সুন্দরী (বৈজ্ঞানিক নাম: Heritiera fomes) হচ্ছে মালভেসি পরিবারভুক্ত একপ্রকার বৃক্ষ। এরা সমুদ্র-উপকূলীয় বৃক্ষ হিসেবে সুপরিচিত। ভারত, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের সমুদ্র-উপকূলবর্তী লবণাক্ত এলাকায় বেশি দেখতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ও ভারত উপকূলে এর স্থানীয় নাম সুন্দরী, এখানে বিখ্যাত লোনা-বন (mangrove) সুন্দরবনের প্রায় ৭০% জুড়েই এজাতীয় গাছের আধিপত্য।[৩]

Heritiera fomes
সুন্দরবনের সুন্দরী বৃক্ষ
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: উদ্ভিদ
শ্রেণীবিহীন: সপুষ্পক উদ্ভিদ
শ্রেণীবিহীন: Eudicots
শ্রেণীবিহীন: Rosids
বর্গ: Malvales
পরিবার: মালভেসি
গণ: Heritiera
প্রজাতি: H. fomes
দ্বিপদী নাম
Heritiera fomes
Buch.-Ham.[২]
প্রতিশব্দ

Heritiera minor Roxb.

বর্ণনা

সম্পাদনা

সুন্দরী গাছের পাতা ছোট আকৃতির, ফুল হলুদ বর্ণের। একটি পূর্ণ বয়স্ক সুন্দরী গাছের গড় উচ্চতা ৭৫ ফুট। কাঠ রক্তবর্ণের। এ কাঠ খুবই শক্ত এবং মূল্যবান।[৪]

সুন্দরী গাছের অভিযোজন

সম্পাদনা

অভিযোজনের ফলে অন্যান্য লবণাম্বু উদ্ভিদের মতো সুন্দরী গাছেও শ্বাসমূল, ঠেশমূল উৎপন্ন হয়। এছাড়া এদের জরায়ুজ অঙ্কুরোদ্গম একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। নিচে এ বিষয়ে আলোচনা করা হল:

(১) শ্বাসমূল (Pneumatophores): সাধারণ উদ্ভিদের মতো সুন্দরীর মূলতন্ত্র মাটির নিচে থাকে। তবে অনেক শাখামূল মাটির উপরে সোজা দণ্ডের আকারে বেরিয়ে আসে। মূলের গায়ে ছোট ছোট ছিদ্র দেখা যায়। মূলের মধ্যে গ্যাসের আদান-প্রদান এই ছিদ্র দিয়েই হয়। এই মূলগুলি উদ্ভিদের শ্বসনে সাহায্য করে বলে এদের শ্বাসমূল (Pneumatophores) বলে। লোনা মাটিতে অক্সিজেন পরিমাণে কম থাকে। যাতে বাতাস থেকে সরাসরি উদ্ভিদ অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে সেজন্যই শ্বাসমূলের সৃষ্টি হয়েছে।

(২) ঠেশমূল (Stilt Roots): ঠেশমূল এক রকম অস্থানিক মূল। কাণ্ড থেকে বেরিয়ে মাটিতে প্রবেশ করে এই মূল গাছকে সুদৃঢ় করতে বা ঠেশ দিতে সাহায্য করে। ফলে জোয়ারের টানে সুন্দরী গাছ সহজে ভেঙে বা উপড়ে যায় না।

(৩) জরায়ুজ অঙ্কুরোদ্‌গম (Viviparous Germination): বীজের অঙ্কুরোদ্গমের ব্যাপারে সুন্দরী ও অন্যান্য লবণাম্বু উদ্ভিদে বিশেষ ধরনের অভিযোজন দেখা যায়। ফল পেকে মাটিতে পড়লে লোনা জলে ভেসে গিয়ে বীজের অঙ্কুরোদ্গমের সুযোগ কম থাকে। তাই সুন্দরীর ফল গাছে থাকাকালীন বীজ অঙ্কুরিত হয়। জনিতৃ উদ্ভিদে থাকাকালীন ফলের মধ্যেই বীজের এই রকম অঙ্কুরোদ্গমকে জরায়ুজ অঙ্কুরোদ্গম (Viviparous Germination) বলে। অঙ্কুরোদ্গমের সময়ে প্রথমে ভ্রূণমূল বের হয়, তারপর বীজপত্রাবকাণ্ড দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে ও গদার ন্যায় আকার পায়। এর ভারে এক সময় ফল মাটিতে পড়ে। নরম মাটিতে তা গেঁথে যায়। এ থেকেই অপত্য উদ্ভিদ জন্মায়।[৫]

উপযোগিতা

সম্পাদনা

সুন্দরী কাঠ দিয়ে আসবাবপত্র, ঘরের দরজা, জানালা ইত্যাদি তৈরি হয়। সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে এ কাঠ দিয়ে তৈরি নৌকার কদর রয়েছে।[৪]

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Heritiera fomes"বিপদগ্রস্ত প্রজাতির আইইউসিএন লাল তালিকা। সংস্করণ 2013.1প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন। ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০২-২১ 
  2. Vanden Berghe, Edward (২০১৪)। "Heritiera fomes Buch.-Ham."World Register of Marine Species। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০২-২২ 
  3. "Sundari" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৭ সেপ্টেম্বর ২০১০ তারিখে, Abul Khair, বাংলাপিডিয়া ওয়েব, ২০০৬ সংস্করণ।
  4. দেখুন সুন্দরবনঃ মুস্তাফিজ মামুন; পৃষ্ঠাঃ ৪২ ও ৪৩; সংস্করণঃ ফেব্রুয়ারি, ২০১২; প্রকাশনা সংস্থাঃ অবসর
  5. টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি=মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা
  • বাংলাপিডিয়ায় সুন্দরী গাছ বিষয়ক নিবন্ধ