী আমানত
- মুদারাবা মেয়াদী আমানত
- নগদ ওয়াকফ আমানত
কার্ড পণ্য
সম্পাদনা- এসআইবিএল ক্রেডিট কার্ড
- এসআইবিএল জামিল ডেবিট কার্ড
- এসআইবিএল প্রিপেইড কার্ড
- এসআইবিএল হজ কার্ড
সামাজিক দায়বদ্ধতা
সম্পাদনাদানের মাধ্যমে ব্যাংকটি তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা পালন করে থাকে। [৯] এ কর্মসূচিগুলি সরকারের দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র এবং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভূমিকা পালন করছে। আইএলও প্রকল্পের আওতায় এ ব্যাংক ইতালি ও নরওয়ের সরকারের সহযোগিতায় ২০০১ সাল থেকে দুটি এবং ইউনিসেফ-এর সাথে যৌথ উদ্যোগে ২০০৩ সাল থেকে শিশুশ্রম উন্নয়নের জন্য ক্ষুদ্র বিনিয়োগ কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে। ইউএসএইড-জব্স -এর সহযোগিতায় এ ব্যাংক মধুপুরে আনারস চাষীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আনারস উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ প্রকল্পে বিনিয়োগ সহযোগিতা প্রদান করছে। স্বেচ্ছামূলক খাতে সামাজিক পুঁজি গঠনের প্রক্রিয়া হিসেবে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক সর্বপ্রথম ক্যাশ ওয়াক্ফ সার্টিফিকেট’ স্কিম চালু করে। ক্যাশ ওয়াক্ফের মূল অর্থ ব্যাংকের কাছে চিরস্থায়ী আমানত হিসেবে জমা থাকে।
স্বীকৃতি ও পুরস্কার
সম্পাদনাসোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড 'বেস্ট ইনোভেশন- ফাইন্যান্স ইনোভেশন ইন ব্যাংকস' বিভাগে 'বাংলাদেশ ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড-২০২২' লাভ করে।[১০][১১]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সাদিকুল ইসলাম"। www.kalerkantho.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৯-০১।
- ↑ "Social Islami Bank Limited"। www.siblbd.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২১।
- ↑ "SIBL"। www.siblbd.com। ২৪ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৬।
- ↑ "Islamic banking moving fast for economic exigencies: SIBL chief"। ২৮ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৬।
- ↑ ভট্টাচার্য, সঞ্চিতা (১২ নভেম্বর ২০১২)। "Bangladesh: Banking For Terror – Analysis"। ইউরেশিয়া রিভিউ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৬।
- ↑ "SIBL, Islami Bank clarify their positions"। দ্য ডেইলি স্টার। ১৯ জুলাই ২০১২। ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৬।
- ↑ "AB Bank, SIBL tender unconditional apology to BB for irregularities in buyer's credit"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৬।
- ↑ "Social Islami Bank Limited"। এসআইবিএল.কম (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০১৯।
- ↑ "The Financial Express"। দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৬।
- ↑ sun, daily। "SIBL gets Bangladesh Innovation Award | Daily Sun"। daily sun (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-১৩।
- ↑ "SIBL wins Bangladesh Innovation Award-2022"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০৩-১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-১৪।