সুরেন্দ্র নারায়ণ দাশ
সুরেন্দ্র নারায়ণ দাশ[১] (Surendra Narayan Das[২]) হচ্ছেন বাংলাদেশের একজন শাস্ত্রীয় সঙ্গীত বিশারদ যিনি মূলত সুরেন দাশ নামেই পরিচিত। পিতা নিশিকান্ত দাশ ও মাতা হেমাঙ্গিনী দাশের ৭ পুত্র ও ৩ কন্যার মধ্যে জ্যেষ্ঠ সন্তান ছিলেন সুরেন দাশ। আদিনিবাস ছিল ঢাকার বিক্রমপুরে। ব্যবসার সুবিধার্থে পিতা নিশিকান্ত দাশ উনিশ শতকের শুরুর দিকে কুমিল্লা শহরের তালপুকুরপাড়স্থ এলাকায় স্থায়ীভাবে নিবাস শুরু করেন। সুরেন দাশ, নজরুল সঙ্গীত গবেষক সুধীন দাশ-এর বড় ভ্রাতা ও সঙ্গীতগুরু।কুমিল্লার প্রাচীন সঙ্গীত প্রতিষ্ঠান সঙ্গীত শিক্ষার্থী সম্মিলন[৩]-এর প্রতিষ্ঠাতা তিনি।
সুরেন্দ্র নারায়ণ দাশ | |
---|---|
জন্ম | ১৯০৮, তালপুকুরপাড়, কুমিল্লা |
মৃত্যু | ১০ এপ্রিল ১৯৮৬ | (বয়স ৭৭–৭৮)
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশ |
কর্মজীবন | ১৯৩৩-১৯৮৬ |
পরিচিতির কারণ | শাস্ত্রীয় সঙ্গীত বিশারদ, সদানন্দ, সুদাস |
দাম্পত্য সঙ্গী | বেলা দাশ |
পিতা-মাতা | নিশিকান্ত দাশ এবং হেমাঙ্গিনী দাশ |
সঙ্গীত শিক্ষা জীবন
সম্পাদনা১৯২৩ সালে কুমিল্লা ঈশ্বর পাঠাশালা[৪] হতে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পরে সুরেন দাশ ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে চাকুরীর উদ্দেশ্যে কোলকাতা গমন করেন। সঙ্গীত শিক্ষার উদ্দেশ্যে প্রথমে পণ্ডিত হরিহর রায়ের সান্নিধ্য লাভ করেন ও পরবর্তীতে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সাহেবের সান্নিধ্য লাভ করেন। বেশ কিছুদিন তালিম গ্রহণের পর তিনি ওস্তাদজীর পরামর্শে পণ্ডিত গিরিজা শঙ্কর চক্রবর্ত্তী [৫] মহাশয় ও শ্রী যামীনি গাঙ্গুলী মহাশয়ের নিকট তালিম গ্রহণ শুরু করেন। মূলত, এখান থেকেই সুরেন দাশের সঙ্গীত জীবনে অমূল পরিবর্তন আসে। গিরিজা শঙ্কর ঘরাণার সদস্য হয়ে তিনি সঙ্গীতের পাশাপাশি তবলা, সেতার, এস্রাজ, বাঁশি, বেহালা প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র বাদনের তালিম ও গ্রহণ করেন। সেই সময়ে তিনি কোলকাতা বেতারেও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
অর্ধযুগের বেশি সময় তালিম গ্রহণ করে ১৯৩৬-৩৭ সালে সুরেন দাশ কুমিল্লায় ফিরে আসেন। তবে সঙ্গীত শিক্ষায় তিনি বিরতি দেননি। স্বদেশে ফিরে এসে তিনি ময়মনসিংহের গৌরিপুরের মহারাজা শ্রী ব্রজেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরীর [৬] নিকট ৪ বছর শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম গ্রহণ করেন। মহারাজা শ্রী ব্রজেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরী ও তৎপুত্র শ্রী বীরেন্দ্র কীশোর রায়চৌধুরীর [৭] নিকট হতে বহু অপ্রচলিত রাগরাগিণী সংগ্রহ করেন। মহারাজা শ্রী ব্রজেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরীই ১৯৫২ সালে সুরেন দাশকে গায়নাচার্য ও সঙ্গীতরত্ন উপাধিদ্বয়ে ভূষিত করেন।
শিল্পী জীবন ও গবেষণা
সম্পাদনাসঙ্গীত শিক্ষা সম্পন্ন করে সুরেন দাশ শুদ্ধ সঙ্গীতের প্রসারে নিজেকে নিয়োজিত করেন। নিজশহর কুমিল্লা ও আশেপাশের জেলাগুলোতে সঙ্গীতের পশ্চাদপদতা দুর করার উদ্দেশ্যে তিনি সমাজের সঙ্গীতমনস্ক ব্যক্তিদের সাথে পরামর্শ করে আগ্রহী ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গীত শেখানো শুরু করেন। তবে এতে আগ্রহী শিক্ষার্থী ব্যতীত অন্যদের মাঝে সঙ্গীতের পরিব্যপ্তি ঘটছিল না। তাই, সুরেন দাশ এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করলেন। ১৯৩৯ সালের দিকে নিজ ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে কুমিল্লা বীরচন্দ্র নগর মিলনায়তন[৮](কুমিল্লা টাউন হলে)[৯] আয়োজন করলেন সঙ্গীত সম্মেলনের। যেখানে শ্রোতা হিসেবে আমন্ত্রিত হতেন সমাজের মান্যগন্য ব্যক্তিবর্গ সহ সকল স্তরের মানুষ। তিনি সঙ্গীত চর্চার পাশাপাশি গবেষণা কার্যেও লিপ্ত ছিলেন। নিজ ছদ্মনাম সদানন্দ ও সুদাস ব্যবহার করে তিনি বহ রাগের বন্দিশ রচনা করেছিলেন।এছাড়া তিনি কীর্তন, ভজন, রাগপ্রধান গান, আধুনিক গানও রচনা করেছিলেন।কুমিল্লায় স্থায়ীভাবে বসবাসের সময় কুমার শচীন দেব বর্মণ, ওস্তাদ মহম্মদ হোসেন (খসরু), ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ সাহেবের সাথে সুরেন দাশের যথেষ্ট সখ্যতা গড়ে উঠেছিল।
সঙ্গীত প্রতিষ্ঠান
সম্পাদনাসুরেন দাশ ১৯৪২ সালের ৩ মার্চ নিজ বাসভবনে সঙ্গীত শিক্ষার্থী সম্মিলন[১০][১১] নামে সঙ্গীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর সঙ্গীত সম্মেলনের আয়োজন করা হত। মৃত্যুর পুর্ববর্তী সময় পর্যন্ত তিনি এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
এছাড়াও, সুরেন দাশ ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে আগরতলাস্থ কুমার শচীন দেব বর্মণ সঙ্গীত কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
সাহিত্যকর্ম
সম্পাদনাসুরেন দাশ নিজ সঙ্গীত জীবনে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত বিষয়ক একটি গ্রন্থের পান্ডুলিপি রচনা করে গিয়েছিলেন. কিন্তু নানা প্রতিকুলতায় গ্রন্থটি অপ্রকাশিত রয়ে যায়। সঙ্গীত শিক্ষার্থী সম্মিলনের প্রকাশনায় ২০১১ সালে গ্রন্থটি রাগ মঞ্জুষা[১২] নামে প্রকাশিত হয়।
পরিবার
সম্পাদনাসুরেন দাশ ১৯৪১ সালে বেলা দাশের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা নজরুল গবেষক সুধীন দাশ[১৩]। ভাতৃস্ত্রী নীলিমা দাশ[১৪][১৫] নজরুল সঙ্গীতের শিল্পী। নিজ সন্তানদের মধ্যে অলকা দাশ[১৬][১৭] উচ্চাঙ্গ ও নজরুল সঙ্গীতের শিল্পী। পিতার দেহাবসানের পর ১৯৮৬ সাল থেকে অলকা দাশ সঙ্গীত শিক্ষার্থী সম্মিলন[১৮][১৯]-এর অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এছাড়াও পুত্র সুব্রত দাশ[২০], মানস কুমার দাশ[২১][২২] ও তাপস কুমার দাশ[২৩][২৪] প্রত্যেকেই নজরুল সঙ্গীতের শিল্পী।
মৃত্যু
সম্পাদনাসুরেন দাশ ১৯৮৬ সালের ১০ এপ্রিল বার্ধক্যজনিত কারণে তালপুকুরপাড়স্থ নিজ বাসভবনে দেহত্যাগ করেন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ http://archive1.ittefaq.com.bd/print-edition/pothikrit/2017/05/03/192766.html[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ https://hubpages.com/entertainment/Pandit-Surendra-Narayan-Das-A-Rise-of-Voice-of-Classical-Music
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৮ জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
- ↑ http://dailycomillanews.com/%E0%A6%95%E0%A7%81%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%BE-%E0%A6%88%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A0%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B0
- ↑ https://www.anandabazar.com/supplementary/patrika/some-unknown-stories-of-musical-artist-girija-shankar-chakraborty-1.764600
- ↑ https://www.thedailystar.net/gouripur-house-needs-urgent-attention-35277
- ↑ http://davidphilipson.com/music/tansen/
- ↑ http://dailycomillanews.com/%E0%A6%95%E0%A7%81%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%BE-%E0%A6%AC%E0%A7%80%E0%A6%B0%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0-%E0%A6%97%E0%A6%A3%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A0
- ↑ http://www.ittefaq.com.bd/wholecountry/8367/%E0%A6%95%E0%A7%81%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%BE-%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%89%E0%A6%A8-%E0%A6%B9%E0%A6%B2-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A0%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A7%9F%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BE-%E0%A6%93%E0%A7%9C%E0%A7%87-%E0%A6%8F%E0%A6%87%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%87
- ↑ http://www.comillarkagoj.com/details.php?id=81613
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
- ↑ সংবাদ উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://sufi-faruq.com/gaan-kheko-reference-sources-bn/%7Cশিরোনাম=যেসব[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] রেফারেন্স থেকে সাহায্য নেয়া (সঙ্গীতের বই ও সাইট) – Sufi Faruq Ibne Abubakar (সুফি ফারুক ইবনে আবুবকর)|তারিখ=2000-01-01|কর্ম=সুফি ফারুক ইবনে আবুবকর|সংগ্রহের-তারিখ=2017-04-19
- ↑ http://www.kalerkantho.com/print-edition/muktadhara/2018/06/27/651353
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৭ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
- ↑ https://www.rokomari.com/book/22922/nazrul-songyit-shorolipi---23th-khondo
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
- ↑ http://www.chandpur-kantho.com/archive/index.php?ref=MjBfMTFfMTJfMTRfM18xNl8xXzU0Mzg0
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৪ আগস্ট ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
- ↑ http://lyrics.khichuri.net/singer/%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%B8-%E0%A6%95%E0%A7%81%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%B6/[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ https://www.thedailystar.net/the-depth-of-nazruls-lyrics-attracts-me-40066
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
- ↑ http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/other/29170/%E0%A6%95%E0%A7%81%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%97%E0%A7%8B%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE-%E0%A6%AE%E0%A7%8B%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%AB%E0%A6%BE-%E0%A6%9A%E0%A7%8C%E0%A6%A7%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%80-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A0-%E0%A6%89%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A7%8B%E0%A6%9A%E0%A6%A8