সেনকাকু দ্বীপ
সেনকাকু দ্বীপ যা জাপানের কাছে পরিচিত, চীনের কাছে দিয়াওউ এবং তাইওয়ানের কাছে তিয়াওউতাই নামে পরিচিত। তবে সেনকাকু নামেই এটি সর্বাধিক পরিচিত। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে একেক সময়ে এটি একেক নামে পরিচিত হয়েছে। এর নিয়ন্ত্রণ এখন জাপানের কাছে। কিন্তু দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে বিতর্ক বা রেষারেষি বন্ধ হয়নি, ক্রমে বেড়েই চলছে।[১]
বিতর্কিত দ্বীপs অন্যান্য নামগুলো: জাপানি: 尖閣諸島 (Senkaku) চীনা: 釣魚台列嶼 (Diaoyutai/Tiaoyutai) or 钓鱼岛及其附属岛屿 (Diaoyu/Tiaoyu) Pinnacle Islands | |
---|---|
দীপপুঞ্জের অবস্থান (red rectangle and inset). | |
ভূগোল | |
অবস্থান | Pacific Ocean |
স্থানাঙ্ক | ২৫°৪৪′৪১.৪৯″ উত্তর ১২৩°২৮′২৯.৭৯″ পূর্ব / ২৫.৭৪৪৮৫৮৩° উত্তর ১২৩.৪৭৪৯৪১৭° পূর্ব |
মোট দ্বীপপুঞ্জ | 5 + 3 rocks |
প্রধান দ্বীপপুঞ্জ | Uotsuri-jima / Diaoyu Dao Taisho-jima / Chiwei Yu Kuba-jima / Huangwei Yu Kita-Kojima / Bei Xiaodao Minami-Kojima / Nan Xiaodao |
আয়তন | ৭ বর্গকিলোমিটার (১,৭০০ একর) |
পরিচালিত | |
জাপান | |
City | Ishigaki, Okinawa |
দাবি করেছে | |
জাপান | |
শহর | ইশিগাকি, Okinawa |
People's Republic of China | |
Township | Toucheng, Yilan County, Taiwan Province |
Republic of China (তাইওয়ান) | |
Township | Toucheng, Yilan County, Taiwan Province |
অবস্থান
সম্পাদনাপূর্ব চীন সাগরে এটির অবস্থান। সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জটি উৎসুরি জিমা, তাইশো জিমা, কুবা জিমা, কিতা কোজিমা ও মিনামি কোজিমা নামের পাঁচটি দ্বীপ এবং তিনটি ভাসমান পাথুরে টিলার সমন্বয়ে গঠিত। এর আয়তন সাত বর্গকিলোমিটার। তাইওয়ান থেকে ১২০ নটিক্যাল মাইল, চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল এবং জাপানের ওকিনাওয়া দ্বীপ থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল দূরে এর অবস্থান।[১]
ত্রিমুখী লড়াই
সম্পাদনাএতে মজুদ তেল, গ্যাস ও মূল্যবান খনিজসম্পদ এবং দ্বীপের জলসীমায় মাছ শিকারের অধিকার আদায়ের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই সেনকাকু দ্বীপ নিয়ে চীন-জাপান-তাইওয়ান ত্রিমুখী টানাটানি চলছে। চতুর্দশ শতক থেকে চীন সেনকাকুর মালিকানা দাবি করে আসছে। জাপান প্রথম দ্বীপপুঞ্জটির নিয়ন্ত্রণ পায় ১৮৯৫ সালের ১৪ জানুয়ারি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আত্মসমর্পণ করার আগ পর্যন্ত এটির নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতেই ছিল। ১৯৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রশাসনের আওতায় আনে দ্বীপটিকে। ১৯৬৮ সালে এশিয়ার অর্থনীতিবিষয়ক জাতিসংঘ কমিশন দ্বীপটিতে তেল-গ্যাস মজুদ থাকার কথা জানায়। এর পর থেকেই তিন দেশ দ্বীপের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে টানাটানি করছে। ১৯৭২ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই ছিল এর নিয়ন্ত্রণ। জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার ওকিনাওয়া সংরক্ষণ চুক্তির আওতায় টোকিওর কাছে দ্বীপের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করে ওয়াশিংটন। একই বছর চীন ও তাইওয়ান এটিতে তাদের মালিকানার কথা ঘোষণা দেয়। অবশ্য এটির নিয়ন্ত্রণ এখনো জাপানের কাছেই।[১]
জাপানের প্রতিক্রিয়া
সম্পাদনাজাপানের পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রধান শিনজো অ্যাবে বলেছেন, চীনের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ দ্বীপের মালিকানা প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। উত্তরাধিকার সূত্রে সেনকাকু দ্বীপের মালিক জাপান।[৩] এদিকে জাপানি জাতীয়তাবাদী কর্মীদের বহনকারী একটি নৌ ফ্লোটিলা সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম। প্রায় দেড়শ’ কর্মীর দলটি দ্বীপপুঞ্জটির ওপর জাপানের সার্বভৌমত্বের প্রতি সংহতি জানাতে সাগরপথে যাত্রা শুরু করে। তাদের বহনকারী নৌযান দ্বীপটির নিকটবর্তী হলে কমপক্ষে ১০জন কর্মী সাঁতরে দ্বীপটিতে উঠতে সক্ষম হয়।[৪] চীনা নৌবাহিনীর কয়েকটা জাহাজ দ্বীপের আশপাশে ঘোরাফেরার খবর পাওয়া মাত্র দ্বীপ রক্ষার জন্য কয়েকটা এফ-১৫ যুদ্ধবিমান পাঠায় জাপান।[৫]
চীনের প্রতিক্রিয়া
সম্পাদনাজাপানের পার্লামেন্ট নির্বাচনকালে চীন ঘোষণা করে, দুই দেশের সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য তারা কাজ করতে প্রস্তুত। চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, পূর্ব চীন সাগরের জলসীমা নিয়ে জাপানের সঙ্গে যে টানাপোড়েন চলছে, এ ব্যাপারে তারা আরও পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার রাখেন। তবে কূটনৈতিকভাবে বিষয়টির সমাধান হবে বলে তিনি আশাবাদী। এদিকে চীনে জাপানবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। হাজার হাজার বিক্ষোভকারী বেইজিংয়ে অবস্থিত জাপান দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ দেখান। তারা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন এবং দূতাবাসে প্লাস্টিকের বোতল ছুড়ে মারেন।[৬] এদিকে সেনকাকুর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে চীনা উপকূলরক্ষীবাহিনীর অসামরিক বিমান দ্বীপের আশপাশে ঘোরাফেরা করছে এবং দ্বীপের ছবিও তুলছে। যুদ্ধবিমানও চক্কর মারছে দ্বীপের চারপাশে।[৭]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ সেনকাকু দ্বীপের অনেক নাম!, রকমারি ডেস্ক, বাংলাদেশ প্রতিদিন। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ০৩-১১-২০১২ খ্রিস্টাব্দ।
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;search.japantimes.co.jp
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ সেনকাকু দ্বীপের মালিকানা নিয়ে কোনো ছাড় নয়[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ],বিবিসি ও এএফপি, দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ১৮-১২-২০১২ খ্রিস্টাব্দ।
- ↑ বিতর্কিত সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছেছে জাপানি ফ্লোটিলা[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ],আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম । ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ১৯-০৮-২০১২ খ্রিস্টাব্দ।
- ↑ সেনকাকু নিয়ে চিন-জাপান যুদ্ধং দেহি[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ],আনন্দবাজার। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ১৯ জানুয়ারী, ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ।
- ↑ চীন দ্বীপ নিয়ে আরও পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার রাখে’ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৩-১২-২২ তারিখে,এএফপি ও বিবিসি, দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ১৯-০৯-২০১২ খ্রিস্টাব্দ।
- ↑ সেনকাকু নিয়ে চিন-জাপান যুদ্ধং দেহি ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২১ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে,ডিজিটাল ডেস্ক, কলকাতা। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ১৯ জানুয়ারি, ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ।
আরও পড়ুন
সম্পাদনা- Donaldson, John and Alison Williams. "Understanding Maritime Jurisdictional Disputes: The East China Sea and Beyond," Journal of International Affairs, Vol. 59, No. 1.
- Dzurek, Daniel. "The Senkaku/Diaoyu Islands Dispute," International Boundaries Research Unit (IBRU). October 18, 1996.
- Helflin, William B. "Daiyou/Senkaku Islands Dispute: Japan and China, Oceans Apart," 1 Asian-Pacific Law & Policy Journal 1–22 (2000).
- Peterson, Alexander M. "Sino-Japanese Cooperation in the East China Sea: A Lasting Arrangement?" 42 Cornell International Law Journal 441–474 (2009).
- Ramos-Mrosovsky, Carlos. "International Law's Unhelpful Role in the Senkaku Islands," ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে, 29 University of Pennsylvania Journal of International Law 903-946 (2008).
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- Google maps, Senkaku Islands
- "Q&A China Japan island row," BBC News Asia-Pacific. September 24, 2010.
- Globalsecurity.org — "Senkaku/Diaoyutai Islands"; References, Links
- Inventory of Conflict and Environment (ICE), Diaoyu Islands Dispute
- Waseda University — Hayashi Shihei. (1785). 三国通覧図説 (Sangoku Tsuran Zusetsu)