সুধীরনাথ সান্যাল
সুধীরনাথ সান্যাল (ইংরেজি: Sudhirnath Sanyal) (২১ এপ্রিল, ১৯০০ - ১০ জুন, ১৯৯৩), বিশিষ্ট বাঙালি বিজ্ঞানী ও চিকিৎসক। তিনি শুধু একজন চিকিৎসক ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন বিজ্ঞানসাধক। জন্মনিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ক্যানসার রোগ নিয়ে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত কাজ করেছেন। [১]
সুধীরনাথ সান্যাল | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ১০ জুন ১৯৯৩ | (বয়স ৯৩)
জাতীয়তা | ভারতীয় |
নাগরিকত্ব | ভারতীয় |
পেশা | চিকিৎসক |
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাসুধীরনাথ সান্যালের জন্ম বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির কলকাতা শহরের ঘোষপাড়ায় অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে। পিতা বৈকুন্ঠনাথ সান্যাল ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দর সতীর্থ, শ্রীরামকৃষ্ণদেবের গৃহী শিষ্য। দারিদ্র্য সত্ত্বেও নিজের চেষ্টায় ও মেধায় ডাক্তারী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। গোটা ছাত্রজীবনে ২৯ টাকা এক আনা দামের একটিমাত্র ডাক্তারী বই (গ্রে'জ অ্যানাটমি) কিনেছিলেন। ডাক্তারীর সাথে তিনি বিজ্ঞানের স্নাতক হন।
কর্মজীবন
সম্পাদনাডাক্তারী পাশের পর ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি ও তার তিন বন্ধু ডা. দেবপ্রসাদ মিত্র, ডা. নলিনীবিহারী গুপ্ত, ডা. নারায়ণ রায় মিলে 'ক্যালকাটা ব্যাকট্রোলজিক্যাল ল্যাবরেটরি' গঠন করেন। তিনি এই গবেষণাগার থেকে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে মটর ডাল থেকে জন্ম নিরোধক বড়ি তৈরি করেন। গবেষণার কাজে অর্থের প্রয়োজনে নিজের ক্যামেরা ও অরগ্যানটি বিক্রি করতে হয়। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দেই তিনি "সান্যালস্ পিল" নামে অতি সামান্য মূল্যের 'ওরাল কন্ট্রাসেপটিভ বা গর্ভনিরোধক বড়ি বাজারে ছাড়েন। দেশে-বিদেশে তার প্রেরিত বড়িটি সেসময় চিকিৎসা জগতে সাড়া ফেলেছিল। এই বড়ি প্রস্তুত করায় কাঙ্ক্ষিত ফললাভ হলেও, তার আর্থিক লাভ তেমন হয়নি। আমেরিকার বিখ্যাত ডুপন্ট কোম্পানি 'সান্যালস্ পিল' পেটেন্ট করতে চাইলে তিনি রাজি হননি। তার ভাষায় -
"কোনদিন ভাবিনি ওষুধ বেচে ধনী হব। ঠাকুর ও মা চাইতেন না ডাক্তাররা রোগী দেখে পয়সা নিক। তাই আর পারিনি।"
তার দুইটি বিখ্যাত মিক্সচার ছিল, একটি পেটের, অন্যটি সর্দি-কাশির। ডাক্তার ডা. বিধানচন্দ্র রায় রোগী পাঠাতেন ওই মিক্সচারের জন্য। [২]
'স্যাটারডে ইভিনিং পোস্ট', 'নিউইয়র্ক টাইমস' সহ বিদেশের অনেক পত্রিকায় তাঁকে নিয়ে বহু গবেষণামূলক প্রবন্ধ লেখা হয়েছে। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার ক্যালকাটা স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন তাঁকে "মিন্টো গোল্ড মেডেল" দ্বারা বিজ্ঞানীর সম্মান প্রদান করে। কিন্তু বাস্তবে নামকরা বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির প্রচারের চোখ-ধাঁধানো আলোয় সাদামাটা "সান্যালস্ পিল" জনমানস থেকে হারিয়ে গেল। জন্মনিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ক্যানসার রোগ নিয়েও তিনি বৃদ্ধ বয়সে গবেষণা চালিয়ে গেছেন। বিশ্ব বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী স্যার জে বি এস হ্যালডেন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে তার চিকিৎসাধীনে এসেছিলেন। তিনি নিজের তৈরি ওষুধ দিয়ে প্রতি শনিবার ভুবনেশ্বর গিয়ে তার চিকিৎসা করতেন। স্যার হ্যালডেন মোটের উপর তার দেহ ডাক্তার সুধীরনাথের হাতে তুলে দিয়েছিলেন এক্সপ্রেরিমেন্ট করার জন্য। তিনি লিখে গিয়েছিলেন, মৃত্যুর পর তার দেহ যেন ক্যানসার রিসার্চ সেন্টারে দেওয়া হয় এবং তার ফলাফল যেন ডাক্তার সান্যালকে জানানো হয়।[২] সুধীরনাথের কাছে ধর্মের অপর নাম ছিল সেবা। তিনি নিয়মিত বিনামূল্যে রোগী দেখতেন। ব্যাকট্রোলজিক্যাল ল্যাবরেটরির একচিলতে ঘরই ছিল অকৃতদার চিকিৎসা বিজ্ঞানীর স্থায়ী ঠিকানা।
জীবনাবসান
সম্পাদনাসুধীরনাথ সান্যাল ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দের ১০ ই জুন প্রয়াত হন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৪৪৪, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
- ↑ ক খ চলচ্চিত্র পরিচালক তপন সিংহ রচিত আত্মজীবনী "মনে পড়ে" আনন্দ পাবলিশার্স কলকাতা প্রকাশিত, জানুয়ারি, ১৯৯৫ পৃষ্ঠা ৯২,৯৩ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "MP" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে