সৈয়দ শামসুল হুদা
সৈয়দ শামসুল হুদা কে.সি.আই.ই (১৮৬২-১৯২২) একজন ব্রিটিশ ভারতীয় মুসলিম রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা, নাসিরনগর উপজেলার অন্তর্গত গোকর্ণ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে ত্রিতল বিশিষ্ট ভবনটি 'গোকর্ণ নবাব বাড়ি কমপ্লেক্স' নামে পরিচিত। পূর্বে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া কুমিল্লা জেলার অন্তরভুক্ত ছিল এবং ভারত বিভাজন এর পূর্বে পার্বত্য ত্রিপুরার অন্তর্গত ছিল।[১]
নবাব স্যার সৈয়দ শামসুল হুদা কে.সি.আই.ই. | |
---|---|
জন্ম | ১৮৬২ ব্রাহ্মণবাড়ীয়া |
মৃত্যু | ১৯২২ কলকাতা |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
যাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন | জেরেমি বেন্থাম, উয়িলিয়াম অস্টিন এবং উইলিয়াম ব্লেকস্টোনের, হাফিজ |
যাদেরকে প্রভাবিত করেছেন | মুসলিম লিগ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য |
তার পিতা সৈয়দ রিয়াজত উল্লাহ সাপ্তাহিক দূরবীনের সম্পাদক ছিলেন।
জ্ঞানার্জন
সম্পাদনাসৈয়দ শামসুল হুদা তার নিজ গৃহে পিতার নিকট থেকে আরবি, ফারসি, উর্দু, বাংলা ও ইসলাম বিষয়ক প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি ঐতিহ্যগত শিক্ষা সমাপনের জন্য হুগলী মাদ্রাসায় ভর্তি হন। আধুনিক শিক্ষা অর্জনের জন্য তিনি প্রেসিডেন্সী কলেজে ভর্তি হন ও ১৮৮৪ সালে বিএ ডিগ্রী লাভ করেন এবং ১৮৮৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর অব ল' ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি ১৮৮৯ সালে প্রেসিডেন্সী কলেজে হতে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন।
সৈয়দ শামসুল হুদা প্রতিষ্ঠানিক জ্ঞান অর্জনের সাথে সাথে বিংশ শতাব্দীর গুড়ার দিকে তার সমকালীন সময়ের মুসলিম পণ্ডিত হিসাবে খ্যাতি অর্জন করলেন।[২]
রাজনৈতিক কর্মজীবন
সম্পাদনাসৈয়দ শামসুল হুদা ১৮৮৫ সালে কলকাতা মাদ্রাসায় প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন এবং একই বছরে মাওলানা উবাইদুল্লাহ আল উবাইদি সোহরাওয়ার্দী মারা গেলে সৈয়দ শামসুল হুদা আরবি ও ফার্সি বিভাগে অধ্যক্ষ পদে আসীন হন। পাশাপাশি কলকাতা হাইকোর্ট-এ আইন চর্চা শুরু করেন।[২]
সেখান থেকেই তিনি ধীরে ধীরে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৮৮৫ সালে কলকাতা হিন্দু নেতৃবৃন্দ দ্বারা ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস গঠিত হয়। এই রাজনৈতিক অবকাঠামো ভারতের হিন্দু ও মুসলিম সম্মিলিত ভাবে সকল জনতার জন্য প্রতীকী প্রস্তাব পেশ করে। প্রখ্যাত ভারতীয় মুসলিম নেতৃবৃন্দ - স্যার সৈয়দ আহমদ খান, নবাব আব্দুল লতিফ এবং সৈয়দ আমীর আলী প্রথমেই তাদের পূর্ণ সমর্থন দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে, হিন্দু কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ বিভক্তির দিকে এগিয়ে গেলেন। ১৮৯৫ সালে মুসলিম নেতৃবৃন্দ কলকাতা ইউনিয়নের দ্বিতীয় বাৎসরিক সভার আয়োজন করেন। সৈয়দ শামসুল হুদা উক্ত সভায় যোগ দেন এবং বিভক্তির দিকে না গিয়ে সকল জনতাকে এক হওয়ার জন্য আহ্বান করে 'ভারতীয় রাজনীতি এবং মোহাম্মাদ'-এ শিরোনামে বক্তব্য রাখেন। তিনি তার স্পর্শকাতর বক্তৃতায় ভারতীয় মুসলিমদের রাজনৈতিক নীতি ও আদর্শ এবং কীভাবে কংগ্রেসকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করা যায় সে বিষয়ে প্রস্তাব রাখেন।[২] বাজেটকৃত বরাদ্দের সমূদয় অর্থ ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতার নিকটে অবস্থিত জেলা সমূহে স্কুল, কলেজ, হাঁসপাতাল এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান নির্মাণে ব্যয় হয় বিধায় সৈয়দ শামসুল হুদা সর্বপ্রথম ১৯০৫ সালে বাজেটের বিরোধিতা করেন এবং সমভাবে পূর্ববাংলার উন্নয়নের জন্য নীতি গ্রহণের সুপারিশ করেন। তিনি এ বিষয়টি সুপ্রতিষ্ঠা করেন যে, এ উন্নয়ন পূর্ব বাংলার মুসলিম জনতার জন্য সুবিধাজনক হবে যদিও উচ্চ বর্ণের হিন্দুগণ এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন বলে প্রতীয়মান হয়েছিল। শিক্ষা ও রাজনৈতিক সচেতন ও বিদ্বান হিসাবে সৈয়দ শামসুল হুদা নতুন সত্যের মুখোমুখি হয়েছিলেন যা তিনি তার নিজের ভাষায় লিখেছেন:
(ইংরেজি)
«I claim that after the creation of the new Province, East Bengal has received a great deal more of personal attention. Before the Partition the largest amount of money used to be spent in districts near Calcutta. The best of Colleges, Hospitals and other institutions were founded in or near about the capital of India. Bengal alone now reaps the benefit of those institutions towards which both the Provinces had contributed. We have inherited a heritage of the accumulated neglect of years and cannot be blamed if [we] require large sums to put our house in order.[৩]» |
(বাংলা)
«আমি মনেকরি, নতুন প্রদেশ সৃষ্টি হওয়ার ফলে পূর্ববাংলার প্রতি সকলেরই ব্যক্তিগত মনোযোগ আকর্ষিত হয়েছে। বিভাগপূর্বকালে বিপুল পরিমাণ অর্থ কলকাতার অদূরে অবস্থিত জেলাসমুহে ব্যয় করা হতো। সেরা কলেজ, হাসপাতাল এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমুহ ভারতের রাজধানী অভ্যন্তরে অথবা তার কাছাকাছি এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন উভয় প্রদেশের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল, বাংলা এখন থেকে একাকী ঐ সকল সুবিধাদি পাওয়ার অধিকারী। আমরা বিগত বছরের সঞ্চিত অবহেলার এক ঐতিহ্যগত উত্তরাধিকারী তাই [আমরা] যদি বড়অঙ্কের অর্থ নিজভূমের উন্নয়নের স্বার্থে রেখেদেয়ার দাবী করি তবে তাতে নিন্দা করার কিছু নেই।» |
তিনি অন্যত্র লিখেনঃ
(ইংরেজি)
«They [Hindus] have benefited for very many years out of the revenues of Eastern Bengal and have paid very little for its progress and advancement ... I will only say that if Eastern Bengal now for some years costs money, and if that money is to come from any province outside East Bengal, it should come from Western Bengal and the members from that province should not as any rare grumble at it.[৩]» |
(বাংলা)
«তারা [হিন্দুগণ] পূর্ববঙ্গের রাজস্বে বহু বছর ধরে উপকৃত হয়ে আসছে, কিন্ত, এর উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য যৎসামান্যই ব্যয় করেছে...আমি শুধু এটুকু বলতে চাই যে, যদি পূর্ববঙ্গ এখন কয়েক বছরের জন্য অর্থ ব্যয় করে এবং উক্ত অর্থ পূর্ব বাংলার বাইরে কোনো প্রদেশ থেকে আসে, তাহলে তা পশ্চিম বঙ্গ থেকে আসা উচিৎ এবং এতে, সেই প্রদেশের সভ্যদের এতটা অসন্তোষ প্রকাশ করার কিছু নেই।» |
অর্জন সমূহ
সম্পাদনাসৈয়দ শামসুল হুদা ১৯০২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো নির্বাচিত হন। তিনি তার সভাপতির বক্তৃতায় 'ঠাকুর ল লেকচার' এ শিরোনামে বক্তব্য রাখেন যা Butterworth & Co,(India) Ltd কর্তৃক The Principles of the Law of Crimes in British India[৪][৫] নামে অনুমোদিত হয়। তিনি জেরেমি বেন্থাম, উয়িলিয়াম অস্টিন এবং উইলিয়াম ব্লেকস্টোনের ব্যাখ্যার আলোকে মৌলিক মতাদর্শের ভিত্তিতে অপরাধ বিষয়ক আইনের সংস্কার আনয়ন করেন। তিনি ১৯০৪ সালে রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক মুসলিম এডুকেশনাল কনফারেন্সে সভাপতিত্ব করেন। তিনি ১৯০৮ সালে পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের 'আইনসভার' এর সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯১০ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের 'প্রেসিডেন্ট' নির্বাচিত হন। পূর্ববাংলার মুসলিম 'নেতা' হিসেবে ১৯১১ থেকে ১৯১৫ সাল পর্যন্ত ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন।
(ইংরেজি)
«He is one of the leaders of public opinion in his Province, and is On the forefront of all movements concerning the Mohammadan community.[৬][৭]» |
(বাংলা)
«তিনি তাঁর প্রদেশে জননন্দিত অন্যতম নেতা এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের আন্দোলনের পুরোধা।» |
সৈয়দ শামসুল হুদা ১৯১২ সাল থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত 'গভর্নরের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল' এর সদস্য নির্বাচিত হন।[৮] তিনি ১৯১৩ সালে নবাব উপাধিতে ভূষিত হন এবং ১৯১৬ সালে কে.সি.আই.ই উপাধিতে ভূষিত হন।[৯] তিনি ১৯১৭ সালে সৈয়দ আমীর আলী পর কলকাতা হাইকোর্টে বাংলার দ্বিতীয় মুসলিম বিচারপতি হিসাবে অধিষ্ঠিত হন।
লর্ড কারমাইকেল বলেন
(ইংরেজি)
«In all my endeavours to promote the welfare and to meet the legitimate desires of your community (Musalmans) I have been ably advised by my colleague the Honable Nawab Sir Syed Shamsul Huda and I am glad to take this opportunity to testify to the fact that in my judgement the Mohamedan community in Bengal could have had no more sympathetic or better advocate than he has been).[১০]» |
(বাংলা)
«আমার পক্ষ থেকে কল্যাণের সকল প্রচেষ্টাকে বাস্তবায়ন করা এবং আপনাদের সম্প্রদায়ের (মুসলিমগনের) ন্যায্য দাবী সমূহ সঠিক ভাবে পূরণ করার জন্য আমার সহকর্মী মাননীয় নবাব স্যার সৈয়দ শামসুল হুদার কাছে থেকে যে পরামর্শ পেয়েছি, আমি এই সুযোগে তার সত্যতা স্বিকার করার মাধ্যমে আনন্দিত হচ্ছি যে, আমার বিচারে বাংলার মুসলিম সম্প্রদায়র জন্য তাঁর চেয়ে সহানুভূতিশিল বা উপযুক্ত কোন সমর্থক হতে পারে না।» |
সৈয়দ শামসুল হুদা ১৯২১ সালে অবিভক্ত বাংলার সংস্কারকৃত লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের প্রথম ভারতীয় মুসলিম প্রেসিডেন্ট হন।
(ইংরেজি)
«His term of office as the first President or the Bengal Legislative Council under the reformed constitution was the crowning distinction of a career in which he had already earned honours enough to satisfy the ambition of most men. In accepting that office he rendered the greatest service within his power to Bengal and to the Reforms - a service which will always be held in honourable remembrance. Until failing health compelled his retirement he gave his energies and his exceptional abilities ungrudgingly for the benefit of his countrymen, who will treasure his memory, with gratitude.[১১]» |
(বাংলা)
«তিনি প্রথম প্রেসিডেন্ট বা বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের (সংশোধিত সংবিধানের অধীনে) অভিষেককৃত সভ্যের উচ্চ পদমর্যাদাপূর্ণ আসন অর্জন করেছিলেন যার প্রতি মানুষ উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করে থাকে। উক্ত আসন গ্রহণে ও অর্জিত ক্ষমতার সুষ্ঠু প্রয়োগে বাংলা এবং তার অবকাঠামোগত সংস্কার আনয়নের মাধ্যমে যে প্রভূত কল্যাণ সাধিত হয়েছিল, তা সর্বদা সম্মানের সাথে স্মরণ করা হবে। ভগ্ন স্বাস্থ্য তাঁকে অবসর গ্রহনে বাধ্য না করা পর্যন্ত তিনি নিজেকে এবং তার ব্যতিক্রমী ক্ষমতাকে দেশবাসীর মঙ্গলের জন্য অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছিলেন, তা যে-কেও স্মৃতির মণিকোঠায় কৃতজ্ঞতাভরে বন্দি করে রাখবে।» |
উদারতা
সম্পাদনাদেবু সুরেন্দ্র নাথ রয় বলেন-
(ইংরেজি)
«The late Nawab Shahib was not a sectarian in any sense of the word. He never made any distinction between Hindus and Muhammadans. He was devoid of all class hatred. He was never unreasonable in his demands for the rights and claims of his co-religionists. In fact he was a gentleman in the highest sense of the word.[১২]» |
(বাংলা)
«প্রয়াত নওয়াব সাহেব শাব্দিক অর্থে কোন প্রকার সাম্প্রদায়িক ছিলেন না। তিনি হিন্দু ও মুসলিমের মধ্যে কোনো রকম পার্থক্য করতেন না । তিনি সকল বর্ণ ও শ্রেণীর প্রতি ঘৃণা বিবর্জিত ছিলেন। অধিকার আদায়ের লক্ষে এবং তার সহ-ধর্মবাদীদের জন্য তার দাবী কখনই অযৌক্তিক ছিল না। সার্বিক অর্থে তিনি একজন ভদ্রলোক ছিলেন।» |
(ইংরেজি)
«Throughout his whole life Sir Shamsul Huda worked for the cause of Islam and he had no other aim in this world. Even if this statement is somewhat exaggerated, there is no doubt that the progress and development of the Muslims of Bengal was very close to his heart. He worked round the clock to improve the existential condition of his fellow Muslims during his long and distinguished career as a jurist, leader and politician.[১৩]» |
(বাংলা)
«পুরো জীবন জুড়ে স্যার শামসুল হুদা ইসলাম-এর জন্য কাজ করেন এবং এই বিশ্বে তাঁর অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না। বরং, যদি এই বক্তব্য কিছুটা অতিরঞ্জিত করা হয়ে থাকে, তবে কোনো সন্দেহ নেই যে বাংলার মুসলমানদের উন্নয়ন এবং অগ্রগতি তাঁর হৃদয়ে স্পর্শ করতো। তিনি আইনজ্ঞ, নেতা ও রাজনীতিবিদ হিসেবে তার দীর্ঘ ও প্রসিদ্ধ কর্মজীবনে তার সহকর্মী মুসলমানদের অস্তিত্বের উন্নয়নে নিরলস ভাবে কাজ করতেন।» |
কৃতিত্ব
সম্পাদনাসৈয়দ শামসুল হুদা ঔপনিবেশিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কঠিন সময়কালে বাংলার মুসলমান ছাত্রদের জন্য একজন পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি গ্রাম থেকে আসা মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য কারমাইকেল হোস্টেল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাসস্থান সৃষ্টি করেন। ১৮৯৮ সালে এলিয়ট মাদ্রাসা হোস্টেল প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি সরকারের মাধ্যমে দুই-তৃতীয়াংশ ও নবাব আবদুল লতিফ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট হতে ৫,৪০০ রুপি দ্বারা তহবিল তৈরি করেন। তিনি প্রতিটি বিভাগের মুসলিমদের শিক্ষার জন্য সহকারী পরিচালক পদ সৃষ্টি করেন।
সৈয়দ শামসুল হুদা বাংলা সরকারের নিকট থেকে জমি ক্রয় করে কলকাতায় মুসলিমদের জন্য একটি সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য ৯০০,০০০ রুপি মঞ্জুর করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান স্থগিত রাখা হয়। ১৯২৬ সালে যখন আবুল কাশেম ফজল-উল-হক শিক্ষা মন্ত্রী হন তখন উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়।[১৪]
তিনি তার পৈত্রিক সম্পত্তির উপর ১৯১৫ সালে বিদ্যালয় স্থাপন করেন, পরে তিনি উক্ত বিদ্যালয়টি তার সমবয়সী চাচার নামে উৎসর্গ করে দেন। এটি গোকর্ণ সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ উচ্চবিদ্যালয় নামে পরিচিত।[১৫] এটিই নাসিরনগর উপজেলায় স্থাপিত প্রথম বিদ্যালয় যেখানে হিন্দু ও মুসলিম ছাত্রদের শিক্ষার জন্য সরকারী পৃষ্টপোষকতা পেয়েছিল। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এর ছাত্রদের জন্য হোস্টেল নির্মাণ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯২১ সালে লর্ড রোনাল্ডসে (১৯১৭-১৯২২ সাল) কর্তৃক স্থাপিত হয়। তিনি সৈয়দ শামসুল হুদা-কে আজীবন সদস্য ঘোষণা করেন। সৈয়দ শামসুল হুদার সুপারিশে স্যার এ. এফ. রাহমান কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট মনোনীত করা হয়, তিনি পূর্বে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়-এ কার্যরত ছিলেন।[২]
হুদা সুধাকর (১৮৮৯), উর্দু গাইড প্রেস এবং মুহাম্মাদান অবজারভার (১৮৮০) জার্নালের অর্থায়ন করেন।[১৪] ধর্মীয় সীমাবদ্ধতা মহিলাদের বাংলায় শিক্ষা অর্জনে বাধা দেয়। তিনি বেগম রোকেয়া কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল উইমেন্স এডুকেশন প্রজেক্টকে নারী শিক্ষা ও উন্নয়নের জন্য সমর্থন ও উৎসাহ দেন।[১৬]
জীবনাবসান
সম্পাদনাসৈয়দ শামসুল হুদা শেষ জীবনে ২১১, লা'য়ার সার্কুলার রোডস্থ, কলকাতা বাস ভবন বেছে নেন ও ৭ অক্টোবর ১৯২২ সালে ৬১ বছর বয়সে দেহত্যাগ করেন। তাকে তিলজলা পৌর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
(ইংরেজি)
«Starting life as a vakil of the Calcutta High Court, he took for years a leading part in the affairs of his own community, the city and the University and served with distinction in the Legislative Councils of the Province and the Government of India. As a vakil he long enjoyed a Leading practice. For fact, breadth of mind, fair-mindedness and a shrewd yet well balanced judgement which seldom failed to take in the essential of the most complicated situation at a glance, he had hardly an equal and few indeed on this side of India to surpass him. His genial temperament won him many friends in nearly every walk of life. He field several high offices but his services to the public will be chiefly remembered in connection with his appointment as a Member of the Executive Council during Lord Carmichael’s Governorship of Bengal. In this capacity, his countymen found in him a staunch and powerful champion of their just claims and [he] was trusted by Hindus and Mahomedans alike, which itself was a significant tribute to his independence of outlook. catholicity and large heartedness... Sir Shamsul Huda has passed away at the time when his countrymen have stood in the greatest need of their happy combination of qualities which make leadership and which he possessed in a pre-eminent degree.[১৭]» |
(বাংলা)
«কলকাতা হাইকোর্টের একজন প্রতিনিধি হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে, বছর ধরে তার নিজের সম্প্রদায়, শহর এবং বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক নেতৃস্থানীয় কর্মকাণ্ডে অংশ গ্রহণ করেন এবং প্রদেশের লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সভ্য হয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। জনপ্রতিনিধি হিসেবে এটি তার সুদীর্ঘ অনুশীলন। বস্তুত, মনের প্রশস্ততা, স্বচ্ছ মানসিকতা এবং বিচক্ষণতার সাথে উদ্ভূত জটিল পরিস্থিতিতে অপরিহার্য সমাধান মুহূর্তের মধ্যে নিরুপন করতে কখনোই ব্যর্থ হননি, প্রকৃতপক্ষে তাঁর জুড়িদার অথবা তাঁকে অতিক্রম করার মত কেও ভারতের এপারে ছিল না। তাঁর সদয় মেজাজ জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে তাকে অনেক বন্ধু যুগিয়েছে। তিনি অনেক উচ্চ দপ্তরে সেবা প্রদান করেছেন কিন্তু বাংলার গভর্নর লর্ড কারমাইকেল এর সময়ে জনসাধারণের জন্য এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে তার সেবা বিশেষ ভাবে স্মরণযোগ্য। এ যোগ্যতা, স্বদেশীগন তাঁর মাঝে একনিষ্ঠ ভাবে পেয়েছিলেন, অক্লান্ত এবং শক্তিশালী বীর রূপে, হিন্দু ও মুসলিম নির্বিশেষে [তিনি] সকলের বিশ্বাসভাজন এক বিরল সম্মানের উল্লেখযোগ্য অধিকারী হিসাবে, যেন নিজ দৃষ্টিভঙ্গীতে স্বাধীনতার অর্ঘ্য নিবেদন, এমনটি আর খুঁজে পাওয়া যায়না। উদার ও মহানুভব ... স্যার শামসুল হুদা সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেলেন, যখন তার দেশের মানুষ তাদের সুখ সমৃদ্ধির পসরা সাজিয়ে নেতৃত্বের পথে এগিয়ে যেতে উন্মুখ এবং যে পথ তিনি দেখিয়ে গেছেন।» |
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Princely States of India
- ↑ ক খ গ ঘ Khan, Muhammad Mojlum (২০১৩-১০-২১)। "Syed Shamsul Huda"। The Muslim Heritage of Bengal: The Lives, Thoughts and Achievements of Great Muslim Scholars, Writers and Reformers of Bangladesh and West Bengal (ইংরেজি ভাষায়)। Kube Publishing Ltd। পৃষ্ঠা ২৪৭। আইএসবিএন 978-1-84774-062-5।
- ↑ ক খ M. Ahdullah, op.cit.;The Muslim Heritage of Bengal-by Muhammad Mojlum Khan-Kube Publishing Ltd.UK,আইএসবিএন ৯৭৮-১-৮৪৭৭৪-০৫৯-৫
- ↑ "Books Received"। Harvard Law Review। 33 (8): 1084–1086। ১৯২০। আইএসএসএন 0017-811X।
- ↑ "Books Received"। The Yale Law Journal। 30 (1): 107–108। ১৯২০। আইএসএসএন 0044-0094।
- ↑ Who's who in India, Containing Lives and Portraits of Ruling Chiefs, Notables, Titled Personages, and Other Eminent Indians (ইংরেজি ভাষায়)। Newul Kishore Press। ১৯১১।
- ↑ The Muslim Heritage of Bengal-by Muhammad Mojlum Khan-Kube Publishing Ltd.UK,আইএসবিএন ৯৭৮-১-৮৪৭৭৪-০৫৯-৫
- ↑ Elite Conflict in a Plural Society: Twentieth-century Bengal-by J. H. Broomfield, University of California press, page no. 51; Who’s who in India poona 1923.
- ↑ সিরাজুল ইসলাম (২০১২)। "নওয়াব"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ Englishman, 19th March 1917.;The Muslim Heritage of Bengal-by Muhammad Mojlum Khan-Kube Publishing Ltd.UK,আইএসবিএন ৯৭৮-১-৮৪৭৭৪-০৫৯-৫
- ↑ The Calcutta-based Statesman, 10 October 1922; The Muslim Heritage of Bengal-by Muhammad Mojlum Khan-Kube Publishing Ltd.UK,আইএসবিএন ৯৭৮-১-৮৪৭৭৪-০৫৯-৫
- ↑ M.Abdullah, op.cit.;The Muslim Heritage of Bengal-by Muhammad Mojlum Khan-Kube Publishing Ltd.UK,আইএসবিএন ৯৭৮-১-৮৪৭৭৪-০৫৯-৫
- ↑ Calcutta-based Progress, 14 April 1922; The Muslim Heritage of Bengal-by Muhammad Mojlum Khan-Kube Publishing Ltd.UK,আইএসবিএন ৯৭৮-১-৮৪৭৭৪-০৫৯-৫
- ↑ ক খ S.M.Akram। Indian Muslim and Partition of India। Atlantic Publishers and Distributors। পৃষ্ঠা ২৯৮,২৯৯।
- ↑ Going to school in South Asia। Amita Gupta। Westport, Conn.: Greenwood Press। ২০০৭। পৃষ্ঠা ৪৯। আইএসবিএন 978-0-313-08877-3। ওসিএলসি 230760493।
- ↑ Amin, Sonia (১৯৯৬)। The world of Muslim women in colonial Bengal, 1876-1939। Leiden [The Netherlands]: E.J. Brill। পৃষ্ঠা ১৫৮। আইএসবিএন 9789004106420। ওসিএলসি 654152132।
- ↑ 'The Calcutta weekly Notes', 13 November 1922; Khan, Muhammad Mojlum (২০১৩)। The Muslim heritage of Bengal : the lives, thoughts and achievements of great Muslim scholars, writers and reformers of Bangladesh and West Bengal। Leicestershire, United Kingdom: Kube Publishing Ltd। আইএসবিএন 978-1-84774-062-5। ওসিএলসি 865334601।