সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত
সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত বা সুমাইয়া বিনতে খায়াত হলেন ইসলামের ইতিহাসে হিজরত পূর্ব সময়ের প্রথম শহীদ এবং প্রথম মহিলা শহীদও বটে। ইসলাম গ্রহণ করার কারণে তিনি আবু জাহেলের হাতে নিহত হন। তিনি ইয়াসির ইবনে আমিরের স্ত্রী এবং আম্মার ইবনে ইয়াসিরের মাতা ছিলেন, যারা প্রাথমিক ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তার নির্যাতন ও নিহত হওয়ার ঘটনা[ইবনে ইসহাক অথবা ইবনে হিশাম রচিত সীরাতের বইয়ে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ রয়েছে।
বংশ পরিচয়
সম্পাদনাসুমাইয়া বিনতে খাব্বাতের বংশ পরিচয় তেমন পাওয়া যায়নি। ইবনে সাদ বলেন, তাঁর পিতার নাম খাব্বাত ; [১] কিন্তু বালাজুরী বলেন, তাঁর পিতার নাম খাইয়াত। [২] শুরুর দিকে তিনি মক্কার আবু হুজাইফা বিন আল-মুগীরা আল মাখযুমীর দাসী ছিলেন।[৩] তিনি ছিলেন একজন হাবশী বা আবিসিনীয় ( বর্তমান ইথিওপিয়া ) কৃষ্ণাঙ্গ দাসী।
জীবনী
সম্পাদনাওয়াকিদীসহ একদল বংশবিদ্যা বিশারদ বলেন, তাঁর স্বামী ইয়াসির ইবনে আমির ইয়ামেনের মাজহাজ গোত্রেরআনসী শাখার সন্তান ছিলেন। ইয়াসির ইবনে আমির তার দুভাই হারিস ইবনে আমির ও মালিক বিন আমিরকে সঙ্গে নিয়ে তাদের নিখোঁজ চতুর্থ ভাইয়ের সন্ধানে এলে ইয়াসির মক্কায় থেকে যান এবং আবু জেহেলের চাচা আবু হুযায়ফা ইবনে আল মুগীরা আল মাখযুমীর সাথে মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ হন।
আবু হুজাইফা তার দাসী সুমাইয়া বিনতে খাব্বাতকে ইয়াসিরের সাথে বিয়ে দেন এবং এই ঘরেই আম্মার ইবনে ইয়াসিরের জন্ম হয়।
ইসলাম গ্রহণ
সম্পাদনাসুমাইয়া বিনতে খাব্বাত যখন বার্ধক্যের কারণে দুর্বল হয়ে পড়েন তখন মক্কায় ইসলামের দাওয়াতের সূচনা হয়। তিনি প্রথমভাগেই স্বামী ইয়াসির ও ছেলে আম্মার ইবনে ইয়াসিরসহ গোপনে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং কিছুদিন পরেই প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন। ফলে তার পরিবার কুরাইশদের অত্যাচারের রোষানলে পড়ে যায়।
“ | ইমাম আহমাদ ও ইবনে মাজাহ আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণনা করেন, সর্বপ্রথম যে সাতজন প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা দান করেন, তারা হলেন, মুহাম্মাদ সা., আবু বকর, আম্মার ইবনে ইয়াসির, সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত,সুহাইব ইবনে সিনান আর রুমি, বিলাল ও আল মিকদাদ। | ” |
অত্যাচারের শিকার
সম্পাদনামক্কায় হযরত সুমাইয়ার পরিবারের উপর কুরাইশদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সাহায্য করার মত কেউই ছিলো না (যেহেতু তাঁরা বহিরাগত ও দাস ছিলেন)। তাই তারা বহু নির্মম অত্যাচারের শিকার হন। মক্কার আবু জাহেল ও তার সঙ্গী কুরাইশরা সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত অত্যাচার করত। তবে মুহাম্মাদ সা. তার চাচা আবু তালিব ও আবু বকরের দ্বারা তাদের নিরাপত্তার চেষ্টা করেন।[৪] আম্মারের পরিবার ও তার মা সুমাইয়া বিনতে খাব্বাতের উপর অত্যাচারের নমুনা:
- কুরাইশগণ তাদের পরিবারের সকলকে লোহার বর্ম পরিয়ে প্রচন্ড রোদে দাড় করিয়ে রাখতো।[৫][৬][৭]
- জাবির ইবনে আবদুল্লাহ বলেন, একদিন মুহাম্মাদ যাত্রা পথে আম্মার ইবনে ইয়াসিরের পরিবারকে শাস্তি দিতে দেখেন। এবং তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেন।[৮]
- উসমান ইবনে আফনান নিজেও আম্মারের পরিবারের উপর অত্যাচারের সাক্ষ্য দিয়েছেন।[৯][১০]
- আবদুল্লাহ ইবনে জাফর বলেন, মুহাম্মাদ তাদের অত্যাচারিত অসহায় অবস্থায় দেখে বলেন, “হে ইয়াসিরের পরিবারবর্গ ধৈর্য ধর! তোমাদের জন্য জান্নাত নির্ধারিত রয়েছে।[৮][১১][১২]
ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেছেন, এই অত্যাচারের সময়ই সুমাইয়া, সুমাইয়ার স্বামী ইয়াসির ইবনে আমির ও ছেলে আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াসির মৃত্যুবরণ করেন।
মৃত্যু
সম্পাদনাপ্রতিদিনের মত সারাদিন অত্যাচার সহ্য করে সুমাইয়া বাড়ি ফিরেন। সন্ধ্যায় আবু জেহেল অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করার এক পর্যায়ে তার দিকে বর্শা ছুড়ে মারে এবং এটি তাঁর যৌনাঙ্গে আঘাত করলে মৃত্যুবরণ করেন। [১৩][১৪][১৫] তিনিই ইসলামের প্রথম শহীদ হন। [১৩][১৪][১৫] তার এই শাহাদতের ঘটনাটি ঘটে ৬১৫ খ্রিস্টাব্দে।[১৬]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ [তাবাকাত-৮/২৬৭]।
- ↑ [আনসাবুল আশরাফ-১/১৫৭]।
- ↑ [তাবাকাত-৮/২৬৮]।
- ↑ [হায়াতুস সাহাবা-১/২৮৮]।
- ↑ [আল-বিদায়া-৩/২৮]।
- ↑ [কানয আল ‘উম্মাল-৭/১৪]।
- ↑ [আল-ইসাবা-৪/৩৩৫]।
- ↑ ক খ [হায়াতস সাহাবা-১/২৯১]।
- ↑ [তাবাকাত-৩/১৭৭]।
- ↑ [কানয আল-উম্মাল-৭/৭২]।
- ↑ [সীরাতু ইবন হিশাম-১/৩২০]।
- ↑ [আনসাবুল আশরাফ-১/১৬০]।
- ↑ ক খ [তাবাকাত-৮/২৬৫]।
- ↑ ক খ [আল-বিদায়া-৩/৫৯]।
- ↑ ক খ [সিফাতুস সাফওয়া-২/৩২]।
- ↑ [আল-আ‘লাম-৩/১৪০]।